কাণ্ডারী হুঁশিয়ার! by মুহাম্মদ ইসমাইল হোসেন
বর্তমান
অবস্থায় দেশের মানুষ কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে শুরু করেছেন।
ব্যাংকিং ব্যবসাসহ পুঁজিবাজারে আস্থার ভাব ফিরে আসার লক্ষণ দেখা দিচ্ছে।
সরকারি দল সর্বদলীয় সরকার গঠনের মাধ্যমে নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে যাচ্ছে এবং
তাতে ২/১টি দল সাড়া দিয়ে মন্ত্রিপরিষদে যোগদান করেছে। এ অবস্থায় বিরোধী দল
এগিয়ে এলে দেশের মানুষ এ যাত্রায় বেঁচে যায়। তবে এজন্য সরকারি দলকে আরও
উদার মনোভাব গ্রহণ করতে হবে। বিএনপি সর্বদলীয় সরকারে যোগদান করলে একটি
সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব হবে- বিএনপির মনে এমন আস্থা সৃষ্টি
করতে হবে। আর এ দায়িত্ব সরকারকেই গ্রহণ করতে হবে। এ মুহূর্তে সরকারকে তাই
বলব, অতীতে যা হওয়ার হয়েছে, বর্তমানের কথা ভেবে বিএনপিকে আস্থায় আনতে হবে।
আসন্ন নির্বাচনে কোন দল সরকার গঠন করবে তা জনগণের ওপরই ছেড়ে দিতে হবে।
অর্থাৎ জনগণ যাতে তাদের ইচ্ছেমতো বা পছন্দমতো যাকে খুশি ভোট দিতে পারেন সে
পরিবেশ তৈরি করে দিতে হবে। নির্বাচনী ময়দান সমতল হয়েছে বা হচ্ছে- বিএনপি
এমনটি মনে করলে এবং তাদের চাহিদামতো ২/১টি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় পেলে
নিশ্চয়ই তারা নির্বাচনে আসবেন। মনে রাখতে হবে, বর্তমান বিশ্বে নির্বাচন
ছাড়া বিকল্প কিছু ভাবা বোকামি। এক্ষেত্রে আমাদের দেশে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি
উভয় দলের অবস্থাই ঘর পোড়া গরুর মতো। তাই কোনো দলের কোনো হঠকারিতাই যেন
নির্বাচন বানচাল না করে বা অনুষ্ঠেয় নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ না করে সেদিকে
সংশ্লিষ্ট সবার সজাগ দৃষ্টি রাখা প্রয়োজন। কারণ নির্বাচন বানচালের চেষ্টা
যেমন দেশে অনিবার্য বিপর্যয় ডেকে আনবে, তেমনি একটি প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনও
ভবিষ্যতের জন্য বিষফোঁড়া হয়ে থাকবে। মনে রাখতে হবে, এরই মধ্যে দেশের মানুষ
যথেষ্ট শাস্তি ভোগ করেছেন। আগুনে পোড়া মানুষেরা দগদগে ঘা নিয়ে হাসপাতালে
দিনরাত মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটফট করে মৃত্যুবরণ করেছেন। রাস্তাঘাটে গাড়ি
পুড়িয়ে আকাশে বাতাসে আগুন ছড়িয়ে দেশের মানুষের ভাগ্যাকাশে কালোমেঘ সৃষ্টি
করা হয়েছে। এমন ভীতিকর পরিবেশের মাধ্যমে দেশের মানুষকে যাতে আর এক মুহূর্তও
কাটাতে না হয়, আওয়ামী লীগ-বিএনপি উভয়কেই সে ব্যবস্থা করতে হবে। ক্ষমতায়
যাওয়ার প্রতিযোগিতায় শিশু, কিশোর, নারীসহ আর একটি মানুষও যেন আগুনে পুড়ে না
