পাল্টা লড়াই: কাশ্মীরের এক ছিটমহলে ঢুকতে পারেনি ভারতীয় বাহিনী
জম্মু-কাশ্মীরের
রাজধানী শ্রীনগরের এক ঘনবসতিপূর্ণ অঞ্চলের নাম সুরা। লাখ লাখ সেনাবেষ্টিত
উপত্যকার অভ্যন্তরে এটি যেন এক মুক্তাঞ্চল। এখনও সেখানে প্রবেশ করতে পারেনি
ভারতীয় বাহিনী। সব প্রবেশপথে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছেন সেখানকার তরুণরা।
ইট-কাঠ-পাথরকে হাতিয়ার বানিয়ে তারা পালা করে ২৪ ঘণ্টা সেখানে পাহারারত
রয়েছেন।
১৫ হাজার মানুষের এই শহরটিই এখন ভারতীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধের কেন্দ্রবিন্দুতে রূপান্তরিত হয়েছে। ভারতীয় বাহিনীর নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা রয়টার্সের কাছে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন, সুরার নিয়ন্ত্রণ নিতে তারা মরিয়া, তবে তা সম্ভব হয়ে উঠছে না।
৫ আগস্ট ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিলের মধ্য দিয়ে কাশ্মীরের স্বায়ত্তশাসনের অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়। এদিকে জম্মু-কাশ্মীরকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পরিণত করতে পার্লামেন্টে একটি বিলও পাস করা হয়েছে। এই পদক্ষেপকে কেন্দ্র করে কাশ্মীরজুড়ে মোতায়েন করা হয়েছে অতিরিক্ত সেনা। সেখানকার বিভিন্ন সশস্ত্র সংগঠনের দাবি, রাজ্য পুলিশসহ সেখানে প্রায় ৭ লাখ নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্য মোতায়েন রয়েছে। যা উপত্যকাকে বিশ্বের সবচেয়ে সামরিকীকৃত এলাকায় পরিণত করেছে।
৩৭০ ধারা বাতিলের আগ মুহূর্তে জম্মু-কাশ্মীরে আধাসামরিক বাহিনীর ৩৫ হাজার সদস্য মোতায়েন করা হয়। পরে নতুন করে সেখানে নিয়োজিত হয় আধা-সামরিক বাহিনীর আরও ৮ হাজার সদস্য। তবে এই বিপুল সামরিক উপস্থিতির মধ্যেও ভারতীয় বাহিনীর কোনও সদস্য সুরায় প্রবেশ করতে সমর্থ হয়নি।
এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে সেখানকার তরুণরা অবস্থান করছেন রাজপথে। ১২টির মতো প্রবেশপথের প্রত্যেকটিতেই ইটের ব্যারিকেড, মেটাল শিট, ট্রাংক কিংবা কাঠের পাটাতন দিয়ে পথ আটকে দিয়েছে তারা। এই দেয়ালের পেছনেও দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়েছে সেখানকার স্থানীয় তরুণরা। অস্ত্র হিসেবে হাতে তুলে নিয়েছে পাথর।
তাদের লক্ষ্য একটাই, কিভাবে ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনী বিশেষ করে আধাসামরিক পুলিশকে ঠেকিয়ে রাখা যায়।
এজাজ নামে ২৫ বছর বয়সী এক কাশ্মীরী রয়টার্সকে বলেন, ‘আমাদের কথা বলতে দেওয়া হয় না। তাই ভেতরে ভেতরে আমরা বিস্ফোরিত হচ্ছি। তার মতো অনেকেই সাক্ষাৎকার দিলেও নাম প্রকাশে রাজি হয়নি। তাদের আশঙ্কা এতে করে গ্রেফতার হতে হবে তাদের।
তারা বলছেন, ‘বিশ্ব যদি আমাদের কথা না শোনে তবে আমাদের কী করা উচিত? আমরা কি অস্ত্র হাতে তুলে নেব।’ এজাজ বলেন, আমাদের মনে হচ্ছে আমরা নিয়ন্ত্রণরেখা প্রহরায় আছি।
সুরায় প্রায় ১৫ হাজার মানুষের বসবাস। তবে কাশ্মীর ইস্যুতে সরকারবিরোধী প্রতিরোধে তারাই এখন মূলকেন্দ্র। ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর জন্য তা এখন ‘নো গো জোন’। এই অঞ্চলই এখন নরেন্দ্র মোদি নেতৃত্বাধীন হিন্দু জাতীয়তাবাদী সরকারের জন্য বড় চালেঞ্জ।
