সবার জীবনেই আসুক ঈদ by আসিফ রশীদ
ঈদ
এলেই অনেকদিন আগের, ছাত্রজীবনের একটি ঘটনা মনে পড়ে। এক বিকেলে ধানমণ্ডি
লেকের পাশের রাস্তা দিয়ে হাঁটছিলাম। হঠাৎ নজরে পড়ল একটা বাড়ির বন্ধ গেটের
সামনে দাঁড়িয়ে ১০-১২ বছরের একটি মেয়ে অঝোর ধারায় কাঁদছে। কাছে গিয়ে শুনতে
পেলাম মেয়েটি বারবার বলছে, ‘মা আমারে একটা নতুন জামা কিইন্যা দেও।’ ক’দিন
পরই ঈদ। মেয়েটার কান্নার নেপথ্য কারণটা চোখের সামনে ভেসে উঠল। তার মা ওই
বাড়িতে গৃহকর্মীর কাজ করেন। মায়ের সঙ্গে আসছিল সে। পথে ঈদের জামা কিনে
দেয়ার জন্য বায়না ধরেছিল। মায়ের সেই সামর্থ্য ছিল না। তাই ক্রন্দনরত মেয়েকে
গেটের বাইরে রেখেই তিনি ভেতরে ঢুকে গেছেন। ধানমণ্ডির সেই বাড়িটি এখন আর
নেই। সেখানে সুউচ্চ অ্যাপার্টমেন্ট ভবন উঠেছে। শুধু ধানমণ্ডি নয়, গোটা ঢাকা
নগরীর চেহারাই অনেক বদলে গেছে এখন। কিন্তু ওই মেয়েটির মতো শিশুদের আর
তাদের মা-বাবার জীবনে কোনো পরিবর্তন এসেছে কি? না, আসেনি। বরং এই নগরীতে এ
ধরনের বঞ্চিত মানুষের সংখ্যা আরও বেড়েছে।
ঈদ মানে যদি আনন্দ হয়, ঈদুল আজহার মানে যদি ত্যাগ হয়- তাহলে কেন এ দেশের গরিব মানুষের সন্তানদের ভাগ্যে একটা নতুন জামা জোটে না? এই শহরে এত বিত্তবান, এত সুউচ্চ বাড়ি, সড়কজুড়ে সর্বাধুনিক মডেলের গাড়ি, এত জৌলুশ; তবু কেন এত অভাব? এর একটিই কারণ- বৈষম্য। আমরা যদি গভীরে তাকাই, দেখতে পাবো ঈদের সব আনন্দ আয়োজন উচ্চবিত্ত আর মধ্যবিত্তের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। নিম্নবিত্তের কাছে ঈদের দিনটি বছরের আর দশটা দিনের চেয়ে ভিন্ন কোনো অর্থ নিয়ে আসে না। কোরবানির কথাই ধরা যাক। রাজধানীতে হাজার হাজার পশু কোরবানি দেয়া হয়। এর ক’টি হয় ত্যাগের মহিমায়? ঈদ এলে একটি শ্রেণীর মধ্যে কে কত বড় পশু কোরবানি দেবে তার প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যায়। ডিপ ফ্রিজ-রেফ্রিজারেটরের বিক্রি বেড়ে যায়। কেউ কি বুকে হাত দিয়ে বলতে পারবেন, তাদের কাছে পশুর মাংস খাওয়াটাই মুখ্য নয়? এই কি ত্যাগ? এই কি আমাদের ধর্মে প্রদত্ত কোরবানির মর্মবাণী? ধর্ম তো বলেছে, আল্লাহর কাছে কোরবানি করা পশুর রক্ত বা মাংস কিছুই পৌঁছায় না, বরং পৌঁছায় বান্দার ভক্তি। কাজেই কোরবানি কোনো লোক দেখানো বা প্রতিযোগিতার বিষয় নয়। বর্তমানে মাংস বণ্টনের যে রীতি চালু আছে, তা দেশের বিরাট দরিদ্র জনগোষ্ঠীর একটি সামান্য অংশের চাহিদা মেটাতে পারে মাত্র। অথচ একবার ভাবুন, যাদের কোরবানি দেয়ার সামর্থ্য আছে, তারা যদি মাংসের একটি অংশ নয়- পুরোটাই গরিবদের মধ্যে বিলিয়ে দিতেন, তাহলে কতই না ভালো হতো। সারা বছর প্রয়োজনীয় আমিষ জোটে না বলে যারা পুষ্টিহীনতায় ভোগে, বছরের একটি সময় তারা কিছুদিনের জন্য মাংস জমিয়ে রেখে আমিষের চাহিদা মেটাতে পারত। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় অভুক্ত শীর্ণ মানুষের জন্য একবেলা বা দুই বেলা উন্নতমানের আহারের ব্যবস্থা হতে পারত। কিছু পশু হালের পশু হিসেবে দরিদ্র কৃষকদের মাঝে দান করে দেয়া যেত। সব ধর্মেই দানকে মহিমান্বিত করা হয়েছে। মানবতার সেবাই তো প্রকৃত ধর্ম। অথচ মানুষের কাছে ধর্মীয় আচারটাই পরিণত হয়েছে মুখ্য বিষয়ে। ধর্মে প্রদত্ত মানবতার বিষয়টি হয়ে পড়েছে গৌণ।
আসলে সবকিছুর মূলে রয়েছে বৈষম্য। এ বৈষম্যের কারণ শুধু প্রচলিত অর্থনৈতিক ব্যবস্থা বললে সবটা বলা হয় না। মানুষের মনমানসিকতাও এজন্য দায়ী। প্রচলিত ব্যবস্থাটাই হয়তো এমন এক ভোগবাদী মানসিকতা তৈরি করেছে যে, সমাজের বৃহত্তর জনগোষ্ঠী কীভাবে ঈদ উদযাপন করে, সামর্থ্যবানরা তা নিয়ে কখনও মাথা ঘামায় না। দেশে মাথাপিছু আয় বেড়েছে। আমাদের ৬ থেকে ৬.৫০ শতাংশের নিরবচ্ছিন্ন প্রবৃদ্ধি অর্থনৈতিক অগ্রগতির মানদণ্ড হিসেবে বেশ বড় ধরনের সূচক। ইতিপূর্বে লন্ডনের খ্যাতনামা গার্ডিয়ান পত্রিকা বলেছে, এ বছর প্রবৃদ্ধির হিসাবে বিশ্বের শীর্ষ ২০-এ থাকবে বাংলাদেশ। ২০৫০ সাল নাগাদ এ দেশ নাকি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে পশ্চিমের উন্নত দেশগুলোকেও ছাড়িয়ে যাবে। দেশে যে অর্থনৈতিক উন্নতি হচ্ছে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। মূলত প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স ও রফতানি আয় এ ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখছে। তবে দেখার বিষয়, দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠী এর সুফল পাচ্ছে কতটা। বাস্তবতা হল, সম্পদের সিংহভাগ মুষ্টিমেয় কিছু লোকের হাতে কেন্দ্রীভূত। দেশের যা কিছু উন্নতি হয়, তার সুফল মূলত তারাই ভোগ করে, অন্যরা পায় ছিটেফোঁটা। একটা উদাহরণ দেয়া যাক। পোশাক শিল্প দেশের সবচেয়ে বড় রফতানি খাত। এক্ষেত্রে বিশ্ববাজারে চীনের পরই বাংলাদেশের স্থান। বলা হচ্ছে, পোশাক রফতানিতে শিগগিরই চীনকেও ছাড়িয়ে যেতে পারে বাংলাদেশ। এর কারণ একটিই- সস্তা শ্রম। এ থেকেই বোঝা যায়, এ শিল্পে বাংলাদেশী শ্রমিকরা পান বিশ্বের সবচেয়ে কম মজুরি। অর্থাৎ যাদের কারণে দেশের অর্থনীতি সমৃদ্ধ হচ্ছে, তাদের জীবনমানের উন্নতি হচ্ছে সামান্যই। বৈষম্য হ্রাস পাবে কীভাবে!