মরে সে নিশ্চয়তাও দিতে হবে। ভেবে দেখতে হবে, আগুনে পুড়িয়ে শিশু-নারীসহ
মানুষ হত্যা করে ক্ষমতায় গেলে মসনদে আরোহণের পর পুড়ে মরা ওইসব মানুষের
আত্মার কাছে কী জবাব দেয়া হবে? ওপার থেকে আগুনে পোড়া নিহত ব্যক্তিরাই বা
ক্ষমতার মসনদে বসা প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রীদের কী নামে ডাকবেন? এসব বিষয়
মাথায় নিয়ে যদি বিএনপি-আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড তথা দলীয় প্রধানরা একটু
ঠাণ্ডা মাথায় ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নিতেন তাহলেও দেশের মানুষ বেঁচে যেতেন।
দুটি বড় দলের প্রধানের উদ্দেশে তাই বলব, আপনারা দুই দলের কাণ্ডারীই বারবার
প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন, দলীয় ব্যক্তিদের আনুকূল্য প্রদানের মাধ্যমে আপনারা
অনেককে এমপি, মন্ত্রী, উপদেষ্টাসহ রাজাগজা বানিয়েছেন, ব্যবসায়িক সুবিধা
প্রদানের মাধ্যমে অনেককে ধনকুবের বানিয়েছেন, যাদের অনেকেই অনেক কুকর্ম
করেছেন এবং অনেকেই এখন আপনাদের সঙ্গে নেই। আবার ওইসব ব্যক্তির অনেকেই
আপনাদের সুখ, দুঃখ, বেদনা, বিপদের সঙ্গী থাকেননি। সুযোগ বুঝে তারা কেটে
পড়েছেন। বাস্তবতা এমনটিই! সে দৃষ্টিকোণ থেকেও বলতে চাই, ক্ষমতা দখলের জন্য
দয়া করে লড়াই-ফ্যাসাদের পথ থেকে সরে আসুন। কারণ আমরা স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি,
আপনাদের চারপাশে এখনও উপরোক্ত শ্রেণীর কায়েমি স্বার্থবাদীরা ভিড় করে আছেন।
তারা আপনাদের ঘাড়ে চেপে, আপনাদের ঘাড়ে বন্দুক রেখে আবারও হীন স্বার্থ
হাসিলের চেষ্টা চালাচ্ছেন। দেশের এই সন্ধিক্ষণে ওই শ্রেণীর মানুষের
কুমন্ত্রণাও যে দেশকে সংঘাতের দিকে নিয়ে যাচ্ছে সে কথাও বলা বাহুল্য!
ক্ষমতা দখল করে তা বিলিবণ্টন করার মধ্যে হয়তো এক ধরনের আনন্দ আছে, কিন্তু
সে ক্ষমতার অপব্যবহারে যে পাপ, যে কলংক অর্জিত হয় তারও দায়ভার আছে। তাই
ক্ষমতা লাভের জন্য যে কোনো বর্বরতা, নিষ্ঠুরতা, অমানবিকতা ত্যাগ করাই
শ্রেয়; ক্ষমতার দ্বন্দ্বে বারবার হানাহানির পথে না যাওয়াই ভালো। আপনাদের
দু’দলের দু’জন কাণ্ডারীর কাছে তাই আবেদন, আশা করি আপনারা ভালো পথটিই বেছে
নেবেন। দেশ ও জাতি এ মুহূর্তে আপনাদের দু’জনের মুখের দিকেই চেয়ে আছেন, আশা
করি তাদের হতাশ করবেন না। আপনারা দুই নেত্রী কায়েমি স্বার্থবাদীদের হাতিয়ার
হবেন না, তাদের দ্বারা পরিচালিত হবেন না, দেশ ও জাতি আপনাদের কাছে সে
প্রত্যাশাই করে। দেশ ও জাতির বর্তমান অবস্থায় আরও একটি কথা বলব, তা হল
‘কাণ্ডারী হুঁশিয়ার’!
মুহাম্মদ ইসমাইল হোসেন : মুক্তিযোদ্ধা, কলামিস্ট
মুহাম্মদ ইসমাইল হোসেন : মুক্তিযোদ্ধা, কলামিস্ট
No comments