সরকারের দাবি, কাশ্মীরকে ভারতের সঙ্গে পুরোপুরি অন্তর্ভূক্ত করতে এই পদক্ষেপ জরুরি ছিলো। এতে করে সেখানে দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতি বন্ধ করে অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব হবে। মোদি বলেন, এই পদক্ষেপে সেখানকার সন্ত্রাস মোকাবিলাও সহজ হবে।
তবে সুরার সাধারণ জনতার প্রতিক্রিয়া অন্যরকম। সেখানে এমন কেউ নেই যে মোদির সিদ্ধান্তকে সমর্থন করছেন। ২৪ জনেরও বেশি কাশ্মীরীর সাক্ষাতকার নিয়ে রয়টার্স জানায় তারা প্রত্যেকেই মোদিকে ‘জুলুমকারী’ বলে আখ্যা দিয়েছেন।
ভারতের সাংবিধানিক এই পরিবর্তনে এখন কাশ্মীরের বাইরে থেকে এসেও সেখানে জমি কিনতে পারবে কিংবা চাকরির জন্য আবেদন করতে পারবে। কাশ্মীরের মুসলিমদের আশঙ্কা, এতে করে ভারতের সংখ্যাগুরু হিন্দুরা দখল শুরু করবে এবং কাশ্মীরীদের পরিচয়, সংস্কৃতি ও ধর্ম হুমকির মুখে পড়বে।
সুরার বাসিন্দারা বলেন, বিগত সপ্তাহে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন বেসামরিক আহত হয়েছেন। তবে কতজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে তা নিশ্চিত নয়। জম্মু ও কাশ্মীর সরকারের এক মুখপাত্রকে এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে কোনও জবাব দিতে চাননি তিনি। রয়টার্সে ফোনকল কিংবা ই-মেইলের সাড়া দেয়নি দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও।
১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ উপনিবেশ থেকে স্বাধীনতা লাভের পর ভারত-পাকিস্তান তিনটি যুদ্ধের মধ্যে দুটি অনুষ্ঠিত হয়েছে কাশ্মীর ইস্যুতে। গত ফেব্রুয়ারিতে পুলওয়ামায় ভারতীয় বাহিনীর ওপর আত্মঘাতী হামলার পর তৃতীয় যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছায় দুই দেশ।
প্রতিরোধের কেন্দ্রবিন্দু
কাশ্মীরের শ্রীনগরে চারজনের বেশি মানুষ জড়ো হওয়া নিষিদ্ধ করেছে সরকার। এছাড়া যেকোনও আন্দোলন দমাতে বসানো হয়েছে অনেক রোডব্লক, গ্রেফতার করা হয়েছে হাজার হাজার কাশ্মীরীকে যাদের মধ্যে দুজন সাবেক মুখ্যমন্ত্রীও রয়েছেন। বন্ধ রয়েছে ইন্টারনেট ও মোবাইল ফোন সেবা। তবে তারপরও থেমে নেই জনতা। সংঘবদ্ধ হওয়ার বিকল্প পথ খুঁজে পেয়েছেন তারা।
সুরার বাসিন্দারা জানান, যখনই কোনও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য এলাকায় ঢোকার চেষ্টা করেন, সঙ্গে সঙ্গে তারা মসজিদে গিয়ে সতর্কবাণী বাজান। লাউডস্পিকারে গান বাজাতে থাকেন। ‘অবৈধ দখলদারিত্বে’র বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানানো হয় সেই গানে।
সুরার সরু গলিতেও বাসিন্দারা সেনাবাহিনীকে মোকাবিলায় প্রস্তুত রয়েছেন। তাদের সামনে ইট ও পাতর জমা করা রয়েছে। একটি ব্যারিকেডে বসানো হয়েছে তারকাঁটার বেড়া। ওই এলাকা টহল দেওয়া তরুণরা জানান, ভারতীয় সেনাবাহিনীর কাছ থেকেই চুরি করে আনা হয়েছে ওই তারকাঁটা।
এর আগে ৯ আগস্ট জুমার নামাজের পর ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে বিক্ষোভটি এই সুরাকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছিল। আশপাশের বাসিন্দারা এসেও যোগ দেয় তাদের সঙ্গে। প্রতিরোধ গড়ে ওঠে অন্তত ১০ হাজার মানুষের।
