৩৬৫ দিনই হরতাল-অবরোধ ডাকুন! by এ কে এম শাহ নাওয়াজ
নন্দিত
লেখক হুমায়ূন আহমেদ ক্রোধ কমানোর উপায় হিসেবে কাচের গ্লাস ছুড়ে ভেঙে ফেলার
একটি টিপস দিয়েছিলেন তার নাটকে। অনেক বছর আগে দেখা হানিফ সংকেতের জনপ্রিয়
ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ইত্যাদির একটি এপিসোডের কথা মনে পড়ছে। আমাদের দেশে
সংঘবদ্ধ শক্তির ক্ষোভ প্রকাশের প্রধান মাধ্যম বা প্রতিবাদের প্রধান মাধ্যম
গাড়ি ভাংচুর। ইত্যাদি অনুষ্ঠানের একটি সিকোয়েন্সে মর্মান্তিক রসিকতার
মাধ্যমে ‘ভাঙ গাড়ি’ স্লোগানটি দর্শকের মনে বেশ দাগ কেটেছিল। পারিবারিক,
সামাজিক বা রাজনৈতিক ছোট-বড় সংকট, মান অভিমান, ঝগড়া হল, তো তার খেসারত ‘ভাঙ
গাড়ি’। আমার ছাত্র রনি- এখন আমার সহকর্মী, মনে করিয়ে দিল নব্বইয়ের
গণঅভ্যুত্থানে এরশাদের পতনের পর মানুষ মজা করে বলত গণতন্ত্র ফিরে পেয়েছি
তাই ‘ভাঙ গাড়ি’। বিষয়টি এখন আর ব্যঙ্গাÍক কোনো শ্লেষ নয়- বাংলাদেশের জন্য
এটি প্রতিষ্ঠিত সত্য হয়ে গেছে। রাজনৈতিক আন্দোলনে গাড়ি ভাঙা-আগুন দেয়া
এদেশের জন্য একটি পুরনো সংস্কৃতি। তবে এর ক্রমবিবর্তন হচ্ছে। আগে গাড়ি
ভাঙার বিপ্লবীরা গাড়ি থামিয়ে, যাত্রীদের নামিয়ে গাড়ি ভাঙত। আগুন দিত।
যেহেতু সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন তাই সরকারি গাড়ির ওপরই ক্ষোভ ছিল বেশি।
এখন সময় পাল্টেছে। প্রতিবাদের বহিঃপ্রকাশ আরও প্রবল হয়েছে। তাই
প্রতিবাদকারীদের ‘অ্যাকশন পার্টি’ শতভাগ সাফল্যের আশায় যাত্রীসহ গাড়ি ভাঙে
আর পেট্রল বোমা ছুড়ে যাত্রীসহ যানবাহন পোড়ায়। এখন বাছবিচারও নেই। নিরপরাধ
সাধারণ নাগরিকের প্রাইভেট কার, দরিদ্র সিএনজি অটোচালকের জীবিকার অবলম্বন,
ধান বোঝাই ট্রাক, যাত্রীবাহী বাস, জনগণের টাকায় সদ্য কেনা কোটি কোটি টাকার
দোতলা বাস, রফতানিকারকের কাভার্ড ভ্যান, রেলের বগি সবই জ্বলছে আগুনে।
পত্রিকার খবরে জানা যায়, এমন সাহসিকতার জন্য সহিংসতার ওজন অনুযায়ী অ্যাকশনে
থাকা বীরদের আন্দোলনকারী দলগুলো পুরস্কৃত করে। বড় অদ্ভুত এজন্য যে, এসব
অপকীর্তির জন্য কোনো জবাবদিহিতার প্রয়োজন নেই। যারা অবরোধ-হরতাল ডাকেন তারা
এ নিয়ে সামান্য দুঃখ প্রকাশও করেন না। এভাবে সাধারণ মানুষের বুকে ছুরি
চালিয়ে আবার এই বিপন্ন মানুষের ভোট আশা করেন। নির্লজ্জের মতো ভোট ভিক্ষার
হাত বাড়িয়ে দেন হিংসার আগুনে ঝলসে দেয়া সাধারণ মানুষের দিকেই।
এদেশের কোটি কোটি সাধারণ মানুষ বুঝে পায় না তাদের অপরাধ কী! ঝগড়া আঠারো দলের সঙ্গে মহাজোটের। অথবা ছোট করে বললে বিএনপির সঙ্গে আওয়ামী লীগের। আরও ছোট করে বললে খালেদা জিয়ার সঙ্গে শেখ হাসিনার। তাহলে প্রতিদিন সাধারণ মানুষকে শাস্তি দিচ্ছেন কেন? এভাবে আন্দোলনের নামে যখন দেশবাসীর ওপর সহিংসতা চাপিয়ে দেয়া হয়, তখন এর দায়টি প্রধানত পড়ে হরতাল-অবরোধ ডাকিয়ে দলের ওপর। অর্থাৎ বিরোধী দলের ওপর। আর আচার-আচরণ, বক্তৃতা-বিবৃতিতে বিরোধী দল তো সততার সঙ্গে জানিয়েই দিয়েছে