ভূমির সমার্থক হয়ে উঠেছে ভোগান্তি by শামসুল হুদা
ভূমি
শব্দটির আদ্যক্ষর ‘ভ’। এই আদ্যক্ষর দিয়েই ভূমির সমার্থক শব্দ হচ্ছে
ভোগান্তি। দেশের মাঠপর্যায় থেকে উচ্চপর্যায় পর্যন্ত ভূমিসংক্রান্ত সেবা
নিতে যাওয়া মানুষের এক অনিবার্য নিয়তি ভোগান্তি। যার খুঁটির জোর নেই,
ক্ষমতাশালী নন, তাঁর পক্ষে ভূমি অফিসে গিয়ে প্রাপ্য সেবা পাওয়া প্রায়
অসম্ভব। কাঙ্ক্ষিত সেবা পাওয়া যাবে না, আবার হয়রানিরও শিকার হতে হবে। ভূমি
কার্যালয়ের অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বাইরের দুর্বৃত্তদের সঙ্গে মিলে
জালিয়াতের একটি চক্র প্রতিষ্ঠা করেছেন। এটা দীর্ঘ সময় ধরেই চলে আসছে। আর
অনিয়ম-দুর্নীতির ফলে ভূমিসংক্রান্ত বিরোধও বাড়ছে। সাধারণ কর দেওয়ার মতো
একটি বিষয়ও ঘুষ ছাড়া হয় না। নামজারির মতো অপরিহার্য একটি বিষয়ও নির্ধারিত
মূল্যের চেয়ে অনেক বেশি অর্থে করতে হয়। দুষ্টচক্র ভূমি নিয়ে অযথা জটিলতাও
তৈরি করে রাখে। এদের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক ভূমিদস্যু, জলাভূমি দখলকারী
চক্রের। ভূমি অফিসের অসাধু ব্যক্তিরা দস্যু ও দখলকারীদের নানা ফাঁকফোকরের
সন্ধান দেন। দুয়ে মিলে দখল-হামলা-মামলা বাড়ায়। এসব প্রতিরোধে সরকারের
বিভিন্ন দপ্তরের ভূমিকা অসহায় দর্শকের।
কৃষি খাসজমি বণ্টনের সময় এর প্রধান দাবিদার আইনত ভূমিহীন মানুষ। কিন্তু আমাদের একাধিক গবেষণায় দেখেছি, এই বণ্টন সুষম হয় না। ভূমিহীন মানুষের প্রাপ্য সম্পদ চলে যায় ক্ষমতাশালী বা তাদের অনুগ্রহভাজনদের কাছে। খাসজমি হলো নিরীহ বিষয়। আসলে সরকারের কাছে কত খাসজমি আছে, তার কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বারবার কৃষিজমিকে বাঁচিয়ে শিল্প স্থাপনের পক্ষে কথা বলেছেন। আমরাও এ কথা বলি। তবে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার সঙ্গে সরকারেরই বিভিন্ন দপ্তরের কার্যকলাপের মিল নেই। শিল্পসহ নানা ধরনের স্থাপনা তৈরিতে বারবার কর্তাব্যক্তিদের চোখ পড়ে উর্বর কৃষিজমিতে। এ ক্ষেত্রে আবার সুনির্দিষ্টভাবে প্রান্তিক মানুষ বা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষের দিকে দৃষ্টি বেশি থাকে। কারণ, এসব ক্ষমতাহীন মানুষের কাছ থেকে জোর করে জমি নেওয়াটা সহজ। আবার তাদের প্রাপ্য ক্ষতিপূরণ দেওয়ারও কোনো বাধ্যবাধকতা থাকে না। শিল্প আমাদের লাগবে। তবে তা উর্বর জমি নষ্ট করে নয়। এর জন্য ভূমির বিন্যাস বা জোনিং দরকার। এখন যেভাবে জোনিং করা হচ্ছে, তাতে সাধারণ মানুষের সম্পৃক্ততা নেই। এটা আমলানির্ভর। ভূমির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে এখানে সম্পৃক্ত করতে হবে।
বননির্ভর বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী তাদের আবাসস্থল হারাচ্ছে প্রতিনিয়ত। এসব জাতিগোষ্ঠীর প্রথাগত আইনকে আমাদের সমাদর করতে হবে।
