নদীর পানি বৃদ্ধিতে দেশের বিভিন্ন স্থানে বন্যা
দেশের
বিভিন্ন স্থানে নদীগুলোর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
উজান থেকে নেমে আসা ঢল ও ভারী বর্ষণের ফলে তিস্তা, যমুনা, সুরমা, সুগন্ধা,
বিষখালী, যমুনা, কুশিয়ারা, সারি, লোভাছড়া, কর্ণফুলী, কাচালং, মাইনী ও
রাইংক্ষিয়ং নদীতে প্রবল বেগে পাহাড়ী ঢল নেমে আসায় কাপ্তাই হ্রদের পানি
বৃদ্ধি পাওয়ায় এসব অঞ্চলে বন্যার পানি বেড়ে বন্যার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
দেশের রংপুর, সিলেট, সুনামগঞ্জ, চট্টগ্রাম, রাঙ্গামাটি, বান্দরবান, ঝালকাঠিসহ বিভিন্ন অঞ্চলে নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় এসব নদীতে ভাঙ্গনও শুরু হয়েছে।
রংপুরের পীরগাছায় টানা বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে অস্বাভাবিক হারে পানি বেড়েছে তিস্তা নদীতে। এতে নিম্নাঞ্চল প্লাবিতসহ দেখা দিয়েছে তীব্র নদী ভাঙন। তিস্তা নদীর ভাঙনে পাঁচটি গ্রাম, দু’টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ এবং একটি ক্লিনিক হুমকির মুখে পড়েছে। ভাঙন রোধে কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় এসব এলাকার লোকজন আতঙ্কে রয়েছে।
সরেজমিনে ওই ভাঙন কবলিত এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, দক্ষিণ গাবুড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি এখন হুমকির মুখে। নদী ভাঙনের কালো থাবা হাত বাড়িয়েছে বিদ্যালয়টির দিকে। ভাঙন দূরত্ব কমতে কমতে এখন বিদ্যালয়টি নদীর মুখে। আর মাত্র ৪০ ফুট অংশ ভাঙলেই তিস্তায় তলিয়ে যাবে বিদ্যালয়টি। ওই বিদ্যালয়টি কয়েক বছর আগেও নদী ভাঙনের কবলে পড়ে বিলীন হয়ে যায়।
পরে স্থান পরিবর্তন করে বর্তমান স্থানে নতুন করে ভবন নির্মাণ করা হয়। কয়েক বছরের ব্যবধানে আবারো বিদ্যায়টি নদী ভাঙনের মুখে পড়েছে। এই স্কুলে বর্তমানে প্রায় ৩০০ শিক্ষার্থী রয়েছে। এখানকার অধিকাংশ শিক্ষার্থীই এখন ভয়ে বিদ্যালয়ে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আকরাম হোসেন বলেন, নদী ভাঙন বিদ্যালয়ের কাছাকাছি চলে এসেছে। ভাঙন ঠেকাতে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করা না হলে যেকোন সময় বিদ্যালয়টি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যেতে পারে।
২০১৭ সালে উপজেলার ছাওলা ইউনিয়নের পূর্ব শিবদেব চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টির দ্বিতল ভবন নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। তারপর থেকেই ভাঙনকৃত বিদ্যালয়ের অদূরের বাজারে একটি টিন শেড নির্মাণ করে গাদাগাদি করে শিক্ষার্থীদের পাঠদান চলছে। ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করায় ওই বিদ্যালয়টির অস্থায়ী শেডটিও হুমকীর মুখে পড়েছে। ভাঙন অব্যাহত থাকলে পাশের শিবদেব কমিউনিটি ক্লিনিকটিও বিলীনের আশংকা করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
ফসলী জমিসহ বসতভিটা ভাঙনের কবলে পড়েছে। বারবার নদী ভাঙনে নিঃস্ব পরিবারগুলো এখন আশ্রয় হারিয়ে অন্যের ভিটায় মানবেতর জীবন-যাপন করছে। স্থানীয়ভাবে কাজকর্ম না থাকায় বিপাকে পড়েছেন তারা। উপজেলার ছাওলা ইউনিয়নের তিস্তা নদীর পাড়ে অবস্থিত গাবুড়ার চর, শিবদের চর, কিশামত ছাওলা, পূর্ব হাগুরিয়া হাশিম, ছাওলা ও চর কাশিম গ্রাম তীব্র ভাঙনের কবলে পড়েছে।
এলাকাবাসীর অভিযোগে জানা যায়, পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষের স্বেচ্ছাচারিতা, অনিয়ম, দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার কারণে এ ভাঙনের শিকার হতে হচ্ছে প্রতি বছর নদী পাড়ের লোকজনদের।
তারা জানান, ছাওলার ১০নং বোল্ডারের পাড় থেকে আরও ৩ কিলোমিটার বোল্ডার দিয়ে বাধঁ নির্মাণ করে নদী শাসন করলে এ গ্রামগুলো রক্ষা হতো। কর্তৃপক্ষ অপরিকল্পিতভাবে ১নং ও ২নং বেড়ি বাধঁ নির্মাণ করলেও বাঁধের পূর্ব পাড়ের গ্রামগুলো বন্যা ও নদী ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছেনা।
তিস্তা নদীর ভাঙনের শিকার হাসান আলী জানান, প্রতি বছর নদী ভাঙনের ফলে পীরগাছা উপজেলার ছাওলা ইউনিয়ন মানচিত্র থেকে ছোট হয়ে আসছে। এ অঞ্চলে গত ৫ বছরে প্রায় ১৫ হাজার হেক্টর ফসলি জমিসহ প্রায় সাড়ে ৩ হাজার পরিবারের বসতভিটা নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা হারুনুর রশিদ জানান, বন্যার কারণে সদ্য রোপনকৃত আউশ ধান ও আমন বীজতলাসহ প্রায় ১৫ হেক্টর জমির রবি শস্য পানির নিচে তলিয়ে গেছে। উপজেলা প্রকল্প বাস্তাবায়ন কর্মকর্তা আব্দুল আজিজ বলেন, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর তালিকা করা হচ্ছে। তাদের সহযোগীতা করা হবে।
উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢল ও বৃষ্টিপাতের ফলে বগুড়ায় সারিয়াকান্দিতে যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে এখনও বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে উপজেলার চর এলাকার ৬টি ইউনিয়নের নিচু এলাকা ডুবে গেছে। পানির নিচে তলিয়ে গেছে আউশ ধান, আমন বীজতলা ও শাকসবজির খেত। তবে ক্ষতির পরিমাণ জানাতে পারেনি কৃষি বিভাগ।
এদিকে পানি বৃদ্ধির ফলে উপজেলার চালুয়াবাড়ী ইউনিয়নের তেলিগাড়ী ও শিমুলদাইড় গ্রামে নদী ভাঙ্গনে জমি জমা ও বাড়ীঘর যমুনা নদীতে তলিয়ে যাচ্ছে।
গত ছয়দিনের টানা বর্ষণ ও পাহাড়ী ঢলে রাঙ্গামাটির চারটি উপজেলার বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। কাপ্তাই হ্রদের পানি উচ্চতা বেড়ে যাওয়ায় বাঘাইছড়ি, লংগদু বরকল ও বিলাইছড়ির নিম্নাঞ্চলের মানুষ এখনো পানিবন্ধী হয়ে আছে।
