ভুল থেকে শিক্ষা নিতে হবে by মুহাম্মদ রুহুল আমীন
আওয়ামী
লীগ ও বিএনপিসহ তাদের জোটভুক্ত রাজনৈতিক দলগুলোর হঠকারী, অদূরদর্শী ও
আত্মকেন্দ্রিক নীতির কারণে দেশে শ্বাসরুদ্ধকর রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিরাজ
করছে। ঔপনিবেশিক ও পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকদের শাসনের করাল গ্রাস থেকে
দেশমাতৃকার মুক্তি-সংগ্রামে অগ্রণী ভূমিকা রেখে যে দলটি আপামর মানুষের মনে
অকৃত্রিম শ্রদ্ধা, ভালোবাসা আর জনপ্রিয়তার অবিস্মরণীয় রেকর্ড তৈরি করেছে,
সেই আওয়ামী লীগ সাম্প্রতিককালে নানা কারণে জনপ্রিয়তা হারাচ্ছে। ঐতিহ্যবাহী
দলটির হ্রতগৌরব পুনরুদ্ধারে বর্তমান বিস্ফোরণোন্মুখ রাজনৈতিক অবস্থা একটি
গুরুত্বপূর্ণ সম্ভাবনা তৈরি করেছে। স্বাধীন সার্বভৌম সোনার বাংলাদেশের
স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আওয়ামী লীগ স্বাধীনতা যুদ্ধের
নেতৃত্ব দিয়ে যে নতুন দেশটির মানচিত্র ছিনিয়ে এনেছিল, শহীদ প্রেসিডেন্ট
জিয়াউর রহমানের বিএনপি গণতন্ত্রায়ন ও উন্নয়নের মাধ্যমে বিশ্ব দরবারে সেই
দেশটিকে গৌরবের আসনে অধিষ্ঠিত করেছিল। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় এ দুটি বৃহৎ
দলের নেতারা বঙ্গবন্ধু ও জিয়ার মৌলিক রাজনৈতিক আদর্শ, চেতনা ও সুদূরপ্রসারী
লক্ষ্য বিস্মৃত হয়ে কেবল আত্মকেন্দ্রিক ও দলকেন্দ্রিক লক্ষ্যকে অগ্রাধিকার
দিতে শুরু করেন। ফলে জাতীয় মুক্তি, উন্নয়ন ও গণতন্ত্রের ক্ষেত্রে তাদের
অবদান দিন দিন অপসৃত হতে শুরু করে, যা বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক
অঙ্গনে সবচেয়ে বেশি অনিশ্চয়তার জন্ম দিয়েছে।
নজিরবিহীন ম্যান্ডেট নিয়ে জননেত্রী শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোট সরকার গঠন করে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে মহাজোট সরকারের ব্যাপক সাফল্য অর্জিত হয় এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর নিরপেক্ষ মূল্যায়নে বর্তমান সরকারের সেই সাফল্যগাথা স্থান পায়। দুর্ভাগ্যবশত বিভিন্ন মন্ত্রী, সরকারদলীয় এমপি, সরকারের মদদপুষ্ট আমলা ও নীতিনির্ধারকদের অদূরদর্শী, একপেশে ও ব্যক্তি-পারিবারিক-গোষ্ঠী স্বার্থের কাছে বলি হয় বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থের অগ্রাধিকারগুলো। প্রথম দিকে পত্রপত্রিকা, ইলেকট্রনিক মিডিয়া ও সেমিনার-সিম্পেজিয়ামের মাধ্যমে সরকারের সেই ভ্রান্ত নীতি ও কার্যকলাপগুলোর একাডেমিক মূল্যায়ন শুরু করা হয়। সুশীল সমাজের এ প্রয়াসের লক্ষ্য ছিল ক্ষমতাসীনদের গঠনমূলক সমালোচনার মাধ্যমে সঠিকপথে দেশ পরিচালনার জন্য সরকারকে সহযোগিতা করা। কিন্তু বেদনাদায়ক বিষয় হল, এক