মামলা-জরিমানার রেকর্ড, তবুও শৃঙ্খলা নেই সড়কে by শুভ্র দেব
ঢাকার
সড়কে বিশৃঙ্খলা কমানো যাচ্ছে না। যানবাহনের সংখ্যা যেমন গাণিতিক হারে
বাড়ছে একইভাবে বাড়ছে আইন না মানার প্রবণতা। ট্রাফিক কর্মকর্তারা
মামলা-জরিমানার সংখ্যা দ্বিগুণ করেছেন। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক
বিভাগ প্রতিমাসেই তাদের বিগত মাসের মামলার রেকর্ড ভাঙছে। গতবছর কোমলমতি
শিক্ষার্থীরা নিরাপদ সড়কের আন্দোলন করেছিল। শৃঙ্খলা ফেরাতে সংশ্লিষ্টরা বেশ
কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছে না। এমনকি বিভিন্ন
ধরনের প্রচার-প্রচারণাও কাজে আসছে না।
এখনও ঢাকার সড়কে সেই পুরনো চিত্র। বাসে বাসে রেষারেষি, গতির প্রতিযোগিতা, অবৈধ পার্কিং, যাত্রীদের সঙ্গে বেপরোয়া আচরণ, স্টিয়ারিংয়ে অদক্ষ চালক, বেপরোয়া যানবাহন চলাচল এসব প্রতিদিনের চিত্র। সংশ্লিষ্টরা প্রশ্ন তুলেছেন, শুধু কি মামলা দিয়েই শৃঙ্খলা ফেরানো সম্ভব? যদি তাই হয় রেকর্ড পরিমাণ মামলা দিয়েও কেন শৃঙ্খলা ফেরানো যাচ্ছে না। আর চালকরা জানিয়েছেন, ট্রাফিক কর্মকর্তারা এখন অহেতুক হয়রানি করছেন। সামান্য কারণেও মামলা দিচ্ছেন। কারণে-অকারণে গাড়ি রেকার করছেন।
পুলিশ সদরদপ্তরের ট্রাফিক শাখা থেকে পাওয়া এক পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় ট্রাফিক আইনে মামলা হয়েছে ১ লাখ ৬৯ হাজার ৯৪৩ টি। এসব মামলায় জরিমানার পরিমাণ ৮ কোটি ৯৮ লাখ ৮ হাজার ৪৩৭ টাকা। ফেব্রুয়ারি মাসে মামলা করা হয়েছে ১ লাখ ৩৩ হাজার ৯১০টি। জরিমানার পরিমাণ ৬ কোটি ৮৮ লাখ ৩০ হাজার ৩৩৭ টাকা। মার্চ মাসে ১ লাখ ৯৭ হাজার ৬৭০ মামলায় জরিমানা করা হয়েছে ১০ কোটি ১২ লাখ ৪১ হাজার ৬৭০ টাকা। এপ্রিলে মামলা হয়েছে ১ লাখ ৬৫ হাজার ৬০ টি। জরিমানা করা হয়েছে ৮ কোটি ২২ লাখ ২৯ হাজার ৯০০ টাকা। আর মে মাসে মামলার সংখ্যা ১ লাখ ৮১ হাজার ৫৬৯ টি। এসব মামলায় জরিমানা হয়েছে ৮ কোটি ৪৫ লাখ ৬২ হাজার ৫১০ টাকা। ডিএমপি থেকে পাওয়া আরেক পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, ২০১৭ সালে ট্রাফিক আইনে তাদের মামলার পরিমাণ ছিল ১১ লাখ ৩৩ হাজার ৮৩টি। আর জরিমানার পরিমাণ ছিল ৫৮ কোটি ৬৬ লাখ ৭৭ হাজার ৭২৪ টাকা। ২০১৮ সালে মামলার পরিমাণ ছিল ১২ লাখ ২৫ হাজার ৫৪৫টি। এসব মামলায় জরিমানা করা হয়েছিল ৮৬ কোটি ৯ লাখ ৪০১ টাকা। অথচ ২০১৯ সালের প্রথম ছয় মাসেই মামলা করা হয়েছে ১০ লাখ ২২ হাজার ৩৩৮টি। জরিমানার পরিমাণ ৫২ কোটি ৮৮ লাখ ১৮ হাজার ৭৯৫ টাকা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চরম অব্যবস্থাপনার মধ্যে দিয়ে চলছে ঢাকার সড়ক ব্যবস্থাপনা। যেখানে অপরিকল্পিত বড় বড় প্রজেক্ট হাতে নেয়া হয় কিন্তু জনগণের কোনো কাজে লাগে না। আবার অনেক পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয় কিন্তু বাস্তবায়ন করা হয় না। এছাড়া মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে সমন্বয়হীনতা, সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো একে-অপরের প্রতি দায় চাপানো অন্যতম কারণ। এছাড়া সড়কের তুলনায় যানবাহন বাড়ায় বিশৃঙ্খলা বেড়ে যায়।
বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) সূত্রে বিভিন্ন সময় ঢাকা থেকে রেজিস্ট্রেশন নেয়া যানবাহনের একটি পরিসংখ্যান পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ২০১৯ সালের মে মাস পর্যন্ত ১০ হাজার ৬২৪টি মিনি বাস রেজিস্ট্রেশন নিয়েছে। এছাড়া ৭৮ হাজার ৯০ টি মাইক্রোবাস, ৬ লাখ ৫৯ হাজার ৪৭১টি মোটরসাইকেল, ৩৪ হাজার ৪৮২টি বাস, ৩ হাজার ৭১০টি এম্বুলেন্স, ২০ হাজার ৮৮৩টি অটোরিকশা, ৫ হাজার ৩৭৩টি হিউম্যান হলার, ৪৪ হাজার ৩৭টি জিপ, ৮৫ হাজার ২৪৬টি পিকআপ, ২ লাখ ৮৩ হাজার ৬১৭ টি প্রাইভেট কার, ৩৬ হাজার ৫৯৮টি টেক্সিক্যাব।
গত বছরে ডিএমপি’র পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল সড়কে বাস চলার সময় স্টপেজ ছাড়া গেট দরজা বন্ধ রাখতে হবে, গাড়ির চালকসহ সংশ্লিষ্টদের ছবি ও ফোন নম্বর ঝুলিয়ে রাখতে হবে। চালকের লাইসেন্স, গাড়ির সকল কাগজপত্র হালনাগাদ করা। চালক ও যানবাহনের স্টাফদের মাসিক বেতনের ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল। এছাড়া নগরীর ১২১টি স্থান নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছিল বাস থামানোর জন্য। কিন্তু বাস্তবে এর কোনো বাস্তবায়ন দেখা যায়নি। গত কয়েকদিন ঢাকার সড়কের বেশকিছু বাস ঘুরে নির্দেশনা পালন করছে এমন বাস খুঁজে পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। লাইসেন্সবিহীন চালকরাই বাস চালাচ্ছেন। নির্ধারিত স্টপেজের আগেই বাস থামানো হয়। এক কোম্পানির বাসের সঙ্গে গতির প্রতিযোগিতা, রেষারেষি করতে দেখা গেছে। বাসের ভেতরে সংশ্লিষ্টদের নেই কোনো ছবি, চালক ও স্টাফরা দৈনিক হিসাবে কাজ করছেন। সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে সাবেক নৌমন্ত্রী শাজাহান খানকে প্রধান করে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছিল। এই কমিটি ১১১ টি সুপারিশ প্রণয়ন করেছিল। প্রশ্ন উঠেছে এই ১১১ টি সুপারিশ সড়কের শৃঙ্খলায় আদৌ কোনো কাজে আসবে কি না। কারণ সড়কের চিত্র প্রায় একই, বদলায়নি একটুও।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিকের অতিরিক্ত কমিশনার মফিজ উদ্দিন আহমেদ মানবজমিনকে বলেন, মামলা-জরিমানার সঙ্গে চালকদের সঙ্গে আমাদের মোটিভেশন ক্যাম্পেইন চলছে। সম্প্রতি আমরা নতুন উদ্যোগও নিয়েছি। তার মধ্যে ফুটপাত দখলমুক্ত করা, হকার উচ্ছেদ, রিকশা বন্ধ, স্টপেজে বাস থামানো, চলন্ত অবস্থায় বাসের দরজা বন্ধ রাখা। এছাড়া চালক ও তার সহকারীদের সঙ্গে মোটিভেশনাল মিটিং করা হচ্ছে। তিনি বলেন, শুধু মামলাই যথেষ্ট নয়। আমরা সার্জেন্টদের বলে দিয়েছি প্রতিটা মামলা দেয়ার সময় চালকদেরকে যেন তারা পাঁচ মিনিট ব্রিফ করে। কেন এই মামলা দেয়া হলো। তার অপরাধ কী ছিল। ভবিষ্যতে যেন সে আর এ রকম না করে।