কর্ণফুলীর শাখা কাচালং, মাইনী ও রাইংক্ষিয়ং নদীতে প্রবল বেগে পাহাড়ী ঢল নেমে আসায় কাপ্তাই হ্রদের পানির উচ্চতা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলে কাপ্তাই হ্রদের পানির উচ্চতা বেড়েছে ৯০ এমএসএল অবস্থান করছে। বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় প্রতিনিয়ত পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
শুক্রবার টানা ছয়দিনেও হালকা থেকে মাঝারী বৃষ্টি অব্যাহত আছে। পাহাড়ী ঢলে বিলাইছড়ি উপজেলার ৩নং ফারুয়া ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে বসত বাড়ী দোকানপাট পানিতে ঢুবে গেছে এবং জমির ফসল ফসলে ক্ষতি হয়েছে। ফারুয়া ইউনিয়নের চাইন্দ, উলুছড়ি, তক্তানালা, ওরাছড়ি, গোয়াইনছড়ি,এগুজ্যাছড়ি লত্যছড়ি গ্রামসহ ফারুয়া বাজারের কিছু অংশ প্লাবিত হয়েছে।
বন্যা দূর্গত সকলে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিয়েছে। ভারি বষর্ণের কারণে বিলাইছড়ি উপজেলার ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার জনসাধারণ ২ টি আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নেয় ও উপেজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের রাতের খাবার বিতরণ করা হয়।
সপ্তাহব্যাপী টানা বর্ষণের কারণে লংগদু উপজেলার মাইনীমুখ মডেল হাই স্কুলের পিছনের বাউন্ডারি ওয়ালসহ মাটি ধসে পড়েছে। ফলে স্কুলটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। অচিরেই মাটি ধসের ব্যবস্থা করা না গেলে স্কুলের ভবন ধসে পড়ার আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী।
খবর পেয়ে লংগদু উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রবীর কুমার রায় ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তিনি দ্রুত সময়ের মধ্যে মাটি ধরে রাখার জন্য স্কুল কর্তৃপক্ষে যতটুকু সম্ভব সহযোগীতা করা হবে বলে আশ্বাস প্রদান করেন। এসময় লংগদু উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মীর সিরাজুল ইসলাম ঝান্টু, বিদ্যালয়ের শিক্ষক, মাইনীমুখ বাজার ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সভাপতি মোঃ কামাল পাশা উপস্থিত ছিলেন।
কাপ্তাই উপজেলার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া গত কয়েকদিনের লাগাতার বৃষ্টিতে কাপ্তাই লেকে ৫ ফুট মীন সি লেভেল (এমএসএল) পানি বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানা গেছে। এই পানি বৃদ্ধির ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদনও বেড়েছে বলে কাপ্তাই বিদ্যুত কেন্দ্রের কন্ট্রোল রুম সূত্রে জানা গেছে। গতকাল (১১ জুলাই) রাত ১১টার সময় কন্ট্রোল রুমের সাথে যোগাযোগ করলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান রুলকার্ভ (পানির পরিমাপ) অনুযায়ী এখন (১১ জুলাই) কাপ্তাই লেকে পানি থাকার কথা ৮৫ ফুট এমএসএল। কিন্তু লেকে বর্তমানে পানি রয়েছে ৯০ ফুট এমএসএলেরও বেশি। বৃষ্টি শুরুর আগে লেকে পানির পরিমাণ ছিল ৭৮ ফুট এমএসএল।
কাপ্তাই লেকে পানি বৃদ্ধির কথা স্বীকার করেছেন কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ম্যানেজার প্রকৌশলী এটিএম আব্দুজ্জাহের। তিনি বলেন, টানা ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে লেকে পানি কাঙ্ক্ষিত পরিমাণে বৃদ্ধি পায়। পানি বৃদ্ধির সাথে বিদ্যুৎ উৎপাদনও বাড়ানো হয়। পানি বৃদ্ধির আগে প্রতিদিন একটি জেনারেটর চালানো হতো। আর একটি জেনারেটর থেকে ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন করা হতো। কিন্তু বর্তমানে পানি বৃদ্ধির ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানো হয়েছে।
বর্তমানে তিনটি জেনারেটরে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। আর এই তিনটি জেনারেটর থেকে ১৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপন্ন হচ্ছে। যার পুরোটাই জাতীয় সঞ্চালন গ্রীডে সরবরাহ করা হয়। উজান থেকে যে হারে পানি নেমে আসছে তাতে লেকের পানি আরও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
ছয় দিনের টানা বর্ষণে জুরাছড়ি উপজেলা মানুষের মাঝে আতংক ছড়িয়ে পড়েছে। উপজেলার মিতিংগাছড়ি, ডেবাছড়া, কুসুমছড়ি, ঘিলাতলী, বারাবান্যা, শীলছড়ি, ঘিলাতলী, শুকনাছড়ি, চুমাচুমিসহ বিভিন্ন গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
ঝুঁকির মধ্যে বসবাসকারী সকল জনগনকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেয়া হয়েছে।শুক্রবার প্লাবিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মাহাফুজুর রহমান। এসময় থানা অফিসার ইনচার্জ মোঃ মাহবুবুল হাইসহ উর্ধতন কর্মকর্তারা।
এদিকে বাঘাইছড়িতে বন্যার্তদের মাঝে জেলা পরিষদ হতে আর্থিক সহায়তা দেয়া হয়েছে। বাঘাইছড়িতে গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টির ফলে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার পর বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে থাকা প্রায় সাড়ে তিনশতাধিক প্রতিটি ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারদের মাঝে নগদ ৫০০ টাকা আর্থিক সহায়তা, খাবার স্যালাইন ও পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট প্রদান করেছেন রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বৃষ কেতু চাকমা।