পর্যায়ে রেডিও, টিভি ও পত্রপত্রিকার বিরুদ্ধে সরকারের শীর্ষ দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা বিষোদগার করতে থাকেন। আত্মসমালোচনার পরিবর্তে আত্মপক্ষ সমর্থনের এ ভ্রান্ত নীতি সরকারকে আত্মসংশোধনের গুরুদায়িত্ব সম্পর্কে বেশ অন্ধ করে তোলে। দিন দিন সরকারের গঠনমূলক সমালোচনায় বিভিন্ন মহল সোচ্চার হয়ে ওঠে, যা দেশের সীমানা পেরিয়ে আন্তর্জাতিক ফোরাম পর্যন্ত সম্প্রসারিত হয়। কোনো এক বিদগ্ধ ব্যক্তি বলেছিলেন, আওয়ামী লীগের ভ্রান্ত নীতির সমালোচনায় দেশের সুশীল সমাজ, গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব, রেডিও, টিভি, পত্রপত্রিকা, বিদেশী সংস্থা অতীতের যে কোনো সময়ের তুলনায় বর্তমানে বেশি সোচ্চার। এমন নিখাদ মূল্যায়ন সরকারের জন্য আশীর্বাদ হতে পারত। কিন্তু দুর্ভাগ্য হল, আমাদের সরকার কখনও সমালোচনা থেকে শিক্ষা নেয় না, বরং সমালোচনাকে বৈরিতা হিসেবে বিবেচনা করার ভুল পথে হাঁটতে থাকে। মহাজোট সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রী ও মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়হীনতার কারণে গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় নীতি ও কর্মপরিকল্পনা ভণ্ডুল হলেও সরকার তা থেকে শিক্ষা নেয়নি। উদাহরণস্বরূপ, দুর্নীতির অভিযোগে প্রতিশ্র“ত পদ্মা সেতু নির্মিত হতে না পারলেও সরকার বিষয়টি নিয়ে তেমন মাথা ঘামিয়েছে বলে মনে হয়নি। এছাড়া শেয়ারবাজার কেলেংকারি, ব্যাংক জালিয়াতি, টেন্ডারবাজিসহ বিভিন্ন ইস্যুতে সরকারি লোকজনের সংশ্লিষ্টতা হ্রাস করে শুদ্ধি কার্যক্রম এগিয়ে নিয়ে জনপ্রিয়তার মানদণ্ড ধরে রাখতে সরকার কোনো কার্যকর নীতি গ্রহণ করেনি।
এতসব ভ্রান্ত নীতির পরও নানামুখী সাফল্যের কারণে সরকার জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে পারত, যদি নির্বাচনকালীন সরকার প্রশ্নে বিরোধী দলের সঙ্গে সমঝোতায় আসতে সক্ষম হতো। সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের স্বার্থে অন্তর্বর্তীকালীন নিরপেক্ষ সরকারের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সাধারণ মানুষ একাট্টা। একটি সংবাদপত্রের জরিপে শতকরা ৯০ ভাগ মানুষ নির্দলীয়-নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষে মত দিয়েছে। মজার বিষয় হল, নির্দলীয় সরকারের পক্ষে একসময় যারা সোচ্চার ছিলেন, তাদের অনেকে আওয়ামী লীগের বর্তমান নেতৃত্বে রয়েছেন এবং অনেকে পুরনো নেতৃত্বের আসনে ছিলেন। অর্থাৎ নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকার প্রশ্নে জাতীয় ঐক্য গড়ে উঠেছিল। সেই গণদাবি, যা জাতীয় দাবির সুরেই নিনাদিত, কখনও কি তা সরকারের কাছে বিবেচ্য হয়েছে?
