ফেনীর রাজনৈতিক বাদশা নিজাম by কাফি কামাল
ফেনীর রাজনৈতিক বাদশা নিজাম উদ্দিন
হাজারী। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সদর আসনের এমপি তিনি। পদের দিক
থেকে দ্বিতীয় প্রধান হলেও জেলা আওয়ামী লীগ চলে তার একক নিয়ন্ত্রণে। দলের
ভেতর তার নানা সিদ্ধান্ত ও আচরণ নিয়ে অসন্তোষ থাকলেও মুখ বন্ধ সবার।
পদত্যাগের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আবদুর রহমান
বিকম। তার সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে নির্মম খুনের শিকার হয়েছেন ফুলগাজী উপজেলা
চেয়ারম্যান ও তার দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সহকর্মী একরামুল হক। মনের ক্ষোভ মনে
পুষে রেখেই দলীয় সিদ্ধান্তে সংবাদ সম্মেলন করে তার সাফাই গাইছেন জেলা
আওয়ামী লীগের নেতারা। আবার নিজাম হাজারী আওয়ামী লীগ নেতা হলেও তার ইশারায়
চলে জেলা বিএনপির রাজনীতি। তার সঙ্গে সমঝোতা করে চলেন জেলা বিএনপির শীর্ষ
নেতারা। তিনি তার প্রতিদান দেন মামলা-হামলা থেকে নিরাপদে রেখে। একটি
বিক্ষোভ মিছিল করতেও তার অনুমতি নেন বিএনপি নেতারা। এ জন্য বর্তমান সরকারের
আমলে কোন মামলা হয়নি জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আবু তাহের, সাধারণ
সম্পাদক জিয়াউদ্দিন আহমেদ মিস্টার, সাংগঠনিক সম্পাদক মেজবাহউদ্দিন খান ও
সদর থানা বিএনপির সভাপতি সৈয়দ মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে। আবার যারা তার
ইশারায় চলতে অস্বীকার করেছেন তাদের তিনি মামলা-হামলায় রেখেছেন দৌড়ের ওপর।
ফেনীর বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা মনে করেন, নিজাম হাজারীর ক্যাডার
ভিত্তিক মনোভাবের কারণে ভিন্ন মতাদর্শের রাজনীতি করা কঠিন। সদরে ছাত্রদল
নেতাকর্মীদের ওপর কয়েক দফা হামলা, যুবদল নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার, কয়েকটি
গুম-খুনের ঘটনা, সর্বশেষ উপজেলা চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা একরাম হত্যার
মধ্য দিয়ে অশান্তি আর আতঙ্কের জনপদ পরিণত হয়েছে ফেনী।
ঐক্যের বাতাবরণে আওয়ামী লীগ: প্রকাশ্যে ঐক্যের বাতাবরণ থাকলেও ভেতরে ভেতরে দারুণ কোন্দল বিরাজ করছে ফেনী জেলা আওয়ামী লীগে। এক হাজারী থেকে আরেক হাজারীর কাছে নেতৃত্বের হাতবদল হলেও প্রকৃত নেতাকর্মীরা থেকেছেন উপেক্ষিত। সর্বশেষ সে কোন্দলের শিকার হয়েছেন ফুলগাজী উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা একরামুল হক। আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা জানান, ১৯৯৮ সালে আবুল কাশেমকে সভাপতি ও জয়নাল হাজারীকে সম্পাদক করে ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের অনুমোদন দেয় কেন্দ্রীয় কমিটি। কিন্তু রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে ২০০১ সালে জয়নাল হাজারী দেশ ছাড়লে ভারপ্রাপ্ত দিয়ে দলের কার্যক্রম চলে প্রায় এক যুগ। ফেনীর আলোচিত ও সমালোচিত নেতা জয়নাল হাজারীর রাজনৈতিক পরাজয়ের পর অনেকটা ভেঙে পড়া জেলা আওয়ামী লীগকে ধরে রাখেন নিজাম উদ্দিন হাজারী ও একরামুল হক। এ সুযোগে জয়নাল হাজারীর এককালের শিষ্য নিজাম উদ্দিন হাজারী নিজের অবস্থান শক্ত করে নেন। নিজামকে শক্ত অবস্থানে প্রতিষ্ঠিত করতে