মোল্লার চিঠি, সমালোচনা এবং রনির জবাব by গোলাম মাওলা রনি
এই শতাব্দীর সেরা পন্ডিত শ্রী নিরোদ
চন্দ্র চৌধুরী বহু বছর আগে লিখেছিলেন বাঙ্গালী জীবনে রমনী নামের এক অকাট্য
প্রামান্য দলিল। নিরোদ বাবু চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়েছেন যে- অবহমান বাংলার
গ্রাম গঞ্জে নারী পুরুষ কিভাবে অবাধ এবং নীতিহীন যৌনাচারে মেতে ওঠে এবং
সমাজ সংসারকে ফাঁকি দিয়ে একের পর এক জারজ সন্তান পয়দা করে। প্রায় ষাট বছর
হতে চললো - কিন্তু আজ অবধি নিরোদ বাবুর বইকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে কোন বাঙ্গালী
লেখক কোন বই রচনা করেননি।
দেশ বিদেশের সমাজ বিজ্ঞানীগণ এবং মনো বিজ্ঞানীগণ পিতা মাতার অবৈধ সন্তানদের কতগুলি সাধারণ বৈশিষ্ট বর্ণনাা করেছেন। প্রথমত: তারা কথায় কথায় অশ্লীল বাক্য ব্যবহার করে যাকে আমরা সোজা বাংলায় বলি- অকথ্য ভাষায় গালি গালাজ। এরা খুবই অধৈর্য্য প্রকৃতির এবং সন্দেহ প্রবণ হয়ে থাকে। কখনো কখনো তারা অতিমাত্রায় অত্যাচারী হয়ে ওঠে আবার একই ব্যক্তি প্রতিকুল পরিবেশে- নিজেকে ছোট করতে করতে পশুর পর্যায়ে নিয়ে যায়। তাদের বিবেক বলতে তেমন কিছু থাকে না। ফলে তাবৎ বিশ্বে অনাদীকাল থেকে পিতা মাতার অবৈধ সন্তানরা সমাজ, রাষ্ট্র এমনকি পরিবার কর্তৃক পরিত্যক্ত হয়ে আসছে।
আজ আমার হঠাৎ করেই এসব কথা মনে পড়লো একটি কারণে। গতকাল ফেইসবুকে যুদ্ধাপরাধের দায়ে সাজাপ্রাপ্ত কাদের মোল্লার অন্তিম অনুরোধ রাখতে গিয়ে আমি একটি স্ট্যাটাস দেই। এরপর থেকে কিছু অমানুষের অশ্লীল বাক্যবানে ফেইসবুকের পাতা ভরে যেতে থাকে। ওদের পাশবিক অভিব্যক্তি কেবল তাদের পিতা মাতার কর্মকেই স্মরণ করিয়ে দেয়।
পৃথিবীতে মানুষ আসার পর থেকেই এক মানুষ অন্য মানুষের অন্তিম ইচ্ছার প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মান দেখায়। মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত আসামীকে ফাঁসিতে ঝোলানোর আগে তার শেষ ইচ্ছা পূরণ করা হয়। পছন্দমতো খাবার পরিবেশন কিংবা নিকটতম আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে দেখা সাক্ষাতের ব্যবস্থা করা হয়। আসামী যদি মুসলমান হয় সে ক্ষেত্রে মৌলভী ডেকে দোয়া দরুদ পড়ানো হয়। কাদের মোল্লার অন্তিম মূহুর্তের একটি অছিয়ত পালন করে মানুষ হিসেবে আমি নিজের কর্তব্যটুকু পালন করেছি মাত্র।