টানা ৫ দিনের অবিরাম বৃষ্টিতে সুরমা নদীর ষোলঘর পয়েন্টে বিপদসীমার ৯৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। সুরমার পানি দুই পাড় উপচে বিভিন্ন এলাকায় প্রবেশের ফলে জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ১৬৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডে সংশ্লীষ্টরা।
এদিকে, পানি বেড়ে যাওয়ায় জেলা সদরের সঙ্গে জামারগঞ্জ, তাহিরপুর, ধর্মপাশা, বিশ্বম্ভরপুর, দিরাই, দিরাই, শাল্লা সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে পড়েছে। বন্যায় ৬ উপজেলায় লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। এই উপজেলাগুলোর ৫০ টি নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং ৯২ টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পানি উঠায় পাঠদান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
জেলার জামালগঞ্জ, তাহিরপুর, বিশ্বম্ভরপুর, দোয়ারাবাজার, ধর্মপাশা ও সুনামগঞ্জ সদরের নিম্নাঞ্চলের মানুষ এখন দুর্ভোগে পড়েছেন। সুনামগঞ্জ পৌর এলাকার নিম্নাঞ্চল, সদর উপজেলার গৌরারং, মোহনপুর ও সুরমা ইউনিয়নের কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। সুরমা নদীর পানি কূল উপচে শহরের কাজির পয়েন্টে, নবীনগর, উত্তর আরপিন নগর, উকিলপাড়া, তেঘরিয়া সহ কয়েকটি এলাকা দিয়ে ঢুকে শহর এবং শহরতলিতেও বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি করছে।
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইয়াসমিন রুমা বলেন, উপজেলার ১০টি স্কুলে বন্যা আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। গৌরারং ইউনিয়নের বন্যার্তদের জন্য আড়াই টন চাল বরাদ্দ হয়েছে। ভারী বর্ষণের কারণে বন্যার্তদের জন্য বরাদ্দকৃত চাল পৌঁছাতে সমস্যা হচ্ছে। সুনামগঞ্জ জেলা সদর থেকে বিশ্বম্ভরপুর-তাহিরপুরের সরাসরি সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে।
বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা সমীর বিশ্বাস জানান, উপজেলার রঙ্গারচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সাতগাঁও উচ্চ বিদ্যালয় এবং ফতেপুরের হাজী মজিদ উল্লা উচ্চ বিদ্যালয়ে বন্যার্তদের জন্য আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। কিছু বন্যার্তরা ওখানে আশ্রয়ও নিয়েছেন। অন্যান্য এলাকার পানিবন্দি মানুষের জন্য বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তত রাখা হয়েছে।
তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আসিফ ইমতিয়াজ জানান, তাহিরপুর উপজেলা ৭ ইউনিয়নেই ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। রাস্তা-ঘাটসহ প্রায় ২ হাজার ৪০০ ঘরবাড়ি আংশিক-সম্পূর্ণ রূপে ক্ষতি গ্রস্থ হয়েছে। গত কয়েকে দিনে প্রায় ৫০০ প্যাকেট শুকনা খাবার ত্রাণ হিসেবে বিতরণ হয়েছে। ৩৯ টন চালের মধ্যে ১৬ টন চাল তিনি নিজেই উপস্থিত থেকে বিতরণ করেছেন, কয়েক দিনের মধ্যে সব চাল বিতরণ করা হবে। বন্যার্তদের জন্য আশ্রয় কেন্দ্রের জন্য সেল্টার হিসেবে উচু স্কুলগুলো প্রস্তুত রাখা হয়েছে। আপাদত সব স্কুল বন্ধ করে শিক্ষার্থীদের নিরাপদে রাখার জন্য বলেছি।
দোয়ারাবাজার উপজেলার লক্ষীপুর, সুরমা, ভোগলা, বাংলাবাজার, নরসিংহপুর এবং দোয়ারা সদর ইউনিয়নে বন্যা দেখা দিয়েছে। দোয়ারাবাজার-ছাতক উপজেলার অভ্যন্তরীণ সড়কের বিভিন্ন স্থান ডুবে যাওয়ায় এই সড়ক দিয়ে সরাসরি যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। সড়কের মাঝেরগাঁও, মংলারগাঁও ও নৈনগাঁও এলাকায় হাটু থেকে কোমর সমান পানি।
জামালগঞ্জ উপজেলা সদরের সঙ্গে জেলা সদরের সরাসরি সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। উপজেলার প্রধান সড়ক জামালগঞ্জ-সুনামগঞ্জ সড়কের নতুনপাড়ার মুল রাস্তায় পানি থাকায় যাত্রী ও বাসা বড়িরে লোকজন চলাচলে চরম দুর্ভো পোহাচ্ছেন।
সুনামগঞ্জ-সাচনা সড়কের নিয়ামতপুর, ইচ্ছারচর, বেরাজালী, সেলমস্তপুর ও কলাইয়া অংশে হাটু থেকে কোমর সমান পানি। উপজেলার ফেনারবাঁক, ভীমখালী, বেহেলী, সাচনাবাজার, উত্তর ইউনিয়ন ও সদর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম প্লাবিত হয়ে অনেক মানুষ পানি বন্ধি হয়ে পড়েছেন।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু বকর সিদ্দিক জানান, সুরমা নদীর পানি বিকাল ৩ টায় বিপদ সীমার ৯৭ সে.মিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। বৃষ্টি এবং পাহাড়ী ঢল অব্যাহত থাকায় দ্রুত পানি বাড়ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ১৬৩ মিলি মিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আগামী ৭২ ঘণ্টা ভারী বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ বলেছেন, জেলায় বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। নিম্নাঞ্চলের স্কুলে পাঠদান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বন্যার্তদের জন্য আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছে। শুকনো খাবার প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
সিলেট অঞ্চলের শতাধিক গ্রামের মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। বন্ধ রয়েছে প্রায় ৩ শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠদান। উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল আর গত কয়েকদিনের টানা বর্ষণের ফলে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে।
