দলবাজি নয়, বুদ্ধিবৃত্তিক আলোচনা চাই
‘টক শো’ এখন একটি বাস্তবতা। লেখক-সাংবাদিক ফয়েজ আহমদ ‘মধ্যরাতের অশ্বারোহী’ শিরোনামে চমৎকার সব কলাম লিখতেন। এখন অশ্বারোহী নেই। চার চাকার গাড়িতে চড়ে নানান বর্ণের সুশীলেরা এখন টেলিভিশনের পর্দা আলোকিত করে রাখেন রাতের প্রথম, দ্বিতীয় এমনকি তৃতীয় প্রহরেও। এক-এগারোপরবর্তী নাগরিক জীবনে সন্ধ্যাকালীন চিন্তাচর্চা কিংবা বিনোদন, যে নামেই বলা হোক না কেন, টক শো এখনো দর্শক-শ্রোতা আকর্ষণ করে। তবে এর জনপ্রিয়তায় কিছুটা ভাটা পড়েছে বলেই মনে হয়। একটা সময় ছিল, যখন টক শোর আলোচক ছিলেন হাতে গোনা কয়েকজন। আমি একই রাতে একজন আলোচককে অল্প সময়ের ব্যবধানে তিন-চারটি চ্যানেলের পর্দায় দেখেছি। তখন একটা চুটকি চালু হয়ে গিয়েছিল যে কিছু কিছু মানুষ কারওরান বাজারসংলগ্ন রাজপথে সন্ধ্যা নামতেই হাঁটাহাঁটি করতে থাকেন, কখন কোন চ্যানেল থেকে ‘নির্ধারিত শিল্পীর অনুপস্থিতিতে’ আলোচক হিসেবে ডাক আসবে। এখন আলোচকের সংখ্যা বেড়েছে, টক শোর সময় ও পরিমাণ বেড়েছে, টক শো প্রচারকারী চ্যানেলের সংখ্যাও বেড়েছে। টক শোর মাধ্যমে টেলিভিশন চ্যানেলগুলো এমন একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করে দেয়, যেখানে আলোচকেরা বিষয়ভিত্তিক আলোচনা ও বিতর্কের মাধ্যমে জনমত গড়ে তোলার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন। পৃথিবীর অনেক দেশের গণমাধ্যমে এ ধরনের অনুষ্ঠান প্রচারিত হয়। এরা সমাজে ‘অপিনিয়ন মেকার’ হিসেবে স্বীকৃত।
আমাদের দেশে এ ধরনের ‘পাবলিক ডিক্টেটর’ বড়ই অভাব। টক শোর মাধ্যমে আমি কিছু কিছু বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছি এবং আলোচনা শুনেছি। উদাহরণ হিসেবে আমি প্রাকৃতিক সম্পদ, বিশেষ করে গ্যাস-কয়লা উত্তোলন বিষয়ে বিতর্ক, নদীদূষণ কিংবা খাল খনন, এসবের উল্লেখ করতে পারি। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, আমাদের চ্যানেলগুলো অধিকাংশ ক্ষেত্রেই রাজনৈতিক বিষয়গুলো এমনভাবে উপস্থাপন করে, যেখানে মননশীল আলোচনা থাকে প্রায়ই অনুপস্থিত। তারা এমন সব আলোচককে নেমন্তন্ন করেন, যাঁরা ঘুরেফিরে আওয়ামী-বিএনপি ঝগড়ার আবর্তের বাইরে যেতে পারেন না। রাজনীতিতে যেমন এই দুই পরাশক্তির প্রবল উপস্থিতি, টক শোতে অংশ নেওয়া আলোচকেরাও নিজেদের সুশীল কোর্তার ভেতর থেকে কোনো একটি দলের প্রতি আনুগত্যের সনদটি বের করে নিয়ে আসেন। ব্যতিক্রম অবশ্য আছে কিছু কিছু। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, আলোচনা কিংবা বিতর্ক নোংরা দলবাজির চোরাবালিতে হারিয়ে যায়, দর্শক-শ্রোতাকে নতুন চিন্তার কোনো খোরাক জোগান দিতে পারে না। দলীয় সুশীলদের এসব জাবরকাটা দেখে ও শুনে টক শোর ওপর অনেকেই বীতশ্রদ্ধ হয়ে পড়েছেন। অনেককেই বলতে শোনা যায়, রাতের ঘুম নষ্ট করে আওয়ামী-বিএনপির ঝগড়া দেখার কোনো মানে হয় না। ঝগড়াঝাঁটি মাঝেমধ্যে এমন পর্যায়ে চলে যায়, তখন আর তা বিনোদনের পর্যায়েও থাকে না। আলোচনার মধ্যে হাতের আস্তিন গোটানো ও অশ্রাব্য গালমন্দও হতে দেখেছি আমরা। শোভনতার সীমা অতিক্রমকারীদের বর্জন করারও তেমন কোনো উদ্যোগ দেখা যায় না।
