সংখ্যাগুরুর দখল-মানসিকতা -যুক্তি তর্ক গল্প by আবুল মোমেন
বাঘাইছড়ি ও খাগড়াছড়ির ঘটনার পর মনে হচ্ছে এ দেশের ধর্মীয় সংখ্যাগুরু মুসলিম জনগোষ্ঠীর প্রতিবেশী ধর্মীয় সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীসমূহের প্রতি মনোভাব ও তাদের প্রতি দায়িত্ব পালনের মান সম্পর্কে প্রশ্ন তোলা যায়। ১৯৪৭-এর দেশভাগ থেকে ধরলে সংখ্যাগুরু-সংখ্যালঘু সম্পর্ক ও দায়িত্ব গ্রহণের প্রশ্নটি জরুরি ও জোরালোভাবে উঠে আসবে। কারণ, ধর্মীয় সাম্প্রদায়িক ভেদনীতির ওপর প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্র পাকিস্তান তার জন্মকালীন এই ধর্মীয় পক্ষপাত ও বিপক্ষতার আদর্শিক ভূমিকার জন্যই সংখ্যালঘুর আস্থা অর্জনে সক্ষম হয়নি।
১৯৪৬-এ কলকাতা ও নোয়াখালীর দাঙ্গার পর বাংলায় হিন্দু-মুসলিম সম্পর্কে সন্দেহ ও আস্থাহীনতা জোরদার হয়। সাধারণত প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে ধর্ম-নির্বিশেষে মানুষের সহাবস্থানের সংস্কৃতি অনেক জোরালো ও বিকাশমান থাকে এবং বাংলায় তার ঐতিহ্যও সুদীর্ঘ। কিন্তু নোয়াখালীর দাঙ্গা সে ধারায় ক্ষত সৃষ্টি করে। কেবল ১৯৪৭ সালের দেশভাগের পটভূমিতে এক বছরেই প্রায় ১১ লাখ হিন্দু এ দেশ ত্যাগ করে ভারতে চলে যায়। এদের অধিকাংশই ছিল আতঙ্কিত, সর্বস্ব হারানো ছিন্নমূল উদ্বাস্তু—যদিও এদের মধ্যে সাড়ে তিন লাখ ছিল গ্রামীণ মধ্যবিত্ত, দুই লাখের মতো স্বচ্ছল কৃষক ও কারিগর শ্রেণীর মানুষ। দেশভাগের সময় পূর্ববঙ্গে (অর্থাত্ বাংলাদেশে) শতকরা ২৯ ভাগ সংখ্যালঘুর বসবাস ছিল। কিন্তু ১৯৫১ সালের জনসংখ্যা জরিপে দেখা যায় সে সংখ্যা নেমে দাঁড়িয়েছে শতকরা ২২ ভাগে। এভাবে দশকওয়ারি জনসংখ্যা জরিপগুলো পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যাবে তাতে সংখ্যালঘুর অনুপাত ধারাবাহিকভাবে কমেছে। কমতে কমতে সরকারি হিসাবে এ সংখ্যা এখন শতকরা ১২ ভাগের মতো। এই পরিসংখ্যানগুলো বিশ্লেষণ করে গত ৬০ বছরে এ দেশ থেকে কত সংখ্যালঘু দেশত্যাগ করেছে তার মোট হিসাব বের করা সম্ভব এবং তা যে বিরাট একটি সংখ্যা হবে সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। দুঃখের বিষয় হলো, সংখ্যালঘুর দেশত্যাগ এখনো অব্যাহত রয়েছে। রাষ্ট্র এবং সমাজ এ বিষয়ে যথেষ্ট সচেতন নয়, প্রতিকারে সচেষ্ট নয় এবং অবস্থার শিকার যারা, তাদের প্রতি প্রয়োজনীয় সংবেদনশীল নয়।
এ বিষয়টিকে ভারতের হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গার সংখ্যাগত ও ব্যাপকতার প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের দাঙ্গা-পরিস্থিতির বিচারে মূল্যায়ন করার মানসিকতা দেখা গেছে। ভারতবর্ষে রাষ্ট্র যেহেতু সাম্প্রদায়িক নয়, আইন ও প্রতিষ্ঠান যেহেতু সবার সমানাধিকার রক্ষায় স্পষ্টভাবে অঙ্গীকারবদ্ধ, তাই সামাজিক যে সাম্প্রদায়িকতা, তাকে মোকাবিলা করার মতো সাহস ও উদ্দীপনা মুসলমান ও অন্য সংখ্যালঘুরা