পরকীয়া-১: মানসী বলল, ‘রণ ওর বউয়ের সঙ্গে শোয়!
মানসীকে শেষবার যখন মিট করি ওর মানসিক
অবস্থা একদম ভালো ছিল না। আমাকে বলল, ‘রণ ওর বউয়ের সঙ্গে শোয়! আমাকে
লুকিয়েছিল, তিন বছর ধরে এই সত্যিটা লুকিয়ে রেখে সম্পর্ক রেখে গেছে আমার
সঙ্গে! কি নিষ্ঠুর, আমার সঙ্গে শোয়, বউয়ের সঙ্গেও শোয় নিয়মিত।
আর
আমি অভিকে কাছে ঘেঁষতে দিই না! এই নিয়ে কত অশান্তি, রোজ রোজ অভি বলে,
বিয়েটা ভেঙে দেবে। রোজ আমি অভির হাতে পায়ে ধরি, বলি বাপুন-এর কথা ভেবে
প্লিজ, প্লিজ, প্লিজ আমাকে ডিভোর্স দিওনা!
অভি আমাকে মারে, জানিস? আমাকে বলে ‘নিজের ভাত, কাপড়ের খরচ নিজেই জোগাড় করে নাও! আমি কেন খাওয়াতে যাবো তাকে, যে মেয়ে বিয়ের শর্ত মানছে না, গেট লস্ট, আমার জীবন থেকে বেরিয়ে যাও, আমাকে মুক্তি দাও!’ আর আমি? এত সহ্য করি শুধু বাপুনের মুখ চেয়ে, এত সহ্য করেও রণ ছাড়া কাউকে ছুঁতে দিই না শরীর! আর সেই রণ, সব জেনে শুনে…জেনে যে আমার জীবনটা নরক হয়ে গেছে ওর জন্য - ও আমাকে ঠকালো? দিনের পর দিন ঠকালো? প্রতারণায় মাখামাখি মানসীর হলদে বাসি চোখ জ্বলজ্বল করছে দেখলাম।
আমি মানসী, রণ-র এই স্ট্যাটাস এক মুহুর্ত মেনে নিতে পারিনি আগেই! সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত, মানসীর প্রতি আমার কোন অনুকম্পা নেই! এই সত্যিটা জানতে পেরে মানসী যে ভাবে জ্বলেপুড়ে মরছে, তা নিয়ে আমার কোন সহানুভূতি নেই! এই প্রহেলিকাময় প্রেমের পেছনে যে ভাবে ও জীবন নষ্ট করছে তাতে আমার বিরক্তির উদ্রেক হয়ে শুধু। ওরা কি ভেবেছে এরকম একটা তুমুল প্রেসার নিয়ে কোন সম্পর্ক দীর্ঘদিন টিকে থাকতে পারে?
বিয়ে ভাঙার সামাজিক প্রেসার এর কথা তো ছেড়েই দিলাম, দুজনের দুটো আলাদা স্বার্থ, মানসীর স্বার্থ বাপুন, রণ-র স্বার্থ ওর মেয়ে টিঙ্কি, এই দুটো আলাদা স্বার্থ - ও তো একটা প্রেসার, তারপর পেয়েও না পাওয়ার যন্ত্রণা, অবিরল হারানোর ভয়, আর একজন নারী আর একজন পুরুষের সঙ্গে প্রতি মুহূর্তে কমপিট করা, হেরে যাওয়ার ত্রাস, এ-ও বিষম একটা প্রেসার, তাছাড়া সন্দেহ, প্রেমিক বাড়ি ফিরে কি বউয়ের সঙ্গে গল্প করছে? দুটো ড্রিংক বানিয়ে টিভিতে মুভি দেখছে পাশাপাশি সোফায় বসে? ‘ড্যাম ইট, তার মানে তো তোমরা একে অন্যের সঙ্গে কোয়ালিটি টাইম কাটাও?’ ‘প্রমোশনের খবরটা আগে বউকে দিলে?
ও…! হবেই তো! টাকা পয়সা তো সব বউয়ের জন্য। মনে মনে সেটাই বিশ্বাস করো, তাই না? বউয়ের প্রতি এত প্রেম? তাহলে আমাকে ছেড়ে দাও! ছেড়ে দাও, ছেড়ে দাও - বলা যায়। নিজেই তো ছাড়তে পারেনি মানসী। আর চাপ বেড়ে গেছে ক্রমাগত, সারাক্ষণ মানসী এই পাগলামি করেছে, রণ-কে বউয়ের থেকে বিচ্ছিন্ন করার চেষ্টা করেছে, সারাক্ষণ বলেছে, সুদীপাকে ডিভোর্স করো, টিঙ্কি, বাপুনকে নিয়ে আমি আর তুমি থাকব’ !
