সংকট সমাধানে দেশপ্রেমের পরিচয় দিন by মোঃ মাহমুদুর রহমান
দেশী-বিদেশী
সব মহল থেকে রাজনৈতিক সংকট সমাধানে সংলাপের তাগিদ দেয়া হচ্ছে। এক পক্ষ
সংলাপে বসতে সম্মত হলেও অপর পক্ষ সংলাপে বসতে রাজি নয়। মাঝে মাঝে কূটনৈতিক
মহলের চাপে ক্ষমতাসীনরা সংলাপের বিষয়ে ইতিবাচক বক্তব্য দিলেও পরক্ষণেই
বক্তব্য থেকে সরে যাচ্ছেন। বিরোধী দলকে সংলাপের জন্য আনুষ্ঠানিক পত্র দেয়ার
ঘোষণা দিয়েও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম এ ঘোষণা
অনুযায়ী অজ্ঞাত কারণে কাজ করতে পারেননি। আসলে সদিচ্ছাবিহীন সংলাপ কোনো
সমাধান নিয়ে আসতে পারে না, যার প্রমাণ ২০০৬ সালের আবদুল মান্নান ভূঁইয়া ও
আবদুল জলিলের মধ্যে সিরিজ সংলাপ। প্রকাশ্য কিংবা অপ্রকাশ্য সংলাপ ছাড়া যেমন
সমঝোতা অসম্ভব, তেমনি সদিচ্ছাবিহীন সংলাপে সংকটের সমাধানের আশাও অবাস্তব।
আর এ মুহূর্তে একটি কার্যকর সংলাপের পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারেন মাননীয়
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, অন্য কেউ নয়। আজকের এই সংকটের সূচনা হয়েছে
সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী বিল জাতীয় সংসদে গৃহীত হওয়ার মাধ্যমে। ত্রয়োদশ
সংশোধনীর দ্বারা অর্জিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা রহিত করা হয় পঞ্চদশ
সংশোধনীর মাধ্যমে। ফলে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা নিয়ে
অতীতের জাতীয় ঐকমত্য থেকে বর্তমান সরকার সরে যায়। এ প্রক্রিয়া শুরু হয়
মহামান্য সুপ্রিমকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী সংবিধান সংশোধনের জন্য সংসদীয়
কমিটি গঠনের মাধ্যমে। ২০১০ সালে এই কমিটি গঠন করা হলেও এতে প্রধান বিরোধী
দল বিএনপির কোনো সদস্য ছিলেন না। কমিটি আইনজ্ঞসহ সব শ্রেণী-পেশার মানুষের
মতামত নিয়েছিল সংশোধনের সুপারিশ পেশের আগে। কোনো মহল থেকেই তত্ত্বাবধায়ক
ব্যবস্থা বিলুপ্তির সুপারিশ করা হয়নি। কমিটি তার সুপারিশ চূড়ান্ত করার শেষ
পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর সুপ্রিমকোর্টের রায়ের অজুহাত
দেখিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলুপ্তির সুপারিশ করে। যদিও
সুপ্রিমকোর্টের সংক্ষিপ্ত রায়ে পরবর্তী দুই মেয়াদের জন্য তত্ত্বাবধায়ক
সরকার রাখা যেতে পারে বলে মন্তব্য করা হয়েছিল। ওই বৈঠকের পর কমিটির
কো-চেয়ারম্যান সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের সুর পাল্টে যায়। যিনি আগে বার বার
বলছিলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংবিধানে থাকবে, তিনি নতুন করে বলতে
শুরু করলেন, এ ব্যবস্থা রাখা যাবে না সুপ্রিমকোর্টের রায়ের কারণে। জনগণ যা
বোঝার তাই বুঝলেন। এ দেশের রাজনীতিকরা তাদের দলীয় প্রধানের চিন্তার বাইরে
চিন্তা করার সুযোগ পান না, কথার বিপরীতে কোনো কথা বলার মতো হিম্মত রাখেন