পেয়ে থাকে। তাতে দেখা যায়, ভারতবর্ষে গত ৬০ বছরে ছোট-বড় অনেক সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হলেও ’৪৭ ও ’৫০ এবং ’৬৪-র দাঙ্গা ব্যতীত অন্য সময়ে ধারাবাহিক দেশত্যাগের ঘটনা ভারতের দিক থেকে ঘটেনি। বাংলাদেশের বহির্মুখী ও দেশমুখী অভিবাসনের পরিসংখ্যান পেলে তা থেকে বিষয়টি সহজেই পরিষ্কার হবে। তবে সমাজের দিকে চোখ রাখলেও প্রবণতা কোন দিকে তা বুঝতে অসুবিধা হয় না।
পাকিস্তান রাষ্ট্রটি সাম্প্রদায়িক ভেদনীতির ওপর সৃষ্টি হয়েই ক্ষান্ত হয়নি, সংখ্যালঘুর আস্থা ও মনোবল ভেঙে দেওয়ার জন্য সরকারের বহু পদক্ষেপকেই দায়ী করা যাবে। ১৯৫০ সালের দাঙ্গার পটভূমিতে পাকিস্তান ও ভারতের তত্কালীন দুই প্রধানমন্ত্রী পণ্ডিত জওহরলাল নেহরু ও লিয়াকত আলী খানের মধ্যে উভয় রাষ্ট্রে সংখ্যালঘুদের ধর্ম-নির্বিশেষে নাগরিক সমানাধিকারের নিশ্চয়তা দিয়ে চুক্তি স্বাক্ষরিত হলেও পাকিস্তান সরকার সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নেয়নি। বরং বিপরীত ব্যবস্থাই গ্রহণ করেছে, যাতে এ দেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর মনোবল আরও ভেঙে পড়ে। কয়েকটি উদাহরণ দেওয়া যাক। ১৯৫১ সালে পাকিস্তানের আইনসভায় এমন দুটি আইন পাস করা হয়, যাতে সংখ্যালঘুদের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি হুমকির সম্মুখীন হয়। এ দুটো আইন হচ্ছে—ইস্ট বেঙ্গল ইভাকুই প্রোপার্টি (রেস্টোরেশন অব পোজেশন) অ্যাক্ট অব ১৯৫১ এবং ইস্ট-বেঙ্গল ইভাকুইস (অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অব ইমমুভেবল প্রোপার্টি) অ্যাক্ট অব ১৯৫১।
এখানে একটা কথা স্মরণ করা দরকার যে বাংলায় (এবং ভারতবর্ষেও) ইংরেজের সঙ্গে সহযোগিতার নীতি গ্রহণ করার ফলে চাকরি, আয়-উপার্জন ও স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির মালিকানার দিক থেকে হিন্দুসমাজ মুসলমানদের চেয়ে এগিয়ে ছিল। ফলে সংখ্যাগত দিক থেকে পূর্ববঙ্গে হিন্দু সংখ্যালঘু হলেও তার হাতে স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ ছিল আনুপাতিক এবং সামগ্রিক উভয় হিসেবেই বেশি।
এদিকে দেশভাগের ফলে অনাস্থা ও আতঙ্কের মধ্যে ভিটেমাটি ছেড়ে দেশত্যাগ এবং সহায়-সম্পত্তি নিয়ে চরম ভোগান্তির অশনিসংকেত প্রদানকারী এই দুটি আইন তথা রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের মুখে অসহায় মানুষের দেশত্যাগ সংখ্যাগুরু সমাজের মধ্যে একশ্রেণীর উচ্চাভিলাষী নৈতিকতাবর্জিত মানুষেরও জন্ম দেয়, যারা সস্তায় কিংবা গায়ের জোরে সংখ্যালঘুর সম্পত্তি দখলের দিকে মনোযোগী হয়।
