খুদে বিজ্ঞানীর অভিযান by ফখরুল হাসান
গভীর
রাত। অন্ধকারে ঢেকে আছে পুরো গ্রাম। হিসু করতে বাড়ি থেকে বের হয় সোহান।
সামনে পরিত্যক্ত জমিদার বাড়ি অন্ধকারকে আরো গাঢ় করেছে। সেই বাড়ির জঙ্গলে
আলো জ্বলতে দেখে অবাক হয়ে যায় সোহান।
এত রাতে এমন একটা পরিত্যক্ত জঙ্গলে আগুন জ্বলবে কেন? খটকা লাগে সোহানের কাছে। নাকি গভীর রাতে খোদাতালার কুদরত এটা। শেওড়াগাছটায় যে জিন-পরির আস্তানা- সে কথা তো গ্রামের সবার জানা। হতে পারে এটা ভুত-পেত্নীর কাজ। নাকি কাছে গিয়ে দেখে আসব! কিন্তু এত রাতে জঙ্গলের ধারেকাছে যাওয়া মোটেও নিরাপদ নয়। হঠাৎ করে মনের ভেতরে ভীতির সঞ্চয় হলো। মশালের মতো অগ্নিশিখাটা মাটি থেকে এক হাত উপরে সাপের জিভের মতো লিকলিক করছে। নিশ্চয়ই দুষ্টু কোনো জিন-পরির কাণ্ড।
শ্রাবণ মাস, আকাশে বিজলি চমকাচ্ছে, মনে হয় বৃষ্টি নামতে পারে। বলতে না বলতেই ঝুমবৃষ্টি। ঘরে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে সোহান। মসজিদে মুয়াজ্জিনের আজানের সুরে ঘুম ভাঙে সোহানের। ঘর থেকে বের হয়ে আগুনটা দেখতে চাইল। কিন্তু আগুনটা নেই! রাতভর বৃষ্টি হয়েছে। গাছগাছালি লতাপাতা সব ভিজে চুপসে আছে, ভেজা পাতায় তো আগুন জ্বেলে থাকার কথা না। দিনের বেলায় বন্ধুদের নিয়ে না হয় ঘটনাটি কী ছিল দেখে আসলাম। যাই শুয়ে পড়ি গিয়ে।
অন্ধকার মুছে গিয়ে ভোরের আলোয় ভরে উঠল পৃথিবী, এখন আর জংলার ধারে যেতে ভয় নেই। সকালে তার স্কুলের বন্ধুদের গতরাতের ঘটনার কথা বলল। নাঈম তো তাকে নিয়ে রীতিমতো মজা করল। কিন্তু কৌত‚হলী সুজন। সে বলল, চল ঘটনাটি আমরা দেখে আসি। দিনের বেলা তো আর ভ‚তের ভয় নেই। আর দাদির কাছে শুনেছি জিনেরা বাচ্চাদের ক্ষতি করে না। ওদের কথা শুনে দীপ্ত রেগে গেল। ‘বেটা, বিজ্ঞানবিদরা বলেছেন ভ‚ত বলে কিছু নেই। তবে জিন আছে। মানুষের মতো তারাও একটি জাতি।’
দীপ্ত ও সোহান দুজনেরই বিজ্ঞানের প্রতি আগ্রহ আছে। পঞ্চম শ্রেণিতে রুকসানা ম্যাডাম তাদের বিজ্ঞান ক্লাস নিতো। ভালো ফল করেছে বিজ্ঞানে। ষষ্ঠ শ্রেণি ও সপ্তম শ্রেণিতে নীলিমা ও আঞ্জুমান ম্যাডাম ক্লাস নিতো। যথারীতি দীপ্ত ও সোহান বিজ্ঞানে ভালো করেছে। তারা সবাই এখন অষ্টম শ্রেণির ছাত্র। চারু স্যার তো বিজ্ঞানের ক্লাসে এসে সবসময় বলেন, তোরা একদিন দেশের মুখ উজ্জ্বল করবি।
দীপ্ত ও সোহান সবাইকে বলল-চল বিষয়টি কাছে গিয়ে দেখে আসি। কথামতো সব বন্ধু মিলে সেই পরিত্যক্ত জমিদার বাড়ির জঙ্গলে ঢুকে গেল। কিছুক্ষণ ঘোরাফেরা করে কোন জিন, ভ‚ত না পেয়ে নাঈম বলল- আগেই বলেছি, এটা তোর চোখের ভুল। রাতে কী দেখতে কী দেখলি, তুই কে জানে? চল বের হয়ে যাই।
হঠাৎ সুজন বলে- তোরা সামনে যা আমি একটু হিসু দিয়ে নেই। সবাই হতাশ হয়ে বের হয়ে যাচ্ছে। এমন সময়ে সুজনের চিৎকার। দাঁড়া পেয়েছি, সবাই এক সঙ্গে- কী পেলি। আগুন, আগুন! হ্যাঁ এদিকে আয়। সবাই দৌড়ে সুজনের কিছে গিয়ে জিজ্ঞেস করে কোথায় আগুন? সুজন ইশারা দিয়ে দেখায়। ‘মাটিতে পড়ে থাকা শুকনো পাতায় আগুন লেগেছিল বলে মনে হচ্ছে’- দীপ্ত বলল। সোহান বলল- ‘তাহলে আমি যে দেখলাম আগুনের শিখা!’
