দার্জিলিংয়ের পাহাড়ে কেন স্বশাসনের দাবি by বিশ্বনাথ সাহা ও গোর্কি চক্রবর্তী
দার্জিলিংয়ের
পাহাড়ি জনগণের স্বশাসনের দাবি শত বছরের পুরনো। সেই ১৯০৭ সালে এই অঞ্চলের
মানুষ প্রথম স্বায়ত্বশাসনের দাবি তোলেন। এই আকাংক্ষার পেছনে জটিলতার
বিবরণটি পাহাড়ি জনগণের জাতিগত বৈচিত্রের কারণে আরো বেশি জটিল হয়ে পড়ে। যেমন
দার্জিলিংয়ের নেপাল-ভাষী যেসব মানুষ ভারতের মূল ভূখণ্ডে চলে গেছেন
তাদেরকেও ‘নেপাল থেকে আসা নেপালি’ বলে মনে করা হয়। এতে এই অঞ্চলের
জনগোষ্ঠীর জাতিগত পরিচয়টি প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে।
এধরনের বাহ্যিক কার্যকারণ ছাড়াও আরো অনেক কিছু দার্জিলিংবাসির মনে আলাদা পরিচয় অর্জনের আকাংক্ষা জোরালো করে তুলেছে। তাই গোর্খাদের জন্য গোর্খাল্যান্ডের স্বীকৃতি চায় দার্জিলিংবাসী।
ভারতের সীমান্তঘেষা এই অঞ্চলের ভূগোল নিরন্তর পরিবর্তন হচ্ছে। একসময় দার্জিলিং ছিলো সিকিমের অংশ। প্রাচীন গোর্খালি রাজ্য (বর্তমান নেপাল) থেকে কেটে নিয়ে সিকিমের সৃষ্টি। পরে তা বৃটিশ সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়। বৃটিশ রাজ ১৮৩৫ সালে এক চুক্তির পর উপহার হিসেবে সিকিমের কাছ থেকে দার্জিলিং পেয়েছিলো। বৃটিশরা চলে গেলে ১৯৫৪ সালে ভারত এই ‘উপহার’ পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে একীভূত করে নেয়। এতে এই ভূখণ্ডের মানুষের অনুভুতিতে আঘাত লাগে। মাঝে মধ্যে বিক্ষোভের মধ্য দিয়ে তারা এই ক্ষোভের জানান দেয়।
আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকারের দাবিতে দার্জিলিংয়ে ১৯৮৬-৮৮ সময়ে এই অঞ্চলে ব্যাপক সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। যার ফলশ্রুতিতে ১৯৮৮ সালে ‘দার্জিলিং গোর্খা হিল কাউন্সিল’ গঠন করে সরকার। এই প্রতিষ্ঠান প্রত্যাশিত ফল অর্জনে ব্যর্থ হলে ২০১১ সালে ‘গোর্খাল্যান্ড টেরিটরিয়াল এডমিনিস্ট্রেশন’ (জিটিএ) গঠন করা হয়। এর মধ্য দিয়ে ‘গোর্খাল্যান্ড’ শব্দটি সরকারি স্বীকৃতি লাভ করে। কিন্তু পূর্বসুরির মতো জিটিএ’ও পর্যাপ্ত স্বশাসন পায়নি। জিটিএ’র আওতায় প্রাপ্ত সরকারি তহবিল সুষ্ঠভাবে কাজে লাগানোর ব্যাপারে কোন সরকার বা পাহাড়ের প্রশাসন নজর দেয়নি। রাজ্য সরকার ও জিটিএ নিজেদের মধ্যে অশুভ আঁতাতের মাধ্যমে এই তহবিল ভাগবাটোয়ারা করে নিতো।
দার্জিলিংয়ে ভাষা নিয়ে বিতর্ক অনেক দিনের। এই অঞ্চলের নেপালি-ভাষী জনগোষ্ঠীকে সংখ্যালঘু হিসেবে চিহ্নিত করতে রাজ্য সরকার আদমশুমারিকে একটি অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে বলে অভিযোগ রয়েছে। অথচ তার এই অঞ্চলে সংখ্যাগুরু।