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বিরোধীদলীয় নেত্রীর ফোনালাপের পর আমরা আশ্বস্ত হয়েছিলাম ও হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছিলাম। কিন্তু পরবর্তী সহিংস ঘটনাগুলোর বিচার-বিশ্লেষণ করলে আমাদের বলতেই হবে, জনগণের জানমালের প্রতি রাজনীতিকদের মমতা-ভালোবাসার ঘাটতি প্রচুর। কেবল দুটি দলের একগুঁয়েমির জন্য, হরতালের পর হরতালের জন্য এবং ভ্রান্ত নীতির কারণে আজ জাতীয় নিরাপত্তা, ব্যক্তি নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক ও সামাজিক স্থিতিশীলতা মুখ থুবড়ে পড়ছে। ধীরে ধীরে আমরা সর্বাত্মক জাতীয় সংকটের গহীনে ডুবে যাচ্ছি- এ দূরদৃষ্টি রাজনীতিকদের লোপ পাওয়ার কথা নয়।
হরতালের অজুহাত দেখিয়ে বিরোধীদলীয় নেত্রী প্রধানমন্ত্রীর সংলাপ-আমন্ত্রণ অবজ্ঞা করে ভুলই করেছেন। আবার হরতাল শেষে বিরোধীদলীয় নেত্রীর সংলাপ প্রস্তাবনায় সাড়া না দিয়ে প্রধানমন্ত্রীও নির্ভুল ভূমিকা রাখতে পারেননি। ব্যবসায়ীদের সংগঠন এফবিসিসিআই আহূত দু’দলের মহাসচিব পর্যায়ের আলোচনার উদ্যোগ বিএনপি সমর্থন করলেও আওয়ামী লীগের অনিচ্ছার কারণেই ব্যর্থ হয়েছে। সবশেষে গঠিত সর্বদলীয় সরকারের কাঠামোটি বিরোধী দলের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। এটি মূলত মহাজোটের মোড়কেই আচ্ছাদিত। যদি নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিয়েই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করতে হয়, তাহলে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটভুক্ত দলগুলোর নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সেই সরকারে প্রতিনিধিত্ব করার পরিবেশ, সুযোগ ও ক্ষেত্র তৈরি করতে হবে। এজন্য দরকার সরকারের সঙ্গে বিরোধী দলের একটি কার্যকর সংলাপ। রাজনীতিতে আইনের গুরুত্ব অপরিসীম। কিন্তু নৈতিকতা, সামাজিক শিষ্টতা ও আচার-আচরণও অনেক সময় আইনের ঊর্ধ্বে স্থান পায়। কোনো একটি ইস্যু আইনি প্রক্রিয়ায় শুদ্ধ হলেও সামাজিক ও নৈতিক প্রক্রিয়ায় তা অসমর্থিতও হতে পারে।
সার্বিক বিবেচনা সামনে রেখে অন্য গণতান্ত্রিক দেশগুলোর সঙ্গে তাল মিলিয়ে এবং আমাদের সংবিধানের ধারা সমুন্নত রেখেই কেবল জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো সমাধান করা দরকার। এই একটি জায়গায় এসে থমকে গেছে আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা যাচাইয়ের শেষ সুযোগ। আমরা এখনও আশা করব, জনপ্রত্যাশাকে গুরুত্ব দিয়ে আওয়ামী লীগ তার জনপ্রিয়তা পুনরুদ্ধার করতে এবং তা ধরে রাখতে সক্ষম হবে।
মুহাম্মদ রুহুল আমীন : অধ্যাপক, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
নজিরবিহীন ম্যান্ডেট নিয়ে জননেত্রী শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোট সরকার গঠন করে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে মহাজোট সরকারের ব্যাপক সাফল্য অর্জিত হয় এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর নিরপেক্ষ মূল্যায়নে বর্তমান সরকারের সেই সাফল্যগাথা স্থান পায়। দুর্ভাগ্যবশত বিভিন্ন মন্ত্রী, সরকারদলীয় এমপি, সরকারের মদদপুষ্ট আমলা ও নীতিনির্ধারকদের অদূরদর্শী, একপেশে ও ব্যক্তি-পারিবারিক-গোষ্ঠী