জেল হত্যা মামলার আপিল শুনানি শেষ: ৩০ এপ্রিল রায়
জেলহত্যা (জাতীয় চার নেতা হত্যা) মামলার
আপিলের শুনানি শেষ হয়েছে। আগামী ৩০ এপ্রিল রায় ঘোষণার দিন ধার্য করেছেন
প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের ছয় সদস্যের
বেঞ্চ।
বুধবার আসামিপক্ষে শেষ দিনের মতো শুনানি করেন
রাষ্ট্রনিযুক্ত আসামিপক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুল্লাহ আল মামুন। এরপর
তার যুক্তি খণ্ডন করে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন ও সমাপনী বক্তব্য দেন মামলায়
অ্যাটর্নি জেনারেলের মর্যাদায় নিযুক্ত রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান প্রসিকিউটর
অ্যাডভোকেট আনিসুল হক।
জাতীয় চার নেতা হত্যা মামলায় নিম্ন আদালতে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত কিন্তু হাইকোর্টের রায়ে খালাস পাওয়া দফাদার মারফত আলী শাহ ও এলডি (দফাদার) আবুল হাসেম মৃধার পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন আসামিপক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুল্লাহ আল মামুন। তিনি বলেন, ‘‘হাইকোর্ট এ দুই আসামিকে খালাস দিয়ে সঠিক রায় দিয়েছেন। কারণ, জেল হত্যার (১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর) ঘটনার সময় তারা জেলখানায় গিয়েছিলেন- এমন কোনো প্রমাণ নেই।’’
অন্যদিকে আনিসুল হক দফাদার মারফত আলী শাহ ও এলডি (দফাদার) আবুল হাসেমের হত্যাকাণ্ডের সময় জেলখানায় উপস্থিত থাকা ও জেল হত্যায় সম্পৃক্ততার বিষয়ে যুক্তিতর্ক ও তথ্য-প্রমাণ তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, ওইদিন চার সেনা কর্মকর্তা সশস্ত্র অবস্থায় জেলখানায় আসেন। বঙ্গভবন থেকে টেলিফোন করে তারা যা করতে চান, তা করতে দিতে বলা হয়।
তিনি বলেন, এই মামলার দুটি দিক আছে। একটি হচ্ছে, অপরাধ সংগঠন। দ্বিতীয়টি হচ্ছে, ষড়যন্ত্র। সশস্ত্র সেনা কর্মকর্তারা কারাগারে এসে চার নেতাকে গুলি করে হত্যা করেন। পরে অপর একটি দল এসে বেয়োনেট দিয়ে খুঁচিয়ে তাদের মৃত্যু নিশ্চিত করে। বঙ্গবভবনে ষড়যন্ত্রের বৈঠক এই দুই দল সেনা কর্মকর্তাকে পাঠানো হয়। তাই এদিকটিও বিবেচনায় রাখতে হবে। কারা সেখানে যাবেন, সেটা চূড়ান্ত হয় বঙ্গভবনের বৈঠকে। ওই ঘটনার আগে মেজর গালিব এসে আওয়ামী লীগ নেতারা কোথায় আছেন তা দেখে যান। পরে মেজর ফারুক বঙ্গভবন থেকে ফোন করে আবার জানতে চান, তাদের কোথায় রাখা হয়েছে।
পরে ব্যারিস্টার আব্দুল্লাহ আল মামুন সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘আদালতে রাষ্ট্রপক্ষ বলেছেন, আসামিরা ঘটনার সময় রাত ৩টায় বঙ্গভবন থেকে বের হয়ে জেলখানায় গিয়েছিলেন। তারা জাতীয় ৪ নেতাকে হত্যা করে ভোর ৬টায় বঙ্গভবনে ফিরে গিয়েছিলেন। এ তথ্য সঠিক নয়। কারণ, রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী কর্নেল শাফায়েত জামিল তার সাক্ষ্যে বলেছেন, ঘটনার দিন বঙ্গভবন ঘেরাও করে রাখা হয়েছিল। আসামিরা ঘেরাওয়ের মধ্যে ছিলেন। তাহলে তারা কিভাবে বের হলেন?”