দার্জিলিংয়ের পাহাড়ি অঞ্চলে এই সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্যবোধের প্রকাশ ঘটে ১৯৬০’র দশকে নেপালি ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে। পশ্চিম বঙ্গ সরকার ও কেন্দ্রীয় সরকার আদমশুমারি প্রক্রিয়াকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করে যাতে নেপালি ভাষাকে সংখ্যালঘুদের ভাষা হিসেবে চিহ্নিত করা যায়। এটা করা হয় দার্জিলিংয়ের স্কুলগুলোতে নেপালি ভাষাকে শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করতে না দেয়ার জন্য।
তাছাড়া, পার্বত্য অঞ্চলে বাঙ্গালী সাংস্কৃতিক আধিপত্য বিস্তার করছে বলে যে ধারণা রয়েছে তাও দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভাজনকে তীব্র করেছে। গত দু’বছর ধরে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী দার্জিলিয়ে এসে সুভাষ চন্দ্র বসু’র জন্মদিন উদযাপন করছেন। এ উপলক্ষ্যে সেখানে বাঙ্গালি লোকসঙ্গীত ‘বাউল গানে’র আসর বসে।
গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার সদস্য স্বরাজ থাপা বলেন, দার্জিলিংয়ের অধিবাসীরা সরকারের এসব কাজকে মনে করছে গায়ে পড়ে ঝগড়া বাধানোর মতো। আরো লক্ষ্য করার বিষয় হলো পশ্চিমবঙ্গে বেশিরভাগ গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নেপালি ভাষা নিয়ে পড়াশুনার সুযোগ দেয়া হয় না।
দার্জিলিংয়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে আগে থেকেই ঐচ্ছিক বিষয় হিসেবে বাংলা পড়ানো হচ্ছে। তাহলে রাজ্য সরকার কেন বাংলা ভাষা চালুর ঘোষণা দিলো? এটা কি সম্প্রতি পৌরসভাগুলোতে তৃণমূল কংগ্রেসের ভালো ফলাফল আরো সুসংহত করার জন্য? এই উদ্যোগের পেছনে বিজেপি’কে দমানোর কৌশলও কাজ করছে বলে বলে রাজনৈতিক ভাষ্যকাররা মনে করছেন। হিন্দি’র আগ্রাসন মোকাবেলায় বাংলা ভাষাকে অস্ত্র হিসেবে বেছে নিলেন মমতা ব্যানার্জি? ভাষ্যকারদের এমন সন্দেহ অবশ্য খুব একটা জোর পায় না যখন আমরা কর্নাটক ও কেরালার দিকে তাকাই। এই দু’রাজ্যেই সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠীর ভাষাকে রাজ্যের স্কুলগুলোতে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
সমস্যার আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক রয়েছে। আন্দোলনকারীরা প্রস্তাবিত গোর্খাল্যান্ড রাজ্যে দার্জিলিং ও কালিম্পং জেলা, শিলিগুড়ি’র একটি অংশ, তেরাই, আলিপুরের ডুয়ার্স এবং জলপাইগুড়ি জেলা অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানান। কিন্তু এসব অঞ্চলের জনসংখ্যাগত চিত্র বিশ্লেষণ করতে গেলে অসংগতি ধরা পড়ে। গোর্খাদের সংখ্যা দাঁড়ায় জনসংখ্যার ৩৫%। অন্যদের মধ্যে আদিবাসী ২০%, বাঙ্গালি ১৫%, রাজবংশি ২৫% এবং মেচ ও অন্যান্য জনগোষ্ঠী ৫%। এ অবস্থায় গোর্খাল্যান্ডের দাবি অন্যরাও মেনে নেবে তা কিভাবে বুঝলেন আন্দোলনকারীরা?
