সড়কে নিরাপত্তা: হাইকোর্টের নির্দেশনা বাস্তবায়ন হচ্ছে কতটুকু? by মোহাম্মদ ওমর ফারুক
হাইকোর্টের
নির্দেশনার বাস্তবায়ন কতটুকু হচ্ছে? বিভিন্ন সময় হাইকোর্ট স্বপ্রণোদিত
হয়ে কিংবা রিটের পরিপ্রেক্ষিতে নির্দেশনা দেন। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এসব
নির্দেশনা বাস্তবায়নে কতটুকু আন্তরিক? বিশেষ করে সড়ক দুর্ঘটনায় বিভিন্ন সময়
দেয়া রায় কিংবা নির্দেশনার কতটুকু বাস্তবায়ন হয়েছে? এসব খতিয়ে দেখতে গিয়ে
তাজ্জব হতে হয়। ২০০৭ সালে স্বপ্রণোদিত হয়ে হাইকোর্ট সারা দেশে প্রতিটি
গাড়িতে গতি নিয়ন্ত্রক যন্ত্র স্থাপনের নির্দেশ দেন। কিন্তু রায় ঘোষণার এক
যুগেও নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে পারেনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। ওই বছরের ১১ই
ডিসেম্বর রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান ঢাকা সিটি
কলেজের ছাত্রী সাদিয়া আফরিন সূচি। দুর্ঘটনায় সূচির মৃত্যু গোটা দেশকে নাড়া
দেয়। এরপরই স্বপ্রণোদিত হয়ে হাইকোর্ট প্রথমে রুল এবং পরে এ রায় দিয়েছিলেন।
শুধু তাই নয়, ২০১৫ সালে উচ্চ আদালতের একটি বেঞ্চ স্বপ্রণোদিত হয়ে ফিটনেসবিহীন যান চলাচল বন্ধ এবং ভুয়া লাইসেন্স জব্দ করতে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষকে (বিআরটিএ) নির্দেশ দিয়েছিলেন।
এ নির্দেশনার চারবছর পেরিয়ে গেছে। কিন্তু এ ব্যাপারে কোনো অগ্রগতি নেই। উল্টো গতবছর সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জাতীয় সংসদে লাইসেন্সবিহীন গাড়িচালকের যে তথ্য দিয়েছেন তা রীতিমতো উদ্বেগজনক। মন্ত্রীর তথ্য অনুযায়ী গত বছরের জুন পর্যন্ত লাইসেন্সবিহীন চালকের সংখ্যা ছিল প্রায় ১৮ লাখের কাছাকাছি। ওদিকে ২০১৭ সালে রাজধানীর পাশাপাশি সারাদেশে যানবাহনে হাইড্রোলিক হর্ন ব্যবহার বন্ধের নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে এ বিষয়টি পর্যালোচনা করে শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে পরিবেশ আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ নেয়ার নির্দেশনা দিয়েছিলেন। বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি মোহাম্মদ উল্লাহর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দিয়েছিলেন। আদেশে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজি) ও ট্রাফিক পুলিশ কমিশনারসহ চারজনকে এ আদেশ বাস্তায়নে পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছিল। অথচ এ রায়ের দুই বছর পরেও রাজধানীতে হাইড্রোলিক হর্নের অত্যাচারে অতিষ্ঠ সাধারণ মানুষ। ্বিন্দুমাত্র কমেনি হাইড্রোলিক হর্নের আধিপত্য।
একই বছর সারা দেশের মহাসড়কে অবৈধ নসিমন, করিমন ও ভটভটি চলাচল বন্ধে সার্কুলার জারি করতে সরকারের প্রতি নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় ১০ জেলার মহাসড়ক থেকে শ্যালো ইঞ্জিনচালিত তিন চাকার বাহন নসিমন, করিমন প্রত্যাহারের নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। ওই আদেশে বলা হয়েছিল এর পরের একসপ্তাহের মধ্যে এসব যানবাহন প্রত্যাহার করে নিতে হবে। এই নির্দেশনা প্রথম সপ্তাহে কিছুটা কার্যকর দেখা গেলেও গত দুই বছরে সামান্য পরিবর্তন দেখা যায়নি মহাসড়কগুলোতে।