বিশ্বের সবচেয়ে বেশি আয়বৈষম্য যে দেশগুলোতে, বাংলাদেশ তার অন্যতম। বস্তুত এ দেশে আয়বৈষম্য, সম্পদের মালিকানায় বৈষম্য এত প্রকট যে তা সাদা চোখেই দেখা যায়, গবেষণার দরকার হয় না। এই ভয়াবহ বৈষম্যের কারণেই দেশে দারিদ্র্য বিমোচনের গতি এত মন্থর।
তবে বৈষম্যের আরও একটি বড় কারণ আছে। সেটা হল দুর্নীতি। প্রশাসন ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বড় বড় পদে বসে থাকা লোকগুলোর নির্লজ্জ ও লাগামহীন দুর্নীতি সম্পদের বৈষম্য আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। যে প্রবৃদ্ধির কারণে অর্থনীতির সূচক উপরের দিকে রয়েছে, তার অনেকটাই খেয়ে ফেলছে দুর্নীতি। কোরবানির হাটে এই যে হাজার হাজার পশু বিক্রি হয়, তার কয়টি সৎ পথে অর্জিত টাকায় কেনা হয়, সেটা যদি বের করা যেত তা দেখে আমাদের চোখ হয়তো কপালে উঠত। ভোগবাদী ও দুর্নীতিবাজ মানুষের কাছে কোরবানির মাংস দরিদ্রদের মাঝে বণ্টনের চেয়ে ভোগের বিষয়টি প্রাধান্য পাওয়াই বুঝি স্বাভাবিক!
দেশে বর্তমান বাস্তবতায় এ অবস্থার পরিবর্তন প্রায় অসম্ভব বলেই মনে হয়। তবে আর্থিক ও প্রশাসনিক ব্যবস্থার বিভিন্ন স্তরে পরিবর্তন এনে মানুষের আয়বৈষম্য কমিয়ে আনা সম্ভব। সেই উদ্যোগটি নেয়া অত্যন্ত জরুরি। পরিবর্তন দরকার মানসিকতারও।
আমরা চাই না, অন্তত ঈদ উৎসবে কারও মনে বঞ্চনার অনুভূতি জেগে উঠুক। ঈদ হোক আনন্দের। ঈদ হোক প্রকৃতই ত্যাগের। যারা ভাগ্যবান, যাদের সামর্থ্য আছে- তাদের সামান্য ত্যাগ দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ বঞ্চিত মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে পারে। এর মাধ্যমেই সার্থক হয়ে উঠতে পারে ঈদের সব আয়োজন। একটি নতুন জামার জন্য, এক টুকরো কোরবানির মাংসের জন্য যেন একজন মানুষেরও চোখের কোণে পানি দেখতে না হয় আমাদের।
আসিফ রশীদ : সাংবাদিক ও লেখক
ঈদ মানে যদি আনন্দ হয়, ঈদুল আজহার মানে যদি ত্যাগ হয়- তাহলে কেন এ দেশের গরিব মানুষের সন্তানদের ভাগ্যে একটা নতুন জামা জোটে না? এই শহরে এত বিত্তবান, এত সুউচ্চ বাড়ি, সড়কজুড়ে সর্বাধুনিক মডেলের গাড়ি, এত জৌলুশ; তবু কেন এত অভাব? এর একটিই কারণ- বৈষম্য। আমরা যদি গভীরে তাকাই, দেখতে পাবো ঈদের সব আনন্দ আয়োজন উচ্চবিত্ত আর মধ্যবিত্তের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। নিম্নবিত্তের কাছে ঈদের দিনটি বছরের আর দশটা দিনের চেয়ে ভিন্ন কোনো অর্থ নিয়ে আসে না। কোরবানির কথাই ধরা যাক। রাজধানীতে হাজার হাজার পশু কোরবানি দেয়া হয়। এর ক’টি হয় ত্যাগের মহিমায়? ঈদ এলে একটি শ্রেণীর মধ্যে কে কত বড় পশু কোরবানি দেবে তার প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যায়। ডিপ ফ্রিজ-রেফ্রিজারেটরের বিক্রি বেড়ে যায়। কেউ কি বুকে হাত দিয়ে বলতে পারবেন, তাদের কাছে পশুর মাংস খাওয়াটাই মুখ্য নয়? এই কি ত্যাগ? এই কি আমাদের ধর্মে প্রদত্ত কোরবানির মর্মবাণী? ধর্ম তো বলেছে, আল্লাহর কাছে