মৃত্যু পরাজিত হবে, জয়ী হবে শিবলী
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আঠারোতম ব্যাচের ইংরেজি বিভাগের ছাত্র মোহাম্মদ শিবলী আমাদের কারও বন্ধু, কারও স্নেহভাজন ছোট ভাই, কারও ছাত্র। পরিবেশ অধিদপ্তরের চাকরিগত কারণে স্ত্রী ও এক বছর বয়সী একমাত্র সন্তানটিকে ঢাকায় রেখে বেশির ভাগ সময় সিলেটেই অবস্থান করত। ১০ সেপ্টেম্বর কর্মস্থল থেকে ঢাকায় ফেরার পথে হবিগঞ্জের কাছে একটি বাসের সঙ্গে শিবলীকে বহনকারী গাড়িটির মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। তার পর থেকে আজ অবধি জ্ঞান ফেরেনি ওর।
মৃত্যু পরাজিত হবে, জয়ী হবে শিবলী—এখনও এ আশা আছে আমাদের। শিবলী ডিপ কোমায় আছে গত বৃহস্পতিবার থেকে। চিকিত্সকেরা বলেছেন, মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ যেহেতু বন্ধ হয়েছে, নলের মাধ্যমে খাবার যখন দেওয়া গেছে, তখন সব আশা এখনো শেষ হয়ে যায়নি। স্কয়ার হাসপাতালে কাচঘেরা নির্জন কক্ষে প্রাণচঞ্চল শিবলী লাইফ সাপোর্ট নিয়ে শুয়ে আছে, এই দৃশ্য মানা যায় না, ভাবাও কঠিন; তার পরও আশা নিয়ে অপেক্ষা করা ছাড়া আর তো কোনো বিকল্প নেই।
আমরা যারা শিবলীকে অনেক দিন থেকে চিনি, কাছ থেকে যারা দেখেছি ওকে, তারা জানি কী প্রচণ্ড প্রাণশক্তির অধিকারী এই মানুষটি! হাজার ব্যস্ততার মধ্যেও মুখে ওর হাসি থাকত সারাক্ষণই—যখন ছাত্র ছিল তখনো, পরিণত বয়সেও। আমাদের বন্ধুদের মধ্যে যে যখনই সিলেটে গেছে, ঘুরতেই হোক আর পেশাগত কারণেই হোক, শিবলী তাকে সময় দেয়নি বা তার থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করেনি, এমনটি ঘটেনি কখনো। স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এ কাজটি করত শিবলী। বন্ধুদের পেলে মেতে উঠত আড্ডায়। নিজ উদ্যোগে খুঁজে বের করত পুরোনো বন্ধুদের। এতটা বন্ধুবত্সল, বন্ধুপাগল ছেলে আমাদের বন্ধুদের মধ্যেও বিরল। আজ সেই বন্ধুরা ভিড় করছে হাসপাতালের বারান্দায়। শিবলী কথা বলছে না। শিবলী অচেতন হয়ে শুয়ে আছে।
সব সময় শিবলী ভেবেছে আমাদের নিয়ে। আজ শিবলী ভাবনাহীন। যেন আর কিছু ভাবার দায় নেই ওর। শিবলীর স্ত্রী কামরুন্নেছা সেলিনার মুখ স্থির। স্কয়ারে ভর্তি করানোর সময় ভালো ট্রিটমেন্টের কথাটাই মাথায় ছিল, খরচের কথা তো মাথায় ছিল না সেলিনার। দিনে ৪২ থেকে ৪৫ হাজার টাকা, ভাবা যায়! আমাদের অনেকের মতো শিবলীর পরিবারের পক্ষেও এই ব্যয় নির্বাহ করা শুধু কঠিন নয়, অসম্ভবও। ঠিক এমন একটি সময়ে আমরা কি চুপ করে বসে থাকব? আমরা কি একবার চেষ্টা করে দেখব না—কিছু করা যায় কি না? আমরা যারা শিবলীর বন্ধু কিংবা আমাদের বন্ধু যারা—সবাই মিলে একটু উদ্যোগী হলে তো অন্তত চিকিত্সাটা নিরবচ্ছিন্নভাবে চালানো যায়।
এমনই এক দুর্ভাগা দেশের মানুষ আমরা, যেখানে দুর্ঘটনা ঘটে স্বাভাবিক ঘটনার মতো। আমরা কি চাই আমাদের বন্ধু শিবলী বিনা চিকিত্সায় মারা যাক?