এদিকে ২০০১ সালের ১১ই ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টের দেয়া রায়ে বলা হয়েছিল ঢাকার ফুটপাত ও চলাচলের পথকে জনসাধারণের ব্যবহার এবং পথচারীদের জন্য অবশ্যই পরিচ্ছন্ন ও উন্মুক্ত রাখতে হবে। ওই রায়ে আরও বলা হয়েছিল, অবৈধ স্থাপনা অপসারণে সংশ্লিষ্টদের পরিকল্পিত পদক্ষেপ নিয়ে বন্ধ করতে হবে । সড়কের ফুটপাত ও চলাচলের পথে নির্মাণসামগ্রী রাখা যাবে না। হাইকোর্টের এই রায় ঘোষণার পরে কেটে গেছে ১৮ বছর। এ রায়ের পর ফুটপাত আংশিক দখলমুক্ত করতে পারলেও পুরোপুরি দখলমুক্ত হয়নি। এছাড়া ফুটপাত দখল থাকায় প্রধান সড়ক দিয়ে হাঁটতে গিয়ে পথচারীরা দুর্ঘটনায় পড়ছেন ও নিত্যদিনের যানজট প্রকট হচ্ছে। সুনির্দিষ্ট আইন থাকলেও ঢাকার ফুটপাত দখল মুক্ত না হওয়ায় জনস্বার্থে একটি রিট আবেদন করা হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ১৮ বছর আগে রায়ে বেশকিছু নির্দেশনা দেন হাইকোর্ট। তৎকালীন বিচারপতি আবু সাঈদ আহম্মেদ ও বিচারপতি খাদেমুল ইসলাম চৌধুরীর বেঞ্চের ওই রায়ে ঢাকার ফুটপাত পরিচ্ছন্ন ও অবৈধ দখলমুক্ত রাখার নির্দেশনার পাশাপাশি জনস্বার্থে সব রায় ও আদেশ বাস্তবায়নে একটি তদারকি সেল গঠন করতে বলা হয়। ১৮ বছর পরও এ রায়ের কোনো অগ্রগ্রতি নেই।
২০১২ সালে হাইকোর্ট বিভাগ ফুটপাতে মোটরসাইকেল চালানো নিষিদ্ধ করেন। ফুটপাতে মোটরসাইকেল চালালে চালকদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণে পুলিশকে নির্দেশও দেন হাইকোর্ট। এ রায়ের সাত বছর পরে রাজধানীতে অ্যাপসভিত্তিক যাত্রীসেবার ফলে মোটরসাইকেল বেড়েছে কয়েকগুন। ফলে রাজধানীর ফুটপাতগুলো প্রায়ই দখলে থাকে মোটরবাইক চালকদের।
২০১৫ সালে সড়ক দুর্ঘটনা রোধে মহাসড়কের পাশের অনুমোদনহীন সব স্থাপনা অপসারণ ও কার্যকর ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপনাসহ কয়েকটি নির্দেশনা দেন হাইকোর্ট। নির্দেশনায় বলা হয়েছে, যানবাহন নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা-২০০১-এর ৮ বিধি অনুসারে মহাসড়কের পাশে ১০ মিটারের মধ্যে স্থাপনা তৈরিতে সরকারের অনুমতি দেয়ার বিধান বাতিল করতে হবে। পাঁচবছর পর থেকে চালকদের ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসি পাস নির্ধারণ করতে হবে। রোড ডিভাইডার তৈরি ও পথচারীদের জন্য প্রয়োজনীয় আন্ডারপাস নির্মাণ এবং স্কুলের সিলেবাসে ট্রাফিক নিয়ম অন্তর্ভুক্ত করতে বলা হয়েছে।
অন্যদিকে গত ২৭শে মার্চ রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে ফিটনেস ও নিবন্ধনহীন গাড়ি এবং লাইসেন্সহীন চালকের তথ্য জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট। আগামী ৩০ শে এপ্রিলের মধ্যে এ বিষয়ে প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করতে বলা হয়েছে। এক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কে এম হাফিজুল আলম সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের অবকাশকালীন বেঞ্চ স্বপ্রণোদিত হয়ে এ আদেশ দেন। বিআরটিএ চেয়ারম্যান, পুলিশ মহাপরিদর্শক, ঢাকার ট্রাফিক পুলিশের উত্তর ও