‘কখনও ভাবিনি বেঁচে দেশে ফিরতে পারবো’ by এনায়েত করিম বিজয়
সেন্টু মিয়া |
‘ভূমধ্যসাগরের
উত্তাল ঢেউয়ে ছোট্ট একটি নৌকায় আমরা ৭৫ জন, জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। মনে
হচ্ছিল সাগরের মধ্যেই না খেয়ে মারা যাবো। কখনও ভাবিনি বেঁচে দেশে ফিরতে
পারবো।’ কান্নাজড়িত কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন তিউনিসিয়া থেকে দেশে ফেরত আসা
টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলার বাঘেরবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা সেন্টু মিয়া।
জানা যায়, সেন্টু বাঘেরবাড়ির চানু মিয়ার ছেলে। তার রয়েছে পাঁচ বছর বয়সী দুই যমজ ছেলে। চার ভাইয়ের মধ্যে সেন্টু সবার বড়। অভাবের সংসার হওয়ায় স্কুলের গণ্ডি পেরোতে পারেননি তিনি। বাবা কৃষি কাজ করে কোনোমতে সংসার চালান। পরিবারের বড় ছেলে হওয়ায় সংসারের ভার পড়ে তার ঘাড়ে। এরপর কিশোর বয়সেই ঢাকায় একটি বইয়ের ছাপাখানায় কাজ নেন। এরপর তার ছোট ভাই মিন্টুকে ধারদেনা করে কাতারে পাঠান। কাতারে মিন্টুর সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আখাউড়া উপজেলার বাসিন্দা হামিদের। হামিদের ভাই থাকেন ইতালিতে। মিন্টুর স্বপ্ন জাগে বড় ভাই সেন্টু মিয়াকে ইতালি পাঠাবেন। এরপর সেন্টুর ইতালি যাওয়ার বিষয়ে মিন্টু তার বন্ধু হামিদের সঙ্গে কথা বলেন। বিষয়টি হামিদ তার ভাই ইতালি প্রবাসী জনিকে জানান। পরে আখাউড়া উপজেলার ইতালী প্রবাসী জনি ও একই এলাকার লিবিয়া প্রবাসী রফিকুল ইসলাম সেলিম মিলে সেন্টুকে ইতালি পৌঁছে দিয়ে সাড়ে আট লাখ টাকা নেবেন বলে চুক্তি করেন। চুক্তি মোতাবেক সেন্টুর পরিবার ঋণ, গরু বিক্রি, জমি বন্ধক ও স্বজনদের কাছ থেকে ধার নিয়ে সাড়ে আট লাখ টাকা জমা দেয় ব্যাংকের মাধ্যমে।
সেন্টু মিয়া বলেন, ‘এ বছরের ১৩ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম বিমানবন্দর থেকে দুবাই, মিসর হয়ে লিবিয়ার বেনগাজি এলাকার একটি ক্যাম্পে পৌঁছাই। সেখানে এক সপ্তাহ থাকার পর দালাল রফিকুল ইসলাম সেলিম আমাকেসহ পাঁচ জনকে সেখান থেকে নিয়ে অন্য আরেকটি রুমে আটকে রাখে। তারা অতিরিক্ত টাকা দাবি করে বিভিন্নভাবে নির্যাতন চালায়। দালাল সেলিম আমার কাছে আরও এক লাখ টাকা দাবি করে। পরে তাকে ১০ হাজার টাকা দেওয়া হয়। ওই সময় একটি রুমে আমরা ৫৩ জন ছিলাম। তাদেরও বিভিন্নভাবে নির্যাতন করা হতো। সেখানে প্রায় চার মাস থাকার পর ইতালির উদ্দেশে সাগর পাড়ে আমাদের ৭৫ জনকে নিয়ে যাওয়া হয়। এর আগে বড় একটি জাহাজের ছবি দেখানো হয়। ওই জাহাজে করেই ইতালি নেওয়ার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু সাগর পাড়ে গিয়ে দেখি ছোট্ট একটি নৌকা। আমরা ওই নৌকায় উঠতে চাচ্ছিলাম না। অস্ত্রের মুখে মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে আমাদের নৌকায় তোলা হয়। ৭৫ জন গাদাগাদি করে নৌকায় উঠে ইতালির উদ্দেশে রওনা হই। কয়েক ঘণ্টা যাওয়ার পর নৌকার তেল শেষ হয়ে যায়। ভাসতে থাকি ভূমধ্যসাগরে।’
জানা যায়, সেন্টু বাঘেরবাড়ির চানু মিয়ার ছেলে। তার রয়েছে পাঁচ বছর বয়সী দুই যমজ ছেলে। চার ভাইয়ের মধ্যে সেন্টু সবার বড়। অভাবের সংসার হওয়ায় স্কুলের গণ্ডি পেরোতে পারেননি তিনি। বাবা কৃষি কাজ করে কোনোমতে সংসার চালান। পরিবারের বড় ছেলে হওয়ায় সংসারের ভার পড়ে তার ঘাড়ে। এরপর কিশোর বয়সেই ঢাকায় একটি বইয়ের ছাপাখানায় কাজ নেন। এরপর তার ছোট ভাই মিন্টুকে ধারদেনা করে কাতারে পাঠান। কাতারে মিন্টুর সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আখাউড়া উপজেলার বাসিন্দা হামিদের। হামিদের ভাই থাকেন ইতালিতে। মিন্টুর স্বপ্ন জাগে বড় ভাই সেন্টু মিয়াকে ইতালি পাঠাবেন। এরপর সেন্টুর ইতালি যাওয়ার বিষয়ে মিন্টু তার বন্ধু হামিদের সঙ্গে কথা বলেন। বিষয়টি হামিদ তার ভাই ইতালি প্রবাসী জনিকে জানান। পরে আখাউড়া উপজেলার ইতালী প্রবাসী জনি ও একই এলাকার লিবিয়া প্রবাসী রফিকুল ইসলাম সেলিম মিলে সেন্টুকে ইতালি পৌঁছে দিয়ে সাড়ে আট লাখ টাকা নেবেন বলে চুক্তি করেন। চুক্তি মোতাবেক সেন্টুর পরিবার ঋণ, গরু বিক্রি, জমি বন্ধক ও স্বজনদের কাছ থেকে ধার নিয়ে সাড়ে আট লাখ টাকা জমা দেয় ব্যাংকের মাধ্যমে।
