ইলিশপ্রীতি বাঙ্গালীর একার নয়, ইরাক থেকে বার্মার খাবারের রেসিপি তার প্রমাণ
বাংঙ্গালীর অতি প্রিয় ইলিশ কিছু দিন আগে
জিওগ্রাফিক্যাল ইন্টিকেশন বা ভৌগলিক লক্ষণসূচক হওয়ার স্বীকৃতি পেয়েছে। এর
স্বীকৃতির মানে হলে মাছটি একান্তই বাংলাদেশের। আন্তর্জাতিক অলাভজনক গবেষণা
সংস্থা ‘ওয়ার্ল্ড ফিস’র তথ্য মতে, বিশ্বের ৬৫% ইলিশের সরবরাহ আসে শুধু
বাংলাদেশ থেকে। এরপর আছে ভারত ও মিয়ানমার। তাই বলে ইলিশের প্রতি ভালোবাসা
শুধু বাঙ্গালীর একার নয়।
ইলিশের স্বাদ মুখে নিয়ে বেশিরভাগ বাঙ্গালী বেড়ে ওঠে। ইলিশের গন্ধে ভূত-পেত্নি ছুটে আসার গল্পও কম নেই। রূপালী ইলিশের ঝিলিক বাংলার জেলেদের যেমন মাতোয়ারা করে তেমনি পদ্মার ইলিশ ভালো না মেঘনার ইলিশ ভালো – সেই বিতর্কও ফুরায় না। অবশ্য এখন বিতর্ক মোড় নিয়েছে অন্যদিকে – ফুরিয়ে যাচ্ছে ইলিশের ভান্ডার। খাবার বেলায় অসংযম, আর ধরার বেলায় বেপরোয়া – এর জন্য দায়ি।
বাঙ্গালীরা হয়তো পদ্মা বা গঙ্গায় ইলিশ ধরার গল্প শুনতেই ভালোবাসে। কিন্তু ইরান, ইরাক থেকে শুরু করে পশ্চিম এশিয়া পর্যন্ত এবং পূর্বে মিয়ানমার, কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়ার নদীগুলোতেও এই নোনা পানির মাছটির দেখা মেলে। এসব দেশেও অসাধারণ স্বাদের মাছ হিসেবে ইলিশের কদর রয়েছে।
ইলিশ রান্না
বাঙ্গালীর রসুই ঘরে ইলিশ রান্নার প্রক্রিয়া খুবই সাধারণ। সরিষার তেল থাকবেই। ইলিশের সহজাত গুণ ও স্বাদ নষ্ট হতে দিতে তারা নারাজ। তাই এ নিয়ে কোন পরীক্ষা বা উদ্ভাবন কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। একবার এক রোমাঞ্চপ্রিয় রাধুনীকে স্ট্রবেরি দিয়ে ইলিশ রান্না করতে দেখে এক বয়স্ক ব্যক্তি এই বলে চেচিয়ে উঠেছিলেন: ইলিশ বিলুপ্ত হতে বাকি নেই।
কিন্তু মালয়েশিয়ায় ইলিশকে বলে তেরুবাক। মালয়েশিয়ার সবেচেয়ে ভালো রান্নার রেসিপি বই বেত্তি বাও-এ ইলিশ সয়াবিন স্প্রাউট নিয়ে রান্নার কথা বলা আছে। এনকোভিস মাছের গুড়া, হলুদের পাতা ও গাজানো ডুরিয়ান ফল এতে মেশানো হয়। লবন ইলিশও রান্না হয় অনেক কিছু মিশিয়ে। তবে, সবগুলো ডিশই অনেক দামি।
চীনের দক্ষিণাঞ্চলীয় ইয়াংশি নদীতে একটি মওসুমে ইলিশ পাওয়া যায়। সেখানে এই মাছের নাম শি ইউ। যার মানে টাইম ফিস বা ‘সময় মাছ’। একাদশ শতকে সং রাজবংশের শাসনামলে চীনা কবি ওয়াং আনসাই শি ইউ’র প্রশংসা করে কবিতা লিখেছেন। তিনি বলেছেন এর স্বাদ দুধের চেয়েও মধুর।
বার্মায় পুরণো একটি প্রবাদ আছে – তুমি যদি মাছ খেতে চাও, তাহলে ইলিশ বেছে নাও। তুমি যখন বিয়ের কথা ভাববে, তখন কোন তরুণীকে পছন্দ করো।