এখানে আরেকটি কথা সবিনয়ে জানাতে চাই। বাংলাদেশে একশ্রেণীর মানুষের মধ্যে—তারা সংখ্যায় বাড়ছে—কেন, কখন, কীভাবে একটি দখলদারির মনোবৃত্তি ও তাদের ভূমিকার ফলে রাজনীতি-প্রশাসনসহ সমাজে একটি দখলদারির সংস্কৃতি গড়ে উঠল, তা আমাকে অনেক দিন ধরে ভাবাচ্ছে। এ প্রবণতা মজ্জাগত হয়ে পড়েছে কি না এবং তার ব্যাপকতা কতখানি তা আরও গভীর পর্যবেক্ষণের বিষয়, তবে তা যে উদ্বেগজনক পর্যায়ে ও মাত্রায় পৌঁছেছে সে বিষয়ে সন্দেহ নেই। এ প্রবণতা বজায় রেখে যেমন গণতন্ত্র চর্চা ও গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির বিকাশ সম্ভব নয়, তেমনি সম্ভব নয় স্বাধীনতার মতো কোনো অর্জনকে রাষ্ট্র ও সমাজের জন্য ফলপ্রসূ করে তোলা।
রাষ্ট্রের সহযোগিতায় প্রধানত হিন্দুদের এ দেশে দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক, প্রান্তিক অভাজন এবং অসহায় সংখ্যালঘুতে পরিণত করা হয়েছে। ১৯৫২ ও ১৯৫৪ সালে পাকিস্তানের আইনসভা এমন দুটি আইন পাস করে, যাতে সংখ্যালঘুদের মনোবল একেবারেই ভেঙে পড়ে। এ আইন দুটি হলো—ইস্ট বেঙ্গল প্রিভেনশন অব ট্রান্সফার অব প্রোপার্টি অ্যান্ড রিমুভেবল ডকুমেন্টস অ্যান্ড রেকর্ডস অ্যাক্ট অব ১৯৫২ এবং ইস্ট পাকিস্তান ডিস্টার্বড পারসনস (রিহ্যাবিলিটেশন) অর্ডিন্যান্স অব ১৯৫৪। এ আইনগুলোর ফলে সরকারি অনুমতি ছাড়া সংখ্যালঘুরা তাদের নিজস্ব সম্পত্তি বিক্রির অধিকার হারায়। ১৯৫৭ সালে জারিকৃত ‘পাকিস্তান (অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অব ইভাকুইজ প্রোপার্টি) অ্যাক্ট XII অব ১৯৫৭’ এবং ১৯৫৯ সালে সামরিক শাসক আইউব যখন ছয়জন বিশিষ্ট সংখ্যালঘু নেতাকে নির্বাচনের অযোগ্য ঘোষণা করেন (EBDO) তখন আরেকবার হিন্দুরা উপলব্ধি করে রাষ্ট্র ও সরকারের ভূমিকা তাদের প্রতি কতটা বৈরী ও আক্রমণাত্মক।
১৯৬৫ সালের স্বল্পস্থায়ী পাকিস্তান-ভারত যুদ্ধের প্রতিফল হিসেবে প্রণীত হয় দীর্ঘস্থায়ী শত্রু সম্পত্তি আইন, যা প্রায় নির্বিচারে হিন্দু সম্প্রদায়ের স্বার্থের পরিপন্থীভাবে ব্যবহূত হয়েছে। এই কালাকানুন এখনো অর্পিত সম্পত্তি আইন নামে বহাল রয়েছে। ’৬৪ সালের দাঙ্গা এবং ’৬৫ সালের যুদ্ধ ও পরবর্তীকালের এই কালাকানুনের কারণে হিন্দুদের দেশত্যাগ বেড়ে যায়।
মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সরকার, পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী এবং তাদের এ দেশীয় দোসরদের দিক থেকে নির্বিচারে সম্প্রদায় হিসেবেই হিন্দুমাত্রই শত্রু হিসেবে বিবেচিত হয়ে তাদের সম্মিলিত সর্বাত্মক হামলার সম্মুখীন হয়। তাই সেদিন প্রায় ৭০ লাখ হিন্দু উদ্বাস্তু হয়ে ভারতে আশ্রয় নেয়।
এত বৈরিতা ও প্রতিকূলতার মধ্যেও পাকিস্তান আমলে কি রাজনীতি কি সাংস্কৃতিক সংগ্রামে হিন্দুসহ সব সংখ্যালঘু মূলধারায় যুক্ত ছিল। সেটি ক্রমহ্রাসমান হলেও প্রভাবক ভূমিকায় তখনো ছিল তারা। সবার মতো তাদেরও স্বাধীন বাংলাদেশে সব অন্যায়-অবিচারের অবসান হয়ে সমানাধিকারের ভিত্তিতে কারও অনুকম্পা ব্যতিরেকে মর্যাদার সঙ্গে বসবাস করার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু স্বাধীন বাংলাদেশও সেই স্বপ্ন রক্ষা তো করেইনি, বরং তাকে ফিকে করেছে, এমনকি ভেঙে দিয়েছে। স্বাধীনতার পরপর