সবাই একটা বিষয়ে নিশ্চিত হলো। তা হচ্ছে গতকাল রাতে সোহান ঠিকই আগুন দেখেছে। কিন্তু রাতে বৃষ্টি হওয়ার কারণে ছাইগুলো মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। কিন্তু সোহানের কৌত‚হল আগুন কী করে লাগল! তখন সুজন বলে ওঠে, ‘গতকাল বিকেলে মাঠে ফুটবল খেলা হয়েছিল। হয়তো কেউ বিড়ি খেয়ে ফেলে দিয়েছে। ফেলে দেয়া বিড়ির গোড়ালি থেকে হয়তো শুকনো পাতায় আগুন ধরতে পারে।’
সোহান বলল, ‘হয়তো তোর কথা ঠিক। কিন্তু আমি ভাবছি আগুনের শিখার কথা। আগুন লাগলে তো ছড়িয়ে যাওয়ার কথা! কিন্তু এক জায়গায় কেন আগুনের শিখা থাকবে? সোহান চল দেখি ছাইয়ের শেষ মাথা কোথায়? তাহলে ব্ঝুতে পারব বিষয়টি।’ দীপ্তর কথার সঙ্গে একমত হলো সোহান। হাতপাঁচেক এগোতেই ছাইয়ের অস্তিত্ব নেই। যদিও বৃষ্টির কারণে ছাই পানির সঙ্গে একাকার।
হঠাৎ সোহানের নাকে একটা ঝাঁজালো গন্ধ এসে লাগল! কিরে তোরা কি কোনো গন্ধ পাচ্ছিস? না তো! সবাই জবাব দিল। কিন্তু দীপ্ত বলল- ‘পাচ্ছি। মনে হচ্ছে গ্যাসজাত কিছু হবে। হ্যাঁ আমিও তাই ভাবছি। কিন্তু কোথা থেকে আসছে?’ নাঈম ঠাট্টা করে বলল, ‘মনে হয় ভ‚তের বউ আমাদের জন্য রান্না করছে।’
‘ধ্যাত তুই না সবসময় ফাজলামি করিস’- বলতেই হঠাৎ সোহানের চোখে পড়ল জঙ্গলের এক জায়গায় পরিষ্কার। কয়েক হাত জায়গায় কোনো গাছ নেই। কাছে গিয়ে দেখে ছাই আর টুকরো টুকরো কয়লা। গন্ধটা নাকে আরো তীব্রতর হতে লাগল।
সোহান আর দীপ্ত মাটিতে বসে পড়তেই বুঝতে পারল এখানে গ্যাস আছে। পেয়েছি পেয়েছি বলে চিৎকার দিয়ে ওঠে সবাই। সোহান দীপ্তর সঙ্গে পরামর্শ করে সুজনকে বলে, আমিনুল চাচার দোকান থেকে একটা ম্যাচ নিয়ে আয়। কিছুক্ষণ পরে ম্যাচ নিয়ে হাজির সুজন। যেই না সুজন ম্যাচে খোঁচা দিল। সঙ্গে সঙ্গে আগুন দাউ দাউ করে জ্বলে ওঠে। তখনই, সোহানের চোখমুখ এক অলৌকিক রোশনাইয়ে ভরে উঠল।
এত রাতে এমন একটা পরিত্যক্ত জঙ্গলে আগুন জ্বলবে কেন? খটকা লাগে সোহানের কাছে। নাকি গভীর রাতে খোদাতালার কুদরত এটা। শেওড়াগাছটায় যে জিন-পরির আস্তানা- সে কথা তো গ্রামের সবার জানা। হতে পারে এটা ভুত-পেত্নীর কাজ। নাকি কাছে গিয়ে দেখে আসব! কিন্তু এত রাতে জঙ্গলের ধারেকাছে যাওয়া মোটেও নিরাপদ নয়। হঠাৎ করে মনের ভেতরে ভীতির সঞ্চয় হলো। মশালের মতো অগ্নিশিখাটা মাটি থেকে এক হাত উপরে সাপের জিভের মতো লিকলিক করছে। নিশ্চয়ই দুষ্টু কোনো জিন-পরির কাণ্ড।
