ব্রংকিয়েকটেসিস : কেন হয় কী করবেন by ডা: মো: আতিকুর রহমান
ব্রংকিয়েকটেসিস
শব্দটি দ্বারা বায়ুনালীর অস্বাভাবিক স্ফীতি বোঝায়। এ ধরনের বিস্তৃতি
সাধারণত স্থায়ীভাবে হয়ে থাকে এবং তা আর পূর্বাবস্থায় ফিরে আসে না। এটি একটি
যন্ত্রণাদায়ক অসুখ এবং কখনো একদম ভালো হয় না। এটি সাধারণত শৈশবের মারাত্মক
শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণজনিত কারণে হয়। যেমন হুপিং কাশি বা হামের জটিলতা
হিসেবে। আবার কোনো ব্রংকাস বা শ্বাসনালী আটকে থাকলে যেমনটি হতে পারে টিবি
লিম্ফনোড, ক্যান্সার বা বাহ্যিক বস্তু দ্বারা তাহলে তার পরবর্তী অংশে পুঁজ
জমতে পারে তাতেও ব্রংকিয়েকটেসিস হয়। লিখেছেন অধ্যাপক ডা: মো: আতিকুর রহমান
নিউমোনিয়া সঠিক চিকিৎসা না হওয়া, সেরে যাওয়া যক্ষ্মা অথবা টিউমারের কারণে- এ ধরনের অসুখ হতে পারে। স্থায়ীভাবে প্রসারিত হওয়া শ্বাসতন্ত্রের স্থানে কফ জমতে থাকে এবং বারবার সেখানে ইনফেকশন দেখা দিতে পারে। এ রোগের উপসর্গ প্রধানত তিনটি- কফ, কাশির সাথে রক্ত যাওয়া এবং বারবার জ্বর হওয়া। কফ কখনো কখনো প্রচুর, পাকা ও অত্যন্ত দুর্গন্ধযুক্ত হয়। কখনো কখনো অবস্থার পরিবর্তনের সাথে সাথে কফ বেড়ে যায়। সকালের দিকে অত্যন্ত বেশি কাশি হয়। কাশির সাথে মাঝে মধ্যেই রক্ত ঝরে।
কখনো কখনো প্রচুর রক্তক্ষরণ নিয়ে রোগী আসে। এক ধরনের ব্রংকিয়েকটেসিস আছে যাতে কফ হয় না, শুধু বারবার রক্তপাত হয়। একে বলা হয় ড্রাই ব্রংকিয়েকটেসিস। বুকের এক্স-রে করলে অনেক সময় ব্রংকিয়েকটেসিস ধরা পড়ে। তবে অনেক সময় স্বাভাবিক থাকতে পারে। ব্রংকিয়েকটেসিস সাধারণত দুই ফুসফুসেই হয় এবং ফুসফুসের নিচের অংশ সাধারণত বেশি আক্রান্ত হয়। রোগীর যদি ব্রংকিয়েকটেসিসের মতো উপসর্গ থাকে তবে বুকের এক্স-রে স্বাভাবিক থাকলেও সিটি স্ক্যান করে দেখা উচিত সত্যিই এ রোগ আছে কি না। অনেক সময় বুকের এক্স-রে দেখে রোগটি যক্ষ্মা না ব্রংকিয়েকটেসিস তা নিয়ে বিভ্রান্তি দেখা দেয়। তবে সাধারণত যক্ষ্মা হয় ফুসফুসের উপরের অংশে আর ব্রংকিয়েকটেসিস হয় ফুসফুসের নিচের অংশে।