এছাড়া সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে বিপদসীমার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। শুক্রবার দিনভর বৃষ্টির কারণে নতুন করে সিলেট ও সুমানগঞ্জের বিভিন্ন নিম্নাঞ্চল বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। বিচ্ছিন্ন রয়েছে এই দুই জেলার বিভিন্ন সড়ক যোগাযোগ। এতে করে ভোগান্তিতে পড়ছেন হাজারো মানুষ। বন্যাদুর্গত এলাকায় দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানি ও খাবারের সংকট।
প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন উপজেলায় আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। পাশাপশি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলো চিহ্নিত করে সেই অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট উপজেলা চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ভোলাগঞ্জ, ধলাই, বিছনাকান্দি ও জাফলংয়ের কোয়ারীগুলোতে পাথর উত্তোলন বন্ধ থাকায় লক্ষাধিক শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছেন।
সিলেট পয়েন্টে সুরমার পানি বিপদসীমা অতিক্রম না করলেও আজ তা অতিক্রম করেছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টায় এই পয়েন্টে পানি ছিল বিপদ সীমার মাত্র ৩ সেন্টিমিটার নিচে। কিন্তু শুক্রবার দুপুরে পানি প্রবাহিত হয়েছে বিপদসীমার ১০.৫০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে। বন্যার পানিতে কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর, কানাইঘাট, ফেঞ্চুগঞ্জ, বিয়ানীবাজার ও বালাগঞ্জসহ আরো কয়েকটি উপজেলার নিচু এলাকার রাস্তাঘাট ও ঘরবাড়ি প্লাবিত হয়েছে।
সুনামগঞ্জের ঢল ও বর্ষণে জেলার ৮ উপজেলার অন্তত ১৯৯ টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ৬টি উপজেলার ৫০ টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়/মাদ্রাসায় বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। এসব প্রতিষ্ঠানে সাময়িকভাবে পাঠদান স্থগিত রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। আরো শতাধিক প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকার রাস্তাঘাট ডুবে যাওয়ায় শিক্ষার্থীদের স্কুলে পাঠাচ্ছেন না অভিভাবকরা। বৃষ্টিপাত বাড়তে থাকলে জেলার অধিকাংশ উপজেলার প্রাথমিক, উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মাদ্রাসা ও কলেজে বন্যায় কবিলত হওয়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টিতে জেলার সদর উপজেলায় ২২টি, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলায় ৩টি, ধর্মপাশা উপজেলায় ৫৯টি, তাহিরপুর উপজেলায় ৩০টি, বিশ্বম্ভরপুর উপজেলায় ২৭টি, দোয়াবাজার উপজেলায় ১৮টি, ছাতক উপজেলায় ১০টি এবং জামালগঞ্জ উপজেলায় ৩০টি বিদ্যালয়ে পানি প্রবেশ করেছে। এই সকল প্রতিষ্ঠানে বন্যার পানি উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত পাঠদান স্থগিত রাখা হয়েছে।
কুশিয়ারা নদীর বাঁধ ভেঙ্গে পানি প্রবেশ করছে সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলায়। শুক্রবার সকালে উপজেলার শেওলা ইউনিয়নের দীগলবাক এলাকায় পানির তীব্র বেগের ফলে কুশিয়ারা নদীর ডাইক ভেঙ্গে গেছে। এ জন্য ওই এলাকায় নদীর পানি প্রবেশ করায় নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে। দীগলভাগ, কোনাশালেশ্বর ও বালিঙ্গা এলাকার চলাচলের রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে।
কোম্পানীগঞ্জের ধলাই নদের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। বন্ধ রয়েছে ৬০টি বিদ্যালয়ে পাঠদান। ফেঞ্চুগঞ্জ কুশিয়ারা নদীর পানি বিপদসীমার ৭১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের গেজ রিডার গিয়াস উদ্দিন মোল্লা।
অন্যদিকে ক্রমাগত পানি বৃদ্ধির কারনে বন্যা আশংকা দেখা দিয়েছে উপজেলার ১নং সদর ইউনিয়ন এলাকায়। গোয়াইঘাট উপজেলার সার্বিক বন্যার পরিস্থিতি অপরিবর্ত। গত দুই দিনের টানা বর্ষণের ফলে নতুন করে বিভিন্ন এলাকা বন্যায় প্লাবিত হচ্ছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বন্যাদূর্গত মানুষের মধ্যে ১৮ মেট্রিকটন চাল বিতরণ করা হয়েছে। শুক্রবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিশ্বজিত কুমার পাল তিন ইউনিয়নে ত্রাণ বিতরণ করেন। পাশাপাশি প্রশাসনের পক্ষ থেকে সবকটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের কাছে ত্রাণ দেওয়া হয়েছে।
সার্বিক বিষয়ে সিলেটের জেলা প্রশাসক এম এমদাদুল ইসলাম বলেন, বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় জেলা প্রশাসন প্রস্তুত রয়েছে। সকল উপজেলায় আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলো চিহ্নিত করে সেই অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
ঝালকাঠির সুগন্ধা ও বিষখালী নদীতে পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। আজ শুক্রবার দুপুর থেকে নদীতে স্বাভাবিকের চেয়ে ৩-৪ ফুট পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এদিকে টানা বৃষ্টিতে স্থবির হয়ে পড়েছে ঝালকাঠির জন-জীবন। বৃষ্টি ও নদীর পানি ঢুকে পড়েছে শহরের রাস্তাঘাট ও গ্রামের ফসলের ক্ষেতে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, টানা বৃষ্টি ও বৈরি আবহাওয়ায় সুগন্ধা ও বিষখালী নদীর পানি স্বাভাবিকের চেয়ে ৩-৪ ফুট বেড়েছে। পানিতে কাঁচা রাস্তাঘাট তলিয়ে অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ বিপর্যস্ত হওয়ায় চরম দুর্ভোগে পড়েছে সাধারণ মানুষ। পানি বৃদ্ধির ফলে নলছিটি-ষাইটপাকিয়া ও কাঁঠালিয়ার আমুয়া ফেরি ঘাটে যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে।