ব্যস্ত সময়ে দূর-দূরান্তে থাকা অনেক বন্ধুর পক্ষেই হয়তো হাসপাতালে এসে শিবলীকে দেখে যাওয়া সম্ভব হবে না। তা এই মুহূর্তে অতটা জরুরিও নয়, তার চেয়ে অনেক বেশি জরুরি আর্থিকভাবে সহযোগিতা করা। আমরা জানি, শিবলীর সংকটাপন্ন অবস্থার কথা জানামাত্র দেশ-বিদেশে থাকা আমাদের বন্ধুরা ওর দ্রুত আরোগ্য কামনায় অস্থির হয়ে উঠবে। সহযোগিতার হাত যে বাড়াবে তাতে কোনো সংশয় নেই।
অর্থ পাঠানোর সুবিধার জন্য শিবলীর স্ত্রী কামরুন্নেছা সেলিনার দুটো ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নম্বর দিয়ে দেওয়া হলো: ১৩০ ১০১ ৪৫৭১৪, সুইফট কোড: dbbl bddh, ডাচ্-বাংলা ব্যাংক লিমিটেড, জয়পাড়া শাখা, দোহার, ঢাকা এবং ২৮৯৬/৫, অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেড, ধানমন্ডি, সাতমসজিদ রোড শাখা।
শিবলী ও সেলিনার একমাত্র সন্তান বাবাই। যেদিন মেয়েটার বয়স এক বছর পূর্ণ হওয়ার কথা ঠিক তার আগের দিনই ঘটল এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। বাবাই সারা দিন পথ চেয়ে ছিল বাবা আসবে বলে; আসেনি। আজ শুধু এইটুকু চাওয়া—মৃত্যু পরাজিত হোক, আবার শিবলীর কোলে উঠে হাসুক বাবাই; আবারও পূর্ণ উদ্যমে ও ঝাঁপিয়ে পড়ুক ওর কাজ নিয়ে।
লেখকেরা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী।
মৃত্যু পরাজিত হবে, জয়ী হবে শিবলী—এখনও এ আশা আছে আমাদের। শিবলী ডিপ কোমায় আছে গত বৃহস্পতিবার থেকে। চিকিত্সকেরা বলেছেন, মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ যেহেতু বন্ধ হয়েছে, নলের মাধ্যমে খাবার যখন দেওয়া গেছে, তখন সব আশা এখনো শেষ হয়ে যায়নি। স্কয়ার হাসপাতালে কাচঘেরা নির্জন কক্ষে প্রাণচঞ্চল শিবলী লাইফ সাপোর্ট নিয়ে শুয়ে আছে, এই দৃশ্য মানা যায় না, ভাবাও কঠিন; তার পরও আশা নিয়ে অপেক্ষা করা ছাড়া আর তো কোনো বিকল্প নেই।
আমরা যারা শিবলীকে অনেক দিন থেকে চিনি, কাছ থেকে যারা দেখেছি ওকে, তারা জানি কী প্রচণ্ড প্রাণশক্তির অধিকারী এই মানুষটি! হাজার ব্যস্ততার মধ্যেও মুখে ওর হাসি থাকত সারাক্ষণই—যখন ছাত্র ছিল তখনো, পরিণত বয়সেও। আমাদের বন্ধুদের মধ্যে যে যখনই সিলেটে গেছে, ঘুরতেই হোক আর পেশাগত কারণেই হোক, শিবলী তাকে সময় দেয়নি বা তার থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করেনি, এমনটি ঘটেনি কখনো। স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এ কাজটি করত শিবলী। বন্ধুদের পেলে মেতে উঠত আড্ডায়। নিজ উদ্যোগে খুঁজে বের করত পুরোনো বন্ধুদের। এতটা বন্ধুবত্সল, বন্ধুপাগল ছেলে আমাদের বন্ধুদের মধ্যেও বিরল। আজ সেই বন্ধুরা ভিড় করছে হাসপাতালের বারান্দায়। শিবলী কথা বলছে না। শিবলী অচেতন হয়ে শুয়ে আছে।