স্বার্থের কাছে বলি হয় বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থের অগ্রাধিকারগুলো। প্রথম দিকে পত্রপত্রিকা, ইলেকট্রনিক মিডিয়া ও সেমিনার-সিম্পেজিয়ামের মাধ্যমে সরকারের সেই ভ্রান্ত নীতি ও কার্যকলাপগুলোর একাডেমিক মূল্যায়ন শুরু করা হয়। সুশীল সমাজের এ প্রয়াসের লক্ষ্য ছিল ক্ষমতাসীনদের গঠনমূলক সমালোচনার মাধ্যমে সঠিকপথে দেশ পরিচালনার জন্য সরকারকে সহযোগিতা করা। কিন্তু বেদনাদায়ক বিষয় হল, এক পর্যায়ে রেডিও, টিভি ও পত্রপত্রিকার বিরুদ্ধে সরকারের শীর্ষ দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা বিষোদগার করতে থাকেন। আত্মসমালোচনার পরিবর্তে আত্মপক্ষ সমর্থনের এ ভ্রান্ত নীতি সরকারকে আত্মসংশোধনের গুরুদায়িত্ব সম্পর্কে বেশ অন্ধ করে তোলে। দিন দিন সরকারের গঠনমূলক সমালোচনায় বিভিন্ন মহল সোচ্চার হয়ে ওঠে, যা দেশের সীমানা পেরিয়ে আন্তর্জাতিক ফোরাম পর্যন্ত সম্প্রসারিত হয়। কোনো এক বিদগ্ধ ব্যক্তি বলেছিলেন, আওয়ামী লীগের ভ্রান্ত নীতির সমালোচনায় দেশের সুশীল সমাজ, গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব, রেডিও, টিভি, পত্রপত্রিকা, বিদেশী সংস্থা অতীতের যে কোনো সময়ের তুলনায় বর্তমানে বেশি সোচ্চার। এমন নিখাদ মূল্যায়ন সরকারের জন্য আশীর্বাদ হতে পারত। কিন্তু দুর্ভাগ্য হল, আমাদের সরকার কখনও সমালোচনা থেকে শিক্ষা নেয় না, বরং সমালোচনাকে বৈরিতা হিসেবে বিবেচনা করার ভুল পথে হাঁটতে থাকে। মহাজোট সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রী ও মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়হীনতার কারণে গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় নীতি ও কর্মপরিকল্পনা ভণ্ডুল হলেও সরকার তা থেকে শিক্ষা নেয়নি। উদাহরণস্বরূপ, দুর্নীতির অভিযোগে প্রতিশ্র“ত পদ্মা সেতু নির্মিত হতে না পারলেও সরকার বিষয়টি নিয়ে তেমন মাথা ঘামিয়েছে বলে মনে হয়নি। এছাড়া শেয়ারবাজার কেলেংকারি, ব্যাংক জালিয়াতি, টেন্ডারবাজিসহ বিভিন্ন ইস্যুতে সরকারি লোকজনের সংশ্লিষ্টতা হ্রাস করে শুদ্ধি কার্যক্রম এগিয়ে নিয়ে জনপ্রিয়তার মানদণ্ড ধরে রাখতে সরকার কোনো কার্যকর নীতি গ্রহণ করেনি।
এতসব ভ্রান্ত নীতির পরও নানামুখী সাফল্যের কারণে সরকার জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে পারত, যদি নির্বাচনকালীন সরকার প্রশ্নে বিরোধী দলের সঙ্গে সমঝোতায় আসতে সক্ষম হতো। সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের স্বার্থে অন্তর্বর্তীকালীন নিরপেক্ষ সরকারের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সাধারণ মানুষ একাট্টা। একটি সংবাদপত্রের জরিপে শতকরা ৯০ ভাগ মানুষ নির্দলীয়-নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষে মত দিয়েছে। মজার বিষয় হল, নির্দলীয় সরকারের পক্ষে একসময় যারা সোচ্চার ছিলেন, তাদের অনেকে আওয়ামী লীগের বর্তমান নেতৃত্বে রয়েছেন এবং অনেকে পুরনো নেতৃত্বের আসনে ছিলেন। অর্থাৎ নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকার প্রশ্নে জাতীয় ঐক্য গড়ে উঠেছিল। সেই গণদাবি, যা জাতীয় দাবির সুরেই নিনাদিত, কখনও কি তা সরকারের কাছে বিবেচ্য হয়েছে?