ঝালকাঠি জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা সিদ্দিকুর রহমান খান বলেন, অফিসের সামনে বৃষ্টির পানি জমে আছে। পানি নেমে যাওয়ার কোন যায়গা নেই। অফিসে ঢুকতে হলে পানির মধ্য দিয়ে যেতে হয়। মারাত্নক অসুবিধা হচ্ছে।
দেশের রংপুর, সিলেট, সুনামগঞ্জ, চট্টগ্রাম, রাঙ্গামাটি, বান্দরবান, ঝালকাঠিসহ বিভিন্ন অঞ্চলে নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় এসব নদীতে ভাঙ্গনও শুরু হয়েছে।
রংপুরের পীরগাছায় টানা বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে অস্বাভাবিক হারে পানি বেড়েছে তিস্তা নদীতে। এতে নিম্নাঞ্চল প্লাবিতসহ দেখা দিয়েছে তীব্র নদী ভাঙন। তিস্তা নদীর ভাঙনে পাঁচটি গ্রাম, দু’টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ এবং একটি ক্লিনিক হুমকির মুখে পড়েছে। ভাঙন রোধে কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় এসব এলাকার লোকজন আতঙ্কে রয়েছে।
সরেজমিনে ওই ভাঙন কবলিত এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, দক্ষিণ গাবুড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি এখন হুমকির মুখে। নদী ভাঙনের কালো থাবা হাত বাড়িয়েছে বিদ্যালয়টির দিকে। ভাঙন দূরত্ব কমতে কমতে এখন বিদ্যালয়টি নদীর মুখে। আর মাত্র ৪০ ফুট অংশ ভাঙলেই তিস্তায় তলিয়ে যাবে বিদ্যালয়টি। ওই বিদ্যালয়টি কয়েক বছর আগেও নদী ভাঙনের কবলে পড়ে বিলীন হয়ে যায়।
পরে স্থান পরিবর্তন করে বর্তমান স্থানে নতুন করে ভবন নির্মাণ করা হয়। কয়েক বছরের ব্যবধানে আবারো বিদ্যায়টি নদী ভাঙনের মুখে পড়েছে। এই স্কুলে বর্তমানে প্রায় ৩০০ শিক্ষার্থী রয়েছে। এখানকার অধিকাংশ শিক্ষার্থীই এখন ভয়ে বিদ্যালয়ে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আকরাম হোসেন বলেন, নদী ভাঙন বিদ্যালয়ের কাছাকাছি চলে এসেছে। ভাঙন ঠেকাতে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করা না হলে যেকোন সময় বিদ্যালয়টি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যেতে পারে।
২০১৭ সালে উপজেলার ছাওলা ইউনিয়নের পূর্ব শিবদেব চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টির দ্বিতল ভবন নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। তারপর থেকেই ভাঙনকৃত বিদ্যালয়ের অদূরের বাজারে একটি টিন শেড নির্মাণ করে গাদাগাদি করে শিক্ষার্থীদের পাঠদান চলছে। ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করায় ওই বিদ্যালয়টির অস্থায়ী শেডটিও হুমকীর মুখে পড়েছে। ভাঙন অব্যাহত থাকলে পাশের শিবদেব কমিউনিটি ক্লিনিকটিও বিলীনের আশংকা করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
ফসলী জমিসহ বসতভিটা ভাঙনের কবলে পড়েছে। বারবার নদী ভাঙনে নিঃস্ব পরিবারগুলো এখন আশ্রয় হারিয়ে অন্যের ভিটায় মানবেতর জীবন-যাপন করছে। স্থানীয়ভাবে কাজকর্ম না থাকায় বিপাকে পড়েছেন তারা। উপজেলার ছাওলা ইউনিয়নের তিস্তা নদীর পাড়ে অবস্থিত গাবুড়ার চর, শিবদের চর, কিশামত ছাওলা, পূর্ব হাগুরিয়া হাশিম, ছাওলা ও চর কাশিম গ্রাম তীব্র ভাঙনের কবলে পড়েছে।
এলাকাবাসীর অভিযোগে জানা যায়, পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষের স্বেচ্ছাচারিতা, অনিয়ম, দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার কারণে এ ভাঙনের শিকার হতে হচ্ছে প্রতি বছর নদী পাড়ের লোকজনদের।
তারা জানান, ছাওলার ১০নং বোল্ডারের পাড় থেকে আরও ৩ কিলোমিটার বোল্ডার দিয়ে বাধঁ নির্মাণ করে নদী শাসন করলে এ গ্রামগুলো রক্ষা হতো। কর্তৃপক্ষ অপরিকল্পিতভাবে ১নং ও ২নং বেড়ি বাধঁ নির্মাণ করলেও বাঁধের পূর্ব পাড়ের গ্রামগুলো বন্যা ও নদী ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছেনা।
তিস্তা নদীর ভাঙনের শিকার হাসান আলী জানান, প্রতি বছর নদী ভাঙনের ফলে পীরগাছা উপজেলার ছাওলা ইউনিয়ন মানচিত্র থেকে ছোট হয়ে আসছে। এ অঞ্চলে গত ৫ বছরে প্রায় ১৫ হাজার হেক্টর ফসলি জমিসহ প্রায় সাড়ে ৩ হাজার পরিবারের বসতভিটা নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা হারুনুর রশিদ জানান, বন্যার কারণে সদ্য রোপনকৃত আউশ ধান ও আমন বীজতলাসহ প্রায় ১৫ হেক্টর জমির রবি শস্য পানির নিচে তলিয়ে গেছে। উপজেলা প্রকল্প বাস্তাবায়ন কর্মকর্তা আব্দুল আজিজ বলেন, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর তালিকা করা হচ্ছে। তাদের সহযোগীতা করা হবে।
উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢল ও বৃষ্টিপাতের ফলে বগুড়ায় সারিয়াকান্দিতে যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে এখনও বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে উপজেলার চর এলাকার ৬টি ইউনিয়নের নিচু এলাকা ডুবে গেছে। পানির নিচে তলিয়ে গেছে আউশ ধান, আমন বীজতলা ও শাকসবজির খেত। তবে ক্ষতির পরিমাণ জানাতে পারেনি কৃষি বিভাগ।
এদিকে পানি বৃদ্ধির ফলে উপজেলার চালুয়াবাড়ী ইউনিয়নের তেলিগাড়ী ও শিমুলদাইড় গ্রামে নদী ভাঙ্গনে জমি জমা ও বাড়ীঘর যমুনা নদীতে তলিয়ে যাচ্ছে।
গত ছয়দিনের টানা বর্ষণ ও পাহাড়ী ঢলে রাঙ্গামাটির চারটি উপজেলার বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। কাপ্তাই হ্রদের পানি উচ্চতা বেড়ে যাওয়ায় বাঘাইছড়ি, লংগদু বরকল ও বিলাইছড়ির নিম্নাঞ্চলের মানুষ এখনো পানিবন্ধী হয়ে আছে।
