হরতালের বিকল্প ভাবতে হবে by ড. কুদরাত-ই-খুদা বাবু
গত ১৭ সেপ্টেম্বর সুপ্রিমকোর্টের আপিল
বিভাগ মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি
জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লার ফাঁসির আদেশ দেন। রায় ঘোষণার চার ঘণ্টার
মধ্যেই এ রায়কে ন্যায়বিচারের পরিপন্থী দাবি করে ১৮ ও ১৯ সেপ্টেম্বর
দেশব্যাপী হরতাল আহ্বান করে জামায়াতে ইসলামী। যদিও এ হরতালই জামায়াতের ডাকা
প্রথম হরতাল নয়; যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাতে এর আগেও কয়েকবার হরতাল ডেকেছে
তারা। অন্যদিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহালের দাবিসহ নানা
ইস্যুতে বিরোধী দল দেশে অনেকবার হরতাল ডেকেছে। এই ইস্যুতে সামনে আরও এ
ধরনের কর্মসূচি দেয়া হতে পারে। বস্তুত, হরতাল এদেশের সংস্কৃতিতে নতুন এক
মাত্রা হিসেবে যোগ হয়েছে। যখন যারা বিরোধী দলে থাকে, তারা নানা ইস্যুতে
হরতালের ডাক দেয়। অথচ বাস্তবতা হল, জনগণ হরতাল চায় না। একটি সংস্থার জরিপে
দেখা দেছে, দেশের শতকরা ৯৫ ভাগ লোকই হরতাল পছন্দ করে না। তা সত্ত্বেও
জনগণকে বারবার হরতালের কবলে পড়তে হচ্ছে। হরতাল যেন এ দেশে ডাল-ভাতের মতো
বিষয়ে পরিণত হয়েছে। ভাষাগত দিক থেকে হরতাল একটি গুজরাটি শব্দ। গুজরাটে কোনো
দাবিতে দোকানপাট বন্ধ রাখার ক্ষেত্রে এ শব্দটি ব্যবহার করা হলেও এ দেশে
হরতাল একটি ধ্বংসাÍক ও আতংকের শব্দে পরিণত হয়েছে। হরতালে জনগণের প্রাণহানিও
ঘটছে। অর্থনীতির ক্ষতি হচ্ছে। সার্বিক শিক্ষাব্যবস্থা ভেঙে পড়ছে। সেশনজট
বৃদ্ধি পেয়ে শিক্ষার্থীদের অপূরণীয় ক্ষতি হচ্ছে।
মূলত হরতাল বিভিন্ন সংগঠনের দাবি আদায়ের জন্য সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগের একটি কৌশল এবং তা একটি গণতান্ত্রিক অধিকারও বটে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, আমাদের মতো একটি উন্নয়নশীল দেশে অর্থনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষাব্যবস্থাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রের ওপর হরতালের যে দীর্ঘস্থায়ী কুপ্রভাব পড়ছে, তা সহ্য করার মতো ক্ষমতা আমাদের আছে কি-না? নিশ্চয় নেই। শুধু তাই নয়, হরতালের কারণে বহির্বিশ্বে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে। বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত হচ্ছে। হরতালের কারণে দেশের খেটে খাওয়া মানুষ থেকে শুরু করে ব্যবসায়ী সমাজসহ সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তাই হরতালের ব্যাপারে সবাই উদ্বিগ্ন। অথচ হরতাল আহ্বানকারীরা দেশের উন্নয়ন-অগ্রগতিসহ খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষের কথা ভাবেন না। ধারাবাহিকভাবে হরতাল চলে আসায় এখন অনেকের মনেই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, বাংলাদেশ কি হরতালের দেশে পরিণত হতে চলেছে?