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বিরোধীদলীয় নেত্রীর ফোনালাপের পর আমরা আশ্বস্ত হয়েছিলাম ও হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছিলাম। কিন্তু পরবর্তী সহিংস ঘটনাগুলোর বিচার-বিশ্লেষণ করলে আমাদের বলতেই হবে, জনগণের জানমালের প্রতি রাজনীতিকদের মমতা-ভালোবাসার ঘাটতি প্রচুর। কেবল দুটি দলের একগুঁয়েমির জন্য, হরতালের পর হরতালের জন্য এবং ভ্রান্ত নীতির কারণে আজ জাতীয় নিরাপত্তা, ব্যক্তি নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক ও সামাজিক স্থিতিশীলতা মুখ থুবড়ে পড়ছে। ধীরে ধীরে আমরা সর্বাত্মক জাতীয় সংকটের গহীনে ডুবে যাচ্ছি- এ দূরদৃষ্টি রাজনীতিকদের লোপ পাওয়ার কথা নয়।
হরতালের অজুহাত দেখিয়ে বিরোধীদলীয় নেত্রী প্রধানমন্ত্রীর সংলাপ-আমন্ত্রণ অবজ্ঞা করে ভুলই করেছেন। আবার হরতাল শেষে বিরোধীদলীয় নেত্রীর সংলাপ প্রস্তাবনায় সাড়া না দিয়ে প্রধানমন্ত্রীও নির্ভুল ভূমিকা রাখতে পারেননি। ব্যবসায়ীদের সংগঠন এফবিসিসিআই আহূত দু’দলের মহাসচিব পর্যায়ের আলোচনার উদ্যোগ বিএনপি সমর্থন করলেও আওয়ামী লীগের অনিচ্ছার কারণেই ব্যর্থ হয়েছে। সবশেষে গঠিত সর্বদলীয় সরকারের কাঠামোটি বিরোধী দলের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। এটি মূলত মহাজোটের মোড়কেই আচ্ছাদিত। যদি নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিয়েই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করতে হয়, তাহলে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটভুক্ত দলগুলোর নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সেই সরকারে প্রতিনিধিত্ব করার পরিবেশ, সুযোগ ও ক্ষেত্র তৈরি করতে হবে। এজন্য দরকার সরকারের সঙ্গে বিরোধী দলের একটি কার্যকর সংলাপ। রাজনীতিতে আইনের গুরুত্ব অপরিসীম। কিন্তু নৈতিকতা, সামাজিক শিষ্টতা ও আচার-আচরণও অনেক সময় আইনের ঊর্ধ্বে স্থান পায়। কোনো একটি ইস্যু আইনি প্রক্রিয়ায় শুদ্ধ হলেও সামাজিক ও নৈতিক প্রক্রিয়ায় তা অসমর্থিতও হতে পারে।
সার্বিক বিবেচনা সামনে রেখে অন্য গণতান্ত্রিক দেশগুলোর সঙ্গে তাল মিলিয়ে এবং আমাদের সংবিধানের ধারা সমুন্নত রেখেই কেবল জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো সমাধান করা দরকার। এই একটি জায়গায় এসে থমকে গেছে আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা যাচাইয়ের শেষ সুযোগ। আমরা এখনও আশা করব, জনপ্রত্যাশাকে গুরুত্ব দিয়ে আওয়ামী লীগ তার জনপ্রিয়তা পুনরুদ্ধার করতে এবং তা ধরে রাখতে সক্ষম হবে।
মুহাম্মদ রুহুল আমীন : অধ্যাপক, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
No comments