এমপিদের শপথ, সরকার গঠনের আমন্ত্রণ প্রেসিডেন্টের: মন্ত্রিসভার শপথ সোমবার
শপথ
নিয়েছেন একাদশ জাতীয় সংসদের নির্বাচিত এমপিরা। আইন মেনে ব্যক্তিস্বার্থের
ঊর্ধ্বে থেকে দেশের আইনসভার সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালনের শপথ নেন তারা।
গতকাল সংসদ সচিবালয়ের শপথ কক্ষে চারটি ভাগে এ শপথ অনুষ্ঠিত হয়। এতে মোট ২৮৯
জন সংসদ সদস্য শপথ নেন। বিএনপিসহ ঐক্যফ্রন্টের ৭ এমপি শপথ নেননি। এছাড়া
অসুস্থতাজনিত কারণে গতকাল শপথ নিতে পারেননি জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচএম
এরশাদ ও আওয়ামী লীগ দলীয় সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী এক
প্রার্থীর মৃত্যুর কারণে গাইবান্ধা-৩ আসনের ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়।
নির্বাচনের দিন ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের তিনটি কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ স্থগিত
হওয়ায় ঐ আসনের ফলাফল ঘোষণা করা হয়নি।
এদিকে আগামী সোমবার নতুন মন্ত্রিসভা শপথ নেবে।
এমপিদের শপথের আগে প্রথম দফায় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী সংবিধান ও কার্যপ্রণালী বিধি অনুযায়ী এমপি হিসেবে নিজে শপথগ্রহণ করেন এবং শপথ বইয়ে স্বাক্ষর করেন। এবারের নির্বাচনেও রংপুর-৬ আসন থেকে নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। দ্বিতীয় ধাপে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্যদের (২৫৫ জন) শপথ বাক্য পাঠ করান। তৃতীয় ধাপে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি (৩ জন), জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) (২ জন), বিকল্পধারা বাংলাদেশ (২ জন), তরীকত ফেডারেশন (১ জন), জাতীয় পার্টি (মঞ্জু) (১ জন) এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ৩ জন নির্বাচিত এমপি শপথগ্রহণ করেন।
চতুর্থ ধাপে জাতীয় পার্টির ২১ জন এমপি শপথ গ্রহণ করেন। শপথগ্রহণ শেষে সকলে শপথ বইয়ে স্বাক্ষর করেন। জাতীয় সংসদের সিনিয়র সচিব ড. জাফর আহমেদ খান শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানটি সঞ্চালন করেন। পবিত্র কোরআন থেকে তিলাওয়াতের মাধ্যমে শপথ শুরু হয়। বেলা ১১টা ৩ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শপথ কক্ষে প্রবেশ করেন। শেখ হাসিনাসহ একাদশ সংসদের এমপিরা নিজ নিজ নাম উচ্চরণ করে স্পিকারের সঙ্গে সঙ্গে পড়তে থাকেন- সশ্রদ্ধচিত্তে শপথ (বা দৃঢ়ভাবে ঘোষণা) করিতেছি যে, আমি যে কর্তব্যভার গ্রহণ করিতে যাইতেছি, তাহা আইন-অনুযায়ী ও বিশ্বস্ততার সহিত পালন করিব, আমি বাংলাদেশের প্রতি অকৃত্রিম বিশ্বাস ও আনুগত্য পোষণ করিব এবং সংসদ-সদস্যরূপে আমার কর্তব্য পালনকে ব্যক্তিগত স্বার্থের দ্বারা প্রভাবিত হইতে দেবো না। এরপর সবাই শপথপত্রে নিজেদের আসনের নাম লিখে সই করেন।
শপথ শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে শুভেচ্ছার ফুল তুলে দেন স্পিকার। শপথে এমপিদের প্রথম সারিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ডানপাশে ছিলেন আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, মতিয়া চৌধুরী, আবুল হাসান মাহমুদ আলী ও খন্দকার মোশাররফ হোসেন। আর বাঁ পাশে ছিলেন সাজেদা চৌধুরী, শেখ সেলিম, ওবায়দুল কাদের, মোহাম্মদ নাসিম, আবদুর রাজ্জাক। নাজমুল হাসান পাপনের পাশে ছিলেন নতুন দুই সংসদ সদস্য মাশরাফি বিন মুর্তজা ও শেখ তন্ময়। প্রথম দফাতেই ২৫০ জনের বেশি নবনির্বাচিত এমপি শপথ পাঠ করেন, যাদের মধ্যে বিকল্পধারা বাংলাদেশের মাহি বি. চৌধুরী ও জাসদের (আম্বিয়া) মাঈনুদ্দিন খান বাদলও ছিলেন। আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর নেতৃত্বে প্রথম দফা শপথের পর দ্বিতীয় দফায় শপথ নেন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট, স্বতন্ত্র ও মহাজোটের কয়েকজন এমপি।
