ওয়ান ইলেভেন পুনরায় ঘটবে না: যদি কোনো অনিয়ম থাকে আমি ব্যবস্থা নেবো -প্রধানমন্ত্রী
দেশে
১/১১ (ওয়ান ইলেভেন)-এর মতো ঘটনার পুনরাবৃত্তির আশঙ্কা নাকচ করে দিয়ে
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সরকার আগে থেকেই দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর
ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে, যাতে এ ধরনের ঘটনা পুনরায় না ঘটতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটা বলাই যায় যে, ওয়ান ইলেভেন পুনরায় ঘটবে না। যদি কোন
অনিয়ম থেকে থাকে, আমি ব্যবস্থা নেব, আমরা ব্যবস্থা নেব এবং সে যেই হোক,
এমনকি আমার দলের লোক হলেও ছাড় দেবো না।
যদি দুর্নীতিবাজদের শাস্তি দিতে চাই তা তার নিজ ঘর থেকেই শুরু করতে হয়- মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। স্থানীয় সময় রোববার রাতে নিউইয়র্ক ত্যাগের আগে বাংলাদেশ মিশনে আয়োজিত সমাপনী সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা আগে থেকেই ব্যবস্থা নিচ্ছি, যাতে ১/১১-এর মতো কোনো ঘটনা দেশে আর ঘটতে না পারে। শেখ হাসিনা বলেন, কিছু মানুষ আছে, যারা ধনসম্পদ দেখাতে অভ্যস্ত, যা তারা হঠাৎ করে পেয়েছে। সমাজের এমন লোকদের একটা ধাক্কা দেয়া প্রয়োজন। জনগণের কল্যাণের জন্য তিনি রাজনীতি করেন জানিয়ে বলেন, জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় এসেছি।
সর্বদা তাদের কল্যাণ নিয়েই ভাবছি। দীর্ঘকাল ক্ষমতায় থাকার কারণে তার দল যাতে সমাজে কোনো খারাপ প্রভাব ফেলতে না পারে এ জন্য সতর্ক রয়েছেন জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমি এটিকেও সামাল দিতে চাই। এ জন্যই আমি এই অভিযান পরিচালনা করছি। অভিযানের কারণে একাংশ অসন্তুষ্ট হতে পারে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমি এটার পরোয়া করি না। কেননা আমার ক্ষমতা এবং সম্পদের প্রতি কোন মোহ নেই। দুর্নীতির বিরুদ্ধে চলমান অভিযান অব্যাহত থাকবে জানিয়ে তিনি বলেন, এজন্য কোন বিশেষ কমিটি গঠনের প্রয়োজন নেই। দুর্নীতির তথ্য পেলে আমরা সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিচ্ছি, আমরা জাতীয় নিরাপত্তা সেল গঠন করেছি এবং তাদের সময় মত নির্দেশনা প্রদান করছি। অভিযান চলতে থাকবে, এই নিয়ে দুশ্চিন্তার কোন কারণ নেই মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কিছু মানুষ সমাজকে বিষাক্ত করবে এটা মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়।
তিনি নিজে এ অভিযানের নির্দেশ দিয়েছেন জানিয়ে সরকার প্রধান বলেন, অভিযানে যারা অখুশি তাদের জন্য আমার কোনো মায়া নেই। কারণ, দেশের প্রতিটি মানুষ সুখী হোক এবং আরও উন্নত জীবন যাপন করুক- এটাই আমি চাই। খেলাধুলার সামগ্রী আমদানির নামে জুয়া খেলার যন্ত্রপাতি দেশে প্রবেশ করতে পারে- এমনটি তার কাছে অকল্পনীয় ছিল মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রকল্প প্রস্তুতি থেকে শুরু করে কাজ পাওয়ার জন্য অর্থ বিতরণের সুযোগ নিয়ে কিছু লোক বিপুল সম্পদের মালিক বনে যাচ্ছে। এই অর্থ চটের বস্তাতেও লুকিয়ে রাখা হচ্ছে। শেখ হাসিনা বলেন, দেশে যে কোন ধরনের নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টির অপতৎপরতা রোধে সন্ত্রাসী ও জঙ্গীদের বিরুদ্ধে অভিযান হয়েছে। মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রয়েছে, যা প্রায় সফলতার দ্বারপ্রান্তে। এখন দুর্নীতিবিরোধী অভিযান শুরু হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, সরকার দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে এবং এ লক্ষ্যে বহু প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। ওই সব প্রকল্পে বরাদ্দকৃত অর্থ যথাযথভাবে ব্যয় হবে এবং এসব কাজও সম্পন্ন হবে নির্বিঘ্নে।