নেপথ্যে ভূমিকা পালন করেন প্রধানমন্ত্রীর সাবেক প্রোটোকল অফিসার আলাউদ্দিন নাসিম। জেলা আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক মেরুকরণে আবদুর রহমান বিকম, ফুলগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান একরামুল হক, জেলা যুবলীগ সভাপতি ও দাগনভূঞা উপজেলা চেয়ারম্যান দিদারুল কবির রতন, যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক সুশেন চন্দ্র শীল, পরশুরাম উপজেলা চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন মজুমদার, ছাগলনাইয়া উপজেলা চেয়ারম্যান মেজবাহুল হায়দার সোহেল চৌধুরীসহ অধিকাংশ নেতাকর্মী নিজাম হাজারীর পক্ষ নেন। নিজাম-একরাম দুই সাবেক শীর্ষ ক্যাডারের হাতে শক্ত ভিত পায় জেলা আওয়ামী লীগ। অন্যদিকে জয়নাল হাজারীর গ্রুপের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আজিজ আহাম্মদ চৌধুরী, সহসভাপতি মীর হোসেন ভূঞা, যুবলীগের সাবেক আহ্বায়ক আজহারুল হক আরজু, যুগ্ম আহ্বায়ক শাহজাহান সাজু, যুগ্ম আহ্বায়ক শাখাওয়াত হোসেনসহ জেলা যুবলীগের একাংশ হয়ে পড়ে কোণঠাসা। ২০১৩ সালে জেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে আবদুর রহমান বিকম জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও নিজাম উদ্দিন হাজারী সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। কমিটির অনুমোদন নিয়ে গণভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে আমন্ত্রণ পর্যন্ত পাননি ১৯৭৫ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের একক নিয়ন্ত্রণকর্তা জয়নাল হাজারী। নিজামকে ফেনীতে প্রতিষ্ঠিত করতে যে একরামের সবচেয়ে বেশি ভূমিকা ছিল তাকেই রাজনৈতিকভাবে কোণঠাসা করা হয়। বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগে যোগ দেয়া এক ব্যক্তিকে জেলা কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক করা হয় নিজাম হাজারীর ব্যক্তিগত পছন্দে। ইতিমধ্যে নিজাম হাজারী ফেনী সদর আসনের এমপি নির্বাচিত হলে ফেনীতে শুরু হয় নিজাম হাজারীর একক কর্তৃত্ব। সাংগঠনিক পদ ও টেন্ডার নিয়ে বিরোধের জের ধরে নিজাম-একরামের মধ্যে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়। গত সংসদ নির্বাচনে ফেনীর দু’টি আসন থেকে নিজাম হাজারী ও একরামুল হক মনোনয়ন চান। নিজাম মনোনয়ন পেলেও একরামুল হক পাননি। একরামের সমর্থকদের ধারণা এতেও নিজাম হাজারীর হাত ছিল। একসময়ের সন্ত্রাসের গডফাদার হিসেবে পরিচিত জয়নাল হাজারীকে ফেনীর আওয়ামী লীগের রাজনীতি থেকে সরিয়ে দেয়ার ক্ষেত্রে নিজাম ও একরাম ছিলেন এককাট্টা। তার পরও উপজেলা নির্বাচনে ফুলগাজী উপজেলায় একরামকে পরাজিত করতে দলীয় স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে মিনারের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন নিজাম উদ্দিন হাজারী। এ নিয়ে ফেনীতে বিএনপি দলীয় একজন সাবেক এমপির বাসায় বৈঠকেও অংশ নিয়েছিলেন। তবে দলের কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তে শেষ মুহূর্তে তিনি নীরব হয়ে যান। তবে ফুলগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও কিলিংয়ে নেতৃত্ব দেয়া জিহাদ চৌধুরী প্রকাশ্যে মিনারের পক্ষ নিয়েছিলেন। সম্প্রতি