পূজামণ্ডপে ব্যাপকভাবে প্রতিমা ভাঙার বিষয়টিকে আমি স্বাধীনতা-পরবর্তী সরকারকে নাকাল করার জন্য পরাজিত পাকিস্তানিপন্থীদের অপতত্পরতা হিসেবে দেখতে রাজি আছি। কিন্তু রাষ্ট্র কী করল? ’৭৫-এর পর আবার পাকিস্তানের পথ ধরল, কেবল যে সংবিধান থেকে ধর্মনিরপেক্ষতা তুলে দেওয়া বা রাষ্ট্রধর্ম বিল পাস হলো তা নয়, কুখ্যাত কালাকানুন অর্পিত সম্পত্তি আইনের মাধ্যমে সংখ্যালঘুর সম্পত্তির বিষয়টি সুরাহা না হয়ে আরও মারাত্মক জটিলতায় পড়ল। ১৯৮৯ সালে ভারতে বাবরি মসজিদ ভাঙার পর এবং ১৯৯০ সালে স্বৈরাচারী এরশাদের পতনের প্রাক্কালে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় আক্রান্ত হয়।
এখন দেশভাগ ও তত্পরবর্তীকালের ইতিহাস বিচার করলে দেখা যায় রাষ্ট্র—প্রথমে পাকিস্তান ও পরে বাংলাদেশ—কখনো সংঘ্যালঘুর স্বার্থ ক্ষুণ্ন হওয়ার মতো আইন তথা ধর্মীয় বিভেদমূলক অবস্থান থেকে ঊর্ধ্বে উঠে নাগরিকদের জন্য সমানাধিকার ও সমান সুযোগ-সুবিধার অবস্থানে আসতে পারেনি। পাশাপাশি যখন দেখি সমাজে দুর্বলের সম্পত্তি ভোগদখলের মানসিকতা অব্যাহত রয়েছে, এমনকি তা জাতিগত ব্যাধি হয়ে দাঁড়ানোর উপক্রম হচ্ছে তখন শঙ্কিত না হয়ে পারি না।
বিষয়টা এভাবে কড়া ভাষায় প্রকাশ করার কারণ, দীর্ঘ ৬০ বছরের অবিচার ও অন্যায় সম্পর্কে সংখ্যাগুরু সম্প্রদায় উদাসীন, প্রতিবেশীর নীরব দেশত্যাগ কিংবা সহায়-সম্পত্তি চাকরি-ব্যবসা নিয়ে বৈষম্যের শিকার হওয়া ও নিত্য অপদস্ত হওয়ার ঘটনা সম্পর্কে সংখ্যাগুরু উদাসীন, অসচেতন, নিষ্ক্রিয়। লাখ লাখ মানুষের দীর্ঘশ্বাস, অশ্রুজল ও বুকভাঙা হাহাকার পুঞ্জীভূত হতে থাকলে কীভাবে একটি জাতি গর্ব ও আত্মমর্যাদায় সামনে এগোবে। এটা কি সম্ভব?
সব ধরনের ভ্রান্তিরই খেসারত দিতে হয়। ঔদাসীন্য, অসচেতনতা, নিশ্চেষ্টতার ফল এই দাঁড়ায় যে আমাদের নির্বাচনে বিজয়ী রাজনৈতিক দল (তাদের সাঙ্গপাঙ্গদের মাধ্যমে) বিজয়কে দখলে রূপান্তরিত করে ছাড়ে এবং রাজনীতি ক্রমে দেশগড়া ও জাতির সেবার পরিবর্তে ব্যক্তিগত সম্পত্তি ও ক্ষমতার বৈভব অর্জনের হাতিয়ার হয়। ছাত্র-যুবকর্মীরা দিকে দিকে হল, টেন্ডার, এলাকা, মার্কেট, ভূমি দখলের প্রতিযোগিতায় নেমে পড়ে। রঙ্গমঞ্চে নতুন নতুন অধিকতর চতুর ও নিষ্ঠুর দখলদারেরা নেমে পড়েছে, যাদের দুঃসাহস, বেপরোয়া মনোভাব, দুর্বৃত্তপনা সকল সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে।
নতুন দিন আনতে হলে, দিন বদলাতে হলে একটি বড় কাজ হলো—সকল নাগরিকের জন্য রাষ্ট্র কর্তৃক নিরপেক্ষভাবে সমানাধিকার ও সমান সুযোগ সৃষ্টি করা। বাঘাইছড়িতে দরিদ্র মুসলিমরাও পাল্টা হামলা ও আঘাতের শিকার হয়েছে। তাদের উসকানি না দিয়ে পার্বত্য শান্তিচুক্তির আলোকে ভূমি সমস্যার সমাধান করে সবার মধ্যে আস্থা ও সম্প্রীতি সৃষ্টির লক্ষ্যেই সবাইকে কাজ করতে হবে। তবে তার আগে ইতিহাসের প্রেক্ষাপটে আমাদের জানতে হবে, এ অঞ্চলে কীভাবে সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক অবিচার ও নির্যাতনের শিকার হয়েছে আর কীভাবে সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ের একটি বড় অংশ দিনে দিনে দখলদারের মানসিকতায় পরিপুষ্ট হচ্ছে ও দখলদারির সংস্কৃতির বিস্তার ঘটাচ্ছে।