তাছাড়া, শেরপা, ভুটিয়া, লেপচা ও অন্যান্য জাতিগত সম্প্রদায় গোর্খাদের স্ব-শাসন দাবিকে একই দৃষ্টিতে দেখে না। সম্ভবত আর এই বিরোধকে কাজে লাগতে রাজ্য সরকার পাহাড়ি অঞ্চলের জন্য ১৫টি আলাদা উন্নয়ন বোর্ড সক্রিয় করার জন্য কাজ করছে।
সিকিম ডেমক্রেটিক ফ্রন্ট ও সিকিম করনতিকারি মোর্চা গোর্খাল্যান্ড গঠনকে সমর্থন ও দার্জিলিংকে সিকিমের সঙ্গে যুক্ত করার প্রস্তাব দিলে আরো তীব্র বিতর্ক সৃষ্টি হয়। এই অঞ্চলের অভিন্ন ইতিহাসের কারণে এই দাবি ওঠে। দার্জিলিং মূলত সিকিমের অংশ ছিলো।
দার্জিলিংয়ের পার্বত্য অঞ্চল এখন এক সন্ধিক্ষণে উপনীত হয়েছে। গোর্খাল্যান্ড গঠনের দাবি নিয়ে পার্বত্য এলাকায় কারো দ্বিমত না থাকলেও কোন জাতীয় দলের কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে ওই দাবি’র প্রতি সমর্থন জানানো হয়নি। এমন কি ২০০৯ ও ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে ইশতেহারে বিজেপি গোর্খাল্যান্ডের দাবি ‘সহানুভুতির সঙ্গে পরীক্ষা ও বিশেষভাবে বিবেচনা’র আশ্বাস দেয়। জাতীয় দলগুলোর জেলা ইউনিটগুলো গোর্খাল্যান্ড সমর্থন করে। তাদের সঙ্গে কেন্দ্রের এ নিয়ে বিরোধ রয়েছে। এতে সমস্যার দ্রুত সমাধানের সম্ভাবনাও কমে গেছে।
দার্জিলিংয়ের পাহাড়ের মানুষ এবং তাদের সংগঠনগুলো বর্তমান আন্দোলনকে ‘স্বশাসন’ আদায়ের চূড়ান্ত যুদ্ধ হিসেবে দেখছে কিন্তু রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের অন্য খেলোয়াড় এবং সমতলের রাজনৈতিক দলগুলোর দৃষ্টি নির্বাচনী লাভ-ক্ষতি ও অন্যান্য সুবিধার ওপর। আর এই খেলায় পাহাড়ি জনগণের আকাক্সক্ষা নস্যাৎ হওয়ার আশংকাও কম নয়।
[লেখক বিশ্বনাথ সাহা কলকাতা’র ইন্সটিটিউট অব ডেভলপমেন্ট স্টাডিজের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো এবং গোর্কি চক্রবর্তী একই প্রতিষ্ঠানের সহযোগি অধ্যাপক]
এধরনের বাহ্যিক কার্যকারণ ছাড়াও আরো অনেক কিছু দার্জিলিংবাসির মনে আলাদা পরিচয় অর্জনের আকাংক্ষা জোরালো করে তুলেছে। তাই গোর্খাদের জন্য গোর্খাল্যান্ডের স্বীকৃতি চায় দার্জিলিংবাসী।
ভারতের সীমান্তঘেষা এই অঞ্চলের ভূগোল নিরন্তর পরিবর্তন হচ্ছে। একসময় দার্জিলিং ছিলো সিকিমের অংশ। প্রাচীন গোর্খালি রাজ্য (বর্তমান নেপাল) থেকে কেটে নিয়ে সিকিমের সৃষ্টি। পরে তা বৃটিশ সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়। বৃটিশ রাজ ১৮৩৫ সালে এক চুক্তির পর উপহার হিসেবে সিকিমের কাছ থেকে দার্জিলিং পেয়েছিলো। বৃটিশরা চলে গেলে ১৯৫৪ সালে ভারত এই ‘উপহার’ পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে একীভূত করে নেয়। এতে এই ভূখণ্ডের মানুষের অনুভুতিতে আঘাত লাগে। মাঝে মধ্যে বিক্ষোভের মধ্য দিয়ে তারা এই ক্ষোভের জানান দেয়।
আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকারের দাবিতে দার্জিলিংয়ে ১৯৮৬-৮৮ সময়ে এই অঞ্চলে ব্যাপক সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। যার ফলশ্রুতিতে ১৯৮৮ সালে ‘দার্জিলিং গোর্খা হিল কাউন্সিল’ গঠন করে সরকার। এই প্রতিষ্ঠান প্রত্যাশিত ফল অর্জনে ব্যর্থ হলে ২০১১ সালে ‘গোর্খাল্যান্ড টেরিটরিয়াল এডমিনিস্ট্রেশন’ (জিটিএ) গঠন করা হয়। এর মধ্য দিয়ে ‘গোর্খাল্যান্ড’ শব্দটি সরকারি স্বীকৃতি লাভ করে। কিন্তু পূর্বসুরির মতো জিটিএ’ও পর্যাপ্ত স্বশাসন পায়নি। জিটিএ’র আওতায় প্রাপ্ত সরকারি তহবিল সুষ্ঠভাবে কাজে লাগানোর ব্যাপারে কোন সরকার বা পাহাড়ের প্রশাসন নজর দেয়নি। রাজ্য সরকার ও জিটিএ নিজেদের মধ্যে অশুভ আঁতাতের মাধ্যমে এই তহবিল ভাগবাটোয়ারা করে নিতো।