নিজামের জেল-জালিয়াতির প্রতিবেদন প্রকাশ হলে তিনি তার দোষ চাপান একরামের ওপর। সর্বশেষ দিনদুপুরে একরাম হত্যাকাণ্ডে অংশ নেন নিজামের মামাতো ভাই আবিদ, জেলা আওয়ামী লীগের তার ঘনিষ্ঠ নেতা জাহাঙ্গীর আদেল, কমিশনার শিবলু, জিহাদ চৌধুরীসহ অনুগত ক্যাডাররা। একরাম হত্যার নেতৃত্ব দেয়া আবিদের মা লায়লা জেসমিন বড়মণি জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। আলোচনায় উঠে এসেছে কিলিং মিশনে অর্থের যোগানদাতা আওয়ামী লীগ নেতা মোস্তাফিজুর রহমান দুলালের নাম। অস্ত্রের যোগানদাতা হিসেবে উঠে এসেছে আওয়ামী লীগ নেতা আদেল ও জিয়াউল আলম মিস্টারের নাম। জেলা নেতারা এ অসন্তোষ প্রকাশ করতে না পারলেও ঢাকায় অবস্থান করে নিজামের নানা অপকর্মের ব্যাপারে কথা বলেন সাবেক এমপি জয়নাল হাজারী। এ নিয়ে বিরোধের অংশ হিসেবে একরাম হত্যা ঘটনায় জয়নাল হাজারীকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের দাবি জানান নিজাম হাজারী। নানা রাজনৈতিক, সাংগঠনিক নানা বিষয়ে করা আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করলেও প্রকাশ্যে মুখ খোলার উপায় নেই। তবে ইতিমধ্যে একরাম সমর্থকরা বিক্ষোভ মিছিল করে নিজাম হাজারীর ফাঁসির দাবি জানিয়েছেন। উপজেলা চেয়ারম্যান ফাউন্ডেশনের নেতারা মামলার তদন্তভার সিআইডির কাছে হস্তান্তরের দাবি জানিয়েছেন।
নিজামের ইশারায় চলে ফেনী বিএনপি: বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নিজ জেলা ফেনী। দলের কেন্দ্রীয় রাজনীতিতেও এ জেলার নেতাকর্মীদের একটি অঘোষিত প্রভাব রয়েছে। চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ছাড়াও কেন্দ্রীয় কমিটিতে রয়েছেন চেয়ারপারসনের দুই উপদেষ্টা আবদুল আউয়াল মিন্টু ও মোশাররফ হোসেন, সহ-দপ্তর সম্পাদক আবদুল লতিফ জনি এবং নির্বাহী কমিটির সাত সদস্য জয়নাল আবেদিন ভিপি, রেহেনা আক্তার রানু, সাহেনা আক্তার শানু, বেলাল আহমদ, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জিয়া উদ্দিন মিস্টার ও সাংগঠনিক সম্পাদক মেছবাহউদ্দিন। কিন্তু জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সদর আসনের এমপি নিজাম হাজারীর ইশারায় চলে ফেনী বিএনপির কার্যক্রম। তার ইশারার বাইরে কেউ সরকারবিরোধী জোরালো অবস্থান নিতে গেলেই তার ওপর নেমে আসে খড়গ। বিএনপি নেতাকর্মীদের অভিযোগ, জেলা বিএনপির বর্তমান কমিটির একটি অংশের সঙ্গে রয়েছে আওয়ামী লীগ নেতাদের সখ্য। সমঝোতা করে চলছেন তারা। জেলার শীর্ষ নেতারা নিজাম হাজারীর এতটাই অনুগত, একটি মিছিল করতেও তার অনুমতি নেন। এ কারণে দলীয় একটি অংশের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে অসংখ্য মামলা-নির্যাতন হলেও তাদের বিরুদ্ধে কোন মামলা হয়নি। সম্প্রতি ফুলগাজী উপজেলা চেয়ারম্যান একরাম হত্যাকাণ্ডে বিএনপি নেতা মিনার চৌধুরীর বিরুদ্ধে মামলা করা হলেও কার্যকর কোন প্রতিবাদ কর্মসূচি দেয়নি জেলা বিএনপি। এমনকি খোদ আওয়ামী লীগসহ নিহতের পরিবারের তরফে যে নিজাম হাজারীর বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙুল তোলা হচ্ছে তার ব্যাপারেও নীরব দলটির নেতারা। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ভাই সাঈদ এস্কান্দরের মৃত্যুর পর জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পেয়েছেন আবু তাহের। তার ব্যাপারে নেতাকর্মীদের মন্তব্য, তিনি নীরবতার রাজনীতি করেন। জিয়াউদ্দিন মিস্টার এমন নিঝর্ঞ্ঝাট নেতা যে তাকে দিয়ে বিরোধী দলের আন্দোলন আশা করা আকাশকুসুম কল্পনা মাত্র। মিস্টারের বিরুদ্ধে কর্মীদের অভিযোগ, তিনি নিজাম হাজারীর সঙ্গে লাগতে যান না মোটেই। অন্যদিকে নিজামের ক্লাসমেট সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি সৈয়দ মিজানুর রহমান। রাজনীতিতে নিরাপদ থাকতে তিনি সহপাঠী হওয়ার সে সুযোগ নেন। জাতীয়তাবাদী অধ্যুষিত এলাকা হলেও বিগত সময়ে বর্তমান সরকারবিরোধী আন্দোলন জোরদার করতে পারেনি ফেনী বিএনপি। দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নিজ জেলা হলেও দলীয় কোন্দলে দিশাহারা ফেনী বিএনপি। ফেনীতে রয়েছে বিএনপির একাধিক গ্রুপ। দলীয় সূত্র জানায়, খালেদা জিয়ার ভাই মরহুম মেজর (অব.) সাঈদ এস্কান্দরের অনুসারীদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন সাবেক এমপি রেহানা আক্তার রানু। এ ছাড়া চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মোশাররফ হোসেন ও সাবেক এমপি জয়নাল আবদীন ভিপি, যুবদল কেন্দ্রীয় নেতা গাজী হাবিবুল্লাহ মানিকের নেতৃত্বে রয়েছে আরও দু’টি গ্রুপ। অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর অবস্থাও তথৈবচ। আন্দোলন কর্মসূচিতে যারা সক্রিয় থাকে তাদের ওপর নেমে আসে নির্যাতনের খড়গ। আবার বিএনপি আহূত হরতালগুলোতেও অঙ্গসংগঠনের শীর্ষ নেতাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোও তারা খোলা রাখেন। এমনকি সরকারি দলের সে নির্যাতনের সময় তারা পাশে পান না দলের নেতাদেরও। জেলা যুবদল সভাপতি গাজী হাবিবুল্লাহ মানিকের বিরুদ্ধে মামলা-হামলার অব্যাহত থাকলেও সমঝোতায় নিঝর্ঞ্ঝাট রয়েছেন জেলা যুবদল সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন পাটোয়ারী। ৫ই জানুয়ারির একতরফা নির্বাচনের আগে মানিকের নেতৃত্বে একটি কর্মী-সমাবেশের আয়োজন করলে বিএনপিরই আরেকটি অংশ সে সমাবেশে সংঘর্ষ বাধায়। এতে ফরহাদনগর ইউনিয়ন যুবদল নেতা হারুনের মৃত্যু হলে মামলা করা হয় গাজী মানিকের বিরুদ্ধেই। রাজপথে সক্রিয় থাকলেও দলীয় গ্রুপিংয়ের কারণে জেলা বিএনপির প্রচার সম্পাদক গাজী হাবিবুল্লাহ মানিকের পদ নিয়ে হয়েছে অব্যাহতি ও প্রত্যাহারের নাটক। এ ছাড়াও বর্তমান সরকারের আমলে যুবদল নেতা রিপন গুম, যুবদল নেতা মানিক, সরওয়ার, লেমুয়ার আবুল কালাম ক্রসফায়ার ও রাজনৈতিক সহিংসতায় হত্যাকাণ্ডের শিকার হলেও এ নিয়ে সরব হয়নি জেলা বিএনপি। চার বছর আগে গঠিত ছাত্রদলের ৭ সদস্যের কমিটির সভাপতি আমানউদ্দিন কায়সার সাব্বির সাধারণ সম্পাদক নঈমুদ্দিন চৌধুরীর যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে সংবাদ সম্মেলন করেছিলেন। সম্প্রতি মিনার চৌধুরী ইস্যুতে পৌর বিএনপির সভাপতি আলালউদ্দিন আলালের মধ্যস্থতায় ছাত্রদলের উভয় অংশের নেতারা একটি সংবাদ সম্মেলন করেন। অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে সব ক’টি উপজেলায় হেরেছে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী। নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীরাও পাশে