ডিএসসিসির গাড়িবিলাস
চার মিনিটে চার শ বছরের ঢাকা ভাগ হয়েছিল। তখনই শঙ্কা ছিল, বহু ক্ষেত্রে জনগণের অর্থের অহেতুক শ্রাদ্ধ হতে পারে। ২৬টি অতিরিক্ত গাড়ি থাকার পরও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রস্তাবিত জনবলের দোহাই দিয়ে পৌনে আট কোটি টাকা ব্যয়ে আরও ১৬টি নতুন গাড়ি ক্রয়ের উদ্যোগ তারই নমুনা। রাজউকের প্রস্তাবিত দুই হাজার ৭০০ জনবলের ৫০০ ছেঁটে ফেলে গত তিন বছরেও সরকার তা চূড়ান্ত করেনি। উপরন্তু, ডিএসসিসির বিদ্যমান গাড়ির অপব্যবহারের যে চিত্র ফুটে উঠেছে, তা ‘ওলট-পালট করে দে মা লুটেপুটে খাই’ কথাটিই স্মরণ করিয়ে দেয়। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উচিত হবে নতুন গাড়ি কিনতে ডিএসসিসিকে দেওয়া চাহিদাপত্র বাতিল করা। আর তদন্ত করে দেখা যে কী করে গাড়িবিষয়ক দুর্নীতি খতিয়ে দেখতে ডিএসসিসির তদন্ত কমিটির সুপারিশ উপেক্ষা করে ওই চাহিদাপত্র অনুমোদন লাভ করল। এই প্রক্রিয়াও দুর্নীতিগ্রস্ত। সুতরাং, মন্ত্রণালয়ের প্রধান নির্বাহী ও মুখ্য হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তারও জবাবদিহি দরকার। প্রতীয়মান হচ্ছে যে সরকারি গাড়ি ব্যবহারে নিয়মনীতি সব লাটে উঠেছে। প্রভাবশালী কর্মকর্তারা পদ-পদবিনির্বিশেষে খেয়ালখুশিমতো গাড়ি ব্যবহার করছেন। এমনিতেই জনপ্রশাসনের বেহাল অবস্থা। শুধু খবরের কাগজে প্রতিবেদন ছাপা হওয়ার কারণে এসব কর্মকর্তার কিছুই আসবে-যাবে না। পদাধিকারবলে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়টা চালান ক্ষমতাসীন দলের দ্বিতীয় শক্তিশালী ব্যক্তি। কিন্তু গত সাড়ে চার বছরে এই মন্ত্রণালয় তার নিজের প্রশাসনের অনিয়ম-দুর্নীতি প্রতিরোধে বড় ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে বলে জানা যায় না। গত ফেব্রুয়ারিতে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন বাস্তবায়ন করার মুখ্য দায় স্থানীয় সরকারমন্ত্রীর। গাড়িবিষয়ক ওই তদন্ত কমিটি বলেছিল, বরাদ্দ নীতিমালা অনুযায়ী গাড়ি থাকবে ৩৯টি, ব্যবহূত হচ্ছে ৬৫টি। ঢাকা দুই টুকরো হওয়ার আগের আড়াই থেকে তিন কোটি টাকার জ্বালানি তেল খরচ দ্বিগুণের বেশি হয়েছে। অথচ এ বিষয়ে মন্ত্রী-সচিব নির্বিকার। আশা করব, এবারে অন্তত গাড়ি দুর্নীতির রাশ টানতে কুম্ভকর্ণদের ঘুম ভাঙবে। অবিলম্বে ডিএসসিসির গাড়ি কেনার চাহিদাপত্র বাতিলের পাশাপাশি গাড়ি অপব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া শুরু হোক।
No comments