রোহিঙ্গা ইস্যু
এদিকে রোহিঙ্গা সংকট সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মিয়ানমার এ সমস্যার সৃষ্টি করেছে এবং তাদেরকে এর দায়ভার বহন করতে হবে। মিয়ানমার যা-ই বলুক না কেন, সমস্যার সমাধান তাদেরই দিতে হবে। রাখাইনে ‘সেফ জোন’ প্রতিষ্ঠার দাবি নাকচ করে জাতিসংঘে দেয়া মিয়ানমারের প্রতিনিধি দলের নেতার বক্তৃতার প্রতিক্রিয়ায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাদের নাগরিক অন্য দেশের শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নিয়েছে, এটা মিয়ানমারের জন্য লজ্জার, অসম্মানের। একই সঙ্গে এটা তাদের দুর্বলতা। আমাদের কাছে খুব বড় প্রশ্ন যে, কেন তারা তাদের নাগরিকদের বাংলাদেশ থেকে ফিরিয়ে নিচ্ছে না? শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। একই সঙ্গে প্রত্যাবাসন প্রশ্নে তাদের উপর আন্তর্জাতিক চাপও বাড়ানোর চেষ্টা করছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গাদের মাঝে মিয়ানমারের আস্থা সৃষ্টি করতে হবে, যেন তারা বাসভূমিতে স্বেচ্ছায় ফিরে যায়।
ট্রাম্পকে দেয়া ফাইল প্রসঙ্গে
ওদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পকে দেয়া ফাইল বা চিঠি সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন যে, তিনি জাতিসংঘ মহাসচিবের মধ্যাহ্নভোজে ডনাল্ড ট্রাম্পকে একটি চিঠি দিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানকারী জাতির পিতার খুনীদের ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকার কাজ করছে জানিয়ে তিনি বলেন, তার ওই চিঠি মূলত এ সম্পর্কিত। প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানবাধিকারের প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্র সব সময় সোচ্চার। তাহলে কী করে এই দেশে (যুক্তরাষ্ট্র) জাতির পিতা, নারী ও শিশু হত্যাকারীরা থাকতে পারে? এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, একজন খুনী কানাডায় রয়েছে। বঙ্গবন্ধুর খুনীরা পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে অবস্থান করছে। আমরা খুনীদের ফেরত পাঠাতে সংশ্লিষ্ট সব দেশকে অনুরোধ করেছি। এই খুনীরা ওইসব দেশের জন্যও নিরাপদ নয়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ওই দেশগুলো বঙ্গবন্ধুর খুনীদের প্রত্যার্পণ করলে আদালতের রায় কার্যকর করা সম্ভব হবে।
ঋণ খেলাপী ও শেয়ার বাজার প্রসঙ্গ
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংবাদ সম্মেলনে বলেন, সামরিক স্বৈরশাসক জিয়াউর রহমান দেশে ঋণ খেলাপি চর্চা শুরু করেছিলেন। তিনি বলেন, অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের পর জিয়াউর রহমান বলেছিলেন অর্থ কোন সমস্যা নয় এবং তিনি ঋণ পরিশোধ না করার সংস্কৃতি চালু করেছিলেন। শেখ হাসিনা আরো বলেন, এই সংস্কৃতি থেকে দেশকে মুক্ত করার লক্ষ্যে সরকার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করছে। ব্যাংকে উচ্চ সুদের হারের উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ব্যাংকের অধিক সুদের কারণে অনেকের পক্ষে ঋণ পরিশোধ করা সম্ভব হয় না। ফলে তারা ঋণ খেলাপি হয়। অনেকে মনে করেন যে, ঋণ পরিশোধ করার প্রয়োজন নেই। অনেক কোম্পানী রয়েছে যারা ঋণ নিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করেন। কিন্তু তারা ঋণ পরিশোধ করছেন না। সমপ্রতি আপনারা দেখেছেন যে, গ্রামীণ ফোন কি করছে? তারা কর পরিশোধ করে না এবং যখন করের পরিমাণ বিপুল হয়ে দাঁড়ায়, তখন তারা বলে আসুন আলোচনা করি। আপনি একবার বা দু’বার তা করতে পারেন। কিন্তু বারবার তা করতে পারেন না। শেখ হাসিনা বলেন, আরেকটি সমস্যা রয়েছে। ২০০৭ সালে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করার সময় অনেক ব্যবসায়ী ঋণ খেলাপি হয়েছে। কারণ, তারা সেই সময় গ্রেফতার হয়েছিলেন বা দেশ থেকে পালিয়ে গিয়েছিলেন। তিনি বলেন, আমরা তাদেরকে একটা সুযোগ দিয়েছিলাম যাতে তারা তাদের শিল্প কারখানা চালাতে পারেন এবং ব্যবসা বাণিজ্য বিঘ্নিত না হয় যেখানে হাজার হাজার শ্রমিক কাজ করেন।
