সন্ত্রাস বন্ধ আর আলোচনায় জোর
নয়াদিল্লির হায়দরাবাদ হাউসে গতকাল পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের সঙ্গে বৈঠক করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এএফপি |
ভারত বলল, পাকিস্তানকে সন্ত্রাস বন্ধ করতে হবে, ২৬/১১-এর অপরাধীদের শাস্তি দিতেই হবে এবং দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের উন্নতির জন্য ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে৷ জবাবে পাকিস্তান বলল, সংঘাতের রাস্তা ছেড়ে সহযোগিতার পথে চলতে হবে, পারস্পরিক দোষারোপের রাস্তা ছাড়তে হবে এবং সব ধরনের বিষয় নিয়ে তারা আলোচনার জন্য প্রস্তুত। গতকাল মঙ্গলবার ভারত ও পাকিস্তানের দুই প্রধানমন্ত্রী যথাক্রমে নরেন্দ্র মোদি ও নওয়াজ শরিফের প্রায় এক ঘণ্টার বৈঠকের নির্যাস এই।
মুম্বাই হামলার পরে শীর্ষস্তরের যে আলোচনা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, এত দিন পর মোদির দৌলতে তা একেবারে শীর্ষ পর্যায় থেকেই শুরু হলো বলা চলে৷ দুই প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকে ঠিক হয়েছে, দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যেতে দুই দেশের পররাষ্ট্রসচিব যোগাযোগ রাখবেন৷ ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বন্ধ থাকা পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠক এ বছরেই শুরু হতে পারে। সার্ক সদস্য দেশের অভ্যাগতদের প্রত্যেকের জন্য প্রধানমন্ত্রীর বরাদ্দ ছিল ৩০ মিনিট করে৷ সে ক্ষেত্রে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মোদির বৈঠক হয় পৌনে এক ঘণ্টারও বেশি। বৈঠক শেষে ভারতের পররাষ্ট্রসচিব সুজাতা সিং জানান, কাশ্মীর, সন্ত্রাস, ২৬/১১-এর মুম্বাই হামলার অপরাধীদের বিচার, বাণিজ্য—সব বিষয় নিয়েই কথা হয়েছে। সুজাতা বলেন, ‘সব রাষ্ট্রের প্রধানদের সঙ্গে এই বৈঠকের মূল সুর ছিল গণতন্ত্রের উৎসব।’ এই বৈঠকে আফগানিস্তানের হেরাতে ভারতীয় দূতাবাসে সাম্প্রতিক সশস্ত্র হামলার প্রসঙ্গও ওঠে৷ আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাই এই হামলার দায় লস্কর-ই-তাইয়েবার ওপর চাপিয়েছেন। পাকিস্তানের সন্ত্রাসীদের প্ররোচনায়ই এই হামলা হয় বলে ভারতের সন্দেহের বিষয়টিও শরিফের সঙ্গে আলোচনায় ওঠে। কিন্তু সেই বিষয়ে পাকিস্তানের বক্তব্য কী, তা সুজাতা জানাননি। এটা ঠিক যে এই সংক্ষিপ্ত শীর্ষ বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় বিষয়গুলো নিয়ে কাঠামোগত আলোচনার কোনো অবকাশ ছিল না। এই বৈঠক ছিল মূলত পরস্পরকে জানা ও চেনার অবকাশ।
সেই অবকাশে শরিফকে মোদি ভারতের মনোভাব ও তাগিদের বিষয়গুলো উপলব্ধি করতে বলেন৷ সন্ত্রাসের সব দিক নিয়ে আলোচনার সময় দাউদ ইব্রাহিম ও মোল্লা ওমরের পাকিস্তানে থাকার প্রসঙ্গও ওঠে। তবে এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে সুজাতা সিং কিছু বলতে অস্বীকার করেন৷ ভারত ছাড়ার আগে নওয়াজ শরিফ এক সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে সংঘাতের বদলে সহযোগিতার ওপর জোর দেন৷ পারস্পরিক দোষারোপের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান যে হয় না, তা বুঝিয়ে এই প্রবণতা বন্ধের ওপরও গুরুত্ব দেন৷ এই বৈঠককে ‘ঐতিহাসিক আখ্যা’ দিয়ে বলেন, অবিশ্বাসের বাতাবরণ দূর করতে অতীত ভুলে তাঁরা এগোতে চান। প্রসঙ্গত, নওয়াজ শরিফ মোদির মতো একেবারেই প্রথম প্রধানমন্ত্রী না হলেও এ দফায় তুলনামূলকভাবে ‘নতুন’৷ এর আগে দুবার প্রধানমন্ত্রী হওয়া পাকিস্তান মুসলিম িলগ (এন) নেতা এ দফায় সরকারপ্রধান হয়েছেন প্রায় এক বছর আগে৷ নওয়াজ-মোদি শীর্ষ বৈঠকের ফলে এখনই সম্পর্কের উন্নতি ঘটে যাবে, এমনটা ভারত মনে করছে না। অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে ভারত এগোতে চাইছে। তবে দুই দেশই মোদির এই উদ্যোগকে ‘ইতিবাচক ও সামনের দিকে পদক্ষেপ’ বলে মনে করছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, নওয়াজ শরিফের মনোভাব প্রশংসনীয়। তিনি যে সামনের দিকে তাকাতে চাইছেন, সে বিষয়েও সন্দেহ নেই। কিন্তু ১৯৯৯ সালে যা হয়েছিল, সেই আলোয় দেখলে সবচেয়ে আগে তাঁকে নিজের দেশের বিরুদ্ধ শক্তিদের সামলাতে হবে৷ সেটা তিনি পারছেন কি না, তার ওপর অনেক কিছুই নির্ভর করবে। ভারতও তাই এখনই বিরাট কিছু আশা করছে না। তবে নতুন প্রধানমন্ত্রী যে প্রতিবেশীদের সঙ্গে সম্পর্ককে অন্য মাত্রায় নিয়ে যেতে চান, সেই বার্তা তিনি আমন্ত্রিত অতিথিদের দিতে পেরেছেন বলেই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওই সূত্র মন্তব্য করে।
No comments