ভুলগুলো স্বীকার করতে হবে এবং শোধরাতে হবে আমাদের।
আবুল মোমেন: কবি, সাংবাদিক।
১৯৪৬-এ কলকাতা ও নোয়াখালীর দাঙ্গার পর বাংলায় হিন্দু-মুসলিম সম্পর্কে সন্দেহ ও আস্থাহীনতা জোরদার হয়। সাধারণত প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে ধর্ম-নির্বিশেষে মানুষের সহাবস্থানের সংস্কৃতি অনেক জোরালো ও বিকাশমান থাকে এবং বাংলায় তার ঐতিহ্যও সুদীর্ঘ। কিন্তু নোয়াখালীর দাঙ্গা সে ধারায় ক্ষত সৃষ্টি করে। কেবল ১৯৪৭ সালের দেশভাগের পটভূমিতে এক বছরেই প্রায় ১১ লাখ হিন্দু এ দেশ ত্যাগ করে ভারতে চলে যায়। এদের অধিকাংশই ছিল আতঙ্কিত, সর্বস্ব হারানো ছিন্নমূল উদ্বাস্তু—যদিও এদের মধ্যে সাড়ে তিন লাখ ছিল গ্রামীণ মধ্যবিত্ত, দুই লাখের মতো স্বচ্ছল কৃষক ও কারিগর শ্রেণীর মানুষ। দেশভাগের সময় পূর্ববঙ্গে (অর্থাত্ বাংলাদেশে) শতকরা ২৯ ভাগ সংখ্যালঘুর বসবাস ছিল। কিন্তু ১৯৫১ সালের জনসংখ্যা জরিপে দেখা যায় সে সংখ্যা নেমে দাঁড়িয়েছে শতকরা ২২ ভাগে। এভাবে দশকওয়ারি জনসংখ্যা জরিপগুলো পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যাবে তাতে সংখ্যালঘুর অনুপাত ধারাবাহিকভাবে কমেছে। কমতে কমতে সরকারি হিসাবে এ সংখ্যা এখন শতকরা ১২ ভাগের মতো। এই পরিসংখ্যানগুলো বিশ্লেষণ করে গত ৬০ বছরে এ দেশ থেকে কত সংখ্যালঘু দেশত্যাগ করেছে তার মোট হিসাব বের করা সম্ভব এবং তা যে বিরাট একটি সংখ্যা হবে সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। দুঃখের বিষয় হলো, সংখ্যালঘুর দেশত্যাগ এখনো অব্যাহত রয়েছে। রাষ্ট্র এবং সমাজ এ বিষয়ে যথেষ্ট সচেতন নয়, প্রতিকারে সচেষ্ট নয় এবং অবস্থার শিকার যারা, তাদের প্রতি প্রয়োজনীয় সংবেদনশীল নয়।
এ বিষয়টিকে ভারতের হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গার সংখ্যাগত ও ব্যাপকতার প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের দাঙ্গা-পরিস্থিতির বিচারে মূল্যায়ন করার মানসিকতা দেখা গেছে। ভারতবর্ষে রাষ্ট্র যেহেতু সাম্প্রদায়িক নয়, আইন ও প্রতিষ্ঠান যেহেতু সবার সমানাধিকার রক্ষায় স্পষ্টভাবে অঙ্গীকারবদ্ধ, তাই সামাজিক যে সাম্প্রদায়িকতা, তাকে মোকাবিলা করার মতো সাহস ও উদ্দীপনা মুসলমান ও অন্য সংখ্যালঘুরা পেয়ে থাকে। তাতে দেখা যায়, ভারতবর্ষে গত ৬০ বছরে ছোট-বড় অনেক সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হলেও ’৪৭ ও ’৫০ এবং ’৬৪-র দাঙ্গা ব্যতীত অন্য সময়ে ধারাবাহিক দেশত্যাগের ঘটনা ভারতের দিক থেকে ঘটেনি। বাংলাদেশের বহির্মুখী ও দেশমুখী অভিবাসনের পরিসংখ্যান পেলে তা থেকে বিষয়টি সহজেই পরিষ্কার হবে। তবে সমাজের দিকে চোখ রাখলেও প্রবণতা কোন দিকে তা বুঝতে অসুবিধা হয় না।
