অর্জন অনেক এগুতে হবে আরো by মরিয়ম চম্পা
আন্তর্জাতিক
নারী দিবস আজ। নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে পালিত হবে দিবসটি। প্রতিবছর এ
দিবসটি এলেই সামনে আসে নারীর অর্জন সীমাবদ্ধতা আর সমতার বিষয়টি। এবারের
দিবসের প্রতিপাদ্যও করা হয়েছে- ‘সমতা’। নারী দিবস সামনে রেখে দেশের
প্রতিষ্ঠিত নারী নেত্রীরা বলছেন, দেশে নারীদের অর্জন অনেক। সঙ্গে আছে অনেক
চ্যালেঞ্জও।
সমতা প্রতিষ্ঠা ও নিজ নিজ ক্ষেত্রে সফলতার জন্য নারীদের আরও এগিয়ে যেতে হবে বলে মনে করছেন তারা। রিকশামিস্ত্রি নাজমা আক্তার। বয়স ৫০ বছর।
গ্রামের বাড়ি বরিশাল জেলার মেহেন্দীগঞ্জ থানায়। ধানমন্ডি স্টার কাবাবের ঠিক বিপরীতে আবাহনী মাঠের পশ্চিম পাশের ফুটপাথ ঘেঁষে পরপর দু’টি রিকশা-সাইকেল সারাইয়ের দোকান। প্রথমটি মেয়ের পরেরটি মা নাজমার। রঙিন প্রিন্টের থ্রি-পিস পরে অলস দুপুরে পিঁড়ি পেতে বসে আছেন নাজমা। নাজমা অসুস্থ হওয়ায় রিকশাচালকরা নিজ তাগিদে তাদের প্রয়োজনীয় কাজ সেরে নিচ্ছেন। সামনেই রিকশা মেরামতের যন্ত্রপাতি থরে থরে সাজানো। রিকশা সারাইয়ের কাজে একজন নারী! এ রকম দৃশ্য দ্বিতীয়টি সচরাচর চোখে পড়বে বলে মনে হয় না। অনেকটা কৌতূহল নিয়ে এগিয়ে গিয়ে কথা হয় তার সঙ্গে।
নাজমা বলেন, অভাবের তাড়নায় বাবা-মা দু’জন ঢাকা চলে আসেন। আমার জন্ম ঢাকায়। বাবা ছিলেন রিকশামিস্ত্রি। ছোটবেলায় যখন বাবাকে রিকশার গ্যারেজে কাজ করতে দেখতাম তখন মনোযোগ সহকারে বাবার কাজ খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতাম। এককথায় বলতে গেলে আমি বড় হয়েছি রিকশা সারাইয়ের যন্ত্রপাতির সঙ্গে। ফলে এই কাজটি আমাকে খুব টানতো। সেই ছোটবেলাতেই বাবার কাছ থেকে আগ্রহভরে শেখেন রিকশা মেরামতের বিভিন্ন কাজ। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে কাজের দক্ষতা। মাত্র ১২ বছর বয়সে বিয়ে হয় নাজমার। স্বামী-সংসার বোঝার বয়স ছিল না তার। স্বামীর সংসারেই ধীরে ধীরে পরিণত হন তিনি। অন্য আর দশটা বাঙালি বধূর মতো গৃহিণীর জীবন শুরু করেছিলেন নাজমা। ‘কিছুদিন যেতেই স্বামীর আচরণ বদলাতে থাকে। মানসিক অত্যাচার-অপমান, গায়ে হাত তোলা সবই করতেন তার স্বামী। নাজমা একসময় বুঝে যান আর্থিক স্বাবলম্বিতাই তাকে এই অপমান-অত্যাচারের গ্লানি থেকে মুক্তি দিতে পারে। ফলে বাবার শেখানো কাজটাকেই গ্রহণ করেন পেশা হিসেবে। প্রথম স্বামী মারা যাওয়ার পর দ্বিতীয় বিয়ে করেন তিনি।