ব্রংকিয়েকটেসিসের চিকিৎসা পদ্ধতি তিনটি- পসচারাল ড্রেনেজ, অ্যান্টিবায়োটিক এবং অপারেশন। ব্রংকিয়েকটেসিসের প্রধান চিকিৎসা পসচারাল ড্রেনেজ। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে- স্ফীত ব্রংকাস থেকে পুঁজ বের করে ফেলা। রোগীকে নিজেই কাশি দিয়ে কফ বের করে ফেলতে হবে। সাধারণভাবে এতে এমন একটা অবস্থায় দেহকে রাখতে হবে যাতে ফুসফুসের যে অংশের পুঁজ বের করতে হবে সে অংশ সবচেয়ে উপরে থাকে। ফলে কফ, পুঁজ নিচের দিকে অর্থাৎ ট্রাকিয়া হয়ে লারিংসে চলে আসবে যেখান থেকে অতি সহজেই কাশি দিয়ে তা বের করে ফেলা যাবে। চৌকি বা খাটের ওপর পা রেখে মেঝেতে দুই হাতের তালুর ওপর ভর দিয়ে জোরে জোরে কেশে কফ বের করতে হবে। এভাবে প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যা দুইবার ১০ মিনিট করে ড্রেনেজ করলে রোগীর উপসর্গের লাঘব হয়। রোগীর যদি জ্বর আসে অথবা কফের রঙ হলুদাভ হয় তবে অ্যান্টিবায়োটিক দরকার হয়।
এ ধরনের রোগীদের বারবার অ্যান্টিবায়োটিকের প্রয়োজন পড়ে। সাধারণত কোট্রাইমক্সাজল অথবা এমক্সিসিলিনেই রোগী ভালো হয়ে যায়। তবে অনেক সময় সিপ্রোফ্লোক্সাসিন বা ইরাইথ্রোমাইসিন জাতীয় ওষুধ ন্যূনতম দুই-সপ্তাহ বা তার চেয়ে বেশি দিনের জন্য খেতে দিতে হয়। যদি সিটিস্ক্যানে দেখা যায় রোগটি স্থানীয়ভাবে ফুসফুসের কোনো অংশকে আক্রান্ত করেছে তবে অপারেশন করে ঐ অংশটুকু বাদ দিলেই রোগী স্থায়ীভাবে আরোগ্য লাভ করে। ফুসফুসের একটি অংশ বা প্রকোষ্ট বাদ দিলে রোগীর কোনো অসুবিধা হয় না।
তবে রোগীর বয়স কম হওয়া এবং ফুসফুসের অন্যান্য স্থান ভালো থাকা এ ধরনের অপারেশনের পূর্বশর্ত। যেহেতু রোগী দীর্ঘদিন ধরে ভোগার পর ডাক্তারের শরণাপন্ন হয় তাই বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দুটি ফুসফুসই সমানভাবে আক্রান্ত থাকে। ফলে অপারেশনের সুযোগ খুব একটা থাকে না। এসব ক্ষেত্রে রোগীকে পরবর্তী জীবনের সুস্থতার জন্য নিয়মিত অ্যান্টিবায়োটিক এবং ডাক্তারের নির্দেশ মেনে চলতে হয়।
শ্বাসনালীর স্থায়ী প্রসারতা একবার সৃষ্টি হলে, তা থেকেই যায়। শ্বাসনালীতে এ ধরনের গঠনতান্ত্রিক পরিবর্তন থাকার দরুন বারবার জীবাণু আক্রমণ হতে থাকে। ফলে জ্বর, কফ, কাশি, ঘুরে ফিরে বারবার হতে থাকে।
কফের সাথে ফুসফুস থেকে প্রায়ই রক্তক্ষরণ হতে থাকে এবং এটা কখনো কখনো মারাত্মক আকার ধারণ করে। প্রদাহ থাকার দরুন ফুসফুস কলাতে ঋরনৎড়ংরং হয়। ব্রংকিয়েকটেসিসের বিস্তৃতি লাভ করে। ফুসফুসে অধিক ঋরনৎড়ংরং হলে ফুসফুসের রক্ত চলাচলের জালকগুলো নষ্ট হয় এবং অবশেষে ফুসফুস ধমনির রক্তচাপ বাড়ে। ফলে হৃদযন্ত্রের অসুখ দেখা দেয়। ক্রমাগত জীবাণু আক্রমণের জন্য লোহিত রক্তকণিকার উৎপাদন ব্যাহত হয় এবং রক্তহীনতা দেখা দেয়।