পাকিস্তান রাষ্ট্রটি সাম্প্রদায়িক ভেদনীতির ওপর সৃষ্টি হয়েই ক্ষান্ত হয়নি, সংখ্যালঘুর আস্থা ও মনোবল ভেঙে দেওয়ার জন্য সরকারের বহু পদক্ষেপকেই দায়ী করা যাবে। ১৯৫০ সালের দাঙ্গার পটভূমিতে পাকিস্তান ও ভারতের তত্কালীন দুই প্রধানমন্ত্রী পণ্ডিত জওহরলাল নেহরু ও লিয়াকত আলী খানের মধ্যে উভয় রাষ্ট্রে সংখ্যালঘুদের ধর্ম-নির্বিশেষে নাগরিক সমানাধিকারের নিশ্চয়তা দিয়ে চুক্তি স্বাক্ষরিত হলেও পাকিস্তান সরকার সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নেয়নি। বরং বিপরীত ব্যবস্থাই গ্রহণ করেছে, যাতে এ দেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর মনোবল আরও ভেঙে পড়ে। কয়েকটি উদাহরণ দেওয়া যাক। ১৯৫১ সালে পাকিস্তানের আইনসভায় এমন দুটি আইন পাস করা হয়, যাতে সংখ্যালঘুদের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি হুমকির সম্মুখীন হয়। এ দুটো আইন হচ্ছে—ইস্ট বেঙ্গল ইভাকুই প্রোপার্টি (রেস্টোরেশন অব পোজেশন) অ্যাক্ট অব ১৯৫১ এবং ইস্ট-বেঙ্গল ইভাকুইস (অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অব ইমমুভেবল প্রোপার্টি) অ্যাক্ট অব ১৯৫১।
এখানে একটা কথা স্মরণ করা দরকার যে বাংলায় (এবং ভারতবর্ষেও) ইংরেজের সঙ্গে সহযোগিতার নীতি গ্রহণ করার ফলে চাকরি, আয়-উপার্জন ও স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির মালিকানার দিক থেকে হিন্দুসমাজ মুসলমানদের চেয়ে এগিয়ে ছিল। ফলে সংখ্যাগত দিক থেকে পূর্ববঙ্গে হিন্দু সংখ্যালঘু হলেও তার হাতে স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ ছিল আনুপাতিক এবং সামগ্রিক উভয় হিসেবেই বেশি।
এদিকে দেশভাগের ফলে অনাস্থা ও আতঙ্কের মধ্যে ভিটেমাটি ছেড়ে দেশত্যাগ এবং সহায়-সম্পত্তি নিয়ে চরম ভোগান্তির অশনিসংকেত প্রদানকারী এই দুটি আইন তথা রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের মুখে অসহায় মানুষের দেশত্যাগ সংখ্যাগুরু সমাজের মধ্যে একশ্রেণীর উচ্চাভিলাষী নৈতিকতাবর্জিত মানুষেরও জন্ম দেয়, যারা সস্তায় কিংবা গায়ের জোরে সংখ্যালঘুর সম্পত্তি দখলের দিকে মনোযোগী হয়।
এখানে আরেকটি কথা সবিনয়ে জানাতে চাই। বাংলাদেশে একশ্রেণীর মানুষের মধ্যে—তারা সংখ্যায় বাড়ছে—কেন, কখন, কীভাবে একটি দখলদারির মনোবৃত্তি ও তাদের ভূমিকার ফলে রাজনীতি-প্রশাসনসহ সমাজে একটি দখলদারির সংস্কৃতি গড়ে উঠল, তা আমাকে অনেক দিন ধরে ভাবাচ্ছে। এ প্রবণতা মজ্জাগত হয়ে পড়েছে কি না এবং তার ব্যাপকতা কতখানি তা আরও গভীর পর্যবেক্ষণের বিষয়, তবে তা যে উদ্বেগজনক পর্যায়ে ও মাত্রায় পৌঁছেছে সে বিষয়ে সন্দেহ নেই। এ প্রবণতা বজায় রেখে যেমন গণতন্ত্র চর্চা ও গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির বিকাশ সম্ভব নয়, তেমনি সম্ভব নয় স্বাধীনতার মতো কোনো অর্জনকে রাষ্ট্র ও সমাজের জন্য ফলপ্রসূ করে তোলা।
