রাজনীতিতে ‘ফনি’
বহুকাল
পরে বাংলাদেশের রাজনীতিতে সত্যিই একটি নতুন ঘটনা ঘটেছে। এটা ঘটলো যখন
বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের নামকরণ করা ঘূর্ণিঝড় ‘ফনি’ তীব্রতা পাচ্ছিল। ফনি
উড়িষ্যার দিকে লণ্ডভণ্ড করলেও বাংলাদেশে ততটা রুদ্রমূর্তি বা উথালপাথাল
আবহাওয়া তৈরি করেনি। কিন্তু বিএনপি যেন সংসদীয় রাজনীতিতে প্রবেশ করলো ‘ফনি’
হয়ে।
বিএনপির জাহিদুল ইসলামের চুপিসারে হঠাৎ যোগদান, দ্রুততম সময়ে সিনিয়র নেতা ড. মোশাররফ হোসেনের ভাষায় ‘ঝরা পাতা’ ঝেড়ে ফেলা অর্থাৎ জাহিদুলকে বহিষ্কার করা, সেটাই ছিল নাটক। কিন্তু জাহিদুল ঘোর না কাটতেই মির্জা ফখরুল ছাড়া বাকি চার জনের একত্রে শপথ পাঠ ছিল দ্বিতীয় চমক। আবার সেখানে সবাই যখন আশা করছিল যে, এবারে এই চার জনও যথারীতি জাহিদুল হবেন, তখন আবার নাটক। এবারে শপথ গ্রহণকারীদের একজন ক্ষীণস্বরে দাবি করেছেন, তারেক রহমানের এবং দলের সম্মতিতে তারা শপথ নিয়েছেন। তখন প্রথমে মনে হয়েছে, তিনি কথার কথা বলেছেন।
তাদের বহিষ্কারের খড়গ এই নামলো বলে। কিন্তু মির্জা ফখরুল হঠাৎ রুপালি পর্দার কোনো রুদ্ধশ্বাস উপাখ্যানের মতো আবির্ভূত হলেন। সাংবাদিকরা শশব্যস্ত ছুটলেন মির্জার বয়ান শোনার জন্য। কিন্তু তারা যা শুনলেন, তা শোনার জন্য কেউ প্রস্তুত ছিলেন না। মির্জার পাশে কেউ ছিলেন না। সবাই ভাবলেন, নিশ্চয় জ্যেষ্ঠরা ক্ষুব্ধ। মির্জা রাজনীতিতে কম ঝানু নন। তার পরিবার ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক পরিবার। সাংবাদিকদের কাছে তিনি রহস্য রেখে দিলেন। কবে শপথ নেবেন? ইতিমধ্যে খবর রটলো তিনি স্পিকারের কাছে চিঠি লিখেছেন।
আসলে সংবিধান অনুযায়ী ৯০ কার্যদিবস লেখা আছে। তাই গত পরশু ছিল শেষ দিন। তিনি শপথ নেননি মানে তার তো আর শপথ নেয়ার সুযোগ নেই। সেই দরজা বন্ধ হয়ে গেছে। অথচ সাংবাদিকরা সেটা ধরতে পারেনি। তাদের কেউ কেউ খবর দিয়েছে, স্পিকারের কাছে তিনি চিঠি লিখেছেন। আসলে তো চিঠি লেখার সুযোগ ছিল না। স্পিকারের সময় বাড়ানোর এখতিয়ার ছিল না। জীবনে শিক্ষকতা করেছেন মির্জা। তাই হয়তো পরিহাস করেছেন। বলেছেন, আপনারা সময় হলে জানতে পারবেন। গতকাল প্রেস ক্লাবের এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, দলের কৌশলের অংশ হিসেবে বিএনপির অন্য নির্বাচিতরা শপথ নিয়েছেন। কিন্তু তিনি নেননি। নেবেন না। অবশ্য প্রশ্ন মুছে যায়নি। প্রশ্ন উঠেছে, তাহলে বিএনপি কি বেগম খালেদা জিয়ার আসনটি ছেড়ে দিলো। ওই আসনটিতে আগামী ৯০ দিনের মধ্যে উপ-নির্বাচন হলে বিএনপি বয়কট করবে। আর সেখানে এবারে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হবে নাকি, ওই আসনটিতে জাতীয় পার্টিকে দেয়া হবে। সেটা একটা দেখার বিষয়। গত ৩০শে ডিসেম্বরের নির্বাচনে মির্জার কাছে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হেরে গেছে।