দক্ষিণের ডিসি ও বিআরটিএ’র সড়ক নিরাপত্তা বিভাগের পরিচালক মাহবুব-ই-রাব্বানীকে এ বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে বিআরটিএ’র সড়ক নিরাপত্তা বিভাগের পরিচালককে আগামী ৩০ এপ্রিল আদালতে হাজির হয়ে এ সংক্রান্ত বিস্তারিত জানাতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে কতগুলো যানবাহনের নিবন্ধন ও চালকের লাইসেন্স নবায়নের জন্য জমা আছে, কেন যথাসময়ে নবায়ন করা হচ্ছে না? সে বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির পরিসংখ্যান অনুসারে, দেশে গত বছর ৫৫১৪টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৭২২১ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন ১৫৪৬৬ জন। সমিতির পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানো, বিপজ্জনক ওভারটেকিং, সড়ক-মহাসড়ক ও রাস্তাঘাটের নির্মাণ ক্রটি, ফিটনেসবিহীন যানবাহন, যাত্রী ও পথচারীদের অসতর্কতা, চলন্ত অবস্থায় মোবাইল ফোন বা হেডফোন ব্যবহার, মাদক সেবন করে যানবাহন চালানো, রেলক্রসিংয়ে ফিডার রোডের যানবাহন উঠে পড়া, রাস্তায় ফুটপাত না থাকা, ফুটপাত বেদখলে থাকায় রাস্তার মাঝপথে পথচারীদের যাতায়াতসহ নানা কারণে দুর্ঘটনা ঘটছে। অথচ এসব বিষয় নিয়ে সংশ্লিষ্টদের সর্তক করে হাইকোর্ট অনেক আগে থেকেই নির্দেশনা দিয়ে আসছে। কিন্তু এসব নির্দেশনা নিয়ে নেই কারো কর্ণপাত। এ ব্যাপারে হাইকোর্টের আইনজীবী মনজিল মোর্শেদ বলেন, কিছু কিছু নির্দেশনা বাস্তবায়ন হচ্ছে। আবার নানা চাপের কারনে কিছু নির্দেশনা বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না। তবে যেসব নির্দেশনা বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না এগুলো চিহ্নিত করে কাজ করা উচিৎ। এবং এসব ক্ষেত্রে যাদের গাফিলতি সেটাও খুঁজে বের করা প্রয়োজন।
বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান, সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট আবদুল বাসেত মজুমদার বলেন, উচ্চ আদালতের নির্দেশনা কেন বাস্তবায়ন করা যচ্ছে না সেটা খুঁজে বের করা জরুরি। দেশের সব্বোর্চ আদালতের রায় মানতে সবাই বাধ্য।
শুধু তাই নয়, ২০১৫ সালে উচ্চ আদালতের একটি বেঞ্চ স্বপ্রণোদিত হয়ে ফিটনেসবিহীন যান চলাচল বন্ধ এবং ভুয়া লাইসেন্স জব্দ করতে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষকে (বিআরটিএ) নির্দেশ দিয়েছিলেন।
এ নির্দেশনার চারবছর পেরিয়ে গেছে। কিন্তু এ ব্যাপারে কোনো অগ্রগতি নেই। উল্টো গতবছর সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জাতীয় সংসদে লাইসেন্সবিহীন গাড়িচালকের যে তথ্য দিয়েছেন তা রীতিমতো উদ্বেগজনক। মন্ত্রীর তথ্য অনুযায়ী গত বছরের জুন পর্যন্ত লাইসেন্সবিহীন চালকের সংখ্যা ছিল প্রায় ১৮ লাখের কাছাকাছি। ওদিকে ২০১৭ সালে রাজধানীর পাশাপাশি সারাদেশে যানবাহনে হাইড্রোলিক হর্ন ব্যবহার বন্ধের নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে এ বিষয়টি পর্যালোচনা করে শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে পরিবেশ আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ নেয়ার নির্দেশনা