রাষ্ট্রের সহযোগিতায় প্রধানত হিন্দুদের এ দেশে দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক, প্রান্তিক অভাজন এবং অসহায় সংখ্যালঘুতে পরিণত করা হয়েছে। ১৯৫২ ও ১৯৫৪ সালে পাকিস্তানের আইনসভা এমন দুটি আইন পাস করে, যাতে সংখ্যালঘুদের মনোবল একেবারেই ভেঙে পড়ে। এ আইন দুটি হলো—ইস্ট বেঙ্গল প্রিভেনশন অব ট্রান্সফার অব প্রোপার্টি অ্যান্ড রিমুভেবল ডকুমেন্টস অ্যান্ড রেকর্ডস অ্যাক্ট অব ১৯৫২ এবং ইস্ট পাকিস্তান ডিস্টার্বড পারসনস (রিহ্যাবিলিটেশন) অর্ডিন্যান্স অব ১৯৫৪। এ আইনগুলোর ফলে সরকারি অনুমতি ছাড়া সংখ্যালঘুরা তাদের নিজস্ব সম্পত্তি বিক্রির অধিকার হারায়। ১৯৫৭ সালে জারিকৃত ‘পাকিস্তান (অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অব ইভাকুইজ প্রোপার্টি) অ্যাক্ট XII অব ১৯৫৭’ এবং ১৯৫৯ সালে সামরিক শাসক আইউব যখন ছয়জন বিশিষ্ট সংখ্যালঘু নেতাকে নির্বাচনের অযোগ্য ঘোষণা করেন (EBDO) তখন আরেকবার হিন্দুরা উপলব্ধি করে রাষ্ট্র ও সরকারের ভূমিকা তাদের প্রতি কতটা বৈরী ও আক্রমণাত্মক।
১৯৬৫ সালের স্বল্পস্থায়ী পাকিস্তান-ভারত যুদ্ধের প্রতিফল হিসেবে প্রণীত হয় দীর্ঘস্থায়ী শত্রু সম্পত্তি আইন, যা প্রায় নির্বিচারে হিন্দু সম্প্রদায়ের স্বার্থের পরিপন্থীভাবে ব্যবহূত হয়েছে। এই কালাকানুন এখনো অর্পিত সম্পত্তি আইন নামে বহাল রয়েছে। ’৬৪ সালের দাঙ্গা এবং ’৬৫ সালের যুদ্ধ ও পরবর্তীকালের এই কালাকানুনের কারণে হিন্দুদের দেশত্যাগ বেড়ে যায়।
মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সরকার, পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী এবং তাদের এ দেশীয় দোসরদের দিক থেকে নির্বিচারে সম্প্রদায় হিসেবেই হিন্দুমাত্রই শত্রু হিসেবে বিবেচিত হয়ে তাদের সম্মিলিত সর্বাত্মক হামলার সম্মুখীন হয়। তাই সেদিন প্রায় ৭০ লাখ হিন্দু উদ্বাস্তু হয়ে ভারতে আশ্রয় নেয়।
এত বৈরিতা ও প্রতিকূলতার মধ্যেও পাকিস্তান আমলে কি রাজনীতি কি সাংস্কৃতিক সংগ্রামে হিন্দুসহ সব সংখ্যালঘু মূলধারায় যুক্ত ছিল। সেটি ক্রমহ্রাসমান হলেও প্রভাবক ভূমিকায় তখনো ছিল তারা। সবার মতো তাদেরও স্বাধীন বাংলাদেশে সব অন্যায়-অবিচারের অবসান হয়ে সমানাধিকারের ভিত্তিতে কারও অনুকম্পা ব্যতিরেকে মর্যাদার সঙ্গে বসবাস করার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু স্বাধীন বাংলাদেশও সেই স্বপ্ন রক্ষা তো করেইনি, বরং তাকে ফিকে করেছে, এমনকি ভেঙে দিয়েছে। স্বাধীনতার পরপর পূজামণ্ডপে ব্যাপকভাবে প্রতিমা ভাঙার বিষয়টিকে আমি স্বাধীনতা-পরবর্তী সরকারকে নাকাল করার জন্য পরাজিত পাকিস্তানিপন্থীদের অপতত্পরতা হিসেবে দেখতে রাজি আছি। কিন্তু রাষ্ট্র কী করল? ’৭৫-এর পর আবার পাকিস্তানের পথ ধরল, কেবল যে সংবিধান থেকে ধর্মনিরপেক্ষতা তুলে দেওয়া বা রাষ্ট্রধর্ম বিল পাস হলো তা নয়, কুখ্যাত কালাকানুন অর্পিত সম্পত্তি আইনের মাধ্যমে সংখ্যালঘুর সম্পত্তির বিষয়টি সুরাহা না হয়ে আরও মারাত্মক জটিলতায় পড়ল। ১৯৮৯ সালে ভারতে বাবরি মসজিদ ভাঙার পর এবং ১৯৯০ সালে স্বৈরাচারী এরশাদের পতনের প্রাক্কালে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় আক্রান্ত হয়।