সেন্টু মিয়া বলেন, ‘এ বছরের ১৩ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম বিমানবন্দর থেকে দুবাই, মিসর হয়ে লিবিয়ার বেনগাজি এলাকার একটি ক্যাম্পে পৌঁছাই। সেখানে এক সপ্তাহ থাকার পর দালাল রফিকুল ইসলাম সেলিম আমাকেসহ পাঁচ জনকে সেখান থেকে নিয়ে অন্য আরেকটি রুমে আটকে রাখে। তারা অতিরিক্ত টাকা দাবি করে বিভিন্নভাবে নির্যাতন চালায়। দালাল সেলিম আমার কাছে আরও এক লাখ টাকা দাবি করে। পরে তাকে ১০ হাজার টাকা দেওয়া হয়। ওই সময় একটি রুমে আমরা ৫৩ জন ছিলাম। তাদেরও বিভিন্নভাবে নির্যাতন করা হতো। সেখানে প্রায় চার মাস থাকার পর ইতালির উদ্দেশে সাগর পাড়ে আমাদের ৭৫ জনকে নিয়ে যাওয়া হয়। এর আগে বড় একটি জাহাজের ছবি দেখানো হয়। ওই জাহাজে করেই ইতালি নেওয়ার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু সাগর পাড়ে গিয়ে দেখি ছোট্ট একটি নৌকা। আমরা ওই নৌকায় উঠতে চাচ্ছিলাম না। অস্ত্রের মুখে মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে আমাদের নৌকায় তোলা হয়। ৭৫ জন গাদাগাদি করে নৌকায় উঠে ইতালির উদ্দেশে রওনা হই। কয়েক ঘণ্টা যাওয়ার পর নৌকার তেল শেষ হয়ে যায়। ভাসতে থাকি ভূমধ্যসাগরে।’
সেন্টু মিয়ার স্ত্রী ও দুই পুত্র |
সেন্টু
মিয়া আরও বলেন, ‘সাগরে ব্যাপক ঢেউ ছিল। কোনও ধরনের খাবার ছিল না আমাদের
সঙ্গে। শুধু পানি খেয়ে নৌকায় চারদিন কেটে যায়। খাবার না থাকায় সবার জীবনই
মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে ছিল। চারদিনের মাথায় একটি তেলের জাহাজ সাগর দিয়ে যেতে
দেখি। আমরা ওই জাহাজকে হাত ইশারা করে ডাকার চেষ্টা করছিলাম। অনেকেই নৌকা
থেকে লাফিয়ে জাহাজের দিকে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। পরে তিউনিসিয়ার
তেলবাহী জাহাজের লোকজন এসে আমাদের জাহাজে ওঠান। ওই জাহাজে ১০ দিন কেটে যায়।
পরে জাহাজকর্মীরা সংশ্লিষ্টদের বিষয়টি জানালে আমাদের বাংলাদেশে পাঠানোর
প্রক্রিয়া শুরু হয়। আমি তৃতীয় ধাপে গত ২৫ জুন দেশে ফিরেছি। পরে ২৬ জুন
গ্রামের বাড়িতে আসি।’
ভূমধ্যসাগর থেকে ফেরা এই যুব্ক বলেন, ‘দালাল জনি ও সেলিমের মোবাইল ফোন এখন বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। আমি নিঃস্ব হয়ে গেছি। কী করবো কিছুই বুঝতে পারছি না।’
সেন্টুর বাবা চানু মিয়া বলেন, ‘ঋণ, জমি বন্ধক ও আত্মীয়দের কাছ থেকে ধার নিয়ে সাড়ে আট লাখ টাকা দালালদের দেওয়া হয়। এখন আমাদের আর কিছুই রইলো না। কবে এই ঋণ শোধ করতে পারবো সেটাও জানি না।’
সেন্টু দেশে ফিরতে পারলেও ঋণের বোঝা মাথায় থাকায় এই অসহায় পরিবারের সদস্যদের চোখে-মুখে হতাশার ছাপ। দিশেহারা হয়ে পড়েছে পরিবারটি।
ভূমধ্যসাগর থেকে ফেরা এই যুব্ক বলেন, ‘দালাল জনি ও সেলিমের মোবাইল ফোন এখন বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। আমি নিঃস্ব হয়ে গেছি। কী করবো কিছুই বুঝতে পারছি না।’
সেন্টুর বাবা চানু মিয়া বলেন, ‘ঋণ, জমি বন্ধক ও আত্মীয়দের কাছ থেকে ধার নিয়ে সাড়ে আট লাখ টাকা দালালদের দেওয়া হয়। এখন আমাদের আর কিছুই রইলো না। কবে এই ঋণ শোধ করতে পারবো সেটাও জানি না।’
সেন্টু দেশে ফিরতে পারলেও ঋণের বোঝা মাথায় থাকায় এই অসহায় পরিবারের সদস্যদের চোখে-মুখে হতাশার ছাপ। দিশেহারা হয়ে পড়েছে পরিবারটি।
সেন্টু মিয়ার বাড়ি |
No comments