দুই নেত্রীকে সফল রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে দেখতে চাই by বিমল সরকার
একটি
স্বাধীন জাতিকে বছরের পর বছর সীমাহীন উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা আর চরম অস্থিরতার
মাঝে কাটাতে হলে তা ভাবনার বিষয় বৈকি! কয়েক বছর পরপর এক দুঃসহ পরিস্থিতির
মুখোমুখি হতে হয় এ দেশের মানুষকে। রাজনীতিকদের
ক্ষমতালিপ্সা,অদূরদর্শিতা, খামখেয়ালিপনা, সংকীর্ণ মনোবৃত্তি, চিন্তার
দৈন্য, কখনও কখনও একগুঁয়েমি একটি জাতিকে যে কীভাবে ক্রমান্বয়ে গভীর অতলের
দিকে নিয়ে যেতে পারে, এর দৃষ্টান্ত সারাবিশ্বে বাংলাদেশের মতো আর ক’টি আছে,
জানা নেই। ক্ষমতার মোহে অন্ধ হয়ে কায়েমি স্বার্থ হাসিল বা রক্ষা করার জন্য
রাজনীতিকরা কী করতে পারেন আর কী না করতে পারেন এর অনুপুঙ্খ
ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না। ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য এবং
একবার ক্ষমতায় যেতে পারলে তা ধরে রাখার জন্য যে কোনো উপায় অবলম্বন করা
আমাদের দেশের রাজনীতিকদের একটি স্বাভাবিক প্রবণতা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাদের
সংকীর্ণ চিন্তা ও অপরিণামদর্শী কর্মকাণ্ডের ফলে দেশে আবারও রাজনৈতিক সংকট
তৈরি হয়েছে। বিরাজমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে কোনোক্রমেই অভূতপূর্ব বলার
অবকাশ নেই। আশির দশকের একটি বৃহৎ অংশজুড়ে এবং ১৯৯৬ ও ২০০৬-০৭ সালে মূলত
রাজনীতিকদেরই সৃষ্ট পরিস্থিতিতে গভীর উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যে দেশবাসীর
জীবনযাপনের কথা কারও মন থেকে মুছে যাওয়ার নয়।
রাষ্ট্রপতি প্রফেসর ড. ইয়াজউদ্দিন আহমদের নেতৃত্বে গঠিত বিতর্কিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ঘোষিত ২০০৭ সালের ২২ জানুয়ারির নির্বাচনের আগেই সেনাসমর্থিত ফখরুদ্দীন আহমদের তত্ত্বাবধায়ক সরকার দায়িত্ব না নিলে সে সময় কত প্রাণ সংহার হতো, কে জানে। বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে দেশের প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যকার পারস্পরিক সন্দেহ, অবিশ্বাস, অনাস্থা ও প্রতিশোধপরায়ণতার মাত্রা এমন পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছে যে, একটি অর্থবহ সংলাপ বা সমঝোতা ছাড়া আসন্ন দশম সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠানের কথা চিন্তাও করা যায় না। এরূপ মনে হওয়ার কারণ ’৮৮, ’৯৬ (১৫ ফেব্র“য়ারি) এবং ২০০৬-০৭ সালের (ঘোষিত) নির্বাচনকে ঘিরে সপ্তাহ কিংবা মাসব্যাপী সংঘটিত অনাকাক্সিক্ষত সব স্মৃতি। এসব দুঃসহ স্মৃতি আজও দেশের শান্তিপ্রিয় মানুষকে প্রতিনিয়ত তাড়া করে ফেরে।