এ বিষয়ে স্থপতি অধ্যাপক নজরুল ইসলাম মানবজমিনকে বলেন, অনেক পরিকল্পনা করা হয় কিন্তু সেটা বাস্তবায়ন করা হয় না। এছাড়া আইনের শাসন নেই। জনবহুল শহরে যানবাহনের চাহিদা আছে তাই যানবাহন বাড়বে। কিন্তু কতটা বাড়বে, নতুন করে কত যানবাহন রেজিস্ট্রেশন দেয়া যাবে, কতটা বাইরে থেকে প্রবেশ করতে পারবে তার কোনো পরিকল্পনা হচ্ছে না। আর যদি পরিকল্পনা থাকে তবে সেটা বাস্তবায়ন হচ্ছে না। তিনি বলেন, একটা শহরের মোট জমির ২০ থেকে ২৫ ভাগ সড়ক ও যানবাহন চলাচলের জন্য রাখতে হয়। অথচ ঢাকায় রাখা হয়েছে মাত্র ৮/৯ ভাগ। যেটা প্রয়োজনের তুলনায় খুব কম। তাই সড়ক বাড়াতে হবে। মেট্রোরেল, পাতাল রেল, কমিউটার ট্রেন, এলিভেটেড এক্সপ্রেস করতে পারলে সড়কের পরিমাণ বাড়বে। কিন্তু এগুলো করতে প্রচুর ব্যয় ও সময় লাগে। তিনি বলেন, এখনও ঢাকার সড়কে ম্যানুয়াল সিস্টেমে হাত দিয়ে ট্রাফিক কন্ট্রোল করা হয়। একটা আধুনিক শহরে এটা হতে পারে না। নিয়মভঙ্গের জন্য ট্রাফিক কর্মকর্তারা মামলা-জরিমানা করছেন। কিন্তু শুধু মামলা দিয়েই শৃঙ্খলা ফেরানো যাবে না। রাজউক, ঢাকা ট্রান্সপোর্ট কো-অর্ডিনেশন অথরিটি ছাড়া সংশ্লিষ্ট যারা আছেন তারা সবাই মিলে পরিকল্পনামাফিক কাজ করলে শৃঙ্খলা ফেরানো সম্ভব। না হলে চরম অব্যবস্থাপনা ও শাসনহীনভাবে চলতে থাকবে।
এখনও ঢাকার সড়কে সেই পুরনো চিত্র। বাসে বাসে রেষারেষি, গতির প্রতিযোগিতা, অবৈধ পার্কিং, যাত্রীদের সঙ্গে বেপরোয়া আচরণ, স্টিয়ারিংয়ে অদক্ষ চালক, বেপরোয়া যানবাহন চলাচল এসব প্রতিদিনের চিত্র। সংশ্লিষ্টরা প্রশ্ন তুলেছেন, শুধু কি মামলা দিয়েই শৃঙ্খলা ফেরানো সম্ভব? যদি তাই হয় রেকর্ড পরিমাণ মামলা দিয়েও কেন শৃঙ্খলা ফেরানো যাচ্ছে না। আর চালকরা জানিয়েছেন, ট্রাফিক কর্মকর্তারা এখন অহেতুক হয়রানি করছেন। সামান্য কারণেও মামলা দিচ্ছেন। কারণে-অকারণে গাড়ি রেকার করছেন।
পুলিশ সদরদপ্তরের ট্রাফিক শাখা থেকে পাওয়া এক পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় ট্রাফিক আইনে মামলা হয়েছে ১ লাখ ৬৯ হাজার ৯৪৩ টি। এসব মামলায় জরিমানার পরিমাণ ৮ কোটি ৯৮ লাখ ৮ হাজার ৪৩৭ টাকা। ফেব্রুয়ারি মাসে মামলা করা হয়েছে ১ লাখ ৩৩ হাজার ৯১০টি। জরিমানার পরিমাণ ৬ কোটি ৮৮ লাখ ৩০ হাজার ৩৩৭ টাকা। মার্চ মাসে ১ লাখ ৯৭ হাজার ৬৭০ মামলায় জরিমানা করা হয়েছে ১০ কোটি ১২ লাখ ৪১ হাজার ৬৭০ টাকা। এপ্রিলে