দার্জিলিংয়ে ভাষা নিয়ে বিতর্ক অনেক দিনের। এই অঞ্চলের নেপালি-ভাষী জনগোষ্ঠীকে সংখ্যালঘু হিসেবে চিহ্নিত করতে রাজ্য সরকার আদমশুমারিকে একটি অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে বলে অভিযোগ রয়েছে। অথচ তার এই অঞ্চলে সংখ্যাগুরু।
দার্জিলিংয়ের পাহাড়ি অঞ্চলে এই সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্যবোধের প্রকাশ ঘটে ১৯৬০’র দশকে নেপালি ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে। পশ্চিম বঙ্গ সরকার ও কেন্দ্রীয় সরকার আদমশুমারি প্রক্রিয়াকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করে যাতে নেপালি ভাষাকে সংখ্যালঘুদের ভাষা হিসেবে চিহ্নিত করা যায়। এটা করা হয় দার্জিলিংয়ের স্কুলগুলোতে নেপালি ভাষাকে শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করতে না দেয়ার জন্য।
তাছাড়া, পার্বত্য অঞ্চলে বাঙ্গালী সাংস্কৃতিক আধিপত্য বিস্তার করছে বলে যে ধারণা রয়েছে তাও দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভাজনকে তীব্র করেছে। গত দু’বছর ধরে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী দার্জিলিয়ে এসে সুভাষ চন্দ্র বসু’র জন্মদিন উদযাপন করছেন। এ উপলক্ষ্যে সেখানে বাঙ্গালি লোকসঙ্গীত ‘বাউল গানে’র আসর বসে।
গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার সদস্য স্বরাজ থাপা বলেন, দার্জিলিংয়ের অধিবাসীরা সরকারের এসব কাজকে মনে করছে গায়ে পড়ে ঝগড়া বাধানোর মতো। আরো লক্ষ্য করার বিষয় হলো পশ্চিমবঙ্গে বেশিরভাগ গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নেপালি ভাষা নিয়ে পড়াশুনার সুযোগ দেয়া হয় না।
দার্জিলিংয়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে আগে থেকেই ঐচ্ছিক বিষয় হিসেবে বাংলা পড়ানো হচ্ছে। তাহলে রাজ্য সরকার কেন বাংলা ভাষা চালুর ঘোষণা দিলো? এটা কি সম্প্রতি পৌরসভাগুলোতে তৃণমূল কংগ্রেসের ভালো ফলাফল আরো সুসংহত করার জন্য? এই উদ্যোগের পেছনে বিজেপি’কে দমানোর কৌশলও কাজ করছে বলে বলে রাজনৈতিক ভাষ্যকাররা মনে করছেন। হিন্দি’র আগ্রাসন মোকাবেলায় বাংলা ভাষাকে অস্ত্র হিসেবে বেছে নিলেন মমতা ব্যানার্জি? ভাষ্যকারদের এমন সন্দেহ অবশ্য খুব একটা জোর পায় না যখন আমরা কর্নাটক ও কেরালার দিকে তাকাই। এই দু’রাজ্যেই সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠীর ভাষাকে রাজ্যের স্কুলগুলোতে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
সমস্যার আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক রয়েছে। আন্দোলনকারীরা প্রস্তাবিত গোর্খাল্যান্ড রাজ্যে দার্জিলিং ও কালিম্পং জেলা, শিলিগুড়ি’র একটি অংশ, তেরাই, আলিপুরের ডুয়ার্স এবং জলপাইগুড়ি জেলা অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানান। কিন্তু এসব অঞ্চলের জনসংখ্যাগত চিত্র বিশ্লেষণ করতে গেলে অসংগতি ধরা পড়ে। গোর্খাদের সংখ্যা দাঁড়ায় জনসংখ্যার ৩৫%। অন্যদের মধ্যে আদিবাসী ২০%, বাঙ্গালি ১৫%, রাজবংশি ২৫% এবং মেচ ও অন্যান্য জনগোষ্ঠী ৫%। এ অবস্থায় গোর্খাল্যান্ডের দাবি অন্যরাও মেনে নেবে তা কিভাবে বুঝলেন আন্দোলনকারীরা?