রণ উত্তরে কি বলেছে, ‘বিয়ের পরে প্রেমটা আমি করেছি, সুদীপা তো করেনি, ওর কি দোষ? অভি যদি একটা প্রেম করে তোমাকে জাস্ট ছুঁড়ে ফেলে দিত? কি হত তোমার?’ ও তার মানে সুদীপার কি হবে এত ভাবো তুমি? এত টান? এই টানটা কি প্রেম নয়? কোনটা প্রেম, কোনটা প্রেম নয়? কনসার্ন মানে প্রেম? অপর একজনকে প্রটেক্ট করতে চাওয়াটা প্রেম, একজনকে শারীরিক ভাবে, মানসিক ভাবে ভালো লাগাটাই প্রেম? - এই সব অজস্র জটিল প্রশ্ন তচনছ করে মানসীকে। আর এই জটিলতার মধ্যে নিজেদের প্রেমটাই সাবসাইড হয়ে যায়। যে প্রেম মানে একটা শান্ত, সুরভিত ইথারে ‘আমি, তুমি’ ভেসে থাকে - এই পরকীয়া প্রেমে তার দফারফা হয় শুধু। এখানে বড্ড ভিড়, বড্ড ক্রাইসিস!
অস্ট্রেলিয়ায় বসবাস করে আমার এক পাঠিকা আমাকে একবার বললেন, এদেশের সঙ্গে ওদেশের পরকীয়ার প্রচুর প্রভেদ। এদেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থানের কারণেই পরকীয়া শেষে নিজের আত্মার পচন তৈরি করে। হয়ে যায় একটা অন্ধকার জগতের বিষয়। ওদেশে বিবাহিত মানুষ প্রেমে পড়লে বিয়েটাই তারা ডিসলভ্ করে দেয়। যদি অন্য একজনকেই ভালো লাগে, তার প্রতিই জাগে আকর্ষণ, তার সান্নিধ্যেই কাটাতে ইচ্ছে করে সময়, তীব্র প্রেম তার প্রতিই অনুভূত হয়, তাহলে আর একজনের সঙ্গে বিয়ে টিকিয়ে রাখার মানে কি? সন্তান? নিরাপত্তা? বিয়ে ভাঙলে এসব ফেস করতে হবে, ওরা ফেস করে। এখানে হল দূর্বল চিত্তদের রাজত্ব। কিছু ঝামেলায় জড়াবো না, বাড়িতে বউ থাকবে, বাচ্চাদের ওপর কোন ঝড় বইবে না, স্বামী সংসার যন্ত্রকে সচল রাখবে। বাইরের দুনিয়ায় আসলে আদিখ্যেতা করবে মিথ্য জীবনে বেঁচে থাকা স্বামী-স্ত্রী, কথায় কথায় ‘আমার বউ, আমার বউ’ করবে। ‘আমার বরের বারণ আছে’ করবে, করে পয়মন্ত দুপুরে নিজের বা অন্যের ফ্ল্যাটে গোপনে একটা প্যাশনেট মিলন সেরে অন্য নারী বা পুরুষকে বলবে এই উষ্ণতা কবেই হারিয়ে গেছিল আমার জীবন থেকে! তুমি এলে বলে আবার নতুন করে বাঁচলাম। এই ব্যালেন্সের খেলায় যদিও মেয়েদের চেয়ে পুরুষরা একটু বেশিই ওস্তাদ। প্রেমে পড়ে ঘর ভাঙতে এগিয়ে আসে মেয়েরাই অধিকাংশ ক্ষেত্রে। হয়ত মেয়েরা একটু আবেগপ্রবণ। তাই জন্যই বিয়ে টিকিয়ে রাখতে চেয়েও মানষী ওর স্বামীর সঙ্গে শয্যা ভাগ করে না, রণ করে। আর সেই তথ্য জানতে পেরে মানসী আত্মহত্যা করার চেষ্টা করে।
যাই হোক, ব্যর্থ আত্মহত্যার চেষ্টার পর মানসী এখন ভালো আছে। রণ-র ভূত ওর মাথা থেকে নেমেছে। এই তিন বছরের মধ্যে অভি মানসীর কাছ থেকে অনেক দূরে সরে গেছিল, মানসী এখন কাছে টানতে চেষ্টা করছে অভিকে। ও একটা বাচ্চা নিতে চাইছে আবার, বাপুনের ভাই বা বোন!