এখন অবস্থা এমন হয়েছে যে আলোচকদের নাম শুনেই কিংবা চেহারা দেখেই বলে দেওয়া যায়, তাঁরা বিভিন্ন পেশাজীবী পরিচয় থাকা সত্ত্বেও মূলত এই দলের কিংবা ওই দলের। অথচ নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি হিসেবে তাঁরা সত্যিকার অর্থেই নাগরিক ভাবনা তুলে ধরতে পারেন এবং জনমত গঠনে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারেন। এখানে একটি বিষয় লক্ষ করার মতো। আলোচকরা সবাই আলোচ্য বিষয়ের ব্যাপারে বিশেষজ্ঞ, তা জোর গলায় বলা যাবে না। অবস্থা এমন হয়েছে যে বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো বিষয়ে শিক্ষকতার চাকরি করলেই তাঁকে ওই বিষয়ের একজন বিশেষজ্ঞ হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়। যেমন, রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষক মানেই রাজনীতি বিশেষজ্ঞ, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে শিক্ষকতার চাকরি করলেই তিনি আন্তরাষ্ট্র সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ, সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তা হলেই তিনি নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ, অবসরপ্রাপ্ত অসামরিক কর্মকর্তা হলেই তিনি জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ, আর সাংবাদিক হলেই সবজান্তা। অথচ আমরা জানি যে সাহিত্যের শিক্ষক মাত্রেই সাহিত্যিক নন, বিজ্ঞানবিষয়ক লেখক হলেই তিনি বিজ্ঞানী হবেন না এবং নারী মাত্রই জেন্ডার-সংবেদনশীল নন। তাঁরা অনেক সময় এমনভাবে আলোচনা করেন, যা কিনা কষ্টকল্পিত এবং জোর করে জ্ঞান দেওয়ার মতো। টক শো উপস্থাপনার ক্ষেত্রেও সমস্যা আছে। উপস্থাপক অনেক ক্ষেত্রেই উপস্থাপিত বিষয়ের ওপর ‘হোমওয়ার্ক’ করে আসেন না। কী রকম প্রশ্ন করতে হবে এবং কখন সেই প্রশ্নটি করতে হবে, এটা অনেক সময় তাঁরা বোঝেন বলে মনে হয় না। সবচেয়ে বিরক্তিকর ঠেকে, যখন আলোচনা বেশ একটু প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে, ঠিক তখনই আলোচনা থামিয়ে উপস্থাপক বলেন, ‘এখন আমাকে একটি বিজ্ঞাপন বিরতিতে যেতে হবে’।
আমাদের দেশে এ ধরনের ‘পাবলিক ডিক্টেটর’ বড়ই অভাব। টক শোর মাধ্যমে আমি কিছু কিছু বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছি এবং আলোচনা শুনেছি। উদাহরণ হিসেবে আমি প্রাকৃতিক সম্পদ, বিশেষ করে গ্যাস-কয়লা উত্তোলন বিষয়ে বিতর্ক, নদীদূষণ কিংবা খাল খনন, এসবের উল্লেখ করতে পারি। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, আমাদের চ্যানেলগুলো অধিকাংশ ক্ষেত্রেই রাজনৈতিক বিষয়গুলো এমনভাবে উপস্থাপন করে, যেখানে মননশীল আলোচনা থাকে প্রায়ই অনুপস্থিত। তারা এমন সব আলোচককে নেমন্তন্ন করেন, যাঁরা ঘুরেফিরে আওয়ামী-বিএনপি ঝগড়ার আবর্তের বাইরে যেতে পারেন না। রাজনীতিতে যেমন এই দুই পরাশক্তির প্রবল উপস্থিতি, টক শোতে অংশ নেওয়া আলোচকেরাও নিজেদের সুশীল কোর্তার ভেতর থেকে কোনো একটি দলের প্রতি আনুগত্যের সনদটি বের করে নিয়ে আসেন। ব্যতিক্রম অবশ্য আছে কিছু কিছু। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, আলোচনা কিংবা বিতর্ক নোংরা দলবাজির চোরাবালিতে হারিয়ে যায়, দর্শক-শ্রোতাকে নতুন চিন্তার কোনো খোরাক জোগান দিতে পারে না। দলীয় সুশীলদের এসব জাবরকাটা দেখে ও শুনে টক শোর ওপর অনেকেই বীতশ্রদ্ধ হয়ে পড়েছেন। অনেককেই বলতে শোনা যায়, রাতের ঘুম নষ্ট করে আওয়ামী-বিএনপির ঝগড়া দেখার কোনো মানে হয় না। ঝগড়াঝাঁটি মাঝেমধ্যে এমন পর্যায়ে চলে যায়, তখন আর তা বিনোদনের পর্যায়েও থাকে না। আলোচনার মধ্যে হাতের আস্তিন গোটানো ও অশ্রাব্য গালমন্দও হতে দেখেছি আমরা। শোভনতার সীমা অতিক্রমকারীদের বর্জন করারও তেমন কোনো উদ্যোগ দেখা যায় না।
এখন অবস্থা এমন হয়েছে যে আলোচকদের নাম শুনেই কিংবা চেহারা দেখেই বলে দেওয়া যায়, তাঁরা বিভিন্ন পেশাজীবী পরিচয় থাকা সত্ত্বেও মূলত এই দলের কিংবা ওই দলের। অথচ নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি হিসেবে তাঁরা সত্যিকার অর্থেই নাগরিক ভাবনা তুলে ধরতে পারেন এবং জনমত গঠনে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারেন। এখানে একটি বিষয় লক্ষ করার মতো। আলোচকরা সবাই আলোচ্য বিষয়ের ব্যাপারে বিশেষজ্ঞ, তা জোর গলায় বলা যাবে না। অবস্থা এমন হয়েছে যে বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো বিষয়ে শিক্ষকতার চাকরি করলেই তাঁকে ওই বিষয়ের একজন বিশেষজ্ঞ হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়। যেমন, রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষক মানেই রাজনীতি বিশেষজ্ঞ, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে শিক্ষকতার চাকরি করলেই তিনি আন্তরাষ্ট্র সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ, সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তা হলেই তিনি নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ, অবসরপ্রাপ্ত অসামরিক কর্মকর্তা হলেই তিনি জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ, আর সাংবাদিক হলেই সবজান্তা। অথচ আমরা জানি যে সাহিত্যের শিক্ষক মাত্রেই সাহিত্যিক নন, বিজ্ঞানবিষয়ক লেখক হলেই তিনি বিজ্ঞানী হবেন না এবং নারী মাত্রই জেন্ডার-সংবেদনশীল নন। তাঁরা অনেক সময় এমনভাবে আলোচনা করেন, যা কিনা কষ্টকল্পিত এবং জোর করে জ্ঞান দেওয়ার মতো। টক শো উপস্থাপনার ক্ষেত্রেও সমস্যা আছে। উপস্থাপক অনেক ক্ষেত্রেই উপস্থাপিত বিষয়ের ওপর ‘হোমওয়ার্ক’ করে আসেন না। কী রকম প্রশ্ন করতে হবে এবং কখন সেই প্রশ্নটি করতে হবে, এটা অনেক সময় তাঁরা বোঝেন বলে মনে হয় না। সবচেয়ে বিরক্তিকর ঠেকে, যখন আলোচনা বেশ একটু প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে, ঠিক তখনই আলোচনা থামিয়ে উপস্থাপক বলেন, ‘এখন আমাকে একটি বিজ্ঞাপন বিরতিতে যেতে হবে’।