যে, জনগণের ওপর তাদের আস্থা নেই। যা কিছু করবে পেশিশক্তি দিয়েই করবে। যখন বিএনপি নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া নির্বাচন করবে না বলে জানাচ্ছিল, তখন আওয়ামী লীগ প্রস্তুতি নিচ্ছিল দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের। এরপর একটু সরে এসে বহুদলীয় নামের একটি সরকার গঠন করে। আওয়ামী লীগের অনড় অবস্থা দেখে বিএনপি নেত্রী, ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব থেকে শুরু করে অন্য নেতারা মঞ্চে দাঁড়িয়ে বলতেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া নির্বাচন হবে না, হতে দেয়া হবে না।’ দ্বিতীয় লাইনটি যদি বলতেন, ‘জনগণ হতে দেবে না’, তাহলে একরকম মেনে নেয়া যেত। কিন্তু যখন বলা হয়, ‘হতে দেয়া হবে না’ তখন এর মধ্যে একটি বলপ্রয়োগের ইঙ্গিত থাকে। অর্থাৎ জনগণের শক্তির প্রতি আমাদের নেতানেত্রীর আস্থা নেই। তারা পেশিশক্তিরই সাধনা করছেন।
এখন সে হুমকিরই বাস্তবায়ন করছেন বিএনপি-জামায়াত নেতারা। আওয়ামী লীগের দলীয় বা বহুদলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে দেবেন না বিধায় এখন শক্তি প্রয়োগে পথে নেমেছেন। রণসাজে মাঠে নামিয়েছেন জামায়াত-শিবিরের জঙ্গি ক্যাডারদের। ছাত্রদল-যুবদলের কর্মীদের। নেতারা আত্মগোপনে থেকে জেহাদি প্রেরণা দিচ্ছেন আর মাঠের কর্মী-শিষ্যরা বোমা-ককটেল নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ছে। যদিও এরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বা অন্য মন্ত্রীদের টিকি ছুঁতে পারছেন না। সরকারি দলের রাজনীতিক এবং মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের গাড়িতে পেট্রল বোমা মারতে পারছেন না। তাই সব রাগ এসে পড়ছে সাধারণ মানুষের ওপর। সরকার কেন বিএনপির প্রস্তাব মানল না, তাই প্রতিবাদে বাসে ছুড়ে দেয়া হয় পেট্রল বোমা। তাতে ঝলসে যাচ্ছে নিরীহ মানুষ। ঋণ নিয়ে কেনা অটোরিকশা বা ট্রাক চালকসহ পুড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। অনিশ্চিত অন্ধকারে ঠেলে দেয়া হচ্ছে পরিবারগুলোকে। প্রাইমারি থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত স্থবির হয়ে যাচ্ছে শিক্ষা পরিবেশ। দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য থমকে গেছে। অর্থনীতির মেরুদণ্ডে পড়ছে আঘাত। কর্মহীন হয়ে পড়ছেন খেটে খাওয়া মানুষ। মেডিকেলের বার্ন ইউনিটে ঝলসে যাওয়া মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। বোমার আঘাত থেকে শিশু রক্ষা পাচ্ছে না। এসব দেখে নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে, সরকারের আচরণে ক্ষুব্ধ বিএনপি-জামায়াত সাধারণ মানুষের ওপর প্রতিশোধ নিচ্ছে। তাহলে কি আমাদের বিরোধী শিবিরের আঠারো দলের নেতারা বলতে চাচ্ছেন- এদেশের ষোল কোটি মানুষের অধিকাংশ আওয়ামী লীগের পক্ষে? তাই আওয়ামী লীগকে শিক্ষা দিতে সাধারণ মানুষের ওপর চালানো হচ্ছে সন্ত্রাসী আক্রমণ!