তিনি আরও বলেন, “রাষ্ট্রপক্ষ বলেছেন, বঙ্গভবন থেকে জেলখানায় টেলিফোন করা হয়েছিল। অথচ সাক্ষীরা বলেছেন, বঙ্গভবনের টেলিফোন লাইন কেটে রাখা হয়েছিল। তাহলে বঙ্গভবন থেকে কিভাবে টেলিফোন করা হয়েছিল?”
আসামিপক্ষের আইনজীবীর এই বক্তব্যের জবাবে আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেন, “কর্নেল শাফায়েত জামিল সাক্ষ্যে বঙ্গভবন ঘেরাও করার কথা বলেননি। তিনি বলেছিলেন, সোনারগাঁও রোড, সায়েন্স ল্যাবরেটরির মোড় ও ক্যান্টনমেন্ট মসজিদের সামনে কিছু পাহারা বসানো হয়। এছাড়া ক্যান্টনমেন্টের টেলিফোন সংযোগ ছাড়া অন্য কোনো টেলিফোন সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়নি। তাই বঙ্গভবনের টেলিফোন লাইন কেটে রাখা হয়েছিল, এ তথ্য সঠিক নয়।”
আগামী ৩০ এপ্রিল আপিল বিভাগের রায়ের মধ্য দিয়ে বহু প্রতীক্ষিত জেলহত্যা মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হতে যাচ্ছে। এর আগে বর্তমান মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হয়েছে।
উল্লেখ্য, ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর মহান মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনাকারী বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ, মন্ত্রিসভার সদস্য ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী এবং এএইচএম কামরুজ্জামানকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি অবস্থায় হত্যা করা হয়। পরে দায়ের করা হয় জেল হত্যা মামলা।
জেল হত্যা মামলা দায়েরের ২৩ বছর পর আওয়ামী লীগ পুনরায় ক্ষমতায় গেলে ১৯৯৮ সালের ১৫ অক্টোবর ২৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। ২০০৪ সালের ২০ অক্টোবর ঢাকা মহানগর দায়রা জজ মো. মতিউর রহমান এ মামলার রায় দেন।
রায়ে রিসালদার মোসলেম উদ্দিন (পলাতক), দফাদার মারফত আলী শাহ (পলাতক) ও এলডি (দফাদার) আবুল হাসেম মৃধাকে (পলাতক) মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয় বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান, বজলুল হুদা, একেএম মহিউদ্দিন আহমেদসহ ১৫ জনকে। খালাস পান বিএনপি নেতা কেএম ওবায়দুর রহমান, শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, নুরুল ইসলাম মঞ্জুর ও তাহেরউদ্দিন ঠাকুর।
এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল হলে হাইকোর্ট ২০০৮ সালে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামি মারফত আলী ও হাশেম মৃধাকে অব্যাহতি দেন। রায়ে মোসলেমের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হয়। যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত ফারুক, শাহরিয়ার রশিদ, বজলুল হুদা ও একেএম মহিউদ্দিন আহমেদকেও খালাস দেন হাইকোর্ট।
হাইকোর্ট বহাল রাখেন আট সেনা কমকর্তার সাজা। তারা হলেন- খন্দকার আবদুর রশিদ, শরিফুল হক ডালিম, এমএইচএম বি নূর চৌধুরী, এএম রাশেদ চৌধুরী, আহমদ শরিফুল হোসেন, আবদুল মাজেদ, মো. কিসমত হোসেন ও নাজমুল হোসেন আনসর।
হাইকোর্টের এ রায়ের বিরুদ্ধে ২০০৯ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর আপিলের আবেদন (লিভ টু আপিল) করে সরকার।
২০১১ সালের ১১ জানুয়ারি সরকারের আপিল আবেদন মঞ্জুর করে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হকের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চ হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আপিল আবেদনের অনুমোদন দেন।
একই সঙ্গে রাষ্ট্রপক্ষকে আপিল দায়েরের অনুমতি দিয়ে ৩০ দিনের মধ্যে সংক্ষিপ্ত সার (concise statement) জমা দিতে বলেছিলেন আদালত। ওই আদেশের এক বছর আট মাস পরে গত বছরের ৩১ অক্টোবর সেই সংক্ষিপ্ত বিবরণী অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ে জমা দেন রাষ্ট্রপক্ষ। মামলার অ্যাটর্নি জেনারেলের মর্যাদায় নিযুক্ত রাষ্ট্রপক্ষের প্রসিকিউটর আনিসুল হক অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ে আপিলের ওই সংক্ষিপ্ত সার জমা দেন। ১ নভেম্বর তা আদালতে দাখিল করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।
এর পর ৪ নভেম্বর সংক্ষিপ্তসার গ্রহণ করে ১১ ডিসেম্বর শুনানির দিন ধার্য করেন আপিল বিভাগ। ওই দিন মাহবুবে আলমের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে শুনানি একদিন মুলতবি করেন আপিল বিভাগ। ১২ ডিসেম্বর জাতীয় চার নেতা হত্যা (জেলহত্যা) মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের করা দুই পলাতক আসামি দফাদার মারফত আলী শাহ ও দফাদার মো. আবুল হাশেম মৃধাকে নতুন করে নোটিশ না দেওয়ার আবেদন মঞ্জুর করেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। ফলে তাদেরকে নতুন করে নোটিশ না দিয়ে পলাতক হিসেবেই গণ্য করে এ মামলায় হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে সরকারের করা আপিল শুনানির জন্য ১৫ জানুয়ারি দিন ধার্য করা হয়।
উল্লেখ্য, এর আগে জাতীয় চার নেতা হত্যা মামলায় নিম্ন আদালতে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত হলেও হাইকোর্টের রায়ে খালাস পাওয়া দফাদার মারফত আলী শাহ ও এলডি (দফাদার) আবুল হাসেম মৃধাকে অবিলম্বে আত্মসমর্পণের আদেশ দেওয়া হয়েছিল। আত্মসমর্পণ না করলে তাদের গ্রেফতার করার জন্যও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি নির্দেশ ছিলো আদালতের।
গত ১৫ জানুয়ারি শুরু করে ৩ কার্যদিবসে রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষীদের সাক্ষ্য আদালতে উপস্থাপন করেন অ্যাডভোকেট আনিসুল হক। এরপর থেকে ৩ কার্যদিবসে সাক্ষীদের সাক্ষ্যের ভিত্তিতে দুই আসামির সম্পৃক্ততা না থাকার পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুল্লাহ আল মামুন।
ব্যারিস্টার আব্দুল্লাহ আল মামুন ছিলেন বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামি বজলুল হুদা ও একেএম মহিউদ্দিনের আইনজীবী। জেল হত্যা মামলায় হাইকোর্ট থেকে খালাস পাওয়া দফাদার মারফত আলী শাহ ও এলডি (দফাদার) আবুল হাসেম মৃধা পলাতক থাকায় আপিল বিভাগ তাকে সরকারি খরচে ওই দুই আসামির আইনজীবী নিযুক্ত করেন।
জাতীয় চার নেতা হত্যা মামলায় নিম্ন আদালতে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত কিন্তু হাইকোর্টের রায়ে খালাস পাওয়া দফাদার মারফত আলী শাহ ও এলডি (দফাদার) আবুল হাসেম মৃধার পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন আসামিপক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুল্লাহ আল মামুন। তিনি বলেন, ‘‘হাইকোর্ট এ দুই আসামিকে খালাস দিয়ে সঠিক রায় দিয়েছেন। কারণ, জেল হত্যার (১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর) ঘটনার সময় তারা জেলখানায় গিয়েছিলেন- এমন কোনো প্রমাণ নেই।’’
অন্যদিকে আনিসুল হক দফাদার মারফত আলী শাহ ও এলডি (দফাদার) আবুল হাসেমের হত্যাকাণ্ডের সময় জেলখানায় উপস্থিত থাকা ও জেল হত্যায় সম্পৃক্ততার বিষয়ে যুক্তিতর্ক ও তথ্য-প্রমাণ তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, ওইদিন চার সেনা কর্মকর্তা সশস্ত্র অবস্থায় জেলখানায় আসেন। বঙ্গভবন থেকে টেলিফোন করে তারা যা করতে চান, তা করতে দিতে বলা হয়।
তিনি বলেন, এই মামলার দুটি দিক আছে। একটি হচ্ছে, অপরাধ সংগঠন। দ্বিতীয়টি হচ্ছে, ষড়যন্ত্র। সশস্ত্র সেনা কর্মকর্তারা কারাগারে এসে চার নেতাকে গুলি করে হত্যা করেন। পরে অপর একটি দল এসে বেয়োনেট দিয়ে খুঁচিয়ে তাদের মৃত্যু নিশ্চিত করে। বঙ্গবভবনে ষড়যন্ত্রের বৈঠক এই দুই দল সেনা কর্মকর্তাকে পাঠানো হয়। তাই এদিকটিও বিবেচনায় রাখতে হবে। কারা সেখানে যাবেন, সেটা চূড়ান্ত হয় বঙ্গভবনের বৈঠকে। ওই ঘটনার আগে মেজর গালিব এসে আওয়ামী লীগ নেতারা কোথায় আছেন তা দেখে যান। পরে মেজর ফারুক বঙ্গভবন থেকে ফোন করে আবার জানতে চান, তাদের কোথায় রাখা হয়েছে।
পরে ব্যারিস্টার আব্দুল্লাহ আল মামুন সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘আদালতে রাষ্ট্রপক্ষ বলেছেন, আসামিরা ঘটনার সময় রাত ৩টায় বঙ্গভবন থেকে বের হয়ে জেলখানায় গিয়েছিলেন। তারা জাতীয় ৪ নেতাকে হত্যা করে ভোর ৬টায় বঙ্গভবনে ফিরে গিয়েছিলেন। এ তথ্য সঠিক নয়। কারণ, রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী কর্নেল শাফায়েত জামিল তার সাক্ষ্যে বলেছেন, ঘটনার দিন বঙ্গভবন ঘেরাও করে রাখা হয়েছিল। আসামিরা ঘেরাওয়ের মধ্যে ছিলেন। তাহলে তারা কিভাবে বের হলেন?”
তিনি আরও বলেন, “রাষ্ট্রপক্ষ বলেছেন, বঙ্গভবন থেকে জেলখানায় টেলিফোন করা হয়েছিল। অথচ সাক্ষীরা বলেছেন, বঙ্গভবনের টেলিফোন লাইন কেটে রাখা হয়েছিল। তাহলে বঙ্গভবন থেকে কিভাবে টেলিফোন করা হয়েছিল?”
আসামিপক্ষের আইনজীবীর এই বক্তব্যের জবাবে আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেন, “কর্নেল শাফায়েত জামিল সাক্ষ্যে বঙ্গভবন ঘেরাও করার কথা বলেননি। তিনি বলেছিলেন, সোনারগাঁও রোড, সায়েন্স ল্যাবরেটরির মোড় ও ক্যান্টনমেন্ট মসজিদের সামনে কিছু পাহারা বসানো হয়। এছাড়া ক্যান্টনমেন্টের টেলিফোন সংযোগ ছাড়া অন্য কোনো টেলিফোন সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়নি। তাই বঙ্গভবনের টেলিফোন লাইন কেটে রাখা হয়েছিল, এ তথ্য সঠিক নয়।”
আগামী ৩০ এপ্রিল আপিল বিভাগের রায়ের মধ্য দিয়ে বহু প্রতীক্ষিত জেলহত্যা মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হতে যাচ্ছে। এর আগে বর্তমান মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হয়েছে।
উল্লেখ্য, ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর মহান মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনাকারী বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ, মন্ত্রিসভার সদস্য ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী এবং এএইচএম কামরুজ্জামানকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি অবস্থায় হত্যা করা হয়। পরে দায়ের করা হয় জেল হত্যা মামলা।
জেল হত্যা মামলা দায়েরের ২৩ বছর পর আওয়ামী লীগ পুনরায় ক্ষমতায় গেলে ১৯৯৮ সালের ১৫ অক্টোবর ২৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। ২০০৪ সালের ২০ অক্টোবর ঢাকা মহানগর দায়রা জজ মো. মতিউর রহমান এ মামলার রায় দেন।
রায়ে রিসালদার মোসলেম উদ্দিন (পলাতক), দফাদার মারফত আলী শাহ (পলাতক) ও এলডি (দফাদার) আবুল হাসেম মৃধাকে (পলাতক) মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয় বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান, বজলুল হুদা, একেএম মহিউদ্দিন আহমেদসহ ১৫ জনকে। খালাস পান বিএনপি নেতা কেএম ওবায়দুর রহমান, শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, নুরুল ইসলাম মঞ্জুর ও তাহেরউদ্দিন ঠাকুর।
এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল হলে হাইকোর্ট ২০০৮ সালে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামি মারফত আলী ও হাশেম মৃধাকে অব্যাহতি দেন। রায়ে মোসলেমের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হয়। যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত ফারুক, শাহরিয়ার রশিদ, বজলুল হুদা ও একেএম মহিউদ্দিন আহমেদকেও খালাস দেন হাইকোর্ট।
হাইকোর্ট বহাল রাখেন আট সেনা কমকর্তার সাজা। তারা হলেন- খন্দকার আবদুর রশিদ, শরিফুল হক ডালিম, এমএইচএম বি নূর চৌধুরী, এএম রাশেদ চৌধুরী, আহমদ শরিফুল হোসেন, আবদুল মাজেদ, মো. কিসমত হোসেন ও নাজমুল হোসেন আনসর।
হাইকোর্টের এ রায়ের বিরুদ্ধে ২০০৯ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর আপিলের আবেদন (লিভ টু আপিল) করে সরকার।
২০১১ সালের ১১ জানুয়ারি সরকারের আপিল আবেদন মঞ্জুর করে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হকের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চ হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আপিল আবেদনের অনুমোদন দেন।
একই সঙ্গে রাষ্ট্রপক্ষকে আপিল দায়েরের অনুমতি দিয়ে ৩০ দিনের মধ্যে সংক্ষিপ্ত সার (concise statement) জমা দিতে বলেছিলেন আদালত। ওই আদেশের এক বছর আট মাস পরে গত বছরের ৩১ অক্টোবর সেই সংক্ষিপ্ত বিবরণী অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ে জমা দেন রাষ্ট্রপক্ষ। মামলার অ্যাটর্নি জেনারেলের মর্যাদায় নিযুক্ত রাষ্ট্রপক্ষের প্রসিকিউটর আনিসুল হক অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ে আপিলের ওই সংক্ষিপ্ত সার জমা দেন। ১ নভেম্বর তা আদালতে দাখিল করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।
এর পর ৪ নভেম্বর সংক্ষিপ্তসার গ্রহণ করে ১১ ডিসেম্বর শুনানির দিন ধার্য করেন আপিল বিভাগ। ওই দিন মাহবুবে আলমের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে শুনানি একদিন মুলতবি করেন আপিল বিভাগ। ১২ ডিসেম্বর জাতীয় চার নেতা হত্যা (জেলহত্যা) মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের করা দুই পলাতক আসামি দফাদার মারফত আলী শাহ ও দফাদার মো. আবুল হাশেম মৃধাকে নতুন করে নোটিশ না দেওয়ার আবেদন মঞ্জুর করেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। ফলে তাদেরকে নতুন করে নোটিশ না দিয়ে পলাতক হিসেবেই গণ্য করে এ মামলায় হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে সরকারের করা আপিল শুনানির জন্য ১৫ জানুয়ারি দিন ধার্য করা হয়।
উল্লেখ্য, এর আগে জাতীয় চার নেতা হত্যা মামলায় নিম্ন আদালতে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত হলেও হাইকোর্টের রায়ে খালাস পাওয়া দফাদার মারফত আলী শাহ ও এলডি (দফাদার) আবুল হাসেম মৃধাকে অবিলম্বে আত্মসমর্পণের আদেশ দেওয়া হয়েছিল। আত্মসমর্পণ না করলে তাদের গ্রেফতার করার জন্যও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি নির্দেশ ছিলো আদালতের।
গত ১৫ জানুয়ারি শুরু করে ৩ কার্যদিবসে রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষীদের সাক্ষ্য আদালতে উপস্থাপন করেন অ্যাডভোকেট আনিসুল হক। এরপর থেকে ৩ কার্যদিবসে সাক্ষীদের সাক্ষ্যের ভিত্তিতে দুই আসামির সম্পৃক্ততা না থাকার পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুল্লাহ আল মামুন।
ব্যারিস্টার আব্দুল্লাহ আল মামুন ছিলেন বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামি বজলুল হুদা ও একেএম মহিউদ্দিনের আইনজীবী। জেল হত্যা মামলায় হাইকোর্ট থেকে খালাস পাওয়া দফাদার মারফত আলী শাহ ও এলডি (দফাদার) আবুল হাসেম মৃধা পলাতক থাকায় আপিল বিভাগ তাকে সরকারি খরচে ওই দুই আসামির আইনজীবী নিযুক্ত করেন।
No comments