না। যত বড় নেতাই হোন না কেন, দলীয় পদ-পদবি ও সরকারের সুযোগ-সুবিধা ভোগ করতে
হলে দলীয় নেত্রীর মর্জিমাফিক চলতে হয়। এটা বর্তমান সরকারপ্রধানের ক্ষেত্রে
যেমন সত্য, তেমনি বিগত জোট সরকারপ্রধানের ক্ষেত্রেও সত্য ছিল। এ অবস্থায়
দেশের প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষ নির্বাচনকালীন একটি দলনিরপেক্ষ সরকার চাইলেও
দলের নেতৃস্থানীয় কেউ তা প্রধানমন্ত্রীর সামনে উপস্থাপন করবেন বলে মনে হয়
না। আর দলের বাইরের কেউ বললে তা আমলে নেয়া হবে না। অথচ দেশবাসী
প্রধানমন্ত্রীর দিকে চেয়ে আছে রাজনৈতিক সংকট সমাধানে দিকনির্দেশনার আশায়।
সংবিধান (সর্বশেষ সংশোধিত) অনুযায়ী নির্বাচনকালীন সরকারপ্রধান থাকবেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী। আর বিরোধী দলের মূল আপত্তির জায়গা এখানেই। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় সরকারপ্রধান রেখে কোনো সমঝোতার ফর্মুলাই মানবে না বিরোধী দল। অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রীকে বাদ দিয়ে কোনো ফর্মুলা দেয়া আওয়ামী লীগের কোনো নেতার পক্ষেই সম্ভব নয়, যদি প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে স্বপ্রণোদিত হয়ে কোনো বক্তব্য প্রদান না করেন। উল্টো প্রধানমন্ত্রীকে খুশি রাখার জন্য কে কত সমঝোতাবিরোধী বক্তব্য প্রদান করতে পারেন, তার প্রতিযোগিতা চলছে।
প্রধানমন্ত্রীর যুক্তি হচ্ছে, তার অধীনে যত নির্বাচন হয়েছে, সবই নিরপেক্ষ হয়েছে, যার জন্য বিরোধী দল সমর্থিত প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছেন। সুতরাং আগামী জাতীয় নির্বাচনও সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে। বাস্তবে হয়তো হতেও পারে। কিন্তু বিরোধী দল কিছুতেই তা বিশ্বাস করতে পারছে না। দেশের সাধারণ মানুষও নির্বাচনকালীন দলনিরপেক্ষ সরকার চায়, যা বিভিন্ন জরিপে উঠে এসেছে। প্রধানমন্ত্রী দোহাই দিচ্ছেন সংবিধানের। সংবিধানের বাইরে কোনো সমঝোতায় তিনি যাবেন না। সংবিধানের ভেতরে থেকেও অনেক সমাধান আছে যদি তিনি নিজেকে সরকারপ্রধানের পদ থেকে প্রত্যাহার করে নেন। দেশে শান্তি, শৃংখলা, স্থিতিশীলতা ও গণতন্ত্র বজায় রাখার স্বার্থে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এ ধরনের একটি ঘোষণা দিলে আগামী নির্বাচনের ফলাফল যা-ই হোক, জনগণের প্রতি তার দায়বদ্ধতা নিয়ে কেউ প্রশ্ন তুলতে পারবে না।
বিগত সংসদ নির্বাচনের সময় সংবিধানের চতুর্দশ সংশোধনীর ফলে এ ধরনের একটি সংকটের সৃষ্টি হয়েছিল। ওই সংশোধনীতে বিচারপতিদের মেয়াদ দুই বছর বাড়িয়ে ৬৭ বছর করা হয়েছিল। ফলে নবম সংসদ নির্বাচনে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করার ছিল বিচারপতি কে এম হাসানের। কিন্তু তৎকালীন বিরোধী দল (বর্তমান শাসক দল) বিচারপতি কে এম হাসানের বিএনপির সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অজুহাতে তাকে প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে মানতে অস্বীকার করে। তখন বিএনপি আজকের আওয়ামী লীগের মতো সংবিধানের দোহাই দিচ্ছিল। কারণ সংবিধান অনুযায়ী বিচারপতি কে এম হাসান প্রধান উপদেষ্টা। অথচ আওয়ামী লীগ তখন কঠোর আন্দোলন গড়ে তুলেছিল এর প্রতিবাদে। বিএনপিও সংবিধান রক্ষা করতে অনমনীয় ছিল। কিন্তু আত্মসম্মানবোধ সম্পন্ন বিচারপতি দেশ ও জনগণের কথা চিন্তা করে সেদিন জানিয়েছিলেন, সবাই না মানলে তিনি প্রধান উপদেষ্টার পদ গ্রহণ করবেন না। জাতি বিরাট সংকট থেকে মুক্তি পেয়েছিল। অন্য বিকল্পগুলো সমঝোতার মাধ্যমে গ্রহণ করে সংকট সমাধানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু তৎকালীন শাসক দল বিএনপির একগুঁয়েমি ও অনমনীয়তার কারণে ধারাবাহিকভাবে সংবিধান সম্মত পরবর্তী বিকল্পগুলো গৃহীত না হওয়ায় সর্বশেষ বিকল্প হিসেবে রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহম্মদকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার পদ গ্রহণ করতে হয়। ফলে সংকট সমাধানের চেয়ে আরও জটিল আকার ধারণ করে এবং পরবর্তী নির্বাচনে বিএনপিকে চরম মূল্য দিতে হয়। অথচ সুযোগ ছিল বিচারপতি মাহমুদুল আমিন চৌধুরী অথবা বিচারপতি হামিদুল হককে প্রধান উপদেষ্টা বানিয়ে সমঝোতার ভিত্তিতে সবার অংশগ্রহণে সুন্দর একটি নির্বাচন উপহার দেয়ার।
আসলে ক্ষমতার স্টিয়ারিং হুইল যার হাতে থাকে, তারাই অনমনীয়তা ও একগুঁয়েমির পরিচয় দেয়। যেমন দিয়েছিল ২০০৬ সালে বিএনপি, একইভাবে দিচ্ছে ২০১৩ সালে আওয়ামী লীগ। আর এই একগুঁয়েমির জন্য জনগণকে যেমন কষ্ট ভোগ করতে হয়, তেমনি ক্ষমতাসীনদেরও চরম মাশুল গুনতে হয়। সাংবাদিক, সুশীল সমাজ এবং চন্তাশীল দেশপ্রেমিক মানুষের দুশ্চিন্তা ও আহাজারি ক্ষমতার দম্ভে পদদলিত হয়। অবস্থা দেখে মনে হয়, কোনো বেপরোয়া চালক যাত্রীদের চিৎকার ও রাস্তায় চলমান মানুষের দুশ্চিন্তাকে গ্রাহ্য না করে দুর্ঘটনার ঝুঁকি নিয়ে গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ নামক গাড়িটি আজ একইভাবে চলছে।
সংবিধানের চতুর্দশ সংশোধনীর ফলে ২০০৬ সালে এই গাড়ির স্টিয়ারিং হুইল ধরার কথা ছিল বিচারপতি কেএম হাসানের। অর্ধেক যাত্রীর আপত্তির কারণে যাত্রী তথা জনগণের কথা চিন্তা করে আত্মসম্মানবোধ ও দেশপ্রেমের কারণে বিচারপতি কেএম হাসান নিজেকে দূরে সরিয়ে রাজনৈতিক সমাধানের সুযোগ দিয়েছিলেন। আজ পঞ্চদশ সংশোধনীর কারণে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সরকারপ্রধান থাকার সাংবিধানিক অধিকার পেয়েছেন। আজও দেশের বেশিরভাগ মানুষ তাকে এই পদে মানতে নারাজ। এখন জনগণের কথা চিন্তা করে তিনি নিজেকে সরিয়ে রাজনৈতিক সমাধানের সুযোগ দিতে পারেন। আবার কোনো কিছুকেই তোয়াক্কা না করে একদলীয় নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণকে দীর্ঘমেয়াদি রাজনৈতিক অনিশ্চতায় ফেলে দিতে পারেন। সবকিছুই নির্ভর করবে তার দেশপ্রেমের ওপর। আমরা বিশ্বাস করতে চাই, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিচারপতি কেএম হাসানের দেশপ্রেমের কাছে হারবেন না। নিশ্চয়ই সময়মতো সংকট সমাধানে দেশপ্রেমের পরিচয় দেবেন।
মোঃ মাহমুদুর রহমান : ব্যাংকার
সংবিধান (সর্বশেষ সংশোধিত) অনুযায়ী নির্বাচনকালীন সরকারপ্রধান থাকবেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী। আর বিরোধী দলের মূল আপত্তির জায়গা এখানেই। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় সরকারপ্রধান রেখে কোনো সমঝোতার ফর্মুলাই মানবে না বিরোধী দল। অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রীকে বাদ দিয়ে কোনো ফর্মুলা দেয়া আওয়ামী লীগের কোনো নেতার পক্ষেই সম্ভব নয়, যদি প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে স্বপ্রণোদিত হয়ে কোনো বক্তব্য প্রদান না করেন। উল্টো প্রধানমন্ত্রীকে খুশি রাখার জন্য কে কত সমঝোতাবিরোধী বক্তব্য প্রদান করতে পারেন, তার প্রতিযোগিতা চলছে।
প্রধানমন্ত্রীর যুক্তি হচ্ছে, তার অধীনে যত নির্বাচন হয়েছে, সবই নিরপেক্ষ হয়েছে, যার জন্য বিরোধী দল সমর্থিত প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছেন। সুতরাং আগামী জাতীয় নির্বাচনও সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে। বাস্তবে হয়তো হতেও পারে। কিন্তু বিরোধী দল কিছুতেই তা বিশ্বাস করতে পারছে না। দেশের সাধারণ মানুষও নির্বাচনকালীন দলনিরপেক্ষ সরকার চায়, যা বিভিন্ন জরিপে উঠে এসেছে। প্রধানমন্ত্রী দোহাই দিচ্ছেন সংবিধানের। সংবিধানের বাইরে কোনো সমঝোতায় তিনি যাবেন না। সংবিধানের ভেতরে থেকেও অনেক সমাধান আছে যদি তিনি নিজেকে সরকারপ্রধানের পদ থেকে প্রত্যাহার করে নেন। দেশে শান্তি, শৃংখলা, স্থিতিশীলতা ও গণতন্ত্র বজায় রাখার স্বার্থে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এ ধরনের একটি ঘোষণা দিলে আগামী নির্বাচনের ফলাফল যা-ই হোক, জনগণের প্রতি তার দায়বদ্ধতা নিয়ে কেউ প্রশ্ন তুলতে পারবে না।
বিগত সংসদ নির্বাচনের সময় সংবিধানের চতুর্দশ সংশোধনীর ফলে এ ধরনের একটি সংকটের সৃষ্টি হয়েছিল। ওই সংশোধনীতে বিচারপতিদের মেয়াদ দুই বছর বাড়িয়ে ৬৭ বছর করা হয়েছিল। ফলে নবম সংসদ নির্বাচনে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করার ছিল বিচারপতি কে এম হাসানের। কিন্তু তৎকালীন বিরোধী দল (বর্তমান শাসক দল) বিচারপতি কে এম হাসানের বিএনপির সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অজুহাতে তাকে প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে মানতে অস্বীকার করে। তখন বিএনপি আজকের আওয়ামী লীগের মতো সংবিধানের দোহাই দিচ্ছিল। কারণ সংবিধান অনুযায়ী বিচারপতি কে এম হাসান প্রধান উপদেষ্টা। অথচ আওয়ামী লীগ তখন কঠোর আন্দোলন গড়ে তুলেছিল এর প্রতিবাদে। বিএনপিও সংবিধান রক্ষা করতে অনমনীয় ছিল। কিন্তু আত্মসম্মানবোধ সম্পন্ন বিচারপতি দেশ ও জনগণের কথা চিন্তা করে সেদিন জানিয়েছিলেন, সবাই না মানলে তিনি প্রধান উপদেষ্টার পদ গ্রহণ করবেন না। জাতি বিরাট সংকট থেকে মুক্তি পেয়েছিল। অন্য বিকল্পগুলো সমঝোতার মাধ্যমে গ্রহণ করে সংকট সমাধানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু তৎকালীন শাসক দল বিএনপির একগুঁয়েমি ও অনমনীয়তার কারণে ধারাবাহিকভাবে সংবিধান সম্মত পরবর্তী বিকল্পগুলো গৃহীত না হওয়ায় সর্বশেষ বিকল্প হিসেবে রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহম্মদকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার পদ গ্রহণ করতে হয়। ফলে সংকট সমাধানের চেয়ে আরও জটিল আকার ধারণ করে এবং পরবর্তী নির্বাচনে বিএনপিকে চরম মূল্য দিতে হয়। অথচ সুযোগ ছিল বিচারপতি মাহমুদুল আমিন চৌধুরী অথবা বিচারপতি হামিদুল হককে প্রধান উপদেষ্টা বানিয়ে সমঝোতার ভিত্তিতে সবার অংশগ্রহণে সুন্দর একটি নির্বাচন উপহার দেয়ার।
আসলে ক্ষমতার স্টিয়ারিং হুইল যার হাতে থাকে, তারাই অনমনীয়তা ও একগুঁয়েমির পরিচয় দেয়। যেমন দিয়েছিল ২০০৬ সালে বিএনপি, একইভাবে দিচ্ছে ২০১৩ সালে আওয়ামী লীগ। আর এই একগুঁয়েমির জন্য জনগণকে যেমন কষ্ট ভোগ করতে হয়, তেমনি ক্ষমতাসীনদেরও চরম মাশুল গুনতে হয়। সাংবাদিক, সুশীল সমাজ এবং চন্তাশীল দেশপ্রেমিক মানুষের দুশ্চিন্তা ও আহাজারি ক্ষমতার দম্ভে পদদলিত হয়। অবস্থা দেখে মনে হয়, কোনো বেপরোয়া চালক যাত্রীদের চিৎকার ও রাস্তায় চলমান মানুষের দুশ্চিন্তাকে গ্রাহ্য না করে দুর্ঘটনার ঝুঁকি নিয়ে গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ নামক গাড়িটি আজ একইভাবে চলছে।
সংবিধানের চতুর্দশ সংশোধনীর ফলে ২০০৬ সালে এই গাড়ির স্টিয়ারিং হুইল ধরার কথা ছিল বিচারপতি কেএম হাসানের। অর্ধেক যাত্রীর আপত্তির কারণে যাত্রী তথা জনগণের কথা চিন্তা করে আত্মসম্মানবোধ ও দেশপ্রেমের কারণে বিচারপতি কেএম হাসান নিজেকে দূরে সরিয়ে রাজনৈতিক সমাধানের সুযোগ দিয়েছিলেন। আজ পঞ্চদশ সংশোধনীর কারণে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সরকারপ্রধান থাকার সাংবিধানিক অধিকার পেয়েছেন। আজও দেশের বেশিরভাগ মানুষ তাকে এই পদে মানতে নারাজ। এখন জনগণের কথা চিন্তা করে তিনি নিজেকে সরিয়ে রাজনৈতিক সমাধানের সুযোগ দিতে পারেন। আবার কোনো কিছুকেই তোয়াক্কা না করে একদলীয় নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণকে দীর্ঘমেয়াদি রাজনৈতিক অনিশ্চতায় ফেলে দিতে পারেন। সবকিছুই নির্ভর করবে তার দেশপ্রেমের ওপর। আমরা বিশ্বাস করতে চাই, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিচারপতি কেএম হাসানের দেশপ্রেমের কাছে হারবেন না। নিশ্চয়ই সময়মতো সংকট সমাধানে দেশপ্রেমের পরিচয় দেবেন।
মোঃ মাহমুদুর রহমান : ব্যাংকার
No comments