এটা অনেক সময় আগুনে জল ঢেলে দেওয়ার মতো। চ্যানেলগুলোর বাণিজ্যিক দিকটা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু একটা আলোচনাকে মাঝপথে খুন করে বিজ্ঞাপন দেখিয়ে বিতর্কের মজাটাই তেতো করে দেওয়া হয়। কিছু কিছু উপস্থাপক কথা বলেন বেশি এবং অনেক সময় তা হয় অপ্রাসঙ্গিক ও অবান্তর। তাঁরা বুঝতে চান না, দর্শক-শ্রোতা উপস্থাপকের বাণী শোনার জন্য টেলিভিশনের সামনে বসেননি, তাঁরা আলোচকদের কথাই শুনতে চান। ইলেকট্রনিক গণমাধ্যমগুলোর ব্যাপারে আমার নিজস্ব একটি পর্যবেক্ষণ আছে। এ দেশে চ্যানেল অনেক। সব কটিই চালানো হয় ২৪ ঘণ্টা। কিন্তু ২৪ ঘণ্টা চ্যানেল চালানোর মতো পর্যাপ্ত মাল-মসলা তাদের হাতে নেই। তাই দেখা যায়, যেনতেন প্রকারে একটা প্রোগ্রাম বানিয়ে প্রচারের প্রবণতা, একই জিনিস বারবার দেখানো, ১০ মিনিটের প্রোগ্রাম ৪০ মিনিট ধরে দেখানোর কারণে বাকি ৩০ মিনিট বিজ্ঞাপন প্রচার এবং একই বিজ্ঞাপন দু-এক মিনিট পর পর পুনঃপ্রচার করে দর্শক-শ্রোতার বিরক্তি উৎপাদন করা। এ সবকিছুর ভিকটিম হলেন দর্শক-শ্রোতা। জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়ে মননশীল আলোচনার কোনো বিকল্প নেই। পত্রপত্রিকায় তাৎক্ষণিক বিতর্কের সুযোগ নেই, যা আছে টিভি চ্যানেলগুলোতে। এ জন্য প্রয়োজন উপস্থাপকদের একটু পরিশ্রম করা, একটু পড়াশোনা করে নেওয়া। বিষয়ের ওপর দখল আছে, এমন আলোচকদের খুঁজে বের করা এবং তাঁদের নিয়ে আসা। আলোচকদের দায়িত্ব অনেক। তাঁদের কাজ হলো,
বিষয়টির বিভিন্ন দিক নির্মোহভাবে উপস্থাপন ও আলোচনা করা, কোনো রাজনৈতিক দলের তত্ত্ব ফেরি করা নয়। রাজনৈতিক বিষয়ের ওপর রাজনৈতিক দলের মতামত জানার সবচেয়ে সহজ ও উত্তম উপায় হলো রাজনৈতিক দলের কোনো মুখপাত্রকে আলোচক হিসেবে নিয়ে আসা, কোনো ‘সুশীল’কে নয়। আমাদের অনেক ‘সুশীল’ এটা বুঝতে চান না যে ‘রাজনীতি’ করলে তিনি আর ‘সুশীল’ থাকেন না। আমাদের দেশে অনেক সমস্যা। অনেক আলোচকের কথা শুনলে মনে হয়, সব সমস্যা তাঁর জানা এবং সমাধানের ধন্বন্তরি ওষুধটাও তাঁর পকেটে আছে। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। সমস্যা চিহ্নিত করার জন্য চাই সুস্থ আলোচনা এবং সমাধানের জন্য দরকার গঠনমূলক বিতর্ক। সবকিছু সরলরেখায় চলে না। একটি বিষয় আরও ১০টি বিষয়ের ওপর নির্ভরশীল। একটি সমস্যার সমাধান করতে হলো আরও ১০টি সমস্যাকে সমান্তরালভাবে আমলে নেওয়া দরকার। এভাবেই গড়ে উঠতে পারে বহুমাত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি। আর তখনই টক শো হবে প্রাণবন্ত, অর্থবহ ও শিক্ষণীয়। জাতীয় সংসদে আমরা যে ঝগড়াঝাঁটি দেখে অভ্যস্ত, টেলিভিশনের পর্দায় আমরা তার পুনরাবৃত্তি দেখতে চাই না। আমরা চাই, টক শো হোক মুক্তবুদ্ধি চর্চার ক্ষেত্র, যেখানে দর্শক-শ্রোতা চিন্তার খোরাক পাবেন, বিষয়টি নিয়ে ভাববেন। তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি আরও স্বচ্ছ হবে এবং নিজের সীমিত ক্ষমতা ও সুযোগ ব্যবহার করে অবদান রাখার ব্যাপারে অনুপ্রাণিত হবেন।
মহিউদ্দিন আহমদ: লেখক ও গবেষক।
মহিউদ্দিন আহমদ: লেখক ও গবেষক।
No comments