সাধারণ মানুষের ওপর প্রাণঘাতী আঘাত হানার জন্য এখন প্রতিদিন আদেশ জারি হচ্ছে বহু ঘণ্টার অবরোধ-হরতালের। কখনও কর্মসূচিকে জোরালো করার জন্য নানা উপলক্ষ এনে অবরোধের ওপর আরেকটি হরতালও চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে। দুর্ভাগ্য এই, আমাদের রাজনীতিকরা জনগণের কথা বলে রাজনীতি করেন আবার জনগণের বুকেই ধরেন তীক্ষè ছুরি। ৭২ ঘণ্টা অবরোধের ডাক দিয়ে মাঝপথে টেনে দেন পুরো সপ্তাহ পর্যন্ত। খেলাচ্ছলেই যেন অবরোধের পরিধি বাড়িয়ে করেন ১৪৪ ঘণ্টা। ভিডিও টেপে ঘোষণা দিলেই হল। এরপর নিরাপদ আশ্রয়ে নেতারা। আর খুচরো কর্মী এবং টাকার বিনিময়ে মাঠে নামানো টোকাইরা গ্রেফতার, পুলিশি ঠেঙানি আর বুলেট হজম করে মানুষ খুনে মত্ত হয়। আহত করে নিজ স্বজনদেরই। পুড়িয়ে দেয় রাষ্ট্রের সম্পত্তি। নিজেদেরই অর্থনীতিতে আঘাত হানে। আর নেতারা গুনতে থাকেন কতটা অরাজকতা করে লক্ষ্য পূরণের কাছাকাছি যেতে পেরেছেন। এভাবে প্রতারণার রাজনীতিতে নাভিশ্বাস উঠছে মানুষের। সাধারণ মানুষকে শাস্তি দেয়ার ছলের অভাব নেই আমাদের রাজনীতিকদের। বিরোধী দল যেন নিশ্চিত হয়েছে এদেশের সাধারণ মানুষের জীবন বিপন্ন করলে, অর্থনীতিকে পঙ্গু করে দিলে দুর্বল হয়ে যাবে সরকার। সরকার পক্ষও ভাবছে, দৃঢ়তার সঙ্গে ক্ষমতা আঁকড়ে থাকতে হবে। যতক্ষণ ঢাল হিসেবে সাধারণ মানুষ আছে ততক্ষণ তাদের গায়ে কোনো আঁচড় লাগবে না। এভাবে বিরোধী দল সাধারণ মানুষের জীবন সংহার করতে করতে একসময় নির্জীব হয়ে যাবে। সাধারণ মানুষ এদের বিরুদ্ধে বিক্ষুব্ধ হবে। আর সেই ফাঁক গলে পুনরুজ্জীবন ঘটবে সরকারের।
এখন তো বিরোধী দলের যেন নেশা চেপে গেছে হরতাল-অবরোধের রেকর্ড গড়তে। কারণটি কতটা যৌক্তিক তা নিয়ে আর ভাবছেন না নেতানেত্রীরা। এখন অবরোধের ভেতরেই জাতীয় হরতাল, আঞ্চলিক হরতাল হরদম হচ্ছে। আর উপলক্ষ? তা পেতেও সমস্যা নেই। বড় নেতারা গ্রেফতার হলে জাতীয় বা আঞ্চলিক হরতাল আর ছোটখাটোরা ধরা পড়লে বা অন্তর্ঘাতে নিহত হলে যার যার জেলায় বা উপজেলায় হরতাল। ভোটার লিস্টে তারেক জিয়ার নাম নেই কেন, সেজন্য বগুড়ায় ৩৬ ঘণ্টা হরতাল আর মানিকগঞ্জে একদিনের হরতাল। বিচারিক