বেশ কয়েকজন বাসিন্দা জানান, সেদিন নিরাপত্তা বাহিনীর ১৫০ থেকে ২০০ জন সদস্য সুরায় প্রবেশের চেষ্টা করেন। কিন্তু গভীর রাত পর্যন্ত তাদের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যান বাসিন্দারা। একটা সময় ছররা ও টিয়ার গ্যাসও ছুঁড়ে পুলিশ।
ভারত সরকার প্রথমে এই ঘটনার কথা অস্বীকার করে জানায়, সুরায় ২০ জনের বেশি মানুষ জড়ো হয়নি। পরে বিবিসি ও আল-জাজিরায় প্রকাশিত ফুটেজে বিক্ষোভের চিত্র হাজির হলে সরকার জানায়, এক হাজার থেকে দেড় হাজার মানুষ বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলো।
স্থানীয়রা জানান, এরপর থেকে সুরাতে ছোট ছোট বেশ কয়েকটি বিক্ষোভ হয়েছে। প্রায় প্রতিদিনই নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে ঘটেছে সংঘর্ষের ঘটনা। নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা একাধিকবার সুরায় প্রবেশের চেষ্টা করেছেন। জিনাব শাহিব মাজারের পাশে উন্মুক্ত স্থানটিই বন্ধ করার উদ্দেশ্য তাদের। সেখান থেকেই যেকোনও আন্দোলনের সূত্রপাত হচ্ছে।
ভারতের আধাসামরিক পুলিশও জানিয়েছে, তারা ওই স্থানের নিয়ন্ত্রণ নিতে বদ্ধপরিকর। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা সেখানে প্রবেশের চেষ্টা করছি। কিন্তু সেখানে অনেক বাধা।’ আরেক কর্মকর্তার দাবি করেন, ‘ওই এলাকার তরুণরা অনেক উগ্রবাদী। তারা জঙ্গিবাদের আশ্রয় নেওয়ার চেষ্টা করছে।’
বাসিন্দারা বলছেন, তারা তাদের এই প্রতিরোধ অব্যাহত রাখবেন। ওয়াইস নামে এক বাসিন্দা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘প্রতিদিনই তারা হামলার চেষ্টা করে। কিন্তু আমরা জবাব দেই। আমাদের মনে হয় যেন আমরা আটকা পড়ে আছি।
>>>জেবা সিদ্দিকী, ফায়াজ বুখারি
১৫ হাজার মানুষের এই শহরটিই এখন ভারতীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধের কেন্দ্রবিন্দুতে রূপান্তরিত হয়েছে। ভারতীয় বাহিনীর নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা রয়টার্সের কাছে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন, সুরার নিয়ন্ত্রণ নিতে তারা মরিয়া, তবে তা সম্ভব হয়ে উঠছে না।
৫ আগস্ট ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিলের মধ্য দিয়ে কাশ্মীরের স্বায়ত্তশাসনের অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়। এদিকে জম্মু-কাশ্মীরকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পরিণত করতে পার্লামেন্টে একটি বিলও পাস করা হয়েছে। এই পদক্ষেপকে কেন্দ্র করে কাশ্মীরজুড়ে মোতায়েন করা হয়েছে অতিরিক্ত সেনা। সেখানকার বিভিন্ন সশস্ত্র সংগঠনের দাবি, রাজ্য পুলিশসহ সেখানে প্রায় ৭ লাখ নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্য মোতায়েন রয়েছে। যা উপত্যকাকে বিশ্বের সবচেয়ে সামরিকীকৃত এলাকায় পরিণত করেছে।
৩৭০ ধারা বাতিলের আগ মুহূর্তে জম্মু-কাশ্মীরে আধাসামরিক বাহিনীর ৩৫ হাজার সদস্য মোতায়েন করা হয়। পরে নতুন করে সেখানে নিয়োজিত হয় আধা-সামরিক বাহিনীর আরও ৮ হাজার সদস্য। তবে এই বিপুল সামরিক উপস্থিতির মধ্যেও ভারতীয় বাহিনীর কোনও সদস্য সুরায় প্রবেশ করতে সমর্থ হয়নি।
এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে সেখানকার তরুণরা অবস্থান করছেন রাজপথে। ১২টির মতো প্রবেশপথের প্রত্যেকটিতেই ইটের ব্যারিকেড, মেটাল শিট, ট্রাংক কিংবা কাঠের পাটাতন দিয়ে পথ আটকে দিয়েছে তারা। এই দেয়ালের পেছনেও দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়েছে সেখানকার স্থানীয় তরুণরা। অস্ত্র হিসেবে হাতে তুলে নিয়েছে পাথর।
তাদের লক্ষ্য একটাই, কিভাবে ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনী বিশেষ করে আধাসামরিক পুলিশকে ঠেকিয়ে রাখা যায়।
এজাজ নামে ২৫ বছর বয়সী এক কাশ্মীরী রয়টার্সকে বলেন, ‘আমাদের কথা বলতে দেওয়া হয় না। তাই ভেতরে ভেতরে আমরা বিস্ফোরিত হচ্ছি। তার মতো অনেকেই সাক্ষাৎকার দিলেও নাম প্রকাশে রাজি হয়নি। তাদের আশঙ্কা এতে করে গ্রেফতার হতে হবে তাদের।
তারা বলছেন, ‘বিশ্ব যদি আমাদের কথা না শোনে তবে আমাদের কী করা উচিত? আমরা কি অস্ত্র হাতে তুলে নেব।’ এজাজ বলেন, আমাদের মনে হচ্ছে আমরা নিয়ন্ত্রণরেখা প্রহরায় আছি।
সুরায় প্রায় ১৫ হাজার মানুষের বসবাস। তবে কাশ্মীর ইস্যুতে সরকারবিরোধী প্রতিরোধে তারাই এখন মূলকেন্দ্র। ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর জন্য তা এখন ‘নো গো জোন’। এই অঞ্চলই এখন নরেন্দ্র মোদি নেতৃত্বাধীন হিন্দু জাতীয়তাবাদী সরকারের জন্য বড় চালেঞ্জ।
সরকারের দাবি, কাশ্মীরকে ভারতের সঙ্গে পুরোপুরি অন্তর্ভূক্ত করতে এই পদক্ষেপ জরুরি ছিলো। এতে করে সেখানে দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতি বন্ধ করে অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব হবে। মোদি বলেন, এই পদক্ষেপে সেখানকার সন্ত্রাস মোকাবিলাও সহজ হবে।
তবে সুরার সাধারণ জনতার প্রতিক্রিয়া অন্যরকম। সেখানে এমন কেউ নেই যে মোদির সিদ্ধান্তকে সমর্থন করছেন। ২৪ জনেরও বেশি কাশ্মীরীর সাক্ষাতকার নিয়ে রয়টার্স জানায় তারা প্রত্যেকেই মোদিকে ‘জুলুমকারী’ বলে আখ্যা দিয়েছেন।
ভারতের সাংবিধানিক এই পরিবর্তনে এখন কাশ্মীরের বাইরে থেকে এসেও সেখানে জমি কিনতে পারবে কিংবা চাকরির জন্য আবেদন করতে পারবে। কাশ্মীরের মুসলিমদের আশঙ্কা, এতে করে ভারতের সংখ্যাগুরু হিন্দুরা দখল শুরু করবে এবং কাশ্মীরীদের পরিচয়, সংস্কৃতি ও ধর্ম হুমকির মুখে পড়বে।
সুরার বাসিন্দারা বলেন, বিগত সপ্তাহে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন বেসামরিক আহত হয়েছেন। তবে কতজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে তা নিশ্চিত নয়। জম্মু ও কাশ্মীর সরকারের এক মুখপাত্রকে এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে কোনও জবাব দিতে চাননি তিনি। রয়টার্সে ফোনকল কিংবা ই-মেইলের সাড়া দেয়নি দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও।
১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ উপনিবেশ থেকে স্বাধীনতা লাভের পর ভারত-পাকিস্তান তিনটি যুদ্ধের মধ্যে দুটি অনুষ্ঠিত হয়েছে কাশ্মীর ইস্যুতে। গত ফেব্রুয়ারিতে পুলওয়ামায় ভারতীয় বাহিনীর ওপর আত্মঘাতী হামলার পর তৃতীয় যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছায় দুই দেশ।