তবে নাটকীয়তা এবং নাটকীয়তার মধ্য দিয়ে হলেও বিএনপি একটি অসাধারণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন। খোদ বিএনপি মহাসচিবই বলছেন, এটা চমক। এটা একটি ইউ টার্ন।
কারণ দুর্বল হয়ে পড়া বিএনপি এবং বিএনপির নির্বাসিত নেতা তারেক রহমান এবং কারাবন্দি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে সামনে রেখে বিএনপির পক্ষে এর চেয়ে বেশি ভালো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া সম্ভব ছিল না বলেই রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বিশ্লেষণ করছেন।
যদিও মির্জার ঘনিষ্ঠসূত্রগুলোর ইঙ্গিত হলো, দুই কারণে এই সিদ্ধান্ত। দলের স্থায়ী কমিটির অস্বস্তি ও বিরক্তি প্রশমিত করা। এবং মহাসচিবের কিছুটা নাজুক স্বাস্থ্য।
তবে পর্যবেক্ষকরা দেখেছেন যে বিএনপির সামনে বিকল্পগুলো অত্যন্ত সীমিত এবং কণ্টকিত। দেখা যাচ্ছিল যে শাসক দল সংসদ ও সরকারকে এতটাই নিরঙ্কুশ করে ফেলেছে যে তাদের পক্ষে তাদেরকে এড়িয়ে আর কিছুই করার উপায় নেই। বিএনপির পক্ষে বড় কোনো রাজনৈতিক পদক্ষেপ নেয়া সম্ভব হচ্ছিল না সুতরাং বিএনপি এক ঢিলে অনেক পাখি মেরেছে।
প্রথমত বিএনপি সম্পর্কে সরকারি দলের পক্ষে আর বলা সম্ভব হবে না যে বিএনপি নেতিবাচক রাজনীতি করছে। একই কারণে বিফল হবে জেনেও তারা গণভবনে গিয়েছিল। বিএনপিকে আর জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে খোঁচা দেয়া কঠিন হবে। এই সিদ্ধান্ত নেয়ার পেছনে জামায়াতে ইসলামের কোনো ভূমিকা থাকার কথা নয় এবং ওয়াকিবহাল সূত্রগুলো বলেছে, জামায়াত কোনো ভূমিকা রাখেনি। এতে তাদের কোনো অবদান ছিল না। সুতরাং বিএনপি এই প্রথম ওদেরকে পুরো বাদ দিয়ে একটা বড় ধরনের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিতে পেরেছে বলে দাবি করা যাবে।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর যদি সংসদে যেতেন তাহলে বাস্তবতা এটাই হতো যে তার সতীর্থ, যারা সংসদে যেতে পারেন নি, যেমন মওদুদ আহমেদ প্রমুখ, তারা কোনো অবস্থাতেই মির্জার সংসদে যাওয়ার ‘কৌশলকে’ মেনে নিতেন না। বাংলাদেশের রাজনীতিতে অবশ্য আন্দোলনের কৌশল হিসেবে পার্লামেন্টে যাওয়া, না যাওয়া, বর্জন করা, বয়কট করা, সব উদাহরণ আছে। কিন্তু বাংলাদেশের ইতিহাসে এই প্রথম একটি ঘটনা ঘটলো, যেখানে পর্যবেক্ষকরা সবাই স্তম্ভিত হয়েছেন।
অনেকে একটা ঠাণ্ডা মাথায় পাকা রাজনৈতিক চাল হিসেবেই দেখছেন। অনেকে বলছেন, বিএনপির রাজনৈতিক চালটি এমন একটা সময় এসেছে যখন নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া কারাবন্দি এবং তাকে জামিন দেয়ার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। তবে বিভিন্ন সূত্রে আভাস দেয়া হচ্ছিল যে তিনি যদি প্যারোলে দরখাস্ত করেন, তাহলে সরকার সেটা বিবেচনা করতে পারেন।