সব কার্যক্রম নিয়মমাফিক শেষ হয়েছে। আপিল পর্যন্ত আইনি লড়াই করেছে আসামি পক্ষ। রায় হয়েছে জামায়াত নেতা কাদের মোল্লার ফাঁসি। আমরা ছোট থেকে জেনে এসেছি হাকিম নড়ে তো হুকুম নড়ে না। এখন হুকুম নড়ানোর জন্যই কি হরতাল ডাকা হয়? নিয়মমতো তো কাদের মোল্লার মৃত্যু পরোয়ানা জেলখানায় যাবে। কিন্তু জামায়াত নেতাদের প্রশ্ন- কেন যাবে? সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের বিরুদ্ধেই যেন দু’দিনের জামায়াতি হরতাল চাপিয়ে দেয়া হল সাধারণ মানুষের ঘাড়ে। ভিন্ন কোনো আইনি ব্যাখ্যা থাকলে তার জন্য আইনের পথে লড়াই হতে পারে। মানুষকে জিম্মি করা কেন! সাধারণ মানুষ কি কাদের মোল্লাকে ফাঁসি দিয়েছে? হ্যাঁ, একটি অপরাধ
এদেশের কোটি কোটি সাধারণ মানুষ বুঝে পায় না তাদের অপরাধ কী! ঝগড়া আঠারো দলের সঙ্গে মহাজোটের। অথবা ছোট করে বললে বিএনপির সঙ্গে আওয়ামী লীগের। আরও ছোট করে বললে খালেদা জিয়ার সঙ্গে শেখ হাসিনার। তাহলে প্রতিদিন সাধারণ মানুষকে শাস্তি দিচ্ছেন কেন? এভাবে আন্দোলনের নামে যখন দেশবাসীর ওপর সহিংসতা চাপিয়ে দেয়া হয়, তখন এর দায়টি প্রধানত পড়ে হরতাল-অবরোধ ডাকিয়ে দলের ওপর। অর্থাৎ বিরোধী দলের ওপর। আর আচার-আচরণ, বক্তৃতা-বিবৃতিতে বিরোধী দল তো সততার সঙ্গে জানিয়েই দিয়েছে যে, জনগণের ওপর তাদের আস্থা নেই। যা কিছু করবে পেশিশক্তি দিয়েই করবে। যখন বিএনপি নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া নির্বাচন করবে না বলে জানাচ্ছিল, তখন আওয়ামী লীগ প্রস্তুতি নিচ্ছিল দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের। এরপর একটু সরে এসে বহুদলীয় নামের একটি সরকার গঠন করে। আওয়ামী লীগের অনড় অবস্থা দেখে বিএনপি নেত্রী, ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব থেকে শুরু করে অন্য নেতারা মঞ্চে দাঁড়িয়ে বলতেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া নির্বাচন হবে না, হতে দেয়া হবে না।’ দ্বিতীয় লাইনটি যদি বলতেন, ‘জনগণ হতে দেবে না’, তাহলে একরকম মেনে নেয়া যেত। কিন্তু যখন বলা হয়, ‘হতে দেয়া হবে না’ তখন এর মধ্যে একটি বলপ্রয়োগের ইঙ্গিত থাকে। অর্থাৎ জনগণের শক্তির প্রতি আমাদের নেতানেত্রীর আস্থা নেই। তারা পেশিশক্তিরই সাধনা করছেন।