ওয়ার্কার্স পার্টির রাশেদ খান মেনন, ফজলে হোসেন বাদশা, জাসদের হাসানুল হক ইনু, শিরিন আক্তার, জেপি’র আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, তরীকত ফেডারেশনের নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী, বিকল্পধারার আবদুল মান্নান এবং স্বতন্ত্র নিক্সন চৌধুরীও ছিলেন তাদের মধ্যে। এরপর দশম সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদকে সঙ্গে নিয়ে শপথ নেন জাতীয় পার্টির নবনির্বাচিত ২১ জন এমপি। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচএম এরশাদ এ সময় উপস্থিত ছিলেন না। সংসদের ভিআইপি ক্যাফেটেরিয়ায় নতুন এমপিদের জন্য ছিল চা-চক্রের আয়োজন।
শপথ নিতে সময় চেয়েছেন সৈয়দ আশরাফ
এদিকে এমপি হিসেবে শপথ নেয়ার জন্য সময় চেয়ে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীকে চিঠি দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। এ প্রসঙ্গে স্পিকার জানান, উনার চিঠি পেয়েছি। উনি দেশে ফিরে আসার পর শপথ নিতে চান। আর এমনিতেই ৯০ দিন সময় উনি পাবেন। ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত ৬৮ বছর বয়সী সৈয়দ আশরাফ এখন থাইল্যান্ডের বামররুনগ্রাদ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। অসুস্থতার কারণে গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর সংসদ থেকে ছুটি নেন তিনি। দেশে না থেকেও সৈয়দ আশরাফ কিশোরগঞ্জ সদর ও হোসেনপুর উপজেলা নিয়ে গঠিত কিশোরগঞ্জ-১ আসনে নৌকা প্রতীকে জয়ী হন।
শপথের পর এমপিদের প্রতিক্রিয়া
একাদশ জাতীয় সংসদ একটি শক্তিশালী সংসদ হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক, কুষ্টিয়া-৩ থেকে নির্বাচিত এমপি মাহবুব-উল আলম হানিফ। তিনি বলেন, এ সংসদ আরো বেশি কার্যকর ও গঠনমূলক হবে। শপথগ্রহণ শেষে মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, আমাদের এখানে দ্বিতীয় বৃহত্তম দল হিসেবে জাতীয় পার্টি রয়েছে। তাদের সিদ্ধান্তের ওপর অনেক কিছু নির্ভর করছে। তিনি বলেন, জাতীয় পার্টি যদি বিরোধী দলে আসে। দশম জাতীয় সংসদে তারা যেভাবে গঠনমূলক ভূমিকা রেখেছে, এবারও সেরকম ভূমিকা রাখবে। এবং কার্যকরী ও গঠনমূলক ভূমিকা রাখবে।
গত সংসদের মতো এবারও জাতীয় পার্টি সরকারে থাকতে চাইলে সেক্ষেত্রে কী হবে-প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আশা করি জাতীয় পার্টি বিরোধী দল হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে। এতে তাদের রাজনৈতিক ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে। তিনি বলেন, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গঠিত সংসদও সফল ও কার্যকরী ছিল। আপনারা খেয়াল করেছেন দশম জাতীয় সংসদে কোনো অশালীন বক্তব্য ছিল না, খিস্তিখেউড় ছিল না। এবারের সংসদও কোনো অশালীন বক্তব্য থাকবে না। এই সংসদও গতিশীল ও কার্যকর হবে। সংসদে শক্তিশালী বিরোধী দল থাকা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের এ নেতা বলেন, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিশেষ করে বাজেট অধিবেশনের সময় দুর্বল দিকগুলো আমরাই কিন্তু তুলে ধরেছি। আমরা চেষ্টা করেছি সেগুলোকে সংশোধন করে আরো জনকল্যাণমূলক হয় সেভাবে বলেছিলাম। সুতরাং সংসদে বিরোধী দল থাকলেই শুধু গঠনমূলক আলোচনা হবে তেমনটি নয়। ঐক্যফ্রন্ট থেকে নির্বাচিতরা তাদের ভোটারদের প্রতি সম্মান রেখে শপথ নেবেন বলে আশা প্রকাশ করেন মাহবুব-উল আলম হানিফ। তিনি বলেন, তাদের ভোটার তো তাদের সংসদে আসার জন্যই ভোট দিয়েছে, সংসদে না আশার জন্য ভোট দেয়নি। আশা করি তারা তাদের ভোটারদের সম্মান রক্ষা করবেন।
তারা সংসদে আসবেন তাদের কথা বলবেন, গঠনমূলক সমালোচনা করে সংসদকে প্রাণবন্ত করবেন। জাসদের একাংশের কার্যকরী সভাপতি মাঈনউদ্দিন খান বাদল বলেন, নির্বাচনের আগের বিএনপি’র যে ‘দ্বিধাবিভক্তি’ ছিল, তা এখনো ‘কাটেনি’। গতবার নির্বাচন বর্জন করা বিএনপি এবার শপথ না নিয়ে ‘আাবার ভুল করছে’। আওয়ামী লীগের মনোনয়নে এমপি নির্বাচিত হওয়া ক্রিকেটার মাশরাফি বিন মুর্তজা শপথ নেয়ার পর বলেন, খেলা ও রাজনীতি দু’টোই একসঙ্গে চালিয়ে যাবো। দু’টোতেই ভালো করার চেষ্টা করবো। স্বতন্ত্র প্রার্থী মুজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সন বলেন, এলাকাকে সন্ত্রাস ও মাদকমুক্ত করতে সবাই মিলে কাজ করবো। এলাকার উন্নয়নের অসমাপ্ত কাজগুলো সম্পন্ন করবো।
মেহেরপুর-১ আসন থেকে নির্বাচিত এমপি ফরহাদ হোসেন মানবজমিনকে বলেন, একাদশ সংসদের সদস্য হিসেবে এলাকার মানুষের ভাগ্যোন্নয়নে কাজ করবো। তারা অনেক প্রত্যাশা নিয়ে আমাকে বিপুল ভোটে বিজয়ী করেছেন। সে প্রত্যাশা রাখার চেষ্টা করবো। বিএনপি’র শপথ না নেয়ার সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে বিকল্পধারা বাংলাদেশ-এর মাহী বি চৌধুরী বলেন, তারা নির্বাচিত হলেও শপথ নিতে আসেননি। জনগণ তাদের ম্যান্ডেট দিয়েছে। সেটা নেয়ার পরেও যারা সংসদে আসেননি তারা জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করছেন। তিনি বলেন, এবার জনগণের ম্যান্ডেটটা অনেক বড়। তাই দায়িত্বটাও অনেক বড়। সেই দায়িত্বটা আমরা দায়িত্বশীলতার সঙ্গে পালন করতে চেষ্টা করবো। যারা আমাকে ভোট দিয়েছেন, আমার ওপর আস্থা রেখেছেন, বিশ্বাস করেছেন তাদের প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই।
মন্ত্রিসভার শপথ সোমবার, মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের পিএস- এপিএস’র তালিকা হচ্ছে:
আগামী ৭ই জানুয়ারি সোমবার আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নতুন মন্ত্রিসভা গঠন হতে যাচ্ছে। এজন্য রোববার শেষবেলায় নতুন মন্ত্রিসভার সদস্যদের তালিকা মন্ত্রিপরিষদ সচিবের কাছে দিতে পারেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সেই অনুযায়ী ফাইল তৈরি করবেন এবং তা বঙ্গভবনে শপথ অনুষ্ঠানের সময় তৈরি রাখবেন। শপথের বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম মানবজমিনকে বলেন, আগামী সোমবার (৭ জানুয়ারি) বিকাল সাড়ে ৩টায় নতুন মন্ত্রিপরিষদের সদস্যরা শপথ নেবেন। প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে দিন তারিখটি ঠিক করা হয়। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী সোমবার বেলা সাড়ে ৩টায় বঙ্গভবনের দরবার হলে নতুন মন্ত্রিপরিষদের সদস্যরা শপথ নেবেন, ইনশাআল্লাহ্। এদিকে একাদশ জাতীয় সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যদের আস্থাভাজন হিসেবে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে সরকার গঠনের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ। গতকাল বিকালে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গভবনে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে গেলে প্রেসিডেন্ট এই আমন্ত্রণ জানান।