শ্রাবণ মাস, আকাশে বিজলি চমকাচ্ছে, মনে হয় বৃষ্টি নামতে পারে। বলতে না বলতেই ঝুমবৃষ্টি। ঘরে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে সোহান। মসজিদে মুয়াজ্জিনের আজানের সুরে ঘুম ভাঙে সোহানের। ঘর থেকে বের হয়ে আগুনটা দেখতে চাইল। কিন্তু আগুনটা নেই! রাতভর বৃষ্টি হয়েছে। গাছগাছালি লতাপাতা সব ভিজে চুপসে আছে, ভেজা পাতায় তো আগুন জ্বেলে থাকার কথা না। দিনের বেলায় বন্ধুদের নিয়ে না হয় ঘটনাটি কী ছিল দেখে আসলাম। যাই শুয়ে পড়ি গিয়ে।
অন্ধকার মুছে গিয়ে ভোরের আলোয় ভরে উঠল পৃথিবী, এখন আর জংলার ধারে যেতে ভয় নেই। সকালে তার স্কুলের বন্ধুদের গতরাতের ঘটনার কথা বলল। নাঈম তো তাকে নিয়ে রীতিমতো মজা করল। কিন্তু কৌত‚হলী সুজন। সে বলল, চল ঘটনাটি আমরা দেখে আসি। দিনের বেলা তো আর ভ‚তের ভয় নেই। আর দাদির কাছে শুনেছি জিনেরা বাচ্চাদের ক্ষতি করে না। ওদের কথা শুনে দীপ্ত রেগে গেল। ‘বেটা, বিজ্ঞানবিদরা বলেছেন ভ‚ত বলে কিছু নেই। তবে জিন আছে। মানুষের মতো তারাও একটি জাতি।’
দীপ্ত ও সোহান দুজনেরই বিজ্ঞানের প্রতি আগ্রহ আছে। পঞ্চম শ্রেণিতে রুকসানা ম্যাডাম তাদের বিজ্ঞান ক্লাস নিতো। ভালো ফল করেছে বিজ্ঞানে। ষষ্ঠ শ্রেণি ও সপ্তম শ্রেণিতে নীলিমা ও আঞ্জুমান ম্যাডাম ক্লাস নিতো। যথারীতি দীপ্ত ও সোহান বিজ্ঞানে ভালো করেছে। তারা সবাই এখন অষ্টম শ্রেণির ছাত্র। চারু স্যার তো বিজ্ঞানের ক্লাসে এসে সবসময় বলেন, তোরা একদিন দেশের মুখ উজ্জ্বল করবি।
দীপ্ত ও সোহান সবাইকে বলল-চল বিষয়টি কাছে গিয়ে দেখে আসি। কথামতো সব বন্ধু মিলে সেই পরিত্যক্ত জমিদার বাড়ির জঙ্গলে ঢুকে গেল। কিছুক্ষণ ঘোরাফেরা করে কোন জিন, ভ‚ত না পেয়ে নাঈম বলল- আগেই বলেছি, এটা তোর চোখের ভুল। রাতে কী দেখতে কী দেখলি, তুই কে জানে? চল বের হয়ে যাই।
হঠাৎ সুজন বলে- তোরা সামনে যা আমি একটু হিসু দিয়ে নেই। সবাই হতাশ হয়ে বের হয়ে যাচ্ছে। এমন সময়ে সুজনের চিৎকার। দাঁড়া পেয়েছি, সবাই এক সঙ্গে- কী পেলি। আগুন, আগুন! হ্যাঁ এদিকে আয়। সবাই দৌড়ে সুজনের কিছে গিয়ে জিজ্ঞেস করে কোথায় আগুন? সুজন ইশারা দিয়ে দেখায়। ‘মাটিতে পড়ে থাকা শুকনো পাতায় আগুন লেগেছিল বলে মনে হচ্ছে’- দীপ্ত বলল। সোহান বলল- ‘তাহলে আমি যে দেখলাম আগুনের শিখা!’