এখন সে হুমকিরই বাস্তবায়ন করছেন বিএনপি-জামায়াত নেতারা। আওয়ামী লীগের দলীয় বা বহুদলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে দেবেন না বিধায় এখন শক্তি প্রয়োগে পথে নেমেছেন। রণসাজে মাঠে নামিয়েছেন জামায়াত-শিবিরের জঙ্গি ক্যাডারদের। ছাত্রদল-যুবদলের কর্মীদের। নেতারা আত্মগোপনে থেকে জেহাদি প্রেরণা দিচ্ছেন আর মাঠের কর্মী-শিষ্যরা বোমা-ককটেল নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ছে। যদিও এরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বা অন্য মন্ত্রীদের টিকি ছুঁতে পারছেন না। সরকারি দলের রাজনীতিক এবং মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের গাড়িতে পেট্রল বোমা মারতে পারছেন না। তাই সব রাগ এসে পড়ছে সাধারণ মানুষের ওপর। সরকার কেন বিএনপির প্রস্তাব মানল না, তাই প্রতিবাদে বাসে ছুড়ে দেয়া হয় পেট্রল বোমা। তাতে ঝলসে যাচ্ছে নিরীহ মানুষ। ঋণ নিয়ে কেনা অটোরিকশা বা ট্রাক চালকসহ পুড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। অনিশ্চিত অন্ধকারে ঠেলে দেয়া হচ্ছে পরিবারগুলোকে। প্রাইমারি থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত স্থবির হয়ে যাচ্ছে শিক্ষা পরিবেশ। দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য থমকে গেছে। অর্থনীতির মেরুদণ্ডে পড়ছে আঘাত। কর্মহীন হয়ে পড়ছেন খেটে খাওয়া মানুষ। মেডিকেলের বার্ন ইউনিটে ঝলসে যাওয়া মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। বোমার আঘাত থেকে শিশু রক্ষা পাচ্ছে না। এসব দেখে নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে, সরকারের আচরণে ক্ষুব্ধ বিএনপি-জামায়াত সাধারণ মানুষের ওপর প্রতিশোধ নিচ্ছে। তাহলে কি আমাদের বিরোধী শিবিরের আঠারো দলের নেতারা বলতে চাচ্ছেন- এদেশের ষোল কোটি মানুষের অধিকাংশ আওয়ামী লীগের পক্ষে? তাই আওয়ামী লীগকে শিক্ষা দিতে সাধারণ মানুষের ওপর চালানো হচ্ছে সন্ত্রাসী আক্রমণ!