তাই শৈশবে হাম, হুপিং কাশি, প্রাথমিক যক্ষ্মারোগের আক্রমণ হলে তার যথাযথ চিকিৎসা করাতে হবে। কোনো কারণেই শ্বাসনালীতে সঙ্কীর্ণতা সৃষ্টির সুযোগ যাতে না হয় সে দিকে নজর রাখতে হবে এবং উপযুক্ত চিকিৎসা করতে হবে।
লেখক : অধ্যাপক ও বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ, রাফা মেডিক্যাল সার্ভিস, ৫৩, মহাখালী টিবি গেইট, ঢাকা। ফোন : ০১৯১১৩৫৫৭৫৬
নিউমোনিয়া সঠিক চিকিৎসা না হওয়া, সেরে যাওয়া যক্ষ্মা অথবা টিউমারের কারণে- এ ধরনের অসুখ হতে পারে। স্থায়ীভাবে প্রসারিত হওয়া শ্বাসতন্ত্রের স্থানে কফ জমতে থাকে এবং বারবার সেখানে ইনফেকশন দেখা দিতে পারে। এ রোগের উপসর্গ প্রধানত তিনটি- কফ, কাশির সাথে রক্ত যাওয়া এবং বারবার জ্বর হওয়া। কফ কখনো কখনো প্রচুর, পাকা ও অত্যন্ত দুর্গন্ধযুক্ত হয়। কখনো কখনো অবস্থার পরিবর্তনের সাথে সাথে কফ বেড়ে যায়। সকালের দিকে অত্যন্ত বেশি কাশি হয়। কাশির সাথে মাঝে মধ্যেই রক্ত ঝরে।
কখনো কখনো প্রচুর রক্তক্ষরণ নিয়ে রোগী আসে। এক ধরনের ব্রংকিয়েকটেসিস আছে যাতে কফ হয় না, শুধু বারবার রক্তপাত হয়। একে বলা হয় ড্রাই ব্রংকিয়েকটেসিস। বুকের এক্স-রে করলে অনেক সময় ব্রংকিয়েকটেসিস ধরা পড়ে। তবে অনেক সময় স্বাভাবিক থাকতে পারে। ব্রংকিয়েকটেসিস সাধারণত দুই ফুসফুসেই হয় এবং ফুসফুসের নিচের অংশ সাধারণত বেশি আক্রান্ত হয়। রোগীর যদি ব্রংকিয়েকটেসিসের মতো উপসর্গ থাকে তবে বুকের এক্স-রে স্বাভাবিক থাকলেও সিটি স্ক্যান করে দেখা উচিত সত্যিই এ রোগ আছে কি না। অনেক সময় বুকের এক্স-রে দেখে রোগটি যক্ষ্মা না ব্রংকিয়েকটেসিস তা নিয়ে বিভ্রান্তি দেখা দেয়। তবে সাধারণত যক্ষ্মা হয় ফুসফুসের উপরের অংশে আর ব্রংকিয়েকটেসিস হয় ফুসফুসের নিচের অংশে।
ব্রংকিয়েকটেসিসের চিকিৎসা পদ্ধতি তিনটি- পসচারাল ড্রেনেজ, অ্যান্টিবায়োটিক এবং অপারেশন। ব্রংকিয়েকটেসিসের প্রধান চিকিৎসা পসচারাল ড্রেনেজ। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে- স্ফীত ব্রংকাস থেকে পুঁজ বের করে ফেলা। রোগীকে নিজেই কাশি দিয়ে কফ বের করে ফেলতে হবে। সাধারণভাবে এতে এমন একটা অবস্থায় দেহকে রাখতে হবে যাতে ফুসফুসের যে অংশের পুঁজ বের করতে হবে সে অংশ সবচেয়ে উপরে থাকে। ফলে কফ, পুঁজ নিচের দিকে অর্থাৎ ট্রাকিয়া হয়ে লারিংসে চলে আসবে যেখান থেকে অতি সহজেই কাশি দিয়ে তা বের করে ফেলা যাবে। চৌকি বা খাটের ওপর পা রেখে মেঝেতে দুই হাতের তালুর ওপর ভর দিয়ে জোরে জোরে কেশে কফ বের করতে হবে। এভাবে প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যা দুইবার ১০ মিনিট করে ড্রেনেজ করলে রোগীর উপসর্গের লাঘব হয়। রোগীর যদি জ্বর আসে অথবা কফের রঙ হলুদাভ হয় তবে অ্যান্টিবায়োটিক দরকার হয়।