বেগম খালেদাকে এমন একটা অবস্থায় ঠেলে দেয়া হয়েছে যখন তার দরকষাকষি করার আর কোনো জায়গা ছিল না। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করেন বিএনপির যেসব সংসদ সদস্য পার্লামেন্টে গিয়েছেন, তারা যদি ভালোভাবে ভূমিকা রাখতে পারেন, তাহলে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির প্রশ্নে তারা একটা বড় চাপ তৈরি করতে পারবেন। কারণ তারা সংসদ থেকে ওয়াকআউট করতে পারেন। এবং তাদেরকে বিরোধী দলের বেঞ্চে বসাতে হবে এবং বিরোধীদলের জায়গা থেকেই তারা বেগম খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যগত অবস্থা সামনে আনতে পারবেন। এটা নির্ভর করবে যারা গেছেন, তারা কতটা কি করতে পারেন, বা করতে চান, তার ওপর। তবে প্রশ্ন থাকছে, এই কৌশল না নিলেও তারা নিবৃত্ত হতেন কিনা। তাই এই ইউ টার্ন কৌশল নাকি আত্মসমর্পণ, সেটা সময় বলে দেবে।
খালেদা জিয়ার জামিনে মুক্তি দেয়ার বিষয়টিতে দলটি কোনোভাবেই সুবিধা করতে পারছিল না। কিন্তু পর্যবেক্ষকরা বিশ্বাস করেন বিএনপির সংসদ সদস্যরা সংবিধানের আওতায় একটা বিশেষ সুবিধা নিতে পারেন।
সেটা বাকস্বাধীনতা প্রয়োগের ক্ষেত্রে। কারণ পার্লামেন্টে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিয়ে কোনো বক্তব্য সাধারণভাবে স্বাধীনভাবেই দেয়া যায়। সে ক্ষেত্রে সংবিধান বলেছে, সংসদের কার্যধারার বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা যাবে না। সুতরাং মনে করা হচ্ছে যে বিএনপি একটি বুদ্ধিবৃত্তিক পদক্ষেপ নিয়েছে বটে কিন্তু সংসদে সরকারি দলের বিশাল সংখ্যাগরিষ্ঠতার মুখে দাঁড়িয়ে এই পাঁচ-সাত জন বিশেষ করে, যখন তার মধ্যে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নেই, তারা কি ঝড়ের মুখে খড়কুটো হবে না তো? তবে এও ঠিক যে বিএনপির বর্তমান অবস্থান থেকে এর থেকে ভালো আর কোন বাস্তবসম্মত বিকল্প ছিল না। যদিও অনেকেই বিশ্বাস করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে যদি সংসদে যেতে দেয়া হতো, তাহলে তিনি অনেক বড় ভূমিকা রাখতে পারতেন। অনেক বেশি কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারতেন।
এ বিষয়টি কম গুরুত্বপূর্ণ ছিল না। কিন্তু দলের অভ্যন্তরীণ চেক অ্যান্ড ব্যালেন্স, সেটাকে বজায় রাখার জন্য এর দরকার ছিল। তবে অনেক বিশ্লেষক মনে করেন এই সিদ্ধান্তের ফলে বিএনপির নির্বাসিত নেতা তারেক রহমানই ব্যক্তিগতভাবে সব থেকে বেশি সুবিধায় থাকবেন। কারণ মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর যদি পার্লামেন্টে যেতেন, তাহলে তার পক্ষে যে ধরনের সংসদীয় নেতা হিসেবে আত্মপ্রকাশের সুযোগ হতো, সেখানে তারেক রহমানের শূন্যস্থান ভরাট হওয়ার একটা সম্ভাবনা তৈরি হতো কিনা কে জানে। সেটা এখন আর অতটা থাকবে না। সুতরাং সব দিক বিবেচনায় বিএনপি একটা ভালো সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে এর পরিপ্রেক্ষিতে সরকারি দল যে ধরনের সতর্ক প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে সেটা লক্ষণীয়। তারা তাৎক্ষণিকভাবে বলেছে তারা এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করবে না। সুতরাং এটা দেখার বিষয় যে সামনের বাংলাদেশ রাজনীতি যা এখন ডামাডোলপূর্ণ নয়, আবার স্বস্তিকরও নয়, সেটা কিভাবে এগিয়ে যায়, কিভাবে কি মেরুকরণ ঘটায়।