আমাদের জাতীয় জীবনে আরেকটি অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ’৯৬ সালের ১৫ ফেরুয়ারির ষষ্ঠ সংসদ নির্বাচন। এ নির্বাচনকে কেন্দ্র করেও তামাশা কম হয়নি। তিন দফা তফসিল পরিবর্তনের পর শেষ পর্যন্ত রমজান মাসে (২৫ রমজান) অনুষ্ঠিত হয় নির্বাচনটি (এর আগে বা পরে রমজান মাসে দেশে এ পর্যন্ত কোনো সংসদ নির্বাচন তো বটেই, অন্য কোনো নির্বাচনও অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে জানা যায় না)। ওই নির্বাচনে অন্য দল বা স্বতন্ত্র কোনো প্রার্থী না দাঁড়ানোয় সংসদের মোট ৩০০ আসনের মধ্যে ৪৮টিতেই ক্ষমতাসীন বিএনপি দলীয় প্রার্থীদের বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত বলে ঘোষণা করা হয়। নির্বাচন অনুষ্ঠানের আগেই সারাদেশ অশান্ত হয়ে ওঠে। সরকার ও বিরোধী পক্ষ একেবারে মারমুখো হওয়ায় জনজীবনে দেখা দেয় চরম অনিশ্চয়তা। বিরাজমান পরিস্থিতিতে নিরাপত্তার অভাবে স্বতন্ত্র ও দলীয় অনেক প্রার্থী পত্রিকায় বিবৃতি দিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান। বিবিসি পরিবেশিত এক খবরে বলা হয়, উত্তরাঞ্চলে প্রায় একশ’ প্রার্থী নিজ এলাকা থেকে পালিয়ে অন্যত্র বা আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। নির্বাচনী দায়িত্ব এড়াতে ২৫ হাজার কর্মকতা-কর্মচারী ছুটির আবেদন করেন। নির্বাচনের আগের দিন পর্যন্ত সহিংসতায় একজন সহকারী পুলিশ কমিশনারসহ ৪জন পুলিশ সদস্যের মৃত্যু ঘটে। কোথাও কোথাও প্রার্থী ও প্রিসাইডিং অফিসারকে দিগম্বর করে ফেলে নির্বাচন প্রতিরোধকারীরা। নির্বাচনের দুদিন আগেও অন্তত ২০টি জেলায় প্রিসাইডিং অফিসার নিয়োগ দিতে পারেনি কমিশন। অনেক স্থানে প্রিসাইডিং অফিসারদের কর্মশালা বোমাবাজির কারণে পণ্ড হয়ে পড়ে। অস্ত্র উদ্ধার ও সহিংসতার জের ধরে সারাদেশে অন্তত ২০ হাজার বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীকে করা হয় গ্রেফতার। দেশব্যাপী এরূপ গভীর উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা এবং চরম অস্থিরতার মাঝেও সরকারদলীয় প্রার্থী ও নেতারা একে ‘স্বাধীনতা, গণতন্ত্র এবং সংবিধান রক্ষার নির্বাচন’ বলে উল্লেখ করে নির্বাচনী মাঠে একতরফা প্রচারণা চালিয়ে যেতে থাকেন। নির্বাচনের দুদিন আগে প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ‘রাজনৈতিক অস্থিরতা নিরসনে নির্বাচনের পর আলোচনার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া হবে’ বলে অভিমত ব্যক্ত করেন। এতে বিরোধীরা আরও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। নির্বাচন কমিশন ৮০টি আসনে পুনর্নির্বাচন করতে বাধ্য হয়। দেশী-বিদেশী মিডিয়াতেও নির্বাচনে ভোটারদের কম উপস্থিতি, সহিংসতা, ব্যালট পেপার ছিনতাইয়ের ঘটনা স্বীকার করা হয়। ভোটারবিহীন একতরফা নির্বাচনের পর ভয়েস অব আমেরিকা খবর প্রচার করে যে, ‘বাংলাদেশের সংসদ নির্বাচনে প্রদত্ত ভোটের পরিমাণ মাত্র ৫ থেকে ১০ ভাগ।’ কিন্তু হলে কী হবে- নির্বাচনের পরদিন বিএনপি ঘটা করে রাজধানীতে বিজয় মিছিল করে এবং মিছিল শেষে সমাবেশে বক্তৃতায় নেতারা বলেন, ‘সন্ত্রাসের মাধ্যমে জনগণকে অধিকার বঞ্চিত রাখা যায় না।’
