দুটি টিভি চ্যানেলবন্ধ
নির্দিষ্ট কারণ না দেখিয়ে দিগন্ত টিভি ও ইসলামিক টিভির সম্প্রচার আকস্মিকভাবে বন্ধ করার ক্ষেত্রে আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ না করায় সরকারের কর্তৃত্বপরায়ণ মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে, যা উদ্বেগজনক। বাংলাদেশের সংবিধানে স্বীকৃত মৌলিক অধিকারের প্রতি এটা আঘাতও বটে। আদালতের নির্দেশের তোয়াক্কা না করে নির্বাহী আদেশে দৈনিক আমার দেশ-এর ছাপাখানায় তালা ঝোলানোর পর সরকার ৬ মের প্রথম প্রহরে ইসলামিক টিভি ও দিগন্ত টিভি বন্ধ করে দিল। সরকার একদিকে দাবি করছে যে তারা বাকস্বাধীনতা ও সংবাদক্ষেত্রের স্বাধীনতার প্রতি পুরোপুরি শ্রদ্ধাশীল, অন্যদিকে একের পর এক বিরোধী মনোভাবাপন্ন সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে দমনমূলক আচরণ করছে। দিগন্ত টিভির একজন মুখপাত্রের ভাষ্য অনুযায়ী কী কারণে চ্যানেলটি বন্ধ করা হয়েছে, সরকারি কর্তৃপক্ষ তা তাদের জানায়নি। যদিও তথ্যমন্ত্রী উসকানিমূলক প্রচারণার অভিযোগ এনেছেন এবং এই পদক্ষেপকে সাময়িক বলে আখ্যায়িত করেছেন। আমার দেশ-এর ছাপাখানা বন্ধের কারণ সরকারের পক্ষ থেকে অন্তত জানানো হয়েছিল। গণমাধ্যম এবং সচেতন সব মহলের উচিত হবে সরকারের এই অগণতান্ত্রিক ও গণমাধ্যমবিরোধী পদক্ষেপের বিরুদ্ধে দল ও মতের গ্রহণযোগ্য তফাত বজায় রেখেই প্রতিবাদে সোচ্চার হওয়া। কারণ, কোনো গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে এভাবে গণমাধ্যমের কণ্ঠ রোধ করা যায় না। সংশ্লিষ্ট গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে আইন ভঙ্গের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে তা জানার অধিকার নিশ্চয়ই তাদের আছে। আমরা যদি ধরেও নেই যে ওই দুটি টিভি চ্যানেল প্রচলিত আইন বা নীতিমালা লঙ্ঘন করেছে, তাহলেও তাদের কণ্ঠ এভাবে স্তব্ধ করার পদক্ষেপ গ্রহণযোগ্য নয়। আজকের যুগে কথিত ‘মৌখিক আদেশে’ মধ্যরাতে সম্প্রচারের যন্ত্রপাতি জব্দ করার ঘটনা অভাবনীয়। আমরা এসব পদক্ষেপের নিন্দা জানাই এবং অবিলম্বে দুটি টিভির ওপর সরকারের আরোপিত তথাকথিত সাময়িক নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেওয়ার আবেদন জানাই। একই সঙ্গে সব সংবাদমাধ্যমের কাছেও দায়িত্বশীল আচরণ প্রত্যাশিত। ভুল ও অতিরঞ্জিত তথ্য বা উদ্দেশ্যমূলক প্রচারণা, যা সমাজে শান্তিশৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণ হতে পারে, তা থেকে অবশ্যই বিরত থাকা উচিত।
No comments