বর্তমান স্বামীকে নিয়ে খুব সুখী নাজমা। স্বামী তার থেকে বয়সে সামান্য ছোট হলেও তাকে খুব সম্মান-শ্রদ্ধা করেন। স্বামী-সন্তান ও সংসার সামলে পেশার দিক থেকে সময়ের তালে তালে নাজমা হয়ে উঠেছেন আত্মনির্ভরশীল একজন। একজন দক্ষ রিকশামিস্ত্রি নয়, রিকশা মেরামতের প্রশিক্ষক হিসেবেও নাজমা আক্তার প্রতিষ্ঠিত। ঢাকা শহরজুড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে তার অসংখ্য ভক্ত ও শিষ্য। নাজমা বলেন, নারী দিবস বুঝি না। তবে আমি আমার স্বামীকে নিয়ে অনেক সুখে শান্তিতে সংসার করছি। গত তিন মাস হলো স্বামীর হাতে নিজের ব্যবসায়ের সকল দায়-দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়েছি। খুব শ্রদ্ধা করেন তিনি আমাকে। আগের স্বামীর সংসারে ৫ সন্তান আছে। দুই ছেলে- তিন মেয়ে। সবাইকেই এ কাজে হাতেখড়ি দিয়েছেন। তার মতে, ‘নারীর কাজ-পুরুষের কাজ’ বলে কাজের কোনো বিভাজন হয় না। অভিজ্ঞতা থাকলে যে কোনো কাজই পুরুষ বা নারী জীবিকা নির্বাহের মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করতে পারে। হাত দিয়ে দেখিয়ে বললেন ওই যে, খানিকটা দূরে আমার ছোট মেয়ে আমার মতো রিকশার গ্যারেজ চালাচ্ছে।
মোবাইল স্মার্টফোনের অ্যাপভিত্তিক ট্যাক্সিসেবার নেটওয়ার্ক উবারের মাধ্যমে মোটরবাইক চালান শাহনাজ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের কল্যাণে তিনি অনেকটাই পরিচিতি লাভ করেছেন। তবে জানুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময়ে তার মোটরসাইকেলটি চুরি এবং উদ্ধার হওয়ার ঘটনায় তিনি ব্যাপক ভাবে আলোচিত হন।
পুরো নাম শাহনাজ আক্তার। বয়স ৩০ বছর। স্বামী থাকতেও নেই। পরিবারের অমতে নিজের পছন্দের পাত্রকে ভালোবেসে বিয়ে করেন শাহনাজ। তবে বিয়ের পর থেকে স্বামীর ভালোবাসা জিনিস কি সেটা বুঝতেই পারেননি এই সংগ্রামী নারী। উল্টো তার ওপর চালানো হতো শারীরিক ও মানসিক অত্যাচার। এরই মধ্যে জন্ম নেয় তাদের দুই কন্যাসন্তান। শাহনাজ বলেন, স্বামীর ভালোবাসাতো পাইনি। উল্টো তার নিগ্রহ সহ্য করতে করতে এক সময় প্রচণ্ড মাত্রায় অতিষ্ঠ হয়ে পড়ি। জন্মের পর বাবা মারা যায়। মায়ের দ্বিতীয় বিয়ে হয়। দ্বিতীয় বাবা কিংবা তার ছেলে মেয়েদের লাথি-ঝাঁটা ছিল আমার নিত্যনৈমিত্তিক বিষয়।
তিনি বলেন, আমার দুই মেয়ে। বড় মেয়ে মিরপুর বাঙলা কলেজে নবম শ্রেণিতে পড়ে। আর ছোট মেয়ে প্রথম শ্রেণিতে পড়ে। ওদেরকে মানুষের মতো মানুষ হিসেবে গড়ে তোলাই হচ্ছে আমার একমাত্র চ্যালেঞ্জ। মোটরসাইকেল চালিয়ে আয়-রোজগার করা ও সংসার চালানো এটা আমার দৈনন্দিন রিজিকেরই একটি অংশ। আমাদের সমাজে একটি কথা প্রচলিত আছে যে, ‘পুরুষ শাসিত সমাজ’। আমি এটা পরিবর্তন করতে চাই। নারী দিবস উপলক্ষে আমার মেসেজ থাকবে, প্রত্যেকটি নারীর প্রত্যয় হোক ‘এই প্রচলিত কথাটি আমরা পরিবর্তন করবো।
এই পুরুষ শাসিত সমাজে আমরা পুরুষ-মহিলা উভয় মিলে এই সমস্যার সমাধান করবো। প্রত্যেক নারীর কাছে আমার অনুরোধ থাকবে, আসুন আমরা সবাই মিলে নারী-পুরুষ ‘উভয় শাসিত সমাজ তৈরি করি’। আমার মাধ্যমে আমি এই কাজটা শুরু করতে চাচ্ছি। আমার মতো সাহস করে যদি নারীরা পথে নামেন তাহলেই এটা সম্ভব। একার পক্ষে এটা সম্ভব হবে না। এমনকি নারীদের মনে ভয় থাকলেও এটা হবে না। আমাদের মুসলিম দেশগুলোর অধিকাংশ নারীই