কর্ণফুলীর শাখা কাচালং, মাইনী ও রাইংক্ষিয়ং নদীতে প্রবল বেগে পাহাড়ী ঢল নেমে আসায় কাপ্তাই হ্রদের পানির উচ্চতা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলে কাপ্তাই হ্রদের পানির উচ্চতা বেড়েছে ৯০ এমএসএল অবস্থান করছে। বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় প্রতিনিয়ত পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
শুক্রবার টানা ছয়দিনেও হালকা থেকে মাঝারী বৃষ্টি অব্যাহত আছে। পাহাড়ী ঢলে বিলাইছড়ি উপজেলার ৩নং ফারুয়া ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে বসত বাড়ী দোকানপাট পানিতে ঢুবে গেছে এবং জমির ফসল ফসলে ক্ষতি হয়েছে। ফারুয়া ইউনিয়নের চাইন্দ, উলুছড়ি, তক্তানালা, ওরাছড়ি, গোয়াইনছড়ি,এগুজ্যাছড়ি লত্যছড়ি গ্রামসহ ফারুয়া বাজারের কিছু অংশ প্লাবিত হয়েছে।
বন্যা দূর্গত সকলে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিয়েছে। ভারি বষর্ণের কারণে বিলাইছড়ি উপজেলার ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার জনসাধারণ ২ টি আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নেয় ও উপেজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের রাতের খাবার বিতরণ করা হয়।
সপ্তাহব্যাপী টানা বর্ষণের কারণে লংগদু উপজেলার মাইনীমুখ মডেল হাই স্কুলের পিছনের বাউন্ডারি ওয়ালসহ মাটি ধসে পড়েছে। ফলে স্কুলটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। অচিরেই মাটি ধসের ব্যবস্থা করা না গেলে স্কুলের ভবন ধসে পড়ার আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী।
খবর পেয়ে লংগদু উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রবীর কুমার রায় ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তিনি দ্রুত সময়ের মধ্যে মাটি ধরে রাখার জন্য স্কুল কর্তৃপক্ষে যতটুকু সম্ভব সহযোগীতা করা হবে বলে আশ্বাস প্রদান করেন। এসময় লংগদু উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মীর সিরাজুল ইসলাম ঝান্টু, বিদ্যালয়ের শিক্ষক, মাইনীমুখ বাজার ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সভাপতি মোঃ কামাল পাশা উপস্থিত ছিলেন।
কাপ্তাই উপজেলার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া গত কয়েকদিনের লাগাতার বৃষ্টিতে কাপ্তাই লেকে ৫ ফুট মীন সি লেভেল (এমএসএল) পানি বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানা গেছে। এই পানি বৃদ্ধির ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদনও বেড়েছে বলে কাপ্তাই বিদ্যুত কেন্দ্রের কন্ট্রোল রুম সূত্রে জানা গেছে। গতকাল (১১ জুলাই) রাত ১১টার সময় কন্ট্রোল রুমের সাথে যোগাযোগ করলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান রুলকার্ভ (পানির পরিমাপ) অনুযায়ী এখন (১১ জুলাই) কাপ্তাই লেকে পানি থাকার কথা ৮৫ ফুট এমএসএল। কিন্তু লেকে বর্তমানে পানি রয়েছে ৯০ ফুট এমএসএলেরও বেশি। বৃষ্টি শুরুর আগে লেকে পানির পরিমাণ ছিল ৭৮ ফুট এমএসএল।
কাপ্তাই লেকে পানি বৃদ্ধির কথা স্বীকার করেছেন কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ম্যানেজার প্রকৌশলী এটিএম আব্দুজ্জাহের। তিনি বলেন, টানা ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে লেকে পানি কাঙ্ক্ষিত পরিমাণে বৃদ্ধি পায়। পানি বৃদ্ধির সাথে বিদ্যুৎ উৎপাদনও বাড়ানো হয়। পানি বৃদ্ধির আগে প্রতিদিন একটি জেনারেটর চালানো হতো। আর একটি জেনারেটর থেকে ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন করা হতো। কিন্তু বর্তমানে পানি বৃদ্ধির ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানো হয়েছে।
বর্তমানে তিনটি জেনারেটরে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। আর এই তিনটি জেনারেটর থেকে ১৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপন্ন হচ্ছে। যার পুরোটাই জাতীয় সঞ্চালন গ্রীডে সরবরাহ করা হয়। উজান থেকে যে হারে পানি নেমে আসছে তাতে লেকের পানি আরও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
ছয় দিনের টানা বর্ষণে জুরাছড়ি উপজেলা মানুষের মাঝে আতংক ছড়িয়ে পড়েছে। উপজেলার মিতিংগাছড়ি, ডেবাছড়া, কুসুমছড়ি, ঘিলাতলী, বারাবান্যা, শীলছড়ি, ঘিলাতলী, শুকনাছড়ি, চুমাচুমিসহ বিভিন্ন গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
ঝুঁকির মধ্যে বসবাসকারী সকল জনগনকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেয়া হয়েছে।শুক্রবার প্লাবিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মাহাফুজুর রহমান। এসময় থানা অফিসার ইনচার্জ মোঃ মাহবুবুল হাইসহ উর্ধতন কর্মকর্তারা।
এদিকে বাঘাইছড়িতে বন্যার্তদের মাঝে জেলা পরিষদ হতে আর্থিক সহায়তা দেয়া হয়েছে। বাঘাইছড়িতে গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টির ফলে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার পর বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে থাকা প্রায় সাড়ে তিনশতাধিক প্রতিটি ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারদের মাঝে নগদ ৫০০ টাকা আর্থিক সহায়তা, খাবার স্যালাইন ও পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট প্রদান করেছেন রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বৃষ কেতু চাকমা।
টানা ৫ দিনের অবিরাম বৃষ্টিতে সুরমা নদীর ষোলঘর পয়েন্টে বিপদসীমার ৯৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। সুরমার পানি দুই পাড় উপচে বিভিন্ন এলাকায় প্রবেশের ফলে জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ১৬৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডে সংশ্লীষ্টরা।