প্রতিরোধের কেন্দ্রবিন্দু
কাশ্মীরের শ্রীনগরে চারজনের বেশি মানুষ জড়ো হওয়া নিষিদ্ধ করেছে সরকার। এছাড়া যেকোনও আন্দোলন দমাতে বসানো হয়েছে অনেক রোডব্লক, গ্রেফতার করা হয়েছে হাজার হাজার কাশ্মীরীকে যাদের মধ্যে দুজন সাবেক মুখ্যমন্ত্রীও রয়েছেন। বন্ধ রয়েছে ইন্টারনেট ও মোবাইল ফোন সেবা। তবে তারপরও থেমে নেই জনতা। সংঘবদ্ধ হওয়ার বিকল্প পথ খুঁজে পেয়েছেন তারা।
সুরার বাসিন্দারা জানান, যখনই কোনও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য এলাকায় ঢোকার চেষ্টা করেন, সঙ্গে সঙ্গে তারা মসজিদে গিয়ে সতর্কবাণী বাজান। লাউডস্পিকারে গান বাজাতে থাকেন। ‘অবৈধ দখলদারিত্বে’র বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানানো হয় সেই গানে।
সুরার সরু গলিতেও বাসিন্দারা সেনাবাহিনীকে মোকাবিলায় প্রস্তুত রয়েছেন। তাদের সামনে ইট ও পাতর জমা করা রয়েছে। একটি ব্যারিকেডে বসানো হয়েছে তারকাঁটার বেড়া। ওই এলাকা টহল দেওয়া তরুণরা জানান, ভারতীয় সেনাবাহিনীর কাছ থেকেই চুরি করে আনা হয়েছে ওই তারকাঁটা।
এর আগে ৯ আগস্ট জুমার নামাজের পর ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে বিক্ষোভটি এই সুরাকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছিল। আশপাশের বাসিন্দারা এসেও যোগ দেয় তাদের সঙ্গে। প্রতিরোধ গড়ে ওঠে অন্তত ১০ হাজার মানুষের।
বেশ কয়েকজন বাসিন্দা জানান, সেদিন নিরাপত্তা বাহিনীর ১৫০ থেকে ২০০ জন সদস্য সুরায় প্রবেশের চেষ্টা করেন। কিন্তু গভীর রাত পর্যন্ত তাদের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যান বাসিন্দারা। একটা সময় ছররা ও টিয়ার গ্যাসও ছুঁড়ে পুলিশ।
ভারত সরকার প্রথমে এই ঘটনার কথা অস্বীকার করে জানায়, সুরায় ২০ জনের বেশি মানুষ জড়ো হয়নি। পরে বিবিসি ও আল-জাজিরায় প্রকাশিত ফুটেজে বিক্ষোভের চিত্র হাজির হলে সরকার জানায়, এক হাজার থেকে দেড় হাজার মানুষ বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলো।
স্থানীয়রা জানান, এরপর থেকে সুরাতে ছোট ছোট বেশ কয়েকটি বিক্ষোভ হয়েছে। প্রায় প্রতিদিনই নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে ঘটেছে সংঘর্ষের ঘটনা। নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা একাধিকবার সুরায় প্রবেশের চেষ্টা করেছেন। জিনাব শাহিব মাজারের পাশে উন্মুক্ত স্থানটিই বন্ধ করার উদ্দেশ্য তাদের। সেখান থেকেই যেকোনও আন্দোলনের সূত্রপাত হচ্ছে।
ভারতের আধাসামরিক পুলিশও জানিয়েছে, তারা ওই স্থানের নিয়ন্ত্রণ নিতে বদ্ধপরিকর। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা সেখানে প্রবেশের চেষ্টা করছি। কিন্তু সেখানে অনেক বাধা।’ আরেক কর্মকর্তার দাবি করেন, ‘ওই এলাকার তরুণরা অনেক উগ্রবাদী। তারা জঙ্গিবাদের আশ্রয় নেওয়ার চেষ্টা করছে।’
বাসিন্দারা বলছেন, তারা তাদের এই প্রতিরোধ অব্যাহত রাখবেন। ওয়াইস নামে এক বাসিন্দা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘প্রতিদিনই তারা হামলার চেষ্টা করে। কিন্তু আমরা জবাব দেই। আমাদের মনে হয় যেন আমরা আটকা পড়ে আছি।
>>>জেবা সিদ্দিকী, ফায়াজ বুখারি
No comments