সবাই একটা বিষয়ে নিশ্চিত হলো। তা হচ্ছে গতকাল রাতে সোহান ঠিকই আগুন দেখেছে। কিন্তু রাতে বৃষ্টি হওয়ার কারণে ছাইগুলো মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। কিন্তু সোহানের কৌত‚হল আগুন কী করে লাগল! তখন সুজন বলে ওঠে, ‘গতকাল বিকেলে মাঠে ফুটবল খেলা হয়েছিল। হয়তো কেউ বিড়ি খেয়ে ফেলে দিয়েছে। ফেলে দেয়া বিড়ির গোড়ালি থেকে হয়তো শুকনো পাতায় আগুন ধরতে পারে।’
সোহান বলল, ‘হয়তো তোর কথা ঠিক। কিন্তু আমি ভাবছি আগুনের শিখার কথা। আগুন লাগলে তো ছড়িয়ে যাওয়ার কথা! কিন্তু এক জায়গায় কেন আগুনের শিখা থাকবে? সোহান চল দেখি ছাইয়ের শেষ মাথা কোথায়? তাহলে ব্ঝুতে পারব বিষয়টি।’ দীপ্তর কথার সঙ্গে একমত হলো সোহান। হাতপাঁচেক এগোতেই ছাইয়ের অস্তিত্ব নেই। যদিও বৃষ্টির কারণে ছাই পানির সঙ্গে একাকার।
হঠাৎ সোহানের নাকে একটা ঝাঁজালো গন্ধ এসে লাগল! কিরে তোরা কি কোনো গন্ধ পাচ্ছিস? না তো! সবাই জবাব দিল। কিন্তু দীপ্ত বলল- ‘পাচ্ছি। মনে হচ্ছে গ্যাসজাত কিছু হবে। হ্যাঁ আমিও তাই ভাবছি। কিন্তু কোথা থেকে আসছে?’ নাঈম ঠাট্টা করে বলল, ‘মনে হয় ভ‚তের বউ আমাদের জন্য রান্না করছে।’
‘ধ্যাত তুই না সবসময় ফাজলামি করিস’- বলতেই হঠাৎ সোহানের চোখে পড়ল জঙ্গলের এক জায়গায় পরিষ্কার। কয়েক হাত জায়গায় কোনো গাছ নেই। কাছে গিয়ে দেখে ছাই আর টুকরো টুকরো কয়লা। গন্ধটা নাকে আরো তীব্রতর হতে লাগল।
সোহান আর দীপ্ত মাটিতে বসে পড়তেই বুঝতে পারল এখানে গ্যাস আছে। পেয়েছি পেয়েছি বলে চিৎকার দিয়ে ওঠে সবাই। সোহান দীপ্তর সঙ্গে পরামর্শ করে সুজনকে বলে, আমিনুল চাচার দোকান থেকে একটা ম্যাচ নিয়ে আয়। কিছুক্ষণ পরে ম্যাচ নিয়ে হাজির সুজন। যেই না সুজন ম্যাচে খোঁচা দিল। সঙ্গে সঙ্গে আগুন দাউ দাউ করে জ্বলে ওঠে। তখনই, সোহানের চোখমুখ এক অলৌকিক রোশনাইয়ে ভরে উঠল।
No comments