সাধারণ মানুষের ওপর প্রাণঘাতী আঘাত হানার জন্য এখন প্রতিদিন আদেশ জারি হচ্ছে বহু ঘণ্টার অবরোধ-হরতালের। কখনও কর্মসূচিকে জোরালো করার জন্য নানা উপলক্ষ এনে অবরোধের ওপর আরেকটি হরতালও চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে। দুর্ভাগ্য এই, আমাদের রাজনীতিকরা জনগণের কথা বলে রাজনীতি করেন আবার জনগণের বুকেই ধরেন তীক্ষè ছুরি। ৭২ ঘণ্টা অবরোধের ডাক দিয়ে মাঝপথে টেনে দেন পুরো সপ্তাহ পর্যন্ত। খেলাচ্ছলেই যেন অবরোধের পরিধি বাড়িয়ে করেন ১৪৪ ঘণ্টা। ভিডিও টেপে ঘোষণা দিলেই হল। এরপর নিরাপদ আশ্রয়ে নেতারা। আর খুচরো কর্মী এবং টাকার বিনিময়ে মাঠে নামানো টোকাইরা গ্রেফতার, পুলিশি ঠেঙানি আর বুলেট হজম করে মানুষ খুনে মত্ত হয়। আহত করে নিজ স্বজনদেরই। পুড়িয়ে দেয় রাষ্ট্রের সম্পত্তি। নিজেদেরই অর্থনীতিতে আঘাত হানে। আর নেতারা গুনতে থাকেন কতটা অরাজকতা করে লক্ষ্য পূরণের কাছাকাছি যেতে পেরেছেন। এভাবে প্রতারণার রাজনীতিতে নাভিশ্বাস উঠছে মানুষের। সাধারণ মানুষকে শাস্তি দেয়ার ছলের অভাব নেই আমাদের রাজনীতিকদের। বিরোধী দল যেন নিশ্চিত হয়েছে এদেশের সাধারণ মানুষের জীবন বিপন্ন করলে, অর্থনীতিকে পঙ্গু করে দিলে দুর্বল হয়ে যাবে সরকার। সরকার পক্ষও ভাবছে, দৃঢ়তার সঙ্গে ক্ষমতা আঁকড়ে থাকতে হবে। যতক্ষণ ঢাল হিসেবে সাধারণ মানুষ আছে ততক্ষণ তাদের গায়ে কোনো আঁচড় লাগবে না। এভাবে বিরোধী দল সাধারণ মানুষের জীবন সংহার করতে করতে একসময় নির্জীব হয়ে যাবে। সাধারণ মানুষ এদের বিরুদ্ধে বিক্ষুব্ধ হবে। আর সেই ফাঁক গলে পুনরুজ্জীবন ঘটবে সরকারের।
এখন তো বিরোধী দলের যেন নেশা চেপে গেছে হরতাল-অবরোধের রেকর্ড গড়তে। কারণটি কতটা যৌক্তিক তা নিয়ে আর ভাবছেন না নেতানেত্রীরা। এখন অবরোধের ভেতরেই জাতীয় হরতাল, আঞ্চলিক হরতাল হরদম হচ্ছে। আর উপলক্ষ? তা পেতেও সমস্যা নেই। বড় নেতারা গ্রেফতার হলে জাতীয় বা আঞ্চলিক হরতাল আর ছোটখাটোরা ধরা পড়লে বা অন্তর্ঘাতে নিহত হলে যার যার জেলায় বা উপজেলায় হরতাল। ভোটার লিস্টে তারেক জিয়ার নাম নেই কেন, সেজন্য বগুড়ায় ৩৬ ঘণ্টা হরতাল আর মানিকগঞ্জে একদিনের হরতাল। বিচারিক সব কার্যক্রম নিয়মমাফিক শেষ হয়েছে। আপিল পর্যন্ত আইনি লড়াই করেছে আসামি পক্ষ। রায় হয়েছে জামায়াত নেতা কাদের মোল্লার ফাঁসি। আমরা ছোট থেকে জেনে এসেছি হাকিম নড়ে তো হুকুম নড়ে না। এখন হুকুম নড়ানোর জন্যই কি হরতাল ডাকা হয়? নিয়মমতো তো কাদের মোল্লার মৃত্যু পরোয়ানা জেলখানায় যাবে। কিন্তু জামায়াত নেতাদের প্রশ্ন- কেন যাবে? সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের বিরুদ্ধেই যেন দু’দিনের জামায়াতি হরতাল চাপিয়ে দেয়া হল সাধারণ মানুষের ঘাড়ে। ভিন্ন কোনো আইনি ব্যাখ্যা থাকলে তার জন্য আইনের পথে লড়াই হতে পারে। মানুষকে জিম্মি করা কেন! সাধারণ মানুষ কি কাদের মোল্লাকে ফাঁসি দিয়েছে? হ্যাঁ, একটি অপরাধ
No comments