মামলা হয়েছে ১ লাখ ৬৫ হাজার ৬০ টি। জরিমানা করা হয়েছে ৮ কোটি ২২ লাখ ২৯ হাজার ৯০০ টাকা। আর মে মাসে মামলার সংখ্যা ১ লাখ ৮১ হাজার ৫৬৯ টি। এসব মামলায় জরিমানা হয়েছে ৮ কোটি ৪৫ লাখ ৬২ হাজার ৫১০ টাকা। ডিএমপি থেকে পাওয়া আরেক পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, ২০১৭ সালে ট্রাফিক আইনে তাদের মামলার পরিমাণ ছিল ১১ লাখ ৩৩ হাজার ৮৩টি। আর জরিমানার পরিমাণ ছিল ৫৮ কোটি ৬৬ লাখ ৭৭ হাজার ৭২৪ টাকা। ২০১৮ সালে মামলার পরিমাণ ছিল ১২ লাখ ২৫ হাজার ৫৪৫টি। এসব মামলায় জরিমানা করা হয়েছিল ৮৬ কোটি ৯ লাখ ৪০১ টাকা। অথচ ২০১৯ সালের প্রথম ছয় মাসেই মামলা করা হয়েছে ১০ লাখ ২২ হাজার ৩৩৮টি। জরিমানার পরিমাণ ৫২ কোটি ৮৮ লাখ ১৮ হাজার ৭৯৫ টাকা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চরম অব্যবস্থাপনার মধ্যে দিয়ে চলছে ঢাকার সড়ক ব্যবস্থাপনা। যেখানে অপরিকল্পিত বড় বড় প্রজেক্ট হাতে নেয়া হয় কিন্তু জনগণের কোনো কাজে লাগে না। আবার অনেক পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয় কিন্তু বাস্তবায়ন করা হয় না। এছাড়া মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে সমন্বয়হীনতা, সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো একে-অপরের প্রতি দায় চাপানো অন্যতম কারণ। এছাড়া সড়কের তুলনায় যানবাহন বাড়ায় বিশৃঙ্খলা বেড়ে যায়।
বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) সূত্রে বিভিন্ন সময় ঢাকা থেকে রেজিস্ট্রেশন নেয়া যানবাহনের একটি পরিসংখ্যান পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ২০১৯ সালের মে মাস পর্যন্ত ১০ হাজার ৬২৪টি মিনি বাস রেজিস্ট্রেশন নিয়েছে। এছাড়া ৭৮ হাজার ৯০ টি মাইক্রোবাস, ৬ লাখ ৫৯ হাজার ৪৭১টি মোটরসাইকেল, ৩৪ হাজার ৪৮২টি বাস, ৩ হাজার ৭১০টি এম্বুলেন্স, ২০ হাজার ৮৮৩টি অটোরিকশা, ৫ হাজার ৩৭৩টি হিউম্যান হলার, ৪৪ হাজার ৩৭টি জিপ, ৮৫ হাজার ২৪৬টি পিকআপ, ২ লাখ ৮৩ হাজার ৬১৭ টি প্রাইভেট কার, ৩৬ হাজার ৫৯৮টি টেক্সিক্যাব।
গত বছরে ডিএমপি’র পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল সড়কে বাস চলার সময় স্টপেজ ছাড়া গেট দরজা বন্ধ রাখতে হবে, গাড়ির চালকসহ সংশ্লিষ্টদের ছবি ও ফোন নম্বর ঝুলিয়ে রাখতে হবে। চালকের লাইসেন্স, গাড়ির সকল কাগজপত্র হালনাগাদ করা। চালক ও যানবাহনের স্টাফদের মাসিক বেতনের ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল। এছাড়া নগরীর ১২১টি স্থান নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছিল বাস থামানোর জন্য। কিন্তু বাস্তবে এর কোনো বাস্তবায়ন দেখা যায়নি। গত কয়েকদিন ঢাকার সড়কের বেশকিছু বাস ঘুরে নির্দেশনা পালন করছে এমন বাস খুঁজে পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। লাইসেন্সবিহীন চালকরাই বাস চালাচ্ছেন। নির্ধারিত স্টপেজের আগেই বাস থামানো হয়। এক কোম্পানির বাসের সঙ্গে গতির প্রতিযোগিতা, রেষারেষি করতে দেখা গেছে। বাসের ভেতরে সংশ্লিষ্টদের নেই কোনো ছবি, চালক ও স্টাফরা দৈনিক হিসাবে কাজ করছেন। সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে সাবেক নৌমন্ত্রী শাজাহান খানকে প্রধান করে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছিল। এই কমিটি ১১১ টি সুপারিশ প্রণয়ন করেছিল। প্রশ্ন উঠেছে এই ১১১ টি সুপারিশ সড়কের শৃঙ্খলায় আদৌ কোনো কাজে আসবে কি না। কারণ সড়কের চিত্র প্রায় একই, বদলায়নি একটুও।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিকের অতিরিক্ত কমিশনার মফিজ উদ্দিন আহমেদ মানবজমিনকে বলেন, মামলা-জরিমানার সঙ্গে চালকদের সঙ্গে আমাদের মোটিভেশন ক্যাম্পেইন চলছে। সম্প্রতি আমরা নতুন উদ্যোগও নিয়েছি। তার মধ্যে ফুটপাত দখলমুক্ত করা, হকার উচ্ছেদ, রিকশা বন্ধ, স্টপেজে বাস থামানো, চলন্ত অবস্থায় বাসের দরজা বন্ধ রাখা। এছাড়া চালক ও তার সহকারীদের সঙ্গে মোটিভেশনাল মিটিং করা হচ্ছে। তিনি বলেন, শুধু মামলাই যথেষ্ট নয়। আমরা সার্জেন্টদের বলে দিয়েছি প্রতিটা মামলা দেয়ার সময় চালকদেরকে যেন তারা পাঁচ মিনিট ব্রিফ করে। কেন এই মামলা দেয়া হলো। তার অপরাধ কী ছিল। ভবিষ্যতে যেন সে আর এ রকম না করে।
এ বিষয়ে স্থপতি অধ্যাপক নজরুল ইসলাম মানবজমিনকে বলেন, অনেক পরিকল্পনা করা হয় কিন্তু সেটা বাস্তবায়ন করা হয় না। এছাড়া আইনের শাসন নেই। জনবহুল শহরে যানবাহনের চাহিদা আছে তাই যানবাহন বাড়বে। কিন্তু কতটা বাড়বে, নতুন করে কত যানবাহন রেজিস্ট্রেশন দেয়া যাবে, কতটা বাইরে থেকে প্রবেশ করতে পারবে তার কোনো পরিকল্পনা হচ্ছে না। আর যদি পরিকল্পনা থাকে তবে সেটা বাস্তবায়ন হচ্ছে না। তিনি বলেন, একটা শহরের মোট জমির ২০ থেকে ২৫ ভাগ সড়ক ও যানবাহন চলাচলের জন্য রাখতে হয়। অথচ ঢাকায় রাখা হয়েছে মাত্র ৮/৯ ভাগ। যেটা প্রয়োজনের তুলনায় খুব কম। তাই সড়ক বাড়াতে হবে। মেট্রোরেল, পাতাল রেল, কমিউটার ট্রেন, এলিভেটেড এক্সপ্রেস করতে পারলে সড়কের পরিমাণ বাড়বে। কিন্তু এগুলো করতে প্রচুর ব্যয় ও সময় লাগে। তিনি বলেন, এখনও ঢাকার সড়কে ম্যানুয়াল সিস্টেমে হাত দিয়ে ট্রাফিক কন্ট্রোল করা হয়। একটা আধুনিক শহরে এটা হতে পারে না। নিয়মভঙ্গের জন্য ট্রাফিক কর্মকর্তারা মামলা-জরিমানা করছেন। কিন্তু শুধু মামলা দিয়েই শৃঙ্খলা ফেরানো যাবে না। রাজউক, ঢাকা ট্রান্সপোর্ট কো-অর্ডিনেশন অথরিটি ছাড়া সংশ্লিষ্ট যারা আছেন তারা সবাই মিলে পরিকল্পনামাফিক কাজ করলে শৃঙ্খলা ফেরানো সম্ভব। না হলে চরম অব্যবস্থাপনা ও শাসনহীনভাবে চলতে থাকবে।
No comments