সব সময় শিবলী ভেবেছে আমাদের নিয়ে। আজ শিবলী ভাবনাহীন। যেন আর কিছু ভাবার দায় নেই ওর। শিবলীর স্ত্রী কামরুন্নেছা সেলিনার মুখ স্থির। স্কয়ারে ভর্তি করানোর সময় ভালো ট্রিটমেন্টের কথাটাই মাথায় ছিল, খরচের কথা তো মাথায় ছিল না সেলিনার। দিনে ৪২ থেকে ৪৫ হাজার টাকা, ভাবা যায়! আমাদের অনেকের মতো শিবলীর পরিবারের পক্ষেও এই ব্যয় নির্বাহ করা শুধু কঠিন নয়, অসম্ভবও। ঠিক এমন একটি সময়ে আমরা কি চুপ করে বসে থাকব? আমরা কি একবার চেষ্টা করে দেখব না—কিছু করা যায় কি না? আমরা যারা শিবলীর বন্ধু কিংবা আমাদের বন্ধু যারা—সবাই মিলে একটু উদ্যোগী হলে তো অন্তত চিকিত্সাটা নিরবচ্ছিন্নভাবে চালানো যায়।
এমনই এক দুর্ভাগা দেশের মানুষ আমরা, যেখানে দুর্ঘটনা ঘটে স্বাভাবিক ঘটনার মতো। আমরা কি চাই আমাদের বন্ধু শিবলী বিনা চিকিত্সায় মারা যাক?
ব্যস্ত সময়ে দূর-দূরান্তে থাকা অনেক বন্ধুর পক্ষেই হয়তো হাসপাতালে এসে শিবলীকে দেখে যাওয়া সম্ভব হবে না। তা এই মুহূর্তে অতটা জরুরিও নয়, তার চেয়ে অনেক বেশি জরুরি আর্থিকভাবে সহযোগিতা করা। আমরা জানি, শিবলীর সংকটাপন্ন অবস্থার কথা জানামাত্র দেশ-বিদেশে থাকা আমাদের বন্ধুরা ওর দ্রুত আরোগ্য কামনায় অস্থির হয়ে উঠবে। সহযোগিতার হাত যে বাড়াবে তাতে কোনো সংশয় নেই।
অর্থ পাঠানোর সুবিধার জন্য শিবলীর স্ত্রী কামরুন্নেছা সেলিনার দুটো ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নম্বর দিয়ে দেওয়া হলো: ১৩০ ১০১ ৪৫৭১৪, সুইফট কোড: dbbl bddh, ডাচ্-বাংলা ব্যাংক লিমিটেড, জয়পাড়া শাখা, দোহার, ঢাকা এবং ২৮৯৬/৫, অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেড, ধানমন্ডি, সাতমসজিদ রোড শাখা।
শিবলী ও সেলিনার একমাত্র সন্তান বাবাই। যেদিন মেয়েটার বয়স এক বছর পূর্ণ হওয়ার কথা ঠিক তার আগের দিনই ঘটল এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। বাবাই সারা দিন পথ চেয়ে ছিল বাবা আসবে বলে; আসেনি। আজ শুধু এইটুকু চাওয়া—মৃত্যু পরাজিত হোক, আবার শিবলীর কোলে উঠে হাসুক বাবাই; আবারও পূর্ণ উদ্যমে ও ঝাঁপিয়ে পড়ুক ওর কাজ নিয়ে।
লেখকেরা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী।
No comments