কোরবানি করা পশুর রক্ত বা মাংস কিছুই পৌঁছায় না, বরং পৌঁছায় বান্দার ভক্তি। কাজেই কোরবানি কোনো লোক দেখানো বা প্রতিযোগিতার বিষয় নয়। বর্তমানে মাংস বণ্টনের যে রীতি চালু আছে, তা দেশের বিরাট দরিদ্র জনগোষ্ঠীর একটি সামান্য অংশের চাহিদা মেটাতে পারে মাত্র। অথচ একবার ভাবুন, যাদের কোরবানি দেয়ার সামর্থ্য আছে, তারা যদি মাংসের একটি অংশ নয়- পুরোটাই গরিবদের মধ্যে বিলিয়ে দিতেন, তাহলে কতই না ভালো হতো। সারা বছর প্রয়োজনীয় আমিষ জোটে না বলে যারা পুষ্টিহীনতায় ভোগে, বছরের একটি সময় তারা কিছুদিনের জন্য মাংস জমিয়ে রেখে আমিষের চাহিদা মেটাতে পারত। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় অভুক্ত শীর্ণ মানুষের জন্য একবেলা বা দুই বেলা উন্নতমানের আহারের ব্যবস্থা হতে পারত। কিছু পশু হালের পশু হিসেবে দরিদ্র কৃষকদের মাঝে দান করে দেয়া যেত। সব ধর্মেই দানকে মহিমান্বিত করা হয়েছে। মানবতার সেবাই তো প্রকৃত ধর্ম। অথচ মানুষের কাছে ধর্মীয় আচারটাই পরিণত হয়েছে মুখ্য বিষয়ে। ধর্মে প্রদত্ত মানবতার বিষয়টি হয়ে পড়েছে গৌণ।
আসলে সবকিছুর মূলে রয়েছে বৈষম্য। এ বৈষম্যের কারণ শুধু প্রচলিত অর্থনৈতিক ব্যবস্থা বললে সবটা বলা হয় না। মানুষের মনমানসিকতাও এজন্য দায়ী। প্রচলিত ব্যবস্থাটাই হয়তো এমন এক ভোগবাদী মানসিকতা তৈরি করেছে যে, সমাজের বৃহত্তর জনগোষ্ঠী কীভাবে ঈদ উদযাপন করে, সামর্থ্যবানরা তা নিয়ে কখনও মাথা ঘামায় না। দেশে মাথাপিছু আয় বেড়েছে। আমাদের ৬ থেকে ৬.৫০ শতাংশের নিরবচ্ছিন্ন প্রবৃদ্ধি অর্থনৈতিক অগ্রগতির মানদণ্ড হিসেবে বেশ বড় ধরনের সূচক। ইতিপূর্বে লন্ডনের খ্যাতনামা গার্ডিয়ান পত্রিকা বলেছে, এ বছর প্রবৃদ্ধির হিসাবে বিশ্বের শীর্ষ ২০-এ থাকবে বাংলাদেশ। ২০৫০ সাল নাগাদ এ দেশ নাকি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে পশ্চিমের উন্নত দেশগুলোকেও ছাড়িয়ে যাবে। দেশে যে অর্থনৈতিক উন্নতি হচ্ছে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। মূলত প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স ও রফতানি আয় এ ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখছে। তবে দেখার বিষয়, দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠী এর সুফল পাচ্ছে কতটা। বাস্তবতা হল, সম্পদের সিংহভাগ মুষ্টিমেয় কিছু লোকের হাতে কেন্দ্রীভূত। দেশের যা কিছু উন্নতি হয়, তার সুফল মূলত তারাই ভোগ করে, অন্যরা পায় ছিটেফোঁটা। একটা উদাহরণ দেয়া যাক। পোশাক শিল্প দেশের সবচেয়ে বড় রফতানি খাত। এক্ষেত্রে বিশ্ববাজারে চীনের পরই বাংলাদেশের স্থান। বলা হচ্ছে, পোশাক রফতানিতে শিগগিরই চীনকেও ছাড়িয়ে যেতে পারে বাংলাদেশ। এর কারণ একটিই- সস্তা শ্রম। এ থেকেই বোঝা যায়, এ শিল্পে বাংলাদেশী শ্রমিকরা পান বিশ্বের সবচেয়ে কম মজুরি। অর্থাৎ যাদের কারণে দেশের অর্থনীতি সমৃদ্ধ হচ্ছে, তাদের জীবনমানের উন্নতি হচ্ছে সামান্যই। বৈষম্য হ্রাস পাবে কীভাবে!
