ঢাকার দুই সিটির নির্বাচন নিয়ে কমিশন সক্রিয়, মন্ত্রণালয় নিষ্ক্রিয় by হারুন আল রশীদ

ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে নির্বাচন কমিশন ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমন্বয়হীনতা চলছে। এ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য নির্বাচন কমিশনের প্রস্তুতি চললেও মন্ত্রণালয় তার দায়িত্ব পালনে নিষ্ক্রিয় রয়েছে।


নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের কর্মকর্তারা জানান, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের জন্য কমিশন ভোটার তালিকা হালনাগাদসহ অন্যান্য কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু ওয়ার্ডের সীমানা নির্ধারণের দায়িত্ব স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের হলেও এ বিষয়ে তাদের কোনো উদ্যোগ নেই। মন্ত্রণালয়ের নিষ্ক্রিয়তায় এই নির্বাচন নিয়ে আবারও আইনি জটিলতা দেখা দিতে পারে। সে ক্ষেত্রে বর্তমান সরকারের মেয়াদে নির্বাচনটি না-ও হতে পারে। কারণ, ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল ও সিলেট সিটি করপোরেশন, জুলাই থেকে উপজেলা পরিষদ এবং অক্টোবর থেকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তোড়জোড় শুরু হবে।
এদিকে গতকাল সোমবার হাইকোর্ট ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ওপর দেওয়া স্থগিতাদেশের মেয়াদ আরও তিন মাস বাড়িয়েছেন। ফলে আগামী বছরের ১৬ জানুয়ারি পর্যন্ত এই স্থগিতাদেশ থাকবে। আর এই স্থগিতাদেশ স্থগিত করতে নির্বাচন কমিশনের আপিলের ওপর শুনানি হবে বৃহস্পতিবার।
কমিশন সচিবালয়ের কর্মকর্তারা মনে করেন, জানুয়ারির মধ্যে ভোটার তালিকা হালানাগাদের কাজ শেষ হবে। একই সময় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ওয়ার্ডের সীমানা বিন্যাসের কাজ শেষ করতে পারলে আদালতের নির্দেশনা মেনে জানুয়ারিতেই নির্বাচনের উদ্যোগ নেওয়া যাবে।
গত বছরের ২৯ ডিসেম্বর ঢাকা সিটি করপোরেশনকে দুই ভাগে ভাগ করে জাতীয় সংসদে বিল পাস হয়। নতুন আইনে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনকে ৫৬টি এবং ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনকে ৩৬টি ওয়ার্ডে ভাগ করা হয়।
আইন অনুযায়ী মন্ত্রণালয় সীমানা নির্ধারণ কর্মকর্তা নিয়োগ করে গণবিজ্ঞপ্তি জারির মাধ্যমে ওয়ার্ডের সীমানা নির্ধারণ করে। এরপর নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসনে কাউন্সিলর নির্বাচনের জন্য ওয়ার্ডের সীমানা বিন্যাস করতে হয়। কিন্তু নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে মন্ত্রণালয় সীমানা বিন্যাসের উদ্যোগ নেয়নি। এমনকি ৪ ডিসেম্বর স্থানীয় সরকার বিভাগ ওয়ার্ডের সীমানা বিন্যাস ছাড়া এবং কোনো ধরনের গণবিজ্ঞপ্তি ছাড়াই উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ডের জন্য নতুন নম্বর নির্ধারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে।
নির্বাচন কমিশন এই দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনের জন্য তফসিল ঘোষণা করে গত ৯ এপ্রিল। তফসিল অনুযায়ী ২৪ মে ভোট গ্রহণ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ১৬ এপ্রিল হাইকোর্ট এই নির্বাচন তিন মাসের জন্য স্থগিত করেন এবং রুল জারি করেন। এই স্থগিতাদেশের মেয়াদ আরও দুই দফায় বাড়ানো হয়।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও স্থানীয় সরকার সচিবসহ আটজনকে দুই সপ্তাহের মধ্যে ওই রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছিল। আদেশে বলা হয়, তফসিল ঘোষণার মাধ্যমে সিটি করপোরেশন নির্বাচনী আইনের সীমানা বিন্যাস-সম্পর্কিত কয়েকটি ধারা লঙ্ঘিত হয়েছে। আদেশে ভোট গ্রহণের তিন মাস আগে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করতে বলা হয়।
এর পরিপ্রেক্ষিতে কমিশন ১৫ মে স্থানীয় সরকার বিভাগের সঙ্গে বৈঠক করে। বৈঠকে কমিশনের পক্ষ থেকে আইনি লড়াইয়ের পাশাপাশি ওয়ার্ডের সীমানা বিন্যাসের কাজ এগিয়ে নিতে স্থানীয় সরকার বিভাগকে অনুরোধ জানানো হয়। ওই বৈঠক শেষে স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব আবু আলম মোহাম্মদ শহীদ খান সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, ওয়ার্ডের সীমানা বিন্যাস না করার ব্যাপারে আদালতকে সন্তুষ্ট করার মতো যথেষ্ট গ্রহণযোগ্য যুক্তি মন্ত্রণালয়ের হাতে আছে। মন্ত্রণালয় রুলের জবাব দেবে।
কিন্তু গত বৃহস্পতিবার আবু আলম শহীদ খান প্রথম আলোকে জানান, তাঁরা রুলের জবাব দেননি। ওয়ার্ডের সীমানা বিন্যাসের উদ্যোগও নেওয়া হয়নি। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের নেওয়া পদক্ষেপই যথেষ্ট।
ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচন সামনে রেখে কমিশন ভোটার তালিকা হালনাগাদের সময়সূচিতে পরিবর্তন এনেছে। ঢাকায় ভোটার তালিকা হালনাগাদের কাজ নির্ধারিত সময়ের চেয়ে এক মাস এগিয়ে এনে সেপ্টেম্বরে শুরু করেছে।
নির্বাচন কমিশনার আবদুল মোবারক গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, আইনি লড়াই চলছে। কিন্তু চূড়ান্তভাবে আদালতের কোনো নির্দেশনা যাতে ঢাকা সিটির নির্বাচনকে ব্যাহত না করে, সে জন্য ভোটার তালিকার কাজ নির্ধারিত সময়ের আগেই শেষ করা হবে। একই সঙ্গে স্থানীয় সরকার বিভাগকেও তাদের কাজ করে যেতে হবে।
স্থগিতাদেশ তিন মাস বাড়ল: গতকাল বিচারপতি নাঈমা হায়দার ও বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এক আবেদনের শুনানি নিয়ে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচন স্থগিতের মেয়াদ আরও তিন মাস বাড়িয়েছেন।
আদালতে রিটকারীর পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ২৩ জুলাই হাইকোর্ট নির্বাচন স্থগিতের মেয়াদ তিন মাস বৃদ্ধি করেন। ১৬ অক্টোবর ওই মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু যেসব যুক্তিতে রিটগুলো করা হয়েছিল, সে বিষয়ে এখনো কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। ওয়ার্ডের সীমানা বিন্যাস ও ভোটার তালিকা হালনাগাদের কাজ শেষ হয়নি। সে জন্য মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন করা হয়।

No comments

Powered by Blogger.