দিনের পর দিন ভূমিসংক্রান্ত মামলার পাহাড় জমছে। আবার দেশে দিন দিন বাড়ছে ভূমি-দারিদ্র্য ও ভূমিবঞ্চনা। ভূমি মামলার জট কাটাতে জেলা পর্যায়ে বিশেষ ভূমি ট্রাইব্যুনাল গঠনের দাবি ভূমি অধিকারকর্মীরা করে আসছেন। তবে এ নিয়ে কোনো কার্যকর উদ্যোগ দেখি না। কম সময়ে, কম খরচে মানুষ এখানে সেবা পাবে, এটাই আমরা দেখতে চাই। ১৯৯৮ সালে ভূমি ব্যবহার নীতিমালা হয়েছিল। এর কার্যকর কোনো প্রয়োগ দেখিনি। কৃষিজমির সুরক্ষার আইনটিও এখনো হয়নি। জমিকে রক্ষায়, দুর্বৃত্তায়ন রোধে এসব দরকার।
শামসুল হুদাঃ নির্বাহী পরিচালক, অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (এএলআরডি)
কৃষি খাসজমি বণ্টনের সময় এর প্রধান দাবিদার আইনত ভূমিহীন মানুষ। কিন্তু আমাদের একাধিক গবেষণায় দেখেছি, এই বণ্টন সুষম হয় না। ভূমিহীন মানুষের প্রাপ্য সম্পদ চলে যায় ক্ষমতাশালী বা তাদের অনুগ্রহভাজনদের কাছে। খাসজমি হলো নিরীহ বিষয়। আসলে সরকারের কাছে কত খাসজমি আছে, তার কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বারবার কৃষিজমিকে বাঁচিয়ে শিল্প স্থাপনের পক্ষে কথা বলেছেন। আমরাও এ কথা বলি। তবে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার সঙ্গে সরকারেরই বিভিন্ন দপ্তরের কার্যকলাপের মিল নেই। শিল্পসহ নানা ধরনের স্থাপনা তৈরিতে বারবার কর্তাব্যক্তিদের চোখ পড়ে উর্বর কৃষিজমিতে। এ ক্ষেত্রে আবার সুনির্দিষ্টভাবে প্রান্তিক মানুষ বা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষের দিকে দৃষ্টি বেশি থাকে। কারণ, এসব ক্ষমতাহীন মানুষের কাছ থেকে জোর করে জমি নেওয়াটা সহজ। আবার তাদের প্রাপ্য ক্ষতিপূরণ দেওয়ারও কোনো বাধ্যবাধকতা থাকে না। শিল্প আমাদের লাগবে। তবে তা উর্বর জমি নষ্ট করে নয়। এর জন্য ভূমির বিন্যাস বা জোনিং দরকার। এখন যেভাবে জোনিং করা হচ্ছে, তাতে সাধারণ মানুষের সম্পৃক্ততা নেই। এটা আমলানির্ভর। ভূমির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে এখানে সম্পৃক্ত করতে হবে।
বননির্ভর বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী তাদের আবাসস্থল হারাচ্ছে প্রতিনিয়ত। এসব জাতিগোষ্ঠীর প্রথাগত আইনকে আমাদের সমাদর করতে হবে।
দিনের পর দিন ভূমিসংক্রান্ত মামলার পাহাড় জমছে। আবার দেশে দিন দিন বাড়ছে ভূমি-দারিদ্র্য ও ভূমিবঞ্চনা। ভূমি মামলার জট কাটাতে জেলা পর্যায়ে বিশেষ ভূমি ট্রাইব্যুনাল গঠনের দাবি ভূমি অধিকারকর্মীরা করে আসছেন। তবে এ নিয়ে কোনো কার্যকর উদ্যোগ দেখি না। কম সময়ে, কম খরচে মানুষ এখানে সেবা পাবে, এটাই আমরা দেখতে চাই। ১৯৯৮ সালে ভূমি ব্যবহার নীতিমালা হয়েছিল। এর কার্যকর কোনো প্রয়োগ দেখিনি। কৃষিজমির সুরক্ষার আইনটিও এখনো হয়নি। জমিকে রক্ষায়, দুর্বৃত্তায়ন রোধে এসব দরকার।
শামসুল হুদাঃ নির্বাহী পরিচালক, অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (এএলআরডি)
No comments