ভাঙা সংসার জোড়া দিতে কত যে সন্তানের জন্ম হল! উফঃ!
লেখক : সঙ্গীতা বন্দ্যোপাধ্যায়
মডেল : রাধিকা।
অভি আমাকে মারে, জানিস? আমাকে বলে ‘নিজের ভাত, কাপড়ের খরচ নিজেই জোগাড় করে নাও! আমি কেন খাওয়াতে যাবো তাকে, যে মেয়ে বিয়ের শর্ত মানছে না, গেট লস্ট, আমার জীবন থেকে বেরিয়ে যাও, আমাকে মুক্তি দাও!’ আর আমি? এত সহ্য করি শুধু বাপুনের মুখ চেয়ে, এত সহ্য করেও রণ ছাড়া কাউকে ছুঁতে দিই না শরীর! আর সেই রণ, সব জেনে শুনে…জেনে যে আমার জীবনটা নরক হয়ে গেছে ওর জন্য - ও আমাকে ঠকালো? দিনের পর দিন ঠকালো? প্রতারণায় মাখামাখি মানসীর হলদে বাসি চোখ জ্বলজ্বল করছে দেখলাম।
আমি মানসী, রণ-র এই স্ট্যাটাস এক মুহুর্ত মেনে নিতে পারিনি আগেই! সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত, মানসীর প্রতি আমার কোন অনুকম্পা নেই! এই সত্যিটা জানতে পেরে মানসী যে ভাবে জ্বলেপুড়ে মরছে, তা নিয়ে আমার কোন সহানুভূতি নেই! এই প্রহেলিকাময় প্রেমের পেছনে যে ভাবে ও জীবন নষ্ট করছে তাতে আমার বিরক্তির উদ্রেক হয়ে শুধু। ওরা কি ভেবেছে এরকম একটা তুমুল প্রেসার নিয়ে কোন সম্পর্ক দীর্ঘদিন টিকে থাকতে পারে?
বিয়ে ভাঙার সামাজিক প্রেসার এর কথা তো ছেড়েই দিলাম, দুজনের দুটো আলাদা স্বার্থ, মানসীর স্বার্থ বাপুন, রণ-র স্বার্থ ওর মেয়ে টিঙ্কি, এই দুটো আলাদা স্বার্থ - ও তো একটা প্রেসার, তারপর পেয়েও না পাওয়ার যন্ত্রণা, অবিরল হারানোর ভয়, আর একজন নারী আর একজন পুরুষের সঙ্গে প্রতি মুহূর্তে কমপিট করা, হেরে যাওয়ার ত্রাস, এ-ও বিষম একটা প্রেসার, তাছাড়া সন্দেহ, প্রেমিক বাড়ি ফিরে কি বউয়ের সঙ্গে গল্প করছে? দুটো ড্রিংক বানিয়ে টিভিতে মুভি দেখছে পাশাপাশি সোফায় বসে? ‘ড্যাম ইট, তার মানে তো তোমরা একে অন্যের সঙ্গে কোয়ালিটি টাইম কাটাও?’ ‘প্রমোশনের খবরটা আগে বউকে দিলে?
ও…! হবেই তো! টাকা পয়সা তো সব বউয়ের জন্য। মনে মনে সেটাই বিশ্বাস করো, তাই না? বউয়ের প্রতি এত প্রেম? তাহলে আমাকে ছেড়ে দাও! ছেড়ে দাও, ছেড়ে দাও - বলা যায়। নিজেই তো ছাড়তে পারেনি মানসী। আর চাপ বেড়ে গেছে ক্রমাগত, সারাক্ষণ মানসী এই পাগলামি করেছে, রণ-কে বউয়ের থেকে বিচ্ছিন্ন করার চেষ্টা করেছে, সারাক্ষণ বলেছে, সুদীপাকে ডিভোর্স করো, টিঙ্কি, বাপুনকে নিয়ে আমি আর তুমি থাকব’ !