লজ্জিত এবং ভীতু স্বভাবের হয়ে থাকে। শতকরা ৯৫ জনই ভয় অথবা লজ্জা পায়। কিংবা পরিবারের বাবা-মা, স্বামী অথবা ভাই বাধা দিচ্ছে। তিনি বলেন, পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের নারীরা যদি টেম্পু চালাতে পারে তাহলে আমরা কেন পিছিয়ে থাকবো। স্বামী পরিত্যক্তা নারী হিসেবে আমি যদি সন্তান ও মা বোনের দায়িত্ব নিতে পারি। রাস্তায় মোটরসাইকেল দাবড়িয়ে বেড়াতে পারি। তাহলে অন্যরা পারবে না কেন।
এবার নারী দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে নারীর সমতা। ১৮৫৭ সালের ৮ই মার্চ। মজুরি বৈষম্য, কর্মঘণ্টা নির্ধারণ এবং কর্মক্ষেত্রে বৈরী পরিবেশের প্রতিবাদ করেন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কের সুতা কারখানার একদল শ্রমজীবী নারী। তাঁদের ওপরে দমন-পীড়ন চালায় মালিকপক্ষ। নানা ঘটনার পরে ১৯০৮ সালে জার্মান সমাজতান্ত্রিক নেত্রী ও রাজনীতিবিদ ক্লারা জেটকিনের নেতৃত্বে প্রথমবারের মতো নারী সম্মেলন করা হয়। এরপর ১৯১০ খ্রিস্টাব্দে ডেনমার্কের কোপেনহেগেনে অনুষ্ঠিত হয় দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন। ১৭টি দেশ থেকে ১০০ জন নারী প্রতিনিধি এতে যোগ দিয়েছিলেন। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৭৫ সাল থেকে জাতিসংঘ দিনটি নারী দিবস হিসেবে পালন করছে। তখন থেকেই বিভিন্ন দেশে নারীর সংগ্রামের ইতিহাসকে স্মরণ করে দিবসটি পালন শুরু হয়। ‘সবাই মিলে ভাব, নতুন কিছু করো, নারী-পুরুষ সমতার নতুন বিশ্ব গড়ো’ স্লোগানকে সামনে রেখে আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালিত হবে সারা বিশ্বে।
সমতা প্রতিষ্ঠা ও নিজ নিজ ক্ষেত্রে সফলতার জন্য নারীদের আরও এগিয়ে যেতে হবে বলে মনে করছেন তারা। রিকশামিস্ত্রি নাজমা আক্তার। বয়স ৫০ বছর।
গ্রামের বাড়ি বরিশাল জেলার মেহেন্দীগঞ্জ থানায়। ধানমন্ডি স্টার কাবাবের ঠিক বিপরীতে আবাহনী মাঠের পশ্চিম পাশের ফুটপাথ ঘেঁষে পরপর দু’টি রিকশা-সাইকেল সারাইয়ের দোকান। প্রথমটি মেয়ের পরেরটি মা নাজমার। রঙিন প্রিন্টের থ্রি-পিস পরে অলস দুপুরে পিঁড়ি পেতে বসে আছেন নাজমা। নাজমা অসুস্থ হওয়ায় রিকশাচালকরা নিজ তাগিদে তাদের প্রয়োজনীয় কাজ সেরে নিচ্ছেন। সামনেই রিকশা মেরামতের যন্ত্রপাতি থরে থরে সাজানো। রিকশা সারাইয়ের কাজে একজন নারী! এ রকম দৃশ্য দ্বিতীয়টি সচরাচর চোখে পড়বে বলে মনে হয় না। অনেকটা কৌতূহল নিয়ে এগিয়ে গিয়ে কথা হয় তার সঙ্গে।