সেসব দুঃসহ দিনের স্মৃতির কথা রাজনীতিকরা বিস্মৃত হলেও দেশবাসীর মনে এসব স্মৃতি অনেকদিন জাগরুক হয়ে থাকবে। ক্ষমতার বলয়ে থেকে জাতির সংকটকালে ’৮৮, ’৯৬ ও ২০০৬-০৭ সালে দফায় দফায় সংবিধানের পাঠ শিখিয়েছেন এবং এখনও শিখিয়ে চলেছেন আমাদের রাজনীতিকরা। কিন্তু প্রশ্ন হল, যাদের গণতন্ত্র, নির্বাচন, সংবিধান, এমনকি মৌলিক অধিকার সম্পর্কেও ন্যূনতম ধারণা নেই- সেসব অজ্ঞ নিরপরাধ নিরীহ মানুষকে স্বার্থান্ধ রাজনীতির যুপকাষ্ঠে আর কতবার বলি করা হবে? অনেকে বলছেন, বর্তমান সরকার বিরোধী দলগুলোকে নির্বাচনে আনার বদলে একতরফা নির্বাচনের দিকে এগোচ্ছে।
অন্যদিকে বিএনপিসহ ১৮ দলীয় জোট এরই মধ্যে জানিয়ে দিয়েছে, তারা দলীয় সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ নেবে না এবং নির্বাচন করতেও দেবে না। সেক্ষেত্রে অতীতের মতো প্রাণঘাতী সংঘাত যে অনিবার্য, তা ব্যাখ্যা করে বলার দরকার নেই। রাজনৈতিক সংকট নিরসনে সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে সমঝোতা বা অর্থবহ সংলাপের কোনো দৃষ্টান্ত আমাদের দেশে আছে কি-না, জানা নেই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বিরোধী দলীয় নেতা খালেদা জিয়া উভয়েই অত্যন্ত জনপ্রিয়। গত ২২ বছর ধরে জনগণের রায় নিয়ে তারাই পৌনঃপুনিকভাবে প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেতা হচ্ছেন। মূলত দলীয় নেতাকর্মী ও সমর্থকরা তাদের একজনকে দেশরত্ন এবং অন্যজনকে দেশনেত্রী বলে সম্বোধন করে থাকেন। ইচ্ছা করলেই তারা এসব অভিধারও ঊর্ধ্বে উঠে দেশে-বিদেশে এক একজন সফল রাষ্ট্রনায়কের অভিধায় অভিষিক্ত হয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারেন। দেশপ্রেম কেবল থাকলেই হবে না, দেশপ্রেমে উজ্জীবিতও হতে হবে। অতীতের কথা ভেবে দুই নেত্রী খোলা মন নিয়ে সমঝোতা বৈঠকে বসলে একদিনেই গোটা জাতিকে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠামুক্ত করতে পারবেন বলে বিশ্বাস করি। আলোচনার কোনো বিকল্প নেই। আমরা দেশবাসী দুই নেত্রীর অনতিবিলম্ব কার্যক্রমের দিকে তাকিয়ে আছি। সুন্দর ও স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ পরিবেশে সব দলের অংশগ্রহণে অবাধ ও নিরপেক্ষ একটি নির্বাচনই দেশবাসীর প্রত্যাশা।
বিমল সরকার : কলেজ শিক্ষক
রাষ্ট্রপতি প্রফেসর ড. ইয়াজউদ্দিন আহমদের নেতৃত্বে গঠিত বিতর্কিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ঘোষিত ২০০৭ সালের ২২ জানুয়ারির নির্বাচনের আগেই সেনাসমর্থিত ফখরুদ্দীন আহমদের তত্ত্বাবধায়ক সরকার দায়িত্ব না নিলে সে সময় কত প্রাণ সংহার হতো, কে জানে। বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে দেশের প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যকার পারস্পরিক সন্দেহ, অবিশ্বাস, অনাস্থা ও প্রতিশোধপরায়ণতার মাত্রা এমন পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছে যে, একটি অর্থবহ সংলাপ বা সমঝোতা ছাড়া আসন্ন দশম সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠানের কথা চিন্তাও করা যায় না। এরূপ মনে হওয়ার কারণ ’৮৮, ’৯৬ (১৫ ফেব্র“য়ারি) এবং ২০০৬-০৭ সালের (ঘোষিত) নির্বাচনকে ঘিরে সপ্তাহ কিংবা মাসব্যাপী সংঘটিত অনাকাক্সিক্ষত সব স্মৃতি। এসব দুঃসহ স্মৃতি আজও দেশের শান্তিপ্রিয় মানুষকে প্রতিনিয়ত তাড়া করে ফেরে।