যে সব তরুন বন্ধুরা ফাঁসি চাই ফাঁসি চাই বলে দাবী তুলছেন তাদেরকে বলবো চলে যান ফরিদপুর জেলার সদরপুর থানার আমিরাবাদ গ্রামে । গ্রামের দীন দরিদ্র ঘনা মোল্লার ঘরে কাদের মোল্লা কতসালে জন্ম গ্রহন করেছিলো সেই তথ্য নিয়ে কাজ শুরু করুন। তারপর যান- বাইশ রশি শিব সুন্দরী একাডেমীতে সেখানে কাদের মোল্লা প্রথমে ম্যাট্রিক পর্যন্ত পড়েন এবং পরে একই প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করেন। নিজের দারিদ্রতার জন্য তিনি এলাকার সম্ভ্রান্ত মুসলিম পীর ধলামিয়া সাহেবের বাড়ীতে লজিং থাকতেন। এই লজিং থাকার সময়কাল সম্পর্কে এলাকাবাসীর সাক্ষ্য নিন।
ধলামীয়া পীর সাহেবের পরিবার- ব্রিটিশ আমল থেকে এলাকার অত্যন্ত সম্ভ্রান্ত এবং সম্মানিত পরিবার হিসেবে পরিচিত। পীর সাহেবের বড় ভাই আবুল হাসানাত ১৯৫৩ সালে পাকিস্তানের আইজি ছিলেন। বঙ্গবন্ধু আইজি সাহেবকে পিতার মতো শ্রদ্ধা করতেন। পীর সাহেবের পরিবার মহান মুক্তিযুদ্ধের সমর্থক ছিলেন এবং তার মেয়ের জামাই গাফফার ইঞ্জিনিয়ার ফরিদপুর জেলার মুক্তিযোদ্ধাদের কমান্ডো বাহিনীর প্রধান ছিলেন। এই গাফফার ইঞ্জিনিয়ারের স্ত্রী ছিলেন কাদের মোল্লার ছাত্রী।
ঢাকা প্রেসক্লাবে এসেও তার সর্ম্পকে খোঁজ নিতে পারেন। নির্মল সেন ও সন্তোষ গুপ্তের মতো সাংবাদিকগণ যখন দেশের সংবাদিক সমাজকে নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন তখন কাদের মোল্লা ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সহ-সভাপতি হিসেবে কিভাবে দুইবার নির্বাচিত হলেন? তার চাকরী জীবনে উদয়ন স্কুল কিংবা বিডিআর পাবলিক স্কুল এ্যান্ড কলেজে গিয়েও খোঁজ নিতে পারেন।
আমি যে তথ্য গুলো দিলাম- তা কিন্তু আমার নয়। আসামী পক্ষ উত্থাপন করেছিল। সরকার নিয়োজিত প্রসিকিউটরগণ একটু চেষ্টা করলেই ঐ গুলোর সত্য মিথ্যা যাচাই বাছাই করতে পারতো। কিন্তু তা না করে কেবল ঘটনাস্থল মিরপুরকে কেন্দ্র করে- তথ্য উপাত্ত এবং স্বাক্ষী প্রমান হাজির করায় সংক্ষুব্ধ পক্ষ তাদের আপত্তি উত্থাপন করার সুূযোগ পাচ্ছে। সার্বিক পরিস্থিতিতে এটা আপনার জন্য বিবেকের দায় হয়ে দাড়িয়েছে যে- আপনি সবকিছু শুনবেন না কি কিছু কিছু শুনবেন এবং বাকীগুলো শুনবেনই না।
আমি যখন স্টাটাসটি প্রথম লিখেছিলাম তখন ধরে নিয়েছিলাম রাত ১২ টা ১ মিনিটে তা কার্যকর হবে। অন্যদিকে আজ যখন লিখছি তখন খবর এল কাদের মোল্লার রিভিউ আবেদন খারিজ হয়ে গেছে। ধারনা করা যায় আজ রাতেই তার ফাঁসি কার্যকর হবে। এটা নিয়ে আমার কোনো মাথা ব্যাথা বা দায় দায়িত্ব নেই। আমার দায়িত্ব কেবল ততটুকুই যতটুকু আমি জানি এবং যতটুকু পর্যন্ত আমার ক্ষমতা কার্যকর। আল্লাহ পাক যাদেরকে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব দিয়েছেন তারাই ভাল জানবেন কিংবা বলবেন- দুনিয়া এবং আখিরাতে।
সূত্র: ফেসবুক স্ট্যাটাস
No comments