বিএনপির জাহিদুল ইসলামের চুপিসারে হঠাৎ যোগদান, দ্রুততম সময়ে সিনিয়র নেতা ড. মোশাররফ হোসেনের ভাষায় ‘ঝরা পাতা’ ঝেড়ে ফেলা অর্থাৎ জাহিদুলকে বহিষ্কার করা, সেটাই ছিল নাটক। কিন্তু জাহিদুল ঘোর না কাটতেই মির্জা ফখরুল ছাড়া বাকি চার জনের একত্রে শপথ পাঠ ছিল দ্বিতীয় চমক। আবার সেখানে সবাই যখন আশা করছিল যে, এবারে এই চার জনও যথারীতি জাহিদুল হবেন, তখন আবার নাটক। এবারে শপথ গ্রহণকারীদের একজন ক্ষীণস্বরে দাবি করেছেন, তারেক রহমানের এবং দলের সম্মতিতে তারা শপথ নিয়েছেন। তখন প্রথমে মনে হয়েছে, তিনি কথার কথা বলেছেন।
তাদের বহিষ্কারের খড়গ এই নামলো বলে। কিন্তু মির্জা ফখরুল হঠাৎ রুপালি পর্দার কোনো রুদ্ধশ্বাস উপাখ্যানের মতো আবির্ভূত হলেন। সাংবাদিকরা শশব্যস্ত ছুটলেন মির্জার বয়ান শোনার জন্য। কিন্তু তারা যা শুনলেন, তা শোনার জন্য কেউ প্রস্তুত ছিলেন না। মির্জার পাশে কেউ ছিলেন না। সবাই ভাবলেন, নিশ্চয় জ্যেষ্ঠরা ক্ষুব্ধ। মির্জা রাজনীতিতে কম ঝানু নন। তার পরিবার ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক পরিবার। সাংবাদিকদের কাছে তিনি রহস্য রেখে দিলেন। কবে শপথ নেবেন? ইতিমধ্যে খবর রটলো তিনি স্পিকারের কাছে চিঠি লিখেছেন।
আসলে সংবিধান অনুযায়ী ৯০ কার্যদিবস লেখা আছে। তাই গত পরশু ছিল শেষ দিন। তিনি শপথ নেননি মানে তার তো আর শপথ নেয়ার সুযোগ নেই। সেই দরজা বন্ধ হয়ে গেছে। অথচ সাংবাদিকরা সেটা ধরতে পারেনি। তাদের কেউ কেউ খবর দিয়েছে, স্পিকারের কাছে তিনি চিঠি লিখেছেন। আসলে তো চিঠি লেখার সুযোগ ছিল না। স্পিকারের সময় বাড়ানোর এখতিয়ার ছিল না। জীবনে শিক্ষকতা করেছেন মির্জা। তাই হয়তো পরিহাস করেছেন। বলেছেন, আপনারা সময় হলে জানতে পারবেন। গতকাল প্রেস ক্লাবের এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, দলের কৌশলের অংশ হিসেবে বিএনপির অন্য নির্বাচিতরা শপথ নিয়েছেন। কিন্তু তিনি নেননি। নেবেন না। অবশ্য প্রশ্ন মুছে যায়নি। প্রশ্ন উঠেছে, তাহলে বিএনপি কি বেগম খালেদা জিয়ার আসনটি ছেড়ে দিলো। ওই আসনটিতে আগামী ৯০ দিনের মধ্যে উপ-নির্বাচন হলে বিএনপি বয়কট করবে। আর সেখানে এবারে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হবে নাকি, ওই আসনটিতে জাতীয় পার্টিকে দেয়া হবে। সেটা একটা দেখার বিষয়। গত ৩০শে ডিসেম্বরের নির্বাচনে মির্জার কাছে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হেরে গেছে।
তবে নাটকীয়তা এবং নাটকীয়তার মধ্য দিয়ে হলেও বিএনপি একটি অসাধারণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন। খোদ বিএনপি মহাসচিবই বলছেন, এটা চমক। এটা একটি ইউ টার্ন।