তাছাড়া, শেরপা, ভুটিয়া, লেপচা ও অন্যান্য জাতিগত সম্প্রদায় গোর্খাদের স্ব-শাসন দাবিকে একই দৃষ্টিতে দেখে না। সম্ভবত আর এই বিরোধকে কাজে লাগতে রাজ্য সরকার পাহাড়ি অঞ্চলের জন্য ১৫টি আলাদা উন্নয়ন বোর্ড সক্রিয় করার জন্য কাজ করছে।
সিকিম ডেমক্রেটিক ফ্রন্ট ও সিকিম করনতিকারি মোর্চা গোর্খাল্যান্ড গঠনকে সমর্থন ও দার্জিলিংকে সিকিমের সঙ্গে যুক্ত করার প্রস্তাব দিলে আরো তীব্র বিতর্ক সৃষ্টি হয়। এই অঞ্চলের অভিন্ন ইতিহাসের কারণে এই দাবি ওঠে। দার্জিলিং মূলত সিকিমের অংশ ছিলো।
দার্জিলিংয়ের পার্বত্য অঞ্চল এখন এক সন্ধিক্ষণে উপনীত হয়েছে। গোর্খাল্যান্ড গঠনের দাবি নিয়ে পার্বত্য এলাকায় কারো দ্বিমত না থাকলেও কোন জাতীয় দলের কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে ওই দাবি’র প্রতি সমর্থন জানানো হয়নি। এমন কি ২০০৯ ও ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে ইশতেহারে বিজেপি গোর্খাল্যান্ডের দাবি ‘সহানুভুতির সঙ্গে পরীক্ষা ও বিশেষভাবে বিবেচনা’র আশ্বাস দেয়। জাতীয় দলগুলোর জেলা ইউনিটগুলো গোর্খাল্যান্ড সমর্থন করে। তাদের সঙ্গে কেন্দ্রের এ নিয়ে বিরোধ রয়েছে। এতে সমস্যার দ্রুত সমাধানের সম্ভাবনাও কমে গেছে।
দার্জিলিংয়ের পাহাড়ের মানুষ এবং তাদের সংগঠনগুলো বর্তমান আন্দোলনকে ‘স্বশাসন’ আদায়ের চূড়ান্ত যুদ্ধ হিসেবে দেখছে কিন্তু রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের অন্য খেলোয়াড় এবং সমতলের রাজনৈতিক দলগুলোর দৃষ্টি নির্বাচনী লাভ-ক্ষতি ও অন্যান্য সুবিধার ওপর। আর এই খেলায় পাহাড়ি জনগণের আকাক্সক্ষা নস্যাৎ হওয়ার আশংকাও কম নয়।
[লেখক বিশ্বনাথ সাহা কলকাতা’র ইন্সটিটিউট অব ডেভলপমেন্ট স্টাডিজের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো এবং গোর্কি চক্রবর্তী একই প্রতিষ্ঠানের সহযোগি অধ্যাপক]
No comments