প্রধানমন্ত্রী বঙ্গভবনে পৌঁছালে প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ তাকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। শেখ হাসিনার সঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এবং উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু ছিলেন। মন্ত্রিসভা গঠনের পাশাপাশি মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের পিএস-এপিএস নিয়োগ নিয়েও নানা আলোচনা চলছে। এবার স্বচ্ছ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী কর্মকর্তা ছাড়া কাউকেই মন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রীদের একান্ত সচিব (পিএস) ও সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) নিয়োগ করা হবে না। এজন্য তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। ওই তালিকায় প্রশাসন ক্যাডারের বিভিন্ন ব্যাচের কর্মকর্তাদের নাম রয়েছে। মন্ত্রিসভার শপথের আগেই এমন তালিকা তৈরির খবরে পিএস/এপিএস হতে আগ্রহী প্রশাসনের কর্মকর্তারা বিভিন্ন মাধ্যমে দৌড়ঝাঁপ করছেন।
নিজের নাম তালিকাভুক্ত করতে চেষ্টা-তদবির করছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত ১০ বছরের অভিজ্ঞতায় সরকার দেখেছে মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী বা উপমন্ত্রীর ব্যক্তিগত অভিপ্রায় থাকায় স্বাধীনতা বিরোধীদের পরিবার থেকে পিএস বা এপিএস পদে অনেকেই নিয়োগ পান। এ চিন্তা মাথায় রেখেই তালিকা তৈরির কাজ চলছে। মন্ত্রিসভা গঠন প্রসঙ্গে সংবিধানের ৫৬ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, মন্ত্রিসভায় একজন প্রধানমন্ত্রী থাকবেন। যে সংসদ সদস্য, সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের আস্থাভাজন বলে প্রেসিডেন্টের কাছে প্রতীয়মান হবেন, প্রেসিডেন্ট তাকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ দেবেন। প্রধানমন্ত্রী যেভাবে নির্ধারণ করবেন, সেভাবে অন্যান্য মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রী থাকবেন। প্রধানমন্ত্রী ও অন্যান্য মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপ-মন্ত্রীকে প্রেসিডেন্ট নিয়োগ দিয়ে থাকেন। এর আগে ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদের নির্বাচনের পর নতুন সরকার গঠিত হয়েছিল একই বছরের ১২ই জানুয়ারি। তখন শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী করে ৪৮ সদস্যের মন্ত্রিসভা গঠন করা হয়।
ওই সরকারে প্রধানমন্ত্রী ছাড়া ২৯ জন মন্ত্রী, ১৭ প্রতিমন্ত্রী এবং দু’জন উপমন্ত্রী ছিলেন। পরে কয়েক দফা মন্ত্রিসভায় রদবদল আনা হলে শেষ পর্যন্ত মন্ত্রিসভার আকার দাঁড়ায় ৫৩ সদস্যের। সংসদের অধিবেশন বসেছিল ২৯শে জানুয়ারি। এই বিষয়গুলো বিবেচনায় রেখে এবারও সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা পূরণ করেই সরকার গঠনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। এদিকে মন্ত্রিসভার শপথকে ঘিরে এখনও ব্যস্ত সময় পার করছে বঙ্গভবