আবারও হরতাল
আজ ও আগামীকাল আবার সকাল-সন্ধ্যা হরতাল দিয়েছে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮ দল। শাপলা চত্বরে হেফাজতের সমাবেশে তাদের ভাষায় ‘গণহত্যা’ চালানো হয়েছে এমন অভিযোগে এ হরতালের ডাক দেওয়া হয়েছে। আমরা যেকোনো পরিস্থিতিতে হরতালের মতো রাজনৈতিক কর্মসূচির বিরোধী, আর দেশের বর্তমান দুর্যোগ ও সংঘাত-সহিংসতার পরিস্থিতিতে পর পর দুই দিনের এই হরতাল একেবারেই অগ্রহণযোগ্য ও অযৌক্তিক বলে মনে করি। সাভারে রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় উদ্ধারকাজ এখনো শেষ হয়নি। গত ২৪ এপ্রিল মর্মান্তিক এই ভবনধসের ঘটনার পর এখনো সেখান থেকে লাশ উদ্ধার হচ্ছে। অসংখ্য লোক এখনো নিখোঁজ রয়েছেন, তাঁদের স্বজনেরা অন্তত লাশটি পাওয়ার আশায় এখনো অপেক্ষা করে আছেন। এ অবস্থায় দুই দিনের এই হরতাল সাভারের চলমান উদ্ধার কার্যক্রম ও দুর্যোগে কাবু এই মানুষগুলোর ওপর বাড়তি এক আঘাত হিসেবেই বিবেচিত হবে। অন্যদিকে গত রোববার হেফাজতে ইসলামের সমাবেশ ঘিরে রাজধানীতে যে ব্যাপক সহিংসতা শুরু হয়েছিল, যার রেশ এখনো কেটে যায়নি। সেদিন ঢাকায় যে ধ্বংসযজ্ঞ হয়েছে, তা আমাদের ইতিহাসে একটি কালো অধ্যায় হিসেবেই বিবেচিত হবে। এর প্রতিক্রিয়া দেশের অন্যান্য স্থানেও পড়েছে। সহিংসতা শুরুর পর এ পর্যন্ত ৫০ জনেরও বেশি লোক প্রাণ হারিয়েছে। পরিস্থিতি এখন পুরো শান্ত হয়েছে এমন বলা যাবে না। এই সংঘাতময় পরিস্থিতিতে ‘গণহত্যার’ অভিযোগ এনে হরতালের কর্মসূচি নতুন করে সংঘাতের পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে। এটা স্পষ্ট যে রাজনৈতিক দাবি আদায় বা গণতান্ত্রিক অধিকারের নামে হরতালের মতো কর্মসূচি দিয়ে সংঘাত ও সহিংসতার একটি পরিস্থিতি সৃষ্টি করাই আমাদের দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সংস্কৃতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশের পরিস্থিতি, অর্থনৈতিক ক্ষতি বা জনগণের দুর্ভোগ—কোনো কিছুই আসলে রাজনৈতিক দলগুলোর বিবেচনায় থাকে না। গত কয়েক মাসের নানা রাজনৈতিক সহিংসতা ও হরতাল দেশের সাধারণ মানুষের চরম সর্বনাশ ঘটিয়েছে। এরপর সাভার ট্র্যাজেডি এবং সর্বশেষ হেফাজতের ধ্বংসযজ্ঞ ও সহিংসতা দেশকে কার্যত বিপর্যয়কর এক পরিস্থিতির দিকে নিয়ে গেছে। আজ ও আগামীকালের হরতাল এই পরিস্থিতিকে আরও শোচনীয় করবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন, সরকারের আচরণের প্রতিবাদ বা সরকারের কাছ থেকে দাবি আদায়ের জন্য সংঘাত ও সহিংসতার পরিস্থিতি সৃষ্টির বিষয়টি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। বিএনপি ও ১৮-দলীয় জোটের এই হরতাল সরকারের কতটুকু ক্ষতি করতে পারবে, সেটা স্পষ্ট না হলেও এমনিতেই বিপর্যস্ত দেশ ও দেশের জনগণের যে সর্বনাশ করতে পারবে, সে ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। এই নোংরা রাজনীতিই যেন এ দেশ ও এর জনগণের নিয়তি হয়ে দাঁড়িয়েছে। গতকাল থেকে ‘ও’ লেভেলের পরীক্ষা শুরু হয়েছে, আন্তর্জাতিকভাবে অনুষ্ঠিত এই পরীক্ষা চাইলেই পেছানো যাবে না। হরতাল ডাকার সময় এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার কথা কেউ বিবেচনায় নেয় না, এ ক্ষেত্রে নেওয়া হবে এমন আশা কোথায়!আমরা আবারও বলি, গণতান্ত্রিক সমাজে সংলাপ ও আলাপ-আলোচনাই হচ্ছে সব রাজনৈতিক বিরোধ দূর করার পথ। হরতাল ডেকে দেশ ও জনগণের সর্বনাশ করা ছাড়া আর কিছুই অর্জন করা যায় না।
No comments