এটা সব গণতান্ত্রিক দেশেই স্বীকৃত যে, রাজনীতির অন্যতম প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে দেশকে অর্থনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষাসহ সবদিক থেকে এগিয়ে নেয়া। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এর ফল হচ্ছে উল্টো। কারণ দেশের রাজনৈতিক দলগুলো বিভিন্ন অজুহাতে কথায় কথায় হরতাল ডাকার মধ্য দিয়ে সহিংস ও ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড চালিয়ে থাকে। এতে করে দেশের অর্থনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষাসহ বিভিন্ন সেক্টর যে পিছিয়ে যাচ্ছে0- তা নিয়ে কারও মাথাব্যথা নেই। রমজান মাসকে নিরবচ্ছিন্ন শান্তির মাস হিসেবে গণ্য করা হয়। এ মাসে মানুষের অর্থনৈতিক তৎপরতা বেড়ে যায় এবং ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানগুলোও সরব হয়ে ওঠে। কিন্তু রমজান মাসও এদেশে হরতালের কবল থেকে রেহাই পায় না।
হরতালের কারণে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন পণ্য সরবরাহে বিঘ্ন ঘটছে। ফলে বাড়ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম, যা অনেক সময় সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে। পাশাপাশি হরতালের কারণে মারাত্মকভাবে ক্ষতির শিকার হচ্ছে দেশের শিল্প খাত। হরতালে দেশের বড় বড় শিল্প প্রতিষ্ঠানে উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। শেয়ারবাজারেও পড়ছে নেতিবাচক প্রভাব। মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশের আমদানি-রফতানি খাত। দেশের একটি প্রধান বণিক সংস্থার জরিপে দেখা গেছে, সহিংস হরতালের কারণে বছরে জিডিপিতে ক্ষতির পরিমাণ ৭ শতাংশ। একদিনের হরতালেই ক্ষতি হয় প্রায় ১৬ হাজার কোটি টাকার। শুধু তৈরি পোশাক খাতেই ক্ষতি হয় দিনে ৩৬০ কোটি টাকার। এ হিসাবে বছরে যদি ৪০টি হরতাল হয়, তাহলে ক্ষতি হয় ৬৪ হাজার কোটি টাকার। সব মিলিয়ে হরতালের কারণে দেশের অর্থনীতিতে এখন চলছে মহাসংকট। একের পর এক হরতাল ডেকে দেশের অর্থনীতিকে পেছনে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এর ফল আÍবিনাশী হতে বাধ্য এবং এর খেসারত দিতে হবে পুরো জাতিকে।
এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, দেশে বারবার হরতালের কারণে বাধাগ্রস্ত হয় মানুষের স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড। হরতাল পঙ্গু করছে দেশের অর্থনীতি, ব্যবসা, শিক্ষাসহ সব ক্ষেত্রকে। তাই হরতাল বন্ধে দেশের ব্যবসায়িক নেতৃবৃন্দ, বুদ্ধিজীবী মহল, সাধারণ মানুষ ও সুশীল সমাজসহ সব রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন। প্রয়োজন দাবি আদায়ে হরতালের বিকল্প কোনো পন্থা খুঁজে বের করা। সবাই মিলে হরতালকে না বলার ব্যাপারেও সমন্বিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ জরুরি। এ ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ যত দ্রুত নেয়া হবে, ততই তা দেশ-জাতির জন্য মঙ্গলজনক হবে। এ ক্ষেত্রে সব রাজনৈতিক দলেরই ভেবে দেখা প্রয়োজন, যে দল হরতাল আহ্বান করে দেশে অস্থিতিশীলতা ও নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করে, তার কুপ্রভাব কিন্তু পরবর্তী নির্বাচনে বিজয়ী হলে ওই দলের ওপরই পড়ে। রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের এটাও বোঝা উচিত যে, জনগণ এখন আর বোকা নয় এবং জনগণকে বোকা ভাবার কারণও নেই। জনগণ যে সুপ্ত আগ্নেয়গিরির মতো যে কোনো সময় বিস্ফোরণ ঘটাতে সক্ষম, তার প্রকৃষ্ট প্রমাণ তারা ইতিপূর্বে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনগুলোতে বেশ ভালোভাবেই দেখাতে সক্ষম হয়েছে। দেশ-জাতির বৃহত্তর স্বার্থে সব দলেরই উচিত হরতাল পরিহার করা। সময় এসেছে দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নেয়ার, পিছিয়ে দেয়ার নয়। হরতালের কারণে এ দেশ সবদিক থেকে পিছিয়ে যাক, এমনটি কারও কাম্য হতে পারে না। তাই সবারই উচিত হরতালের বিকল্প পন্থা খুঁজে বের করা।
ড. কুদরাত-ই-খুদা বাবু : বিভাগীয় প্রধান, আইন বিভাগ, ইউআইটিএস; অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের সদস্য
মূলত হরতাল বিভিন্ন সংগঠনের দাবি আদায়ের জন্য সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগের একটি কৌশল এবং তা একটি গণতান্ত্রিক অধিকারও বটে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, আমাদের মতো একটি উন্নয়নশীল দেশে অর্থনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষাব্যবস্থাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রের ওপর হরতালের যে দীর্ঘস্থায়ী কুপ্রভাব পড়ছে, তা সহ্য করার মতো ক্ষমতা আমাদের আছে কি-না? নিশ্চয় নেই। শুধু তাই নয়, হরতালের কারণে বহির্বিশ্বে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে। বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত হচ্ছে। হরতালের কারণে দেশের খেটে খাওয়া মানুষ থেকে শুরু করে ব্যবসায়ী সমাজসহ সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তাই হরতালের ব্যাপারে সবাই উদ্বিগ্ন। অথচ হরতাল আহ্বানকারীরা দেশের উন্নয়ন-অগ্রগতিসহ খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষের কথা ভাবেন না। ধারাবাহিকভাবে হরতাল চলে আসায় এখন অনেকের মনেই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, বাংলাদেশ কি হরতালের দেশে পরিণত হতে চলেছে?