কারণ দুর্বল হয়ে পড়া বিএনপি এবং বিএনপির নির্বাসিত নেতা তারেক রহমান এবং কারাবন্দি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে সামনে রেখে বিএনপির পক্ষে এর চেয়ে বেশি ভালো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া সম্ভব ছিল না বলেই রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বিশ্লেষণ করছেন।
যদিও মির্জার ঘনিষ্ঠসূত্রগুলোর ইঙ্গিত হলো, দুই কারণে এই সিদ্ধান্ত। দলের স্থায়ী কমিটির অস্বস্তি ও বিরক্তি প্রশমিত করা। এবং মহাসচিবের কিছুটা নাজুক স্বাস্থ্য।
তবে পর্যবেক্ষকরা দেখেছেন যে বিএনপির সামনে বিকল্পগুলো অত্যন্ত সীমিত এবং কণ্টকিত। দেখা যাচ্ছিল যে শাসক দল সংসদ ও সরকারকে এতটাই নিরঙ্কুশ করে ফেলেছে যে তাদের পক্ষে তাদেরকে এড়িয়ে আর কিছুই করার উপায় নেই। বিএনপির পক্ষে বড় কোনো রাজনৈতিক পদক্ষেপ নেয়া সম্ভব হচ্ছিল না সুতরাং বিএনপি এক ঢিলে অনেক পাখি মেরেছে।
প্রথমত বিএনপি সম্পর্কে সরকারি দলের পক্ষে আর বলা সম্ভব হবে না যে বিএনপি নেতিবাচক রাজনীতি করছে। একই কারণে বিফল হবে জেনেও তারা গণভবনে গিয়েছিল। বিএনপিকে আর জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে খোঁচা দেয়া কঠিন হবে। এই সিদ্ধান্ত নেয়ার পেছনে জামায়াতে ইসলামের কোনো ভূমিকা থাকার কথা নয় এবং ওয়াকিবহাল সূত্রগুলো বলেছে, জামায়াত কোনো ভূমিকা রাখেনি। এতে তাদের কোনো অবদান ছিল না। সুতরাং বিএনপি এই প্রথম ওদেরকে পুরো বাদ দিয়ে একটা বড় ধরনের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিতে পেরেছে বলে দাবি করা যাবে।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর যদি সংসদে যেতেন তাহলে বাস্তবতা এটাই হতো যে তার সতীর্থ, যারা সংসদে যেতে পারেন নি, যেমন মওদুদ আহমেদ প্রমুখ, তারা কোনো অবস্থাতেই মির্জার সংসদে যাওয়ার ‘কৌশলকে’ মেনে নিতেন না। বাংলাদেশের রাজনীতিতে অবশ্য আন্দোলনের কৌশল হিসেবে পার্লামেন্টে যাওয়া, না যাওয়া, বর্জন করা, বয়কট করা, সব উদাহরণ আছে। কিন্তু বাংলাদেশের ইতিহাসে এই প্রথম একটি ঘটনা ঘটলো, যেখানে পর্যবেক্ষকরা সবাই স্তম্ভিত হয়েছেন।
অনেকে একটা ঠাণ্ডা মাথায় পাকা রাজনৈতিক চাল হিসেবেই দেখছেন। অনেকে বলছেন, বিএনপির রাজনৈতিক চালটি এমন একটা সময় এসেছে যখন নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া কারাবন্দি এবং তাকে জামিন দেয়ার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। তবে বিভিন্ন সূত্রে আভাস দেয়া হচ্ছিল যে তিনি যদি প্যারোলে দরখাস্ত করেন, তাহলে সরকার সেটা বিবেচনা করতে পারেন।