পাননি স্থানীয় বিএনপিকে। ফেনী সদর পৌর নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী আলালউদ্দিনকে হারিয়ে দিতে নিজাম হাজারীর নির্দেশে আগের রাতে ব্যালটে সিল মেরে বাক্স ভরা হলেও বিএনপি নেতারা ছিলেন নীরব। ফুলগাজী উপজেলা চেয়ারম্যান মনোনয়ন নিয়ে মিনার চৌধুরী ও নূরুন্নবী মাস্টারে মধ্যে যে লড়াই ছিল তা প্রভাব ফেলে নির্বাচনে। এমনকি সে নির্বাচনে যাননি জেলা বিএনপির সহসভাপতি হাবিবুর রহমান নান্টু। আওয়ামী লীগকে খুশি রাখতে গিয়ে সোনাগাজী উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি থেকেই চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী করা হয় দু’জনকে। আবার নির্বাচনের আগে তারা কখনও এক না হলেও নির্বাচনের দিন যৌথভাবে সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচন বয়কটের ঘোষণা দেন।
মিনার চৌধুরীসহ তিন আসামি রিমান্ডে- পুলিশ সুপার ও ওসির প্রত্যাহার দাবি
ফেনীর ফুলগাজী উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি একরামুল হক হত্যা মামলার প্রধান আসামি জেলা তাঁতী দলের আহ্বায়ক মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী মিনারকে ৭ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। গতকাল ফেনীর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ খায়রুল আমিনের আদালতে হাজির করে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও ফেনী সদর থানা পুলিশের ওসি তদন্ত আবুল কালাম আজাদ আদালতে ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন। আদালত উভয় পক্ষের যুক্তিতর্ক শুনে ৭ দিনের রিমান্ড আদেশ দেন। এর আগে হত্যা মামলায় মঙ্গলবার গ্রেপ্তারকৃত ফেনী সদরের কাজীরবাগ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুর রউফকে ৫ দিন ও যুবলীগ ক্যাডার সজীবকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত অস্ত্র রাখার দায়ে ২ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে একই আদালত। এর আগে সকালে ফেনী পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর কহিনূর আলমের ভাগিনা যুবলীগ ক্যাডার জিয়াউল হক বাপ্পীকে জেলার দাগনভূঞার সিলোনিয়া এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার বাড়ি কিলিং স্পটের পাশে বিরিঞ্চি এলাকায়। বাপ্পী হত্যাকাণ্ডের দিন ঘটনাস্থলে কিলারদের সহযোগী ছিল বলে পুলিশ জানিয়েছে। এ ছাড়া সকাল ১০টায় একরাম হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আদেলকে গ্রেপ্তার ও ফেনী পুলিশ সুপার পরিতোষ ঘোষ এবং ফেনী সদর থানা ওসি মাহবুব মোর্শেদের প্রত্যাহারের দাবিতে ফুলগাজীর বন্ধুয়ায় মানববন্ধন করে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও একরাম সমর্থকরা। এ দিকে একরাম হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আদেল এখনও গ্রেপ্তার না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে নিহতের স্বজনরা। তারা জানান, আদেল কোথায় আছে তা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানে। তবে ফেনী সদর থানা পুলিশের ওসি তদন্ত আবুল কালাম আজাদ জানান, আদেলকে গ্রেপ্তারে পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
No comments