ব্যাংকিং ও আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা এবং যাতে ঋণ খেলাপি সৃষ্টি না হয় সে লক্ষে সরকার বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণ করছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা ইতোমধ্যে ব্যাংকের সুদের হার এককের ঘরে নামিয়ে আনার নির্দেশ দিয়েছি এবং রাষ্ট্রচালিত ব্যাংকগুলো এই নির্দেশ অনুসরণ করছে। স্টক মার্কেট সম্পর্কে শেখ হাসিনা বলেন, এতে যারা সম্পৃক্ত রয়েছেন তাদেরকে অবশ্যই অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে বিনিয়োগ করতে হবে। তাদেরকে লক্ষ্য রাখতে হবে যে কোন শেয়ার লাভজনক আর কোনটি নয়। এসব বিবেচনা করেই তাদের শেয়ার ক্রয় করতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রে অনেকবার শেয়ারবাজারে ধস নেমেছে আবার ঘুরেও দাঁড়িয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। এর আগে, লিখিত বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৪তম অধিবেশনে তার অংশগ্রহণের পাশাপাশি সাইড লাইনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠক, আলোচনা ও মতবিনিময়ের বিস্তারিত তুলে ধরেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড.একে আব্দুল মোমেন এ সময় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন। জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিানিধি রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন সংবাদ সম্মেলনে স্বাগত বক্তৃতা করেন। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম পুরো অনুষ্ঠান সঞ্চালনার দায়িত্বে ছিলেন। সরকার প্রধানের সফরসঙ্গীরাও সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।
যদি দুর্নীতিবাজদের শাস্তি দিতে চাই তা তার নিজ ঘর থেকেই শুরু করতে হয়- মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। স্থানীয় সময় রোববার রাতে নিউইয়র্ক ত্যাগের আগে বাংলাদেশ মিশনে আয়োজিত সমাপনী সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা আগে থেকেই ব্যবস্থা নিচ্ছি, যাতে ১/১১-এর মতো কোনো ঘটনা দেশে আর ঘটতে না পারে। শেখ হাসিনা বলেন, কিছু মানুষ আছে, যারা ধনসম্পদ দেখাতে অভ্যস্ত, যা তারা হঠাৎ করে পেয়েছে। সমাজের এমন লোকদের একটা ধাক্কা দেয়া প্রয়োজন। জনগণের কল্যাণের জন্য তিনি রাজনীতি করেন জানিয়ে বলেন, জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় এসেছি।
সর্বদা তাদের কল্যাণ নিয়েই ভাবছি। দীর্ঘকাল ক্ষমতায় থাকার কারণে তার দল যাতে সমাজে কোনো খারাপ প্রভাব ফেলতে না পারে এ জন্য সতর্ক রয়েছেন জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমি এটিকেও সামাল দিতে চাই। এ জন্যই আমি এই অভিযান পরিচালনা করছি। অভিযানের কারণে একাংশ অসন্তুষ্ট হতে পারে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমি এটার পরোয়া করি না। কেননা আমার ক্ষমতা এবং সম্পদের প্রতি কোন মোহ নেই। দুর্নীতির বিরুদ্ধে চলমান অভিযান অব্যাহত থাকবে জানিয়ে তিনি বলেন, এজন্য কোন বিশেষ কমিটি গঠনের প্রয়োজন নেই। দুর্নীতির তথ্য পেলে আমরা সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিচ্ছি, আমরা জাতীয় নিরাপত্তা সেল গঠন করেছি এবং তাদের সময় মত নির্দেশনা প্রদান করছি। অভিযান চলতে থাকবে, এই নিয়ে দুশ্চিন্তার কোন কারণ নেই মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কিছু মানুষ সমাজকে বিষাক্ত করবে এটা মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়।
