এ ধরনের প্রবণতা পরিত্যাগ করা উচিত-ফরমায়েশি অভিনন্দন

নাগরিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার রূপকার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা ঢাকা সিটি করপোরেশনকে বিভক্ত করায় সংসদীয় আসন ঢাকা-১৪...স্কুল/কলেজের সকল সম্মানিত শিক্ষক, ছাত্র ও সম্মানিত অভিভাবকদের পক্ষ থেকে আন্তরিক অভিনন্দন।’


এটি সংবাদপত্রে প্রকাশিত একটি বিজ্ঞাপনের ভাষা। হুবহু একই ভাষায় পৃথক ছয়টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নামে প্রকাশিত হয়েছে এই বিজ্ঞাপন। জনমত উপেক্ষা করে আকস্মিকভাবে অতি দ্রুততার সঙ্গে জাতীয় সংসদে আইন পাস করে ডিসিসিকে বিভক্ত করায় ঢাকাবাসীর কোনো অংশ খুশি হয়েছে, এমন খবর পাওয়া যায়নি; বরং সবাই আশঙ্কিত, এই অদূরদর্শী পদক্ষেপের ফলে নাগরিক সেবাব্যবস্থায় না জানি নতুন করে কী সমস্যা সৃষ্টি হয়। এমন অবস্থায় রাজধানীর মিরপুর এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর এমন বিজ্ঞাপন প্রচার সংবাদ শিরোনামে স্থান পাওয়ার যোগ্য ব্যাপারই বটে। গত শনিবারের প্রথম আলোর প্রথম পাতায় প্রকাশিত এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনটি জানাচ্ছে, যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে বিজ্ঞাপন প্রকাশ করা হয়েছে, সেগুলোর শিক্ষকেরা ডিসিসির বিভক্তি চান না, কিন্তু বিভক্ত করা হয়েছে বলে তাঁরা প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানিয়ে বিজ্ঞাপন প্রকাশে বাধ্য হয়েছেন। কারণ স্থানীয় সরকারদলীয় সাংসদ আসলামুল হক তাঁর নির্বাচনী এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর কর্তৃপক্ষকে নিজ খরচে অমন বিজ্ঞাপন প্রকাশের নির্দেশ দিয়েছেন। সাংসদ অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। কিন্তু প্রথম আলোর অনুসন্ধানে পরিষ্কার হয়েছে যে সাংসদের নির্দেশেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো এটা করতে বাধ্য হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানিয়ে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন প্রকাশ করা নিশ্চয়ই অন্যায় নয়; কিন্তু মিরপুরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে এমন নির্দেশ দেওয়ার অধিকার কি সংশ্লিষ্ট সাংসদের আছে? বিজ্ঞাপন প্রকাশ ব্যয়বহুল; শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর নিজস্ব তহবিল থেকে সে অর্থ খরচ করতে হয়েছে। তা ছাড়া এই অর্থ তো নেওয়া হয়েছে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে। শিক্ষার্থীদের টাকায় প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানিয়ে বিজ্ঞাপন প্রকাশ করার আগে কি শিক্ষার্থীদের সম্মতি নেওয়া হয়েছে? এ ছাড়া অনেক সময় দেখা যায়, সরকারের ঊর্ধ্বতন নেতাদের সফরকালে বিদ্যালয়ের ছোট ছোট ছেলেমেয়েকে রোদের মধ্যে রাস্তার দুই পাশে দাঁড় করিয়ে অভিনন্দন জানানোর আয়োজন করা হয়।
নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের এমন প্রবণতা কোনোভাবেই কাম্য নয়। আমরা আশা করব, ভবিষ্যতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটবে না।

No comments

Powered by Blogger.