এটা সব গণতান্ত্রিক দেশেই স্বীকৃত যে, রাজনীতির অন্যতম প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে দেশকে অর্থনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষাসহ সবদিক থেকে এগিয়ে নেয়া। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এর ফল হচ্ছে উল্টো। কারণ দেশের রাজনৈতিক দলগুলো বিভিন্ন অজুহাতে কথায় কথায় হরতাল ডাকার মধ্য দিয়ে সহিংস ও ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড চালিয়ে থাকে। এতে করে দেশের অর্থনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষাসহ বিভিন্ন সেক্টর যে পিছিয়ে যাচ্ছে0- তা নিয়ে কারও মাথাব্যথা নেই। রমজান মাসকে নিরবচ্ছিন্ন শান্তির মাস হিসেবে গণ্য করা হয়। এ মাসে মানুষের অর্থনৈতিক তৎপরতা বেড়ে যায় এবং ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানগুলোও সরব হয়ে ওঠে। কিন্তু রমজান মাসও এদেশে হরতালের কবল থেকে রেহাই পায় না।
হরতালের কারণে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন পণ্য সরবরাহে বিঘ্ন ঘটছে। ফলে বাড়ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম, যা অনেক সময় সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে। পাশাপাশি হরতালের কারণে মারাত্মকভাবে ক্ষতির শিকার হচ্ছে দেশের শিল্প খাত। হরতালে দেশের বড় বড় শিল্প প্রতিষ্ঠানে উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। শেয়ারবাজারেও পড়ছে নেতিবাচক প্রভাব। মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশের আমদানি-রফতানি খাত। দেশের একটি প্রধান বণিক সংস্থার জরিপে দেখা গেছে, সহিংস হরতালের কারণে বছরে জিডিপিতে ক্ষতির পরিমাণ ৭ শতাংশ। একদিনের হরতালেই ক্ষতি হয় প্রায় ১৬ হাজার কোটি টাকার। শুধু তৈরি পোশাক খাতেই ক্ষতি হয় দিনে ৩৬০ কোটি টাকার। এ হিসাবে বছরে যদি ৪০টি হরতাল হয়, তাহলে ক্ষতি হয় ৬৪ হাজার কোটি টাকার। সব মিলিয়ে হরতালের কারণে দেশের অর্থনীতিতে এখন চলছে মহাসংকট। একের পর এক হরতাল ডেকে দেশের অর্থনীতিকে পেছনে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এর ফল আÍবিনাশী হতে বাধ্য এবং এর খেসারত দিতে হবে পুরো জাতিকে।
এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, দেশে বারবার হরতালের কারণে বাধাগ্রস্ত হয় মানুষের স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড। হরতাল পঙ্গু করছে দেশের অর্থনীতি, ব্যবসা, শিক্ষাসহ সব ক্ষেত্রকে। তাই হরতাল বন্ধে দেশের ব্যবসায়িক নেতৃবৃন্দ, বুদ্ধিজীবী মহল, সাধারণ মানুষ ও সুশীল সমাজসহ সব রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন। প্রয়োজন দাবি আদায়ে হরতালের বিকল্প কোনো পন্থা খুঁজে বের করা। সবাই মিলে হরতালকে না বলার ব্যাপারেও সমন্বিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ জরুরি। এ ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ যত দ্রুত নেয়া হবে, ততই তা দেশ-জাতির জন্য মঙ্গলজনক হবে। এ ক্ষেত্রে সব রাজনৈতিক দলেরই ভেবে দেখা প্রয়োজন, যে দল হরতাল আহ্বান করে দেশে অস্থিতিশীলতা ও নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করে, তার কুপ্রভাব কিন্তু পরবর্তী নির্বাচনে বিজয়ী হলে ওই দলের ওপরই পড়ে। রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের এটাও বোঝা উচিত যে, জনগণ এখন আর বোকা নয় এবং জনগণকে বোকা ভাবার কারণও নেই। জনগণ যে সুপ্ত আগ্নেয়গিরির মতো যে কোনো সময় বিস্ফোরণ ঘটাতে সক্ষম, তার প্রকৃষ্ট প্রমাণ তারা ইতিপূর্বে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনগুলোতে বেশ ভালোভাবেই দেখাতে সক্ষম হয়েছে। দেশ-জাতির বৃহত্তর স্বার্থে সব দলেরই উচিত হরতাল পরিহার করা। সময় এসেছে দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নেয়ার, পিছিয়ে দেয়ার নয়। হরতালের কারণে এ দেশ সবদিক থেকে পিছিয়ে যাক, এমনটি কারও কাম্য হতে পারে না। তাই সবারই উচিত হরতালের বিকল্প পন্থা খুঁজে বের করা।
ড. কুদরাত-ই-খুদা বাবু : বিভাগীয় প্রধান, আইন বিভাগ, ইউআইটিএস; অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের সদস্য
No comments