মিয়ানমারে একেবারে সাদা মাটাভাবে ইলিশ রান্না করা হয়। এমনকি সরিষার তেলও ব্যবহার করা হয় না। দেশটির অধিকাংশ ইলিশ ধরা পড়ে ইরাবতী নদীতে। সকালে ইলিশ ভাজা দিয়ে গরম ভাত খাওয়ার মাজাই আলাদা। তবে, টমেটোসহ আরো কিছু সবজি দিয়ে ইলিশ রান্নার চল আছে মিয়ানমারে।
ইলিশের প্রজাতি
ভারতে নর্মাদা, তাপ্তি, মহানদী, কৃষ্ণা ও গোদাবরি নদীতে ইলিশ ধরা পড়ে। অন্ধ্র প্রদেশের এই মাছের নাম পুলাসা। তবে, এর স্বাদের খ্যাতি সেখানেও। ইলিশের লোভে ঘরের বউকে বিক্রি করার গল্প আছে সেখানে।
তবে, নদীগুলোতে ইলিশ দুষ্প্রাপ্য হয়ে ওঠায় সাম্প্রতিক সময়ে এর দামও বেড়ে গেছে বেশ। বেঙ্গালুরুর জনপ্রিয় রেস্টুরেন্ট কারিঙ্গা’র এক মালিক জানান, এক কেজি ইলিশ কারি ৯ হাজার রুপি পর্যন্ত দাম উঠতে পারে। রান্নার প্রণালির ওপর ভিত্তি করে ইলিশ কারির দাম কম বেশি হয়।
পার্সিরা ইলিশকে বলে ভিং। ভিং মাছের ডিস তাদের কাছে আইকনিক। অনেকভাবে রান্না, পুড়িয়ে ও ভাজি করে ইলিশ খাওয়া হয়।
ক্যাভিয়ারের সঙ্গে তুলনীয়
শুধু মাছ নয়, ইলিশের ডিমও কম স্বাদের নয়। অনেকের কাছে মাছের চেয়ে ডিম পছন্দের। মাছের মতো সাধারণ উপায়ে রান্না করে বা ভেজে এ ডিম খাওয়া যায়। অনেক জায়গায় ডিম সেদ্ধ করে তার সঙ্গে বিভিন্ন মসল্লা ও সবজি মিশিয়ে আলাদা পদ তৈরি হয়।
সিন্ধিরা ইলিশের ডিমকে ক্যাভিয়ারের সঙ্গে তুলনা করে। সেখানে সবজির সঙ্গে মিশিয়ে ইলিশের ডিম খাওয়ার রেওয়াজ আছে। পিয়াজ, টমেটো, কাঁচা লঙ্কা ও অন্যান্য মসলা দিয়ে ইলিশের ডিম ভুনা করা হয়।
ইলিশের স্বাদের খ্যাতি দুনিয়া জোড়া। কিন্তু মানুষের অবিমৃষ্যকারিতা ইলিশকে বিলুপ্তির পথে ঠেলে দিয়েছে। ইলিশ বাঁচানো না গেলে বাঙ্গালী তার একটি ভৌগলিক লক্ষণসূচক চিহ্ন হারিয়ে ফেলবে।
ইলিশের স্বাদ মুখে নিয়ে বেশিরভাগ বাঙ্গালী বেড়ে ওঠে। ইলিশের গন্ধে ভূত-পেত্নি ছুটে আসার গল্পও কম নেই। রূপালী ইলিশের ঝিলিক বাংলার জেলেদের যেমন মাতোয়ারা করে তেমনি পদ্মার ইলিশ ভালো না মেঘনার ইলিশ ভালো – সেই বিতর্কও ফুরায় না। অবশ্য এখন বিতর্ক মোড় নিয়েছে অন্যদিকে – ফুরিয়ে যাচ্ছে ইলিশের ভান্ডার। খাবার বেলায় অসংযম, আর ধরার বেলায় বেপরোয়া – এর জন্য দায়ি।
বাঙ্গালীরা হয়তো পদ্মা বা গঙ্গায় ইলিশ ধরার গল্প শুনতেই ভালোবাসে। কিন্তু ইরান, ইরাক থেকে শুরু করে পশ্চিম এশিয়া পর্যন্ত এবং পূর্বে মিয়ানমার, কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়ার নদীগুলোতেও এই নোনা পানির মাছটির দেখা মেলে। এসব দেশেও অসাধারণ স্বাদের মাছ হিসেবে ইলিশের কদর রয়েছে।
ইলিশ রান্না
বাঙ্গালীর রসুই ঘরে ইলিশ রান্নার প্রক্রিয়া খুবই সাধারণ। সরিষার তেল থাকবেই। ইলিশের সহজাত গুণ ও স্বাদ নষ্ট হতে দিতে তারা নারাজ। তাই এ নিয়ে কোন পরীক্ষা বা উদ্ভাবন কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। একবার এক রোমাঞ্চপ্রিয় রাধুনীকে স্ট্রবেরি দিয়ে ইলিশ রান্না করতে দেখে এক বয়স্ক ব্যক্তি এই বলে চেচিয়ে উঠেছিলেন: ইলিশ বিলুপ্ত হতে বাকি নেই।