এদিকে, পানি বেড়ে যাওয়ায় জেলা সদরের সঙ্গে জামারগঞ্জ, তাহিরপুর, ধর্মপাশা, বিশ্বম্ভরপুর, দিরাই, দিরাই, শাল্লা সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে পড়েছে। বন্যায় ৬ উপজেলায় লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। এই উপজেলাগুলোর ৫০ টি নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং ৯২ টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পানি উঠায় পাঠদান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
জেলার জামালগঞ্জ, তাহিরপুর, বিশ্বম্ভরপুর, দোয়ারাবাজার, ধর্মপাশা ও সুনামগঞ্জ সদরের নিম্নাঞ্চলের মানুষ এখন দুর্ভোগে পড়েছেন। সুনামগঞ্জ পৌর এলাকার নিম্নাঞ্চল, সদর উপজেলার গৌরারং, মোহনপুর ও সুরমা ইউনিয়নের কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। সুরমা নদীর পানি কূল উপচে শহরের কাজির পয়েন্টে, নবীনগর, উত্তর আরপিন নগর, উকিলপাড়া, তেঘরিয়া সহ কয়েকটি এলাকা দিয়ে ঢুকে শহর এবং শহরতলিতেও বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি করছে।
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইয়াসমিন রুমা বলেন, উপজেলার ১০টি স্কুলে বন্যা আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। গৌরারং ইউনিয়নের বন্যার্তদের জন্য আড়াই টন চাল বরাদ্দ হয়েছে। ভারী বর্ষণের কারণে বন্যার্তদের জন্য বরাদ্দকৃত চাল পৌঁছাতে সমস্যা হচ্ছে। সুনামগঞ্জ জেলা সদর থেকে বিশ্বম্ভরপুর-তাহিরপুরের সরাসরি সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে।
বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা সমীর বিশ্বাস জানান, উপজেলার রঙ্গারচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সাতগাঁও উচ্চ বিদ্যালয় এবং ফতেপুরের হাজী মজিদ উল্লা উচ্চ বিদ্যালয়ে বন্যার্তদের জন্য আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। কিছু বন্যার্তরা ওখানে আশ্রয়ও নিয়েছেন। অন্যান্য এলাকার পানিবন্দি মানুষের জন্য বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তত রাখা হয়েছে।
তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আসিফ ইমতিয়াজ জানান, তাহিরপুর উপজেলা ৭ ইউনিয়নেই ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। রাস্তা-ঘাটসহ প্রায় ২ হাজার ৪০০ ঘরবাড়ি আংশিক-সম্পূর্ণ রূপে ক্ষতি গ্রস্থ হয়েছে। গত কয়েকে দিনে প্রায় ৫০০ প্যাকেট শুকনা খাবার ত্রাণ হিসেবে বিতরণ হয়েছে। ৩৯ টন চালের মধ্যে ১৬ টন চাল তিনি নিজেই উপস্থিত থেকে বিতরণ করেছেন, কয়েক দিনের মধ্যে সব চাল বিতরণ করা হবে। বন্যার্তদের জন্য আশ্রয় কেন্দ্রের জন্য সেল্টার হিসেবে উচু স্কুলগুলো প্রস্তুত রাখা হয়েছে। আপাদত সব স্কুল বন্ধ করে শিক্ষার্থীদের নিরাপদে রাখার জন্য বলেছি।
দোয়ারাবাজার উপজেলার লক্ষীপুর, সুরমা, ভোগলা, বাংলাবাজার, নরসিংহপুর এবং দোয়ারা সদর ইউনিয়নে বন্যা দেখা দিয়েছে। দোয়ারাবাজার-ছাতক উপজেলার অভ্যন্তরীণ সড়কের বিভিন্ন স্থান ডুবে যাওয়ায় এই সড়ক দিয়ে সরাসরি যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। সড়কের মাঝেরগাঁও, মংলারগাঁও ও নৈনগাঁও এলাকায় হাটু থেকে কোমর সমান পানি।
জামালগঞ্জ উপজেলা সদরের সঙ্গে জেলা সদরের সরাসরি সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। উপজেলার প্রধান সড়ক জামালগঞ্জ-সুনামগঞ্জ সড়কের নতুনপাড়ার মুল রাস্তায় পানি থাকায় যাত্রী ও বাসা বড়িরে লোকজন চলাচলে চরম দুর্ভো পোহাচ্ছেন।
সুনামগঞ্জ-সাচনা সড়কের নিয়ামতপুর, ইচ্ছারচর, বেরাজালী, সেলমস্তপুর ও কলাইয়া অংশে হাটু থেকে কোমর সমান পানি। উপজেলার ফেনারবাঁক, ভীমখালী, বেহেলী, সাচনাবাজার, উত্তর ইউনিয়ন ও সদর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম প্লাবিত হয়ে অনেক মানুষ পানি বন্ধি হয়ে পড়েছেন।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু বকর সিদ্দিক জানান, সুরমা নদীর পানি বিকাল ৩ টায় বিপদ সীমার ৯৭ সে.মিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। বৃষ্টি এবং পাহাড়ী ঢল অব্যাহত থাকায় দ্রুত পানি বাড়ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ১৬৩ মিলি মিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আগামী ৭২ ঘণ্টা ভারী বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ বলেছেন, জেলায় বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। নিম্নাঞ্চলের স্কুলে পাঠদান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বন্যার্তদের জন্য আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছে। শুকনো খাবার প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
সিলেট অঞ্চলের শতাধিক গ্রামের মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। বন্ধ রয়েছে প্রায় ৩ শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠদান। উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল আর গত কয়েকদিনের টানা বর্ষণের ফলে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে।
এছাড়া সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে বিপদসীমার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। শুক্রবার দিনভর বৃষ্টির কারণে নতুন করে সিলেট ও সুমানগঞ্জের বিভিন্ন নিম্নাঞ্চল বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। বিচ্ছিন্ন রয়েছে এই দুই জেলার বিভিন্ন সড়ক যোগাযোগ। এতে করে ভোগান্তিতে পড়ছেন হাজারো মানুষ। বন্যাদুর্গত এলাকায় দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানি ও খাবারের সংকট।
