গাড়ি আমদানির নিষেধাজ্ঞা শিথিল শ্রীলঙ্কানদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া
উল্লেখ্য, জাপান ও ভারতসহ অনেক দেশের মতো কার ও ট্রাক প্রস্তুতের কোনো রকম বড় কারখানা নেই শ্রীলঙ্কায়। সবরকম গাড়ি তারা আমদানি করে। এখন চীনা গাড়ির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে, বিশেষ করে বিদ্যুৎচালিত গাড়ি। অন্যদিকে শ্রীলঙ্কায় ব্যবহৃত গাড়ির দাম অনেক বেড়ে গেছে। নিষেধাজ্ঞা দেয়ার আগে যে দাম ছিল, এখন কিছু মডেলের ব্যবহৃত গাড়ির দাম দুই থেকে তিনগুণ। গায়ানা ইন্ডিকা’র মতো মানুষদের জন্য এই বিধি-নিষেধ প্রত্যাহার করে নেয়ার প্রভাব অনেক কঠিন। কারণ, তারা বিয়েতে গাড়ি সবরাহ করতেন। গায়ানা ইন্ডিকা একজন পার্টটাইম ক্যাবচালক। তিনি বলেন, আমি একটি নতুন গাড়ি কিনতে চাই যাতে আমার কাজ করতে পারি। আমার প্রাইভেট ক্যাব ভাড়া দেয়ার কাজটা শুরু করতে পারি। একটি গাড়ি ছাড়া, চলাচল করা ছাড়া আমিতো রাজস্ব হারাচ্ছি। ক্যান্ডি শহরের একজন সফ্টওয়্যারের পেশায় যুক্ত শশীকুমার বলেন, দেশে গণপরিবহন নাজুক। এক্ষেত্রে একটি গাড়ি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যেহেতু আমাদের ভালো গণপরিবহন ব্যবস্থা নেই, দেশের অন্য স্থানগুলোতে সফর করার জন্য একটি গাড়ি অত্যাবশ্যক। হয়তো সরকারকে গাড়ির ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে হবে, না হয় তাদেরকে গণপরিবহন ব্যবস্থা উন্নত করতে হবে।
নিষেধাজ্ঞা আরোপের আগের বছরে শ্রীলঙ্কা প্রায় ১৪০ কোটি ডলারের যানবাহন আমদানি করেছিল। এ বছর কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, তারা যানবাহন আমদানির জন্য একশ’ কোটি ডলার বরাদ্দ রাখার পরিকল্পনা করেছে। কিন্তু এই অর্থ ছাড় দেয়া হবে আস্তে আস্তে। ভেহিক্যাল ইমপোর্টার্স এসোসিয়েশন অব শ্রীলঙ্কার আরোশা রড্রিগো বলেন, কমপক্ষে চার দশক ধরে গাড়ির ডিলারশিপ পরিচালনা করেন তিনি ও তার পরিবার। নিষেধাজ্ঞার আগে
মাসে প্রায় ১০০ যানবাহন আমদানি করেছে তার প্রতিষ্ঠান। কিন্তু বিধিনিষেধ আরোপ হওয়ার পর তারা একটি গাড়িও আমদানি করতে সক্ষম হননি। তিনি বলেন, যদি এই নিষেধাজ্ঞা আরও শিথিল করা হয়, যদি যাত্রীবাহী গাড়ি এবং অন্য যানবাহন আমদানি অনুমোদন দেয়া হয়, তাহলে বহু মানুষ এগুলো কিনতে সমর্থ হবেন না। কারণ, ট্যাক্স বৃদ্ধি পেয়েছে। শ্রীলঙ্কান মুদ্রা দুর্বল হয়েছে। সরকার আমদানি করা গাড়ির ওপর এক্সসাইজ ডিউটি বা শুল্ক নাটকীয়ভাবে বৃদ্ধি করেছে। ইঞ্জিনের আকারের ওপর নির্ভর করে নতুন এবং সেকেন্ডহ্যান্ড গাড়িতে এই শুল্ক হার যথাক্রমে শতকরা ২০০ ভাগ এবং ৩০০ ভাগ। অর্থাৎ যদি ধরা হয় একটি নতুন গাড়ির দাম ১০০ ডলার। কিন্তু তাতে শতকরা ২০০ ভাগ শুল্ক আরোপ করায় মূল্য দাঁড়াবে ৩০০ ডলার। এখানেই শেষ নয়। এক্সসাইজ ডিউটির শীর্ষে আছে শতকরা ১৮ ভাগ ভ্যাট। বিদেশ থেকে আনা যেকোনো গাড়ির জন্য এই ভ্যাট প্রযোজ্য। বিশ্বের বড় সব মুদ্রার, যেমন ডলার, বিপরীতে শ্রীলঙ্কার রুপি মারাত্মক দুর্বল। এর ফলে আমদানি করা গাড়ির দামে বড় রকম প্রভাব ফেলবে। এর ফলে আর যশোদার মতো স্কুল শিক্ষকদের মতো মানুষদের গাড়ি কেনা কঠিন হয়ে পড়বে। যশোদা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আমরা একটি গাড়ি কেনার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। কিন্তু যদি ট্যাক্স এবং মূল্য হিসাব করি, তাহলে একটি গড় মাপের গাড়ির মূল্য ২৫ লাখ রুপি থেকে দ্বিগুণ হয়ে ৫০ লাখ রুপি হয়েছে। এটা আমাদের জন্য কোনো সুযোগ এনে দেয়নি।
No comments