বিশ্বের সবচেয়ে বেশি আয়বৈষম্য যে দেশগুলোতে, বাংলাদেশ তার অন্যতম। বস্তুত এ দেশে আয়বৈষম্য, সম্পদের মালিকানায় বৈষম্য এত প্রকট যে তা সাদা চোখেই দেখা যায়, গবেষণার দরকার হয় না। এই ভয়াবহ বৈষম্যের কারণেই দেশে দারিদ্র্য বিমোচনের গতি এত মন্থর।
তবে বৈষম্যের আরও একটি বড় কারণ আছে। সেটা হল দুর্নীতি। প্রশাসন ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বড় বড় পদে বসে থাকা লোকগুলোর নির্লজ্জ ও লাগামহীন দুর্নীতি সম্পদের বৈষম্য আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। যে প্রবৃদ্ধির কারণে অর্থনীতির সূচক উপরের দিকে রয়েছে, তার অনেকটাই খেয়ে ফেলছে দুর্নীতি। কোরবানির হাটে এই যে হাজার হাজার পশু বিক্রি হয়, তার কয়টি সৎ পথে অর্জিত টাকায় কেনা হয়, সেটা যদি বের করা যেত তা দেখে আমাদের চোখ হয়তো কপালে উঠত। ভোগবাদী ও দুর্নীতিবাজ মানুষের কাছে কোরবানির মাংস দরিদ্রদের মাঝে বণ্টনের চেয়ে ভোগের বিষয়টি প্রাধান্য পাওয়াই বুঝি স্বাভাবিক!
দেশে বর্তমান বাস্তবতায় এ অবস্থার পরিবর্তন প্রায় অসম্ভব বলেই মনে হয়। তবে আর্থিক ও প্রশাসনিক ব্যবস্থার বিভিন্ন স্তরে পরিবর্তন এনে মানুষের আয়বৈষম্য কমিয়ে আনা সম্ভব। সেই উদ্যোগটি নেয়া অত্যন্ত জরুরি। পরিবর্তন দরকার মানসিকতারও।
আমরা চাই না, অন্তত ঈদ উৎসবে কারও মনে বঞ্চনার অনুভূতি জেগে উঠুক। ঈদ হোক আনন্দের। ঈদ হোক প্রকৃতই ত্যাগের। যারা ভাগ্যবান, যাদের সামর্থ্য আছে- তাদের সামান্য ত্যাগ দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ বঞ্চিত মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে পারে। এর মাধ্যমেই সার্থক হয়ে উঠতে পারে ঈদের সব আয়োজন। একটি নতুন জামার জন্য, এক টুকরো কোরবানির মাংসের জন্য যেন একজন মানুষেরও চোখের কোণে পানি দেখতে না হয় আমাদের।
আসিফ রশীদ : সাংবাদিক ও লেখক
No comments