এখন দেশভাগ ও তত্পরবর্তীকালের ইতিহাস বিচার করলে দেখা যায় রাষ্ট্র—প্রথমে পাকিস্তান ও পরে বাংলাদেশ—কখনো সংঘ্যালঘুর স্বার্থ ক্ষুণ্ন হওয়ার মতো আইন তথা ধর্মীয় বিভেদমূলক অবস্থান থেকে ঊর্ধ্বে উঠে নাগরিকদের জন্য সমানাধিকার ও সমান সুযোগ-সুবিধার অবস্থানে আসতে পারেনি। পাশাপাশি যখন দেখি সমাজে দুর্বলের সম্পত্তি ভোগদখলের মানসিকতা অব্যাহত রয়েছে, এমনকি তা জাতিগত ব্যাধি হয়ে দাঁড়ানোর উপক্রম হচ্ছে তখন শঙ্কিত না হয়ে পারি না।
বিষয়টা এভাবে কড়া ভাষায় প্রকাশ করার কারণ, দীর্ঘ ৬০ বছরের অবিচার ও অন্যায় সম্পর্কে সংখ্যাগুরু সম্প্রদায় উদাসীন, প্রতিবেশীর নীরব দেশত্যাগ কিংবা সহায়-সম্পত্তি চাকরি-ব্যবসা নিয়ে বৈষম্যের শিকার হওয়া ও নিত্য অপদস্ত হওয়ার ঘটনা সম্পর্কে সংখ্যাগুরু উদাসীন, অসচেতন, নিষ্ক্রিয়। লাখ লাখ মানুষের দীর্ঘশ্বাস, অশ্রুজল ও বুকভাঙা হাহাকার পুঞ্জীভূত হতে থাকলে কীভাবে একটি জাতি গর্ব ও আত্মমর্যাদায় সামনে এগোবে। এটা কি সম্ভব?
সব ধরনের ভ্রান্তিরই খেসারত দিতে হয়। ঔদাসীন্য, অসচেতনতা, নিশ্চেষ্টতার ফল এই দাঁড়ায় যে আমাদের নির্বাচনে বিজয়ী রাজনৈতিক দল (তাদের সাঙ্গপাঙ্গদের মাধ্যমে) বিজয়কে দখলে রূপান্তরিত করে ছাড়ে এবং রাজনীতি ক্রমে দেশগড়া ও জাতির সেবার পরিবর্তে ব্যক্তিগত সম্পত্তি ও ক্ষমতার বৈভব অর্জনের হাতিয়ার হয়। ছাত্র-যুবকর্মীরা দিকে দিকে হল, টেন্ডার, এলাকা, মার্কেট, ভূমি দখলের প্রতিযোগিতায় নেমে পড়ে। রঙ্গমঞ্চে নতুন নতুন অধিকতর চতুর ও নিষ্ঠুর দখলদারেরা নেমে পড়েছে, যাদের দুঃসাহস, বেপরোয়া মনোভাব, দুর্বৃত্তপনা সকল সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে।
নতুন দিন আনতে হলে, দিন বদলাতে হলে একটি বড় কাজ হলো—সকল নাগরিকের জন্য রাষ্ট্র কর্তৃক নিরপেক্ষভাবে সমানাধিকার ও সমান সুযোগ সৃষ্টি করা। বাঘাইছড়িতে দরিদ্র মুসলিমরাও পাল্টা হামলা ও আঘাতের শিকার হয়েছে। তাদের উসকানি না দিয়ে পার্বত্য শান্তিচুক্তির আলোকে ভূমি সমস্যার সমাধান করে সবার মধ্যে আস্থা ও সম্প্রীতি সৃষ্টির লক্ষ্যেই সবাইকে কাজ করতে হবে। তবে তার আগে ইতিহাসের প্রেক্ষাপটে আমাদের জানতে হবে, এ অঞ্চলে কীভাবে সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক অবিচার ও নির্যাতনের শিকার হয়েছে আর কীভাবে সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ের একটি বড় অংশ দিনে দিনে দখলদারের মানসিকতায় পরিপুষ্ট হচ্ছে ও দখলদারির সংস্কৃতির বিস্তার ঘটাচ্ছে।
ভুলগুলো স্বীকার করতে হবে এবং শোধরাতে হবে আমাদের।
আবুল মোমেন: কবি, সাংবাদিক।
No comments