এ ধরনের রোগীদের বারবার অ্যান্টিবায়োটিকের প্রয়োজন পড়ে। সাধারণত কোট্রাইমক্সাজল অথবা এমক্সিসিলিনেই রোগী ভালো হয়ে যায়। তবে অনেক সময় সিপ্রোফ্লোক্সাসিন বা ইরাইথ্রোমাইসিন জাতীয় ওষুধ ন্যূনতম দুই-সপ্তাহ বা তার চেয়ে বেশি দিনের জন্য খেতে দিতে হয়। যদি সিটিস্ক্যানে দেখা যায় রোগটি স্থানীয়ভাবে ফুসফুসের কোনো অংশকে আক্রান্ত করেছে তবে অপারেশন করে ঐ অংশটুকু বাদ দিলেই রোগী স্থায়ীভাবে আরোগ্য লাভ করে। ফুসফুসের একটি অংশ বা প্রকোষ্ট বাদ দিলে রোগীর কোনো অসুবিধা হয় না।
তবে রোগীর বয়স কম হওয়া এবং ফুসফুসের অন্যান্য স্থান ভালো থাকা এ ধরনের অপারেশনের পূর্বশর্ত। যেহেতু রোগী দীর্ঘদিন ধরে ভোগার পর ডাক্তারের শরণাপন্ন হয় তাই বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দুটি ফুসফুসই সমানভাবে আক্রান্ত থাকে। ফলে অপারেশনের সুযোগ খুব একটা থাকে না। এসব ক্ষেত্রে রোগীকে পরবর্তী জীবনের সুস্থতার জন্য নিয়মিত অ্যান্টিবায়োটিক এবং ডাক্তারের নির্দেশ মেনে চলতে হয়।
শ্বাসনালীর স্থায়ী প্রসারতা একবার সৃষ্টি হলে, তা থেকেই যায়। শ্বাসনালীতে এ ধরনের গঠনতান্ত্রিক পরিবর্তন থাকার দরুন বারবার জীবাণু আক্রমণ হতে থাকে। ফলে জ্বর, কফ, কাশি, ঘুরে ফিরে বারবার হতে থাকে।
কফের সাথে ফুসফুস থেকে প্রায়ই রক্তক্ষরণ হতে থাকে এবং এটা কখনো কখনো মারাত্মক আকার ধারণ করে। প্রদাহ থাকার দরুন ফুসফুস কলাতে ঋরনৎড়ংরং হয়। ব্রংকিয়েকটেসিসের বিস্তৃতি লাভ করে। ফুসফুসে অধিক ঋরনৎড়ংরং হলে ফুসফুসের রক্ত চলাচলের জালকগুলো নষ্ট হয় এবং অবশেষে ফুসফুস ধমনির রক্তচাপ বাড়ে। ফলে হৃদযন্ত্রের অসুখ দেখা দেয়। ক্রমাগত জীবাণু আক্রমণের জন্য লোহিত রক্তকণিকার উৎপাদন ব্যাহত হয় এবং রক্তহীনতা দেখা দেয়।
তাই শৈশবে হাম, হুপিং কাশি, প্রাথমিক যক্ষ্মারোগের আক্রমণ হলে তার যথাযথ চিকিৎসা করাতে হবে। কোনো কারণেই শ্বাসনালীতে সঙ্কীর্ণতা সৃষ্টির সুযোগ যাতে না হয় সে দিকে নজর রাখতে হবে এবং উপযুক্ত চিকিৎসা করতে হবে।
লেখক : অধ্যাপক ও বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ, রাফা মেডিক্যাল সার্ভিস, ৫৩, মহাখালী টিবি গেইট, ঢাকা। ফোন : ০১৯১১৩৫৫৭৫৬
No comments