দিয়েছিলেন। বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি মোহাম্মদ উল্লাহর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দিয়েছিলেন। আদেশে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজি) ও ট্রাফিক পুলিশ কমিশনারসহ চারজনকে এ আদেশ বাস্তায়নে পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছিল। অথচ এ রায়ের দুই বছর পরেও রাজধানীতে হাইড্রোলিক হর্নের অত্যাচারে অতিষ্ঠ সাধারণ মানুষ। ্বিন্দুমাত্র কমেনি হাইড্রোলিক হর্নের আধিপত্য।
একই বছর সারা দেশের মহাসড়কে অবৈধ নসিমন, করিমন ও ভটভটি চলাচল বন্ধে সার্কুলার জারি করতে সরকারের প্রতি নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় ১০ জেলার মহাসড়ক থেকে শ্যালো ইঞ্জিনচালিত তিন চাকার বাহন নসিমন, করিমন প্রত্যাহারের নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। ওই আদেশে বলা হয়েছিল এর পরের একসপ্তাহের মধ্যে এসব যানবাহন প্রত্যাহার করে নিতে হবে। এই নির্দেশনা প্রথম সপ্তাহে কিছুটা কার্যকর দেখা গেলেও গত দুই বছরে সামান্য পরিবর্তন দেখা যায়নি মহাসড়কগুলোতে।
এদিকে ২০০১ সালের ১১ই ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টের দেয়া রায়ে বলা হয়েছিল ঢাকার ফুটপাত ও চলাচলের পথকে জনসাধারণের ব্যবহার এবং পথচারীদের জন্য অবশ্যই পরিচ্ছন্ন ও উন্মুক্ত রাখতে হবে। ওই রায়ে আরও বলা হয়েছিল, অবৈধ স্থাপনা অপসারণে সংশ্লিষ্টদের পরিকল্পিত পদক্ষেপ নিয়ে বন্ধ করতে হবে । সড়কের ফুটপাত ও চলাচলের পথে নির্মাণসামগ্রী রাখা যাবে না। হাইকোর্টের এই রায় ঘোষণার পরে কেটে গেছে ১৮ বছর। এ রায়ের পর ফুটপাত আংশিক দখলমুক্ত করতে পারলেও পুরোপুরি দখলমুক্ত হয়নি। এছাড়া ফুটপাত দখল থাকায় প্রধান সড়ক দিয়ে হাঁটতে গিয়ে পথচারীরা দুর্ঘটনায় পড়ছেন ও নিত্যদিনের যানজট প্রকট হচ্ছে। সুনির্দিষ্ট আইন থাকলেও ঢাকার ফুটপাত দখল মুক্ত না হওয়ায় জনস্বার্থে একটি রিট আবেদন করা হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ১৮ বছর আগে রায়ে বেশকিছু নির্দেশনা দেন হাইকোর্ট। তৎকালীন বিচারপতি আবু সাঈদ আহম্মেদ ও বিচারপতি খাদেমুল ইসলাম চৌধুরীর বেঞ্চের ওই রায়ে ঢাকার ফুটপাত পরিচ্ছন্ন ও অবৈধ দখলমুক্ত রাখার নির্দেশনার পাশাপাশি জনস্বার্থে সব রায় ও আদেশ বাস্তবায়নে একটি তদারকি সেল গঠন করতে বলা হয়। ১৮ বছর পরও এ রায়ের কোনো অগ্রগ্রতি নেই।
২০১২ সালে হাইকোর্ট বিভাগ ফুটপাতে মোটরসাইকেল চালানো নিষিদ্ধ করেন। ফুটপাতে মোটরসাইকেল চালালে চালকদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণে পুলিশকে নির্দেশও দেন হাইকোর্ট। এ রায়ের সাত বছর পরে রাজধানীতে অ্যাপসভিত্তিক যাত্রীসেবার ফলে মোটরসাইকেল বেড়েছে কয়েকগুন। ফলে রাজধানীর ফুটপাতগুলো প্রায়ই দখলে থাকে মোটরবাইক চালকদের।
২০১৫ সালে সড়ক দুর্ঘটনা রোধে মহাসড়কের পাশের অনুমোদনহীন সব স্থাপনা অপসারণ ও কার্যকর ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপনাসহ কয়েকটি নির্দেশনা দেন হাইকোর্ট। নির্দেশনায় বলা হয়েছে, যানবাহন নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা-২০০১-এর ৮ বিধি অনুসারে মহাসড়কের পাশে ১০ মিটারের মধ্যে স্থাপনা তৈরিতে সরকারের অনুমতি দেয়ার বিধান বাতিল করতে হবে। পাঁচবছর পর থেকে চালকদের ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসি পাস নির্ধারণ করতে হবে। রোড ডিভাইডার তৈরি ও পথচারীদের জন্য প্রয়োজনীয় আন্ডারপাস নির্মাণ এবং স্কুলের সিলেবাসে ট্রাফিক নিয়ম অন্তর্ভুক্ত করতে বলা হয়েছে।