তিনি নিজে এ অভিযানের নির্দেশ দিয়েছেন জানিয়ে সরকার প্রধান বলেন, অভিযানে যারা অখুশি তাদের জন্য আমার কোনো মায়া নেই। কারণ, দেশের প্রতিটি মানুষ সুখী হোক এবং আরও উন্নত জীবন যাপন করুক- এটাই আমি চাই। খেলাধুলার সামগ্রী আমদানির নামে জুয়া খেলার যন্ত্রপাতি দেশে প্রবেশ করতে পারে- এমনটি তার কাছে অকল্পনীয় ছিল মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রকল্প প্রস্তুতি থেকে শুরু করে কাজ পাওয়ার জন্য অর্থ বিতরণের সুযোগ নিয়ে কিছু লোক বিপুল সম্পদের মালিক বনে যাচ্ছে। এই অর্থ চটের বস্তাতেও লুকিয়ে রাখা হচ্ছে। শেখ হাসিনা বলেন, দেশে যে কোন ধরনের নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টির অপতৎপরতা রোধে সন্ত্রাসী ও জঙ্গীদের বিরুদ্ধে অভিযান হয়েছে। মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রয়েছে, যা প্রায় সফলতার দ্বারপ্রান্তে। এখন দুর্নীতিবিরোধী অভিযান শুরু হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, সরকার দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে এবং এ লক্ষ্যে বহু প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। ওই সব প্রকল্পে বরাদ্দকৃত অর্থ যথাযথভাবে ব্যয় হবে এবং এসব কাজও সম্পন্ন হবে নির্বিঘ্নে।
রোহিঙ্গা ইস্যু
এদিকে রোহিঙ্গা সংকট সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মিয়ানমার এ সমস্যার সৃষ্টি করেছে এবং তাদেরকে এর দায়ভার বহন করতে হবে। মিয়ানমার যা-ই বলুক না কেন, সমস্যার সমাধান তাদেরই দিতে হবে। রাখাইনে ‘সেফ জোন’ প্রতিষ্ঠার দাবি নাকচ করে জাতিসংঘে দেয়া মিয়ানমারের প্রতিনিধি দলের নেতার বক্তৃতার প্রতিক্রিয়ায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাদের নাগরিক অন্য দেশের শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নিয়েছে, এটা মিয়ানমারের জন্য লজ্জার, অসম্মানের। একই সঙ্গে এটা তাদের দুর্বলতা। আমাদের কাছে খুব বড় প্রশ্ন যে, কেন তারা তাদের নাগরিকদের বাংলাদেশ থেকে ফিরিয়ে নিচ্ছে না? শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। একই সঙ্গে প্রত্যাবাসন প্রশ্নে তাদের উপর আন্তর্জাতিক চাপও বাড়ানোর চেষ্টা করছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গাদের মাঝে মিয়ানমারের আস্থা সৃষ্টি করতে হবে, যেন তারা বাসভূমিতে স্বেচ্ছায় ফিরে যায়।
ট্রাম্পকে দেয়া ফাইল প্রসঙ্গে
ওদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পকে দেয়া ফাইল বা চিঠি সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন যে, তিনি জাতিসংঘ মহাসচিবের মধ্যাহ্নভোজে ডনাল্ড ট্রাম্পকে একটি চিঠি দিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানকারী জাতির পিতার খুনীদের ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকার কাজ করছে জানিয়ে তিনি বলেন, তার ওই চিঠি মূলত এ সম্পর্কিত। প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানবাধিকারের প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্র সব সময় সোচ্চার। তাহলে কী করে এই দেশে (যুক্তরাষ্ট্র) জাতির পিতা, নারী ও শিশু হত্যাকারীরা থাকতে পারে? এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, একজন খুনী কানাডায় রয়েছে। বঙ্গবন্ধুর খুনীরা পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে অবস্থান করছে। আমরা খুনীদের ফেরত পাঠাতে সংশ্লিষ্ট সব দেশকে অনুরোধ করেছি। এই খুনীরা ওইসব দেশের জন্যও নিরাপদ নয়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ওই দেশগুলো বঙ্গবন্ধুর খুনীদের প্রত্যার্পণ করলে আদালতের রায় কার্যকর করা সম্ভব হবে।