বেগম খালেদাকে এমন একটা অবস্থায় ঠেলে দেয়া হয়েছে যখন তার দরকষাকষি করার আর কোনো জায়গা ছিল না। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করেন বিএনপির যেসব সংসদ সদস্য পার্লামেন্টে গিয়েছেন, তারা যদি ভালোভাবে ভূমিকা রাখতে পারেন, তাহলে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির প্রশ্নে তারা একটা বড় চাপ তৈরি করতে পারবেন। কারণ তারা সংসদ থেকে ওয়াকআউট করতে পারেন। এবং তাদেরকে বিরোধী দলের বেঞ্চে বসাতে হবে এবং বিরোধীদলের জায়গা থেকেই তারা বেগম খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যগত অবস্থা সামনে আনতে পারবেন। এটা নির্ভর করবে যারা গেছেন, তারা কতটা কি করতে পারেন, বা করতে চান, তার ওপর। তবে প্রশ্ন থাকছে, এই কৌশল না নিলেও তারা নিবৃত্ত হতেন কিনা। তাই এই ইউ টার্ন কৌশল নাকি আত্মসমর্পণ, সেটা সময় বলে দেবে।
খালেদা জিয়ার জামিনে মুক্তি দেয়ার বিষয়টিতে দলটি কোনোভাবেই সুবিধা করতে পারছিল না। কিন্তু পর্যবেক্ষকরা বিশ্বাস করেন বিএনপির সংসদ সদস্যরা সংবিধানের আওতায় একটা বিশেষ সুবিধা নিতে পারেন।
সেটা বাকস্বাধীনতা প্রয়োগের ক্ষেত্রে। কারণ পার্লামেন্টে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিয়ে কোনো বক্তব্য সাধারণভাবে স্বাধীনভাবেই দেয়া যায়। সে ক্ষেত্রে সংবিধান বলেছে, সংসদের কার্যধারার বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা যাবে না। সুতরাং মনে করা হচ্ছে যে বিএনপি একটি বুদ্ধিবৃত্তিক পদক্ষেপ নিয়েছে বটে কিন্তু সংসদে সরকারি দলের বিশাল সংখ্যাগরিষ্ঠতার মুখে দাঁড়িয়ে এই পাঁচ-সাত জন বিশেষ করে, যখন তার মধ্যে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নেই, তারা কি ঝড়ের মুখে খড়কুটো হবে না তো? তবে এও ঠিক যে বিএনপির বর্তমান অবস্থান থেকে এর থেকে ভালো আর কোন বাস্তবসম্মত বিকল্প ছিল না। যদিও অনেকেই বিশ্বাস করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে যদি সংসদে যেতে দেয়া হতো, তাহলে তিনি অনেক বড় ভূমিকা রাখতে পারতেন। অনেক বেশি কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারতেন।
এ বিষয়টি কম গুরুত্বপূর্ণ ছিল না। কিন্তু দলের অভ্যন্তরীণ চেক অ্যান্ড ব্যালেন্স, সেটাকে বজায় রাখার জন্য এর দরকার ছিল। তবে অনেক বিশ্লেষক মনে করেন এই সিদ্ধান্তের ফলে বিএনপির নির্বাসিত নেতা তারেক রহমানই ব্যক্তিগতভাবে সব থেকে বেশি সুবিধায় থাকবেন। কারণ মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর যদি পার্লামেন্টে যেতেন, তাহলে তার পক্ষে যে ধরনের সংসদীয় নেতা হিসেবে আত্মপ্রকাশের সুযোগ হতো, সেখানে তারেক রহমানের শূন্যস্থান ভরাট হওয়ার একটা সম্ভাবনা তৈরি হতো কিনা কে জানে। সেটা এখন আর অতটা থাকবে না। সুতরাং সব দিক বিবেচনায় বিএনপি একটা ভালো সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে এর পরিপ্রেক্ষিতে সরকারি দল যে ধরনের সতর্ক প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে সেটা লক্ষণীয়। তারা তাৎক্ষণিকভাবে বলেছে তারা এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করবে না। সুতরাং এটা দেখার বিষয় যে সামনের বাংলাদেশ রাজনীতি যা এখন ডামাডোলপূর্ণ নয়, আবার স্বস্তিকরও নয়, সেটা কিভাবে এগিয়ে যায়, কিভাবে কি মেরুকরণ ঘটায়।
No comments