রণ উত্তরে কি বলেছে, ‘বিয়ের পরে প্রেমটা আমি করেছি, সুদীপা তো করেনি, ওর কি দোষ? অভি যদি একটা প্রেম করে তোমাকে জাস্ট ছুঁড়ে ফেলে দিত? কি হত তোমার?’ ও তার মানে সুদীপার কি হবে এত ভাবো তুমি? এত টান? এই টানটা কি প্রেম নয়? কোনটা প্রেম, কোনটা প্রেম নয়? কনসার্ন মানে প্রেম? অপর একজনকে প্রটেক্ট করতে চাওয়াটা প্রেম, একজনকে শারীরিক ভাবে, মানসিক ভাবে ভালো লাগাটাই প্রেম? - এই সব অজস্র জটিল প্রশ্ন তচনছ করে মানসীকে। আর এই জটিলতার মধ্যে নিজেদের প্রেমটাই সাবসাইড হয়ে যায়। যে প্রেম মানে একটা শান্ত, সুরভিত ইথারে ‘আমি, তুমি’ ভেসে থাকে - এই পরকীয়া প্রেমে তার দফারফা হয় শুধু। এখানে বড্ড ভিড়, বড্ড ক্রাইসিস!
অস্ট্রেলিয়ায় বসবাস করে আমার এক পাঠিকা আমাকে একবার বললেন, এদেশের সঙ্গে ওদেশের পরকীয়ার প্রচুর প্রভেদ। এদেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থানের কারণেই পরকীয়া শেষে নিজের আত্মার পচন তৈরি করে। হয়ে যায় একটা অন্ধকার জগতের বিষয়। ওদেশে বিবাহিত মানুষ প্রেমে পড়লে বিয়েটাই তারা ডিসলভ্ করে দেয়। যদি অন্য একজনকেই ভালো লাগে, তার প্রতিই জাগে আকর্ষণ, তার সান্নিধ্যেই কাটাতে ইচ্ছে করে সময়, তীব্র প্রেম তার প্রতিই অনুভূত হয়, তাহলে আর একজনের সঙ্গে বিয়ে টিকিয়ে রাখার মানে কি? সন্তান? নিরাপত্তা? বিয়ে ভাঙলে এসব ফেস করতে হবে, ওরা ফেস করে। এখানে হল দূর্বল চিত্তদের রাজত্ব। কিছু ঝামেলায় জড়াবো না, বাড়িতে বউ থাকবে, বাচ্চাদের ওপর কোন ঝড় বইবে না, স্বামী সংসার যন্ত্রকে সচল রাখবে। বাইরের দুনিয়ায় আসলে আদিখ্যেতা করবে মিথ্য জীবনে বেঁচে থাকা স্বামী-স্ত্রী, কথায় কথায় ‘আমার বউ, আমার বউ’ করবে। ‘আমার বরের বারণ আছে’ করবে, করে পয়মন্ত দুপুরে নিজের বা অন্যের ফ্ল্যাটে গোপনে একটা প্যাশনেট মিলন সেরে অন্য নারী বা পুরুষকে বলবে এই উষ্ণতা কবেই হারিয়ে গেছিল আমার জীবন থেকে! তুমি এলে বলে আবার নতুন করে বাঁচলাম। এই ব্যালেন্সের খেলায় যদিও মেয়েদের চেয়ে পুরুষরা একটু বেশিই ওস্তাদ। প্রেমে পড়ে ঘর ভাঙতে এগিয়ে আসে মেয়েরাই অধিকাংশ ক্ষেত্রে। হয়ত মেয়েরা একটু আবেগপ্রবণ। তাই জন্যই বিয়ে টিকিয়ে রাখতে চেয়েও মানষী ওর স্বামীর সঙ্গে শয্যা ভাগ করে না, রণ করে। আর সেই তথ্য জানতে পেরে মানসী আত্মহত্যা করার চেষ্টা করে।
যাই হোক, ব্যর্থ আত্মহত্যার চেষ্টার পর মানসী এখন ভালো আছে। রণ-র ভূত ওর মাথা থেকে নেমেছে। এই তিন বছরের মধ্যে অভি মানসীর কাছ থেকে অনেক দূরে সরে গেছিল, মানসী এখন কাছে টানতে চেষ্টা করছে অভিকে। ও একটা বাচ্চা নিতে চাইছে আবার, বাপুনের ভাই বা বোন!
ভাঙা সংসার জোড়া দিতে কত যে সন্তানের জন্ম হল! উফঃ!
লেখক : সঙ্গীতা বন্দ্যোপাধ্যায়
মডেল : রাধিকা।
No comments