ঋণ খেলাপী ও শেয়ার বাজার প্রসঙ্গ
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংবাদ সম্মেলনে বলেন, সামরিক স্বৈরশাসক জিয়াউর রহমান দেশে ঋণ খেলাপি চর্চা শুরু করেছিলেন। তিনি বলেন, অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের পর জিয়াউর রহমান বলেছিলেন অর্থ কোন সমস্যা নয় এবং তিনি ঋণ পরিশোধ না করার সংস্কৃতি চালু করেছিলেন। শেখ হাসিনা আরো বলেন, এই সংস্কৃতি থেকে দেশকে মুক্ত করার লক্ষ্যে সরকার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করছে। ব্যাংকে উচ্চ সুদের হারের উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ব্যাংকের অধিক সুদের কারণে অনেকের পক্ষে ঋণ পরিশোধ করা সম্ভব হয় না। ফলে তারা ঋণ খেলাপি হয়। অনেকে মনে করেন যে, ঋণ পরিশোধ করার প্রয়োজন নেই। অনেক কোম্পানী রয়েছে যারা ঋণ নিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করেন। কিন্তু তারা ঋণ পরিশোধ করছেন না। সমপ্রতি আপনারা দেখেছেন যে, গ্রামীণ ফোন কি করছে? তারা কর পরিশোধ করে না এবং যখন করের পরিমাণ বিপুল হয়ে দাঁড়ায়, তখন তারা বলে আসুন আলোচনা করি। আপনি একবার বা দু’বার তা করতে পারেন। কিন্তু বারবার তা করতে পারেন না। শেখ হাসিনা বলেন, আরেকটি সমস্যা রয়েছে। ২০০৭ সালে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করার সময় অনেক ব্যবসায়ী ঋণ খেলাপি হয়েছে। কারণ, তারা সেই সময় গ্রেফতার হয়েছিলেন বা দেশ থেকে পালিয়ে গিয়েছিলেন। তিনি বলেন, আমরা তাদেরকে একটা সুযোগ দিয়েছিলাম যাতে তারা তাদের শিল্প কারখানা চালাতে পারেন এবং ব্যবসা বাণিজ্য বিঘ্নিত না হয় যেখানে হাজার হাজার শ্রমিক কাজ করেন।
ব্যাংকিং ও আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা এবং যাতে ঋণ খেলাপি সৃষ্টি না হয় সে লক্ষে সরকার বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণ করছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা ইতোমধ্যে ব্যাংকের সুদের হার এককের ঘরে নামিয়ে আনার নির্দেশ দিয়েছি এবং রাষ্ট্রচালিত ব্যাংকগুলো এই নির্দেশ অনুসরণ করছে। স্টক মার্কেট সম্পর্কে শেখ হাসিনা বলেন, এতে যারা সম্পৃক্ত রয়েছেন তাদেরকে অবশ্যই অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে বিনিয়োগ করতে হবে। তাদেরকে লক্ষ্য রাখতে হবে যে কোন শেয়ার লাভজনক আর কোনটি নয়। এসব বিবেচনা করেই তাদের শেয়ার ক্রয় করতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রে অনেকবার শেয়ারবাজারে ধস নেমেছে আবার ঘুরেও দাঁড়িয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। এর আগে, লিখিত বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৪তম অধিবেশনে তার অংশগ্রহণের পাশাপাশি সাইড লাইনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠক, আলোচনা ও মতবিনিময়ের বিস্তারিত তুলে ধরেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড.একে আব্দুল মোমেন এ সময় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন। জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিানিধি রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন সংবাদ সম্মেলনে স্বাগত বক্তৃতা করেন। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম পুরো অনুষ্ঠান সঞ্চালনার দায়িত্বে ছিলেন। সরকার প্রধানের সফরসঙ্গীরাও সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।
No comments