আমাদের জাতীয় জীবনে আরেকটি অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ’৯৬ সালের ১৫ ফেরুয়ারির ষষ্ঠ সংসদ নির্বাচন। এ নির্বাচনকে কেন্দ্র করেও তামাশা কম হয়নি। তিন দফা তফসিল পরিবর্তনের পর শেষ পর্যন্ত রমজান মাসে (২৫ রমজান) অনুষ্ঠিত হয় নির্বাচনটি (এর আগে বা পরে রমজান মাসে দেশে এ পর্যন্ত কোনো সংসদ নির্বাচন তো বটেই, অন্য কোনো নির্বাচনও অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে জানা যায় না)। ওই নির্বাচনে অন্য দল বা স্বতন্ত্র কোনো প্রার্থী না দাঁড়ানোয় সংসদের মোট ৩০০ আসনের মধ্যে ৪৮টিতেই ক্ষমতাসীন বিএনপি দলীয় প্রার্থীদের বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত বলে ঘোষণা করা হয়। নির্বাচন অনুষ্ঠানের আগেই সারাদেশ অশান্ত হয়ে ওঠে। সরকার ও বিরোধী পক্ষ একেবারে মারমুখো হওয়ায় জনজীবনে দেখা দেয় চরম অনিশ্চয়তা। বিরাজমান পরিস্থিতিতে নিরাপত্তার অভাবে স্বতন্ত্র ও দলীয় অনেক প্রার্থী পত্রিকায় বিবৃতি দিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান। বিবিসি পরিবেশিত এক খবরে বলা হয়, উত্তরাঞ্চলে প্রায় একশ’ প্রার্থী নিজ এলাকা থেকে পালিয়ে অন্যত্র বা আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। নির্বাচনী দায়িত্ব এড়াতে ২৫ হাজার কর্মকতা-কর্মচারী ছুটির আবেদন করেন। নির্বাচনের আগের দিন পর্যন্ত সহিংসতায় একজন সহকারী পুলিশ কমিশনারসহ ৪জন পুলিশ সদস্যের মৃত্যু ঘটে। কোথাও কোথাও প্রার্থী ও প্রিসাইডিং অফিসারকে দিগম্বর করে ফেলে নির্বাচন প্রতিরোধকারীরা। নির্বাচনের দুদিন আগেও অন্তত ২০টি জেলায় প্রিসাইডিং অফিসার নিয়োগ দিতে পারেনি কমিশন। অনেক স্থানে প্রিসাইডিং অফিসারদের কর্মশালা বোমাবাজির কারণে পণ্ড হয়ে পড়ে। অস্ত্র উদ্ধার ও সহিংসতার জের ধরে সারাদেশে অন্তত ২০ হাজার বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীকে করা হয় গ্রেফতার। দেশব্যাপী এরূপ গভীর উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা এবং চরম অস্থিরতার মাঝেও সরকারদলীয় প্রার্থী ও নেতারা একে ‘স্বাধীনতা, গণতন্ত্র এবং সংবিধান রক্ষার নির্বাচন’ বলে উল্লেখ করে নির্বাচনী মাঠে একতরফা প্রচারণা চালিয়ে যেতে থাকেন। নির্বাচনের দুদিন আগে প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ‘রাজনৈতিক অস্থিরতা নিরসনে নির্বাচনের পর আলোচনার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া হবে’ বলে অভিমত ব্যক্ত করেন। এতে বিরোধীরা আরও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। নির্বাচন কমিশন ৮০টি আসনে পুনর্নির্বাচন করতে বাধ্য হয়। দেশী-বিদেশী মিডিয়াতেও নির্বাচনে ভোটারদের কম উপস্থিতি, সহিংসতা, ব্যালট পেপার ছিনতাইয়ের ঘটনা স্বীকার করা হয়। ভোটারবিহীন একতরফা নির্বাচনের পর ভয়েস অব আমেরিকা খবর প্রচার করে যে, ‘বাংলাদেশের সংসদ নির্বাচনে প্রদত্ত ভোটের পরিমাণ মাত্র ৫ থেকে ১০ ভাগ।’ কিন্তু হলে কী হবে- নির্বাচনের পরদিন বিএনপি ঘটা করে রাজধানীতে বিজয় মিছিল করে এবং মিছিল শেষে সমাবেশে বক্তৃতায় নেতারা বলেন, ‘সন্ত্রাসের মাধ্যমে জনগণকে অধিকার বঞ্চিত রাখা যায় না।’
সেসব দুঃসহ দিনের স্মৃতির কথা রাজনীতিকরা বিস্মৃত হলেও দেশবাসীর মনে এসব স্মৃতি অনেকদিন জাগরুক হয়ে থাকবে। ক্ষমতার বলয়ে থেকে জাতির সংকটকালে ’৮৮, ’৯৬ ও ২০০৬-০৭ সালে দফায় দফায় সংবিধানের পাঠ শিখিয়েছেন এবং এখনও শিখিয়ে চলেছেন আমাদের রাজনীতিকরা। কিন্তু প্রশ্ন হল, যাদের গণতন্ত্র, নির্বাচন, সংবিধান, এমনকি মৌলিক অধিকার সম্পর্কেও ন্যূনতম ধারণা নেই- সেসব অজ্ঞ নিরপরাধ নিরীহ মানুষকে স্বার্থান্ধ রাজনীতির যুপকাষ্ঠে আর কতবার বলি করা হবে? অনেকে বলছেন, বর্তমান সরকার বিরোধী দলগুলোকে নির্বাচনে আনার বদলে একতরফা নির্বাচনের দিকে এগোচ্ছে।
অন্যদিকে বিএনপিসহ ১৮ দলীয় জোট এরই মধ্যে জানিয়ে দিয়েছে, তারা দলীয় সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ নেবে না এবং নির্বাচন করতেও দেবে না। সেক্ষেত্রে অতীতের মতো প্রাণঘাতী সংঘাত যে অনিবার্য, তা ব্যাখ্যা করে বলার দরকার নেই। রাজনৈতিক সংকট নিরসনে সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে সমঝোতা বা অর্থবহ সংলাপের কোনো দৃষ্টান্ত আমাদের দেশে আছে কি-না, জানা নেই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বিরোধী দলীয় নেতা খালেদা জিয়া উভয়েই অত্যন্ত জনপ্রিয়। গত ২২ বছর ধরে জনগণের রায় নিয়ে তারাই পৌনঃপুনিকভাবে প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেতা হচ্ছেন। মূলত দলীয় নেতাকর্মী ও সমর্থকরা তাদের একজনকে দেশরত্ন এবং অন্যজনকে দেশনেত্রী বলে সম্বোধন করে থাকেন। ইচ্ছা করলেই তারা এসব অভিধারও ঊর্ধ্বে উঠে দেশে-বিদেশে এক একজন সফল রাষ্ট্রনায়কের অভিধায় অভিষিক্ত হয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারেন। দেশপ্রেম কেবল থাকলেই হবে না, দেশপ্রেমে উজ্জীবিতও হতে হবে। অতীতের কথা ভেবে দুই নেত্রী খোলা মন নিয়ে সমঝোতা বৈঠকে বসলে একদিনেই গোটা জাতিকে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠামুক্ত করতে পারবেন বলে বিশ্বাস করি। আলোচনার কোনো বিকল্প নেই। আমরা দেশবাসী দুই নেত্রীর অনতিবিলম্ব কার্যক্রমের দিকে তাকিয়ে আছি। সুন্দর ও স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ পরিবেশে সব দলের অংশগ্রহণে অবাধ ও নিরপেক্ষ একটি নির্বাচনই দেশবাসীর প্রত্যাশা।
বিমল সরকার : কলেজ শিক্ষক
No comments