অন্যদিকে গত ২৭শে মার্চ রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে ফিটনেস ও নিবন্ধনহীন গাড়ি এবং লাইসেন্সহীন চালকের তথ্য জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট। আগামী ৩০ শে এপ্রিলের মধ্যে এ বিষয়ে প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করতে বলা হয়েছে। এক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কে এম হাফিজুল আলম সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের অবকাশকালীন বেঞ্চ স্বপ্রণোদিত হয়ে এ আদেশ দেন। বিআরটিএ চেয়ারম্যান, পুলিশ মহাপরিদর্শক, ঢাকার ট্রাফিক পুলিশের উত্তর ও দক্ষিণের ডিসি ও বিআরটিএ’র সড়ক নিরাপত্তা বিভাগের পরিচালক মাহবুব-ই-রাব্বানীকে এ বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে বিআরটিএ’র সড়ক নিরাপত্তা বিভাগের পরিচালককে আগামী ৩০ এপ্রিল আদালতে হাজির হয়ে এ সংক্রান্ত বিস্তারিত জানাতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে কতগুলো যানবাহনের নিবন্ধন ও চালকের লাইসেন্স নবায়নের জন্য জমা আছে, কেন যথাসময়ে নবায়ন করা হচ্ছে না? সে বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির পরিসংখ্যান অনুসারে, দেশে গত বছর ৫৫১৪টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৭২২১ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন ১৫৪৬৬ জন। সমিতির পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানো, বিপজ্জনক ওভারটেকিং, সড়ক-মহাসড়ক ও রাস্তাঘাটের নির্মাণ ক্রটি, ফিটনেসবিহীন যানবাহন, যাত্রী ও পথচারীদের অসতর্কতা, চলন্ত অবস্থায় মোবাইল ফোন বা হেডফোন ব্যবহার, মাদক সেবন করে যানবাহন চালানো, রেলক্রসিংয়ে ফিডার রোডের যানবাহন উঠে পড়া, রাস্তায় ফুটপাত না থাকা, ফুটপাত বেদখলে থাকায় রাস্তার মাঝপথে পথচারীদের যাতায়াতসহ নানা কারণে দুর্ঘটনা ঘটছে। অথচ এসব বিষয় নিয়ে সংশ্লিষ্টদের সর্তক করে হাইকোর্ট অনেক আগে থেকেই নির্দেশনা দিয়ে আসছে। কিন্তু এসব নির্দেশনা নিয়ে নেই কারো কর্ণপাত। এ ব্যাপারে হাইকোর্টের আইনজীবী মনজিল মোর্শেদ বলেন, কিছু কিছু নির্দেশনা বাস্তবায়ন হচ্ছে। আবার নানা চাপের কারনে কিছু নির্দেশনা বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না। তবে যেসব নির্দেশনা বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না এগুলো চিহ্নিত করে কাজ করা উচিৎ। এবং এসব ক্ষেত্রে যাদের গাফিলতি সেটাও খুঁজে বের করা প্রয়োজন।
বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান, সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট আবদুল বাসেত মজুমদার বলেন, উচ্চ আদালতের নির্দেশনা কেন বাস্তবায়ন করা যচ্ছে না সেটা খুঁজে বের করা জরুরি। দেশের সব্বোর্চ আদালতের রায় মানতে সবাই বাধ্য।
No comments