প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন উপজেলায় আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। পাশাপশি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলো চিহ্নিত করে সেই অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট উপজেলা চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ভোলাগঞ্জ, ধলাই, বিছনাকান্দি ও জাফলংয়ের কোয়ারীগুলোতে পাথর উত্তোলন বন্ধ থাকায় লক্ষাধিক শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছেন।
সিলেট পয়েন্টে সুরমার পানি বিপদসীমা অতিক্রম না করলেও আজ তা অতিক্রম করেছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টায় এই পয়েন্টে পানি ছিল বিপদ সীমার মাত্র ৩ সেন্টিমিটার নিচে। কিন্তু শুক্রবার দুপুরে পানি প্রবাহিত হয়েছে বিপদসীমার ১০.৫০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে। বন্যার পানিতে কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর, কানাইঘাট, ফেঞ্চুগঞ্জ, বিয়ানীবাজার ও বালাগঞ্জসহ আরো কয়েকটি উপজেলার নিচু এলাকার রাস্তাঘাট ও ঘরবাড়ি প্লাবিত হয়েছে।
সুনামগঞ্জের ঢল ও বর্ষণে জেলার ৮ উপজেলার অন্তত ১৯৯ টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ৬টি উপজেলার ৫০ টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়/মাদ্রাসায় বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। এসব প্রতিষ্ঠানে সাময়িকভাবে পাঠদান স্থগিত রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। আরো শতাধিক প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকার রাস্তাঘাট ডুবে যাওয়ায় শিক্ষার্থীদের স্কুলে পাঠাচ্ছেন না অভিভাবকরা। বৃষ্টিপাত বাড়তে থাকলে জেলার অধিকাংশ উপজেলার প্রাথমিক, উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মাদ্রাসা ও কলেজে বন্যায় কবিলত হওয়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টিতে জেলার সদর উপজেলায় ২২টি, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলায় ৩টি, ধর্মপাশা উপজেলায় ৫৯টি, তাহিরপুর উপজেলায় ৩০টি, বিশ্বম্ভরপুর উপজেলায় ২৭টি, দোয়াবাজার উপজেলায় ১৮টি, ছাতক উপজেলায় ১০টি এবং জামালগঞ্জ উপজেলায় ৩০টি বিদ্যালয়ে পানি প্রবেশ করেছে। এই সকল প্রতিষ্ঠানে বন্যার পানি উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত পাঠদান স্থগিত রাখা হয়েছে।
কুশিয়ারা নদীর বাঁধ ভেঙ্গে পানি প্রবেশ করছে সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলায়। শুক্রবার সকালে উপজেলার শেওলা ইউনিয়নের দীগলবাক এলাকায় পানির তীব্র বেগের ফলে কুশিয়ারা নদীর ডাইক ভেঙ্গে গেছে। এ জন্য ওই এলাকায় নদীর পানি প্রবেশ করায় নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে। দীগলভাগ, কোনাশালেশ্বর ও বালিঙ্গা এলাকার চলাচলের রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে।
কোম্পানীগঞ্জের ধলাই নদের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। বন্ধ রয়েছে ৬০টি বিদ্যালয়ে পাঠদান। ফেঞ্চুগঞ্জ কুশিয়ারা নদীর পানি বিপদসীমার ৭১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের গেজ রিডার গিয়াস উদ্দিন মোল্লা।
অন্যদিকে ক্রমাগত পানি বৃদ্ধির কারনে বন্যা আশংকা দেখা দিয়েছে উপজেলার ১নং সদর ইউনিয়ন এলাকায়। গোয়াইঘাট উপজেলার সার্বিক বন্যার পরিস্থিতি অপরিবর্ত। গত দুই দিনের টানা বর্ষণের ফলে নতুন করে বিভিন্ন এলাকা বন্যায় প্লাবিত হচ্ছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বন্যাদূর্গত মানুষের মধ্যে ১৮ মেট্রিকটন চাল বিতরণ করা হয়েছে। শুক্রবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিশ্বজিত কুমার পাল তিন ইউনিয়নে ত্রাণ বিতরণ করেন। পাশাপাশি প্রশাসনের পক্ষ থেকে সবকটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের কাছে ত্রাণ দেওয়া হয়েছে।
সার্বিক বিষয়ে সিলেটের জেলা প্রশাসক এম এমদাদুল ইসলাম বলেন, বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় জেলা প্রশাসন প্রস্তুত রয়েছে। সকল উপজেলায় আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলো চিহ্নিত করে সেই অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
ঝালকাঠির সুগন্ধা ও বিষখালী নদীতে পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। আজ শুক্রবার দুপুর থেকে নদীতে স্বাভাবিকের চেয়ে ৩-৪ ফুট পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এদিকে টানা বৃষ্টিতে স্থবির হয়ে পড়েছে ঝালকাঠির জন-জীবন। বৃষ্টি ও নদীর পানি ঢুকে পড়েছে শহরের রাস্তাঘাট ও গ্রামের ফসলের ক্ষেতে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, টানা বৃষ্টি ও বৈরি আবহাওয়ায় সুগন্ধা ও বিষখালী নদীর পানি স্বাভাবিকের চেয়ে ৩-৪ ফুট বেড়েছে। পানিতে কাঁচা রাস্তাঘাট তলিয়ে অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ বিপর্যস্ত হওয়ায় চরম দুর্ভোগে পড়েছে সাধারণ মানুষ। পানি বৃদ্ধির ফলে নলছিটি-ষাইটপাকিয়া ও কাঁঠালিয়ার আমুয়া ফেরি ঘাটে যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে।
ঝালকাঠি জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা সিদ্দিকুর রহমান খান বলেন, অফিসের সামনে বৃষ্টির পানি জমে আছে। পানি নেমে যাওয়ার কোন যায়গা নেই। অফিসে ঢুকতে হলে পানির মধ্য দিয়ে যেতে হয়। মারাত্নক অসুবিধা হচ্ছে।
No comments