কিন্তু মালয়েশিয়ায় ইলিশকে বলে তেরুবাক। মালয়েশিয়ার সবেচেয়ে ভালো রান্নার রেসিপি বই বেত্তি বাও-এ ইলিশ সয়াবিন স্প্রাউট নিয়ে রান্নার কথা বলা আছে। এনকোভিস মাছের গুড়া, হলুদের পাতা ও গাজানো ডুরিয়ান ফল এতে মেশানো হয়। লবন ইলিশও রান্না হয় অনেক কিছু মিশিয়ে। তবে, সবগুলো ডিশই অনেক দামি।
চীনের দক্ষিণাঞ্চলীয় ইয়াংশি নদীতে একটি মওসুমে ইলিশ পাওয়া যায়। সেখানে এই মাছের নাম শি ইউ। যার মানে টাইম ফিস বা ‘সময় মাছ’। একাদশ শতকে সং রাজবংশের শাসনামলে চীনা কবি ওয়াং আনসাই শি ইউ’র প্রশংসা করে কবিতা লিখেছেন। তিনি বলেছেন এর স্বাদ দুধের চেয়েও মধুর।
বার্মায় পুরণো একটি প্রবাদ আছে – তুমি যদি মাছ খেতে চাও, তাহলে ইলিশ বেছে নাও। তুমি যখন বিয়ের কথা ভাববে, তখন কোন তরুণীকে পছন্দ করো।
মিয়ানমারে একেবারে সাদা মাটাভাবে ইলিশ রান্না করা হয়। এমনকি সরিষার তেলও ব্যবহার করা হয় না। দেশটির অধিকাংশ ইলিশ ধরা পড়ে ইরাবতী নদীতে। সকালে ইলিশ ভাজা দিয়ে গরম ভাত খাওয়ার মাজাই আলাদা। তবে, টমেটোসহ আরো কিছু সবজি দিয়ে ইলিশ রান্নার চল আছে মিয়ানমারে।
ইলিশের প্রজাতি
ভারতে নর্মাদা, তাপ্তি, মহানদী, কৃষ্ণা ও গোদাবরি নদীতে ইলিশ ধরা পড়ে। অন্ধ্র প্রদেশের এই মাছের নাম পুলাসা। তবে, এর স্বাদের খ্যাতি সেখানেও। ইলিশের লোভে ঘরের বউকে বিক্রি করার গল্প আছে সেখানে।
তবে, নদীগুলোতে ইলিশ দুষ্প্রাপ্য হয়ে ওঠায় সাম্প্রতিক সময়ে এর দামও বেড়ে গেছে বেশ। বেঙ্গালুরুর জনপ্রিয় রেস্টুরেন্ট কারিঙ্গা’র এক মালিক জানান, এক কেজি ইলিশ কারি ৯ হাজার রুপি পর্যন্ত দাম উঠতে পারে। রান্নার প্রণালির ওপর ভিত্তি করে ইলিশ কারির দাম কম বেশি হয়।
পার্সিরা ইলিশকে বলে ভিং। ভিং মাছের ডিস তাদের কাছে আইকনিক। অনেকভাবে রান্না, পুড়িয়ে ও ভাজি করে ইলিশ খাওয়া হয়।
ক্যাভিয়ারের সঙ্গে তুলনীয়
শুধু মাছ নয়, ইলিশের ডিমও কম স্বাদের নয়। অনেকের কাছে মাছের চেয়ে ডিম পছন্দের। মাছের মতো সাধারণ উপায়ে রান্না করে বা ভেজে এ ডিম খাওয়া যায়। অনেক জায়গায় ডিম সেদ্ধ করে তার সঙ্গে বিভিন্ন মসল্লা ও সবজি মিশিয়ে আলাদা পদ তৈরি হয়।
সিন্ধিরা ইলিশের ডিমকে ক্যাভিয়ারের সঙ্গে তুলনা করে। সেখানে সবজির সঙ্গে মিশিয়ে ইলিশের ডিম খাওয়ার রেওয়াজ আছে। পিয়াজ, টমেটো, কাঁচা লঙ্কা ও অন্যান্য মসলা দিয়ে ইলিশের ডিম ভুনা করা হয়।
ইলিশের স্বাদের খ্যাতি দুনিয়া জোড়া। কিন্তু মানুষের অবিমৃষ্যকারিতা ইলিশকে বিলুপ্তির পথে ঠেলে দিয়েছে। ইলিশ বাঁচানো না গেলে বাঙ্গালী তার একটি ভৌগলিক লক্ষণসূচক চিহ্ন হারিয়ে ফেলবে।
No comments