নাজমা বলেন, অভাবের তাড়নায় বাবা-মা দু’জন ঢাকা চলে আসেন। আমার জন্ম ঢাকায়। বাবা ছিলেন রিকশামিস্ত্রি। ছোটবেলায় যখন বাবাকে রিকশার গ্যারেজে কাজ করতে দেখতাম তখন মনোযোগ সহকারে বাবার কাজ খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতাম। এককথায় বলতে গেলে আমি বড় হয়েছি রিকশা সারাইয়ের যন্ত্রপাতির সঙ্গে। ফলে এই কাজটি আমাকে খুব টানতো। সেই ছোটবেলাতেই বাবার কাছ থেকে আগ্রহভরে শেখেন রিকশা মেরামতের বিভিন্ন কাজ। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে কাজের দক্ষতা। মাত্র ১২ বছর বয়সে বিয়ে হয় নাজমার। স্বামী-সংসার বোঝার বয়স ছিল না তার। স্বামীর সংসারেই ধীরে ধীরে পরিণত হন তিনি। অন্য আর দশটা বাঙালি বধূর মতো গৃহিণীর জীবন শুরু করেছিলেন নাজমা। ‘কিছুদিন যেতেই স্বামীর আচরণ বদলাতে থাকে। মানসিক অত্যাচার-অপমান, গায়ে হাত তোলা সবই করতেন তার স্বামী। নাজমা একসময় বুঝে যান আর্থিক স্বাবলম্বিতাই তাকে এই অপমান-অত্যাচারের গ্লানি থেকে মুক্তি দিতে পারে। ফলে বাবার শেখানো কাজটাকেই গ্রহণ করেন পেশা হিসেবে। প্রথম স্বামী মারা যাওয়ার পর দ্বিতীয় বিয়ে করেন তিনি।
বর্তমান স্বামীকে নিয়ে খুব সুখী নাজমা। স্বামী তার থেকে বয়সে সামান্য ছোট হলেও তাকে খুব সম্মান-শ্রদ্ধা করেন। স্বামী-সন্তান ও সংসার সামলে পেশার দিক থেকে সময়ের তালে তালে নাজমা হয়ে উঠেছেন আত্মনির্ভরশীল একজন। একজন দক্ষ রিকশামিস্ত্রি নয়, রিকশা মেরামতের প্রশিক্ষক হিসেবেও নাজমা আক্তার প্রতিষ্ঠিত। ঢাকা শহরজুড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে তার অসংখ্য ভক্ত ও শিষ্য। নাজমা বলেন, নারী দিবস বুঝি না। তবে আমি আমার স্বামীকে নিয়ে অনেক সুখে শান্তিতে সংসার করছি। গত তিন মাস হলো স্বামীর হাতে নিজের ব্যবসায়ের সকল দায়-দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়েছি। খুব শ্রদ্ধা করেন তিনি আমাকে। আগের স্বামীর সংসারে ৫ সন্তান আছে। দুই ছেলে- তিন মেয়ে। সবাইকেই এ কাজে হাতেখড়ি দিয়েছেন। তার মতে, ‘নারীর কাজ-পুরুষের কাজ’ বলে কাজের কোনো বিভাজন হয় না। অভিজ্ঞতা থাকলে যে কোনো কাজই পুরুষ বা নারী জীবিকা নির্বাহের মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করতে পারে। হাত দিয়ে দেখিয়ে বললেন ওই যে, খানিকটা দূরে আমার ছোট মেয়ে আমার মতো রিকশার গ্যারেজ চালাচ্ছে।
মোবাইল স্মার্টফোনের অ্যাপভিত্তিক ট্যাক্সিসেবার নেটওয়ার্ক উবারের মাধ্যমে মোটরবাইক চালান শাহনাজ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের কল্যাণে তিনি অনেকটাই পরিচিতি লাভ করেছেন। তবে জানুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময়ে তার মোটরসাইকেলটি চুরি এবং উদ্ধার হওয়ার ঘটনায় তিনি ব্যাপক ভাবে আলোচিত হন।
পুরো নাম শাহনাজ আক্তার। বয়স ৩০ বছর। স্বামী থাকতেও নেই। পরিবারের অমতে নিজের পছন্দের পাত্রকে ভালোবেসে বিয়ে করেন শাহনাজ। তবে বিয়ের পর থেকে স্বামীর ভালোবাসা জিনিস কি সেটা বুঝতেই পারেননি এই সংগ্রামী নারী। উল্টো তার ওপর চালানো হতো শারীরিক ও মানসিক অত্যাচার। এরই মধ্যে জন্ম নেয় তাদের দুই কন্যাসন্তান। শাহনাজ বলেন, স্বামীর ভালোবাসাতো পাইনি। উল্টো তার নিগ্রহ সহ্য করতে করতে এক সময় প্রচণ্ড মাত্রায় অতিষ্ঠ হয়ে পড়ি। জন্মের পর বাবা মারা যায়। মায়ের দ্বিতীয় বিয়ে হয়। দ্বিতীয় বাবা কিংবা তার ছেলে মেয়েদের লাথি-ঝাঁটা ছিল আমার নিত্যনৈমিত্তিক বিষয়।
তিনি বলেন, আমার দুই মেয়ে। বড় মেয়ে মিরপুর বাঙলা কলেজে নবম শ্রেণিতে পড়ে। আর ছোট মেয়ে প্রথম শ্রেণিতে পড়ে। ওদেরকে মানুষের মতো মানুষ হিসেবে গড়ে তোলাই হচ্ছে আমার একমাত্র চ্যালেঞ্জ। মোটরসাইকেল চালিয়ে আয়-রোজগার করা ও সংসার চালানো এটা আমার দৈনন্দিন রিজিকেরই একটি অংশ। আমাদের সমাজে একটি কথা প্রচলিত আছে যে, ‘পুরুষ শাসিত সমাজ’। আমি এটা পরিবর্তন করতে চাই। নারী দিবস উপলক্ষে আমার মেসেজ থাকবে, প্রত্যেকটি নারীর প্রত্যয় হোক ‘এই প্রচলিত কথাটি আমরা পরিবর্তন করবো।
এই পুরুষ শাসিত সমাজে আমরা পুরুষ-মহিলা উভয় মিলে এই সমস্যার সমাধান করবো। প্রত্যেক নারীর কাছে আমার অনুরোধ থাকবে, আসুন আমরা সবাই মিলে নারী-পুরুষ ‘উভয় শাসিত সমাজ তৈরি করি’। আমার মাধ্যমে আমি এই কাজটা শুরু করতে চাচ্ছি। আমার মতো সাহস করে যদি নারীরা পথে নামেন তাহলেই এটা সম্ভব। একার পক্ষে এটা সম্ভব হবে না। এমনকি নারীদের মনে ভয় থাকলেও এটা হবে না। আমাদের মুসলিম দেশগুলোর অধিকাংশ নারীই লজ্জিত এবং ভীতু স্বভাবের হয়ে থাকে। শতকরা ৯৫ জনই ভয় অথবা লজ্জা পায়। কিংবা পরিবারের বাবা-মা, স্বামী অথবা ভাই বাধা দিচ্ছে। তিনি বলেন, পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের নারীরা যদি টেম্পু চালাতে পারে তাহলে আমরা কেন পিছিয়ে থাকবো। স্বামী পরিত্যক্তা নারী হিসেবে আমি যদি সন্তান ও মা বোনের দায়িত্ব নিতে পারি। রাস্তায় মোটরসাইকেল দাবড়িয়ে বেড়াতে পারি। তাহলে অন্যরা পারবে না কেন।
এবার নারী দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে নারীর সমতা। ১৮৫৭ সালের ৮ই মার্চ। মজুরি বৈষম্য, কর্মঘণ্টা নির্ধারণ এবং কর্মক্ষেত্রে বৈরী পরিবেশের প্রতিবাদ করেন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কের সুতা কারখানার একদল শ্রমজীবী নারী। তাঁদের ওপরে দমন-পীড়ন চালায় মালিকপক্ষ। নানা ঘটনার পরে ১৯০৮ সালে জার্মান সমাজতান্ত্রিক নেত্রী ও রাজনীতিবিদ ক্লারা জেটকিনের নেতৃত্বে প্রথমবারের মতো নারী সম্মেলন করা হয়। এরপর ১৯১০ খ্রিস্টাব্দে ডেনমার্কের কোপেনহেগেনে অনুষ্ঠিত হয় দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন। ১৭টি দেশ থেকে ১০০ জন নারী প্রতিনিধি এতে যোগ দিয়েছিলেন। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৭৫ সাল থেকে জাতিসংঘ দিনটি নারী দিবস হিসেবে পালন করছে। তখন থেকেই বিভিন্ন দেশে নারীর সংগ্রামের ইতিহাসকে স্মরণ করে দিবসটি পালন শুরু হয়। ‘সবাই মিলে ভাব, নতুন কিছু করো, নারী-পুরুষ সমতার নতুন বিশ্ব গড়ো’ স্লোগানকে সামনে রেখে আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালিত হবে সারা বিশ্বে।
No comments