বাংলাদেশে নিপীড়ন তদন্ত করতে জাতিসংঘকে আহ্বান এএফএডি’র
বাংলাদেশের
আইনশৃঙ্খলা বাহিন কর্তৃক আটককৃতদের নির্যাতনের অভিযোগ এবং অন্যান্য
মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে তদন্ত করার জন্য ‘আন্তর্জাতিক নির্যাতন ও
অন্যান্য নিষ্ঠুর এবং অমানবিক অথবা মর্যাদাহানিকর আচরণ বা শাস্তি
প্রতিরোধে’ গঠিত জাতিসংঘের উপ কমিটিকে একটি প্রতিনিধ দল পাঠানোর আহ্বান
জানিয়েছে এশিয়ান ফেডারেশন ফর ইনভলান্টারি ডিসঅ্যাপিয়ারেন্স (এএফএডি)।
এছাড়াও এএফএডি ‘সত্য, ন্যায়বিচার, বন্দিত্ব নিরোধ এবং এ ধরনের ঘটনার
পুনরাবৃত্তি না ঘটা নিশ্চিত করা’ বিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক মি.
পাবলো গেরিফকে ‘বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের মহোৎসবের’ অভিযোগ তদন্তের
আহবান জানিয়েছে। পাশাপাশি এএফএডি মানবাধিকার রক্ষায় ওয়াদা পালন করতে
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি দাবি জানিয়েছে। ১৪ এপ্রিল প্রকাশিত এক
বিবৃতির মাধ্যমে এ আহবান জানায় এএফএডি। বিবৃতিতে সংগঠনটি জানায়, বাংলাদেশের
সাম্প্রতিক মানবাধিকার লঙ্ঘনের নানা ঘটনায় তারা খুবই শঙ্কিত। মানবাধিকার
লঙ্ঘনের উদাহরণ দিতে গিয়ে সংগঠনটি তাদের বিবৃতিতে গত ১১ এপ্রিল চট্টগ্রামের
ফটিছড়িতে সংঘটিত ১০ ব্যাক্তিকে বিচারবহির্ভুতভাবে হত্যা করার ঘটনা উল্লেখ
করে। এছাড়াও এএফএডি উল্লেখ করে, একই দিনেই রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষ দৈনিক আমার
দেশ-এর কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়ে কম্পিউটারগুলো জব্দ করে নিয়ে যায় এবং এর
অন্তর্বর্তীকালীন সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে গ্রেপ্তার করে। মুখ্য মহানগর
হাকিমের আদালত মাহমুদুর রহমানকে তাকে ১৩ দিনের রিমান্ড দেয়ার পর এখন তিনি
ঢাকায় পুলিশের গোয়েন্দা শাখার হেফাজতে আটক আছেন। এর আগেও তাকে কয়েকবার
বিভিন্ন মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার করে জেল হাজতে পাঠানো এবং রিমান্ড নেয়া
হয়েছে। সেসময় তাকে মারাত্মক নির্যাতন করা হয় বলেও জানা যায়। এবারও তার উপর
পুনরায় নির্যাতন চালানোর আশঙ্কা করা হচ্ছে, যোগ করে সংগঠনটি। এএফএডি বলে,
মাহমুদুর রহমানের মতো সাংবাদিকরা বিচারবহির্ভুত হত্যাকাণ্ড এবং গুমের মতো
মারাত্মক সব মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা প্রকাশের ক্ষেত্রে যে কোনো দেশেই
অগ্রণী ভূমিকা পালন করে থাকেন। এ কাজ করতে গিয়ে তাদের অনেকেই বিভিন্ন দেশে
হয়রানি, গ্রেপ্তার, কারাবন্দিত্বের শিকার হন। অনেকে আবার হত্যা এবং গুমেরও
শিকার হন। সংগঠনটি জানায়, ২০০০ এর ৬ সেপ্টেম্বর গৃহীত ‘আন্তর্জাতিক নাগরিক ও
রাজনৈতিক অধিকার কনভেনশন’ এবং ১৯৯৮ এর ৫ অক্টোবর গৃহিত ‘নির্যাতন ও
অন্যান্য নিষ্ঠুর এবং অমানবিক অথবা মর্যাদাহানিকর আচরণ বা শাস্তি বিরোধী
কনভেনশনেও’ বাংলাদেশ স্বাক্ষর করেছে। এ দুটি চুক্তির শর্তানুযায়ী বাংলাদেশ
সরকার মাহমুদুর রহমানের মতো সাংবাদিক এবং এর নাগরিকদের বাকস্বাধীনতা রক্ষা
এবং তাদেরকে যে কোনো ধরনের নির্যাতন এবং নিষ্ঠুরতার শিকার হওয়া থেকে রক্ষা
করার জন্য আইনত দায়বদ্ধ রয়েছে। কিন্তু মাহমুদুর রহমানকে গ্রেপ্তার ও
নির্যাতন করার মধ্যদিয়ে বাংলাদেশ সরকার আন্তর্জাতিক মানবাধিকার বিষয়ক এসব
কনভেনশনে করা তাদের প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করছে, দাবি সংগঠনটির। তাছাড়াও এ ঘটনা
ঘটলো এমন এক সময়ে যখন বিশ্ব মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যালোচনার অংশ হিসেবে
বাংলাদেশ তাদের মানবাধিকার পরিস্থিতির পর্যালোচনামূলক প্রতিবেদন জাতিসংঘের
কাছে উপস্থাপনের সময় ঘনিয়ে এসেছে। আগামী ২৯ এপ্রিল এ প্রতিবেদন জমা দেয়ার
তারিখ। সংগঠনটি আরো জানায়, ২০০৯ এর ফ্যেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের
বৈশ্বিক মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যালোচনার সময় সরকার বাংলাদেশের সাংবাদিক ও
মানবাধিকার কর্মীদের অধিকার রক্ষায় এবং মাঠ পর্যায়ের মানবাধিকার
পরিস্থিতির উন্নয়নে সুপারিশকৃত পদক্ষেপ সমুহ বাস্তবায়নের জন্যও প্রতিশ্রুতি
দিয়েছিল। এএফএডি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দলবাজির রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে
গত বিশ্ব মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যালোচনা প্রতিবেদনে করা সুপারিশসমুহ
বাস্তবায়নের আহবান জানায়। একই সঙ্গে বাংলাদেশে শান্তি প্রতিষ্ঠা এবং
মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নয়নে আন্তরিকভাবে কাজ করার অনুরোধ জানায় সংগঠনটি।
বিবৃতিতে এএফএডি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে বলে, ‘২০১২ এর
আগস্টে তেহরানে জোট নিরপেক্ষ আন্দেলনের ১৬তম সম্মেলনে বক্তৃতা করার সময়
আপনি বিভিন্ন দেশের অস্থিতিশীলতার কারণ হিসেবে সেসব দেশে বেইনসাফি ও
অগণতান্ত্রিক রীতি-নীতি জারি থাকাকে দায়ী করেছিলেন।’ সুতরাং এএফএডি এখন
আপনাকে আপনার নিজের কথা মতোই চলতে আহবান জানাচ্ছে। আপনার জনগণের মানবাধিকার
রক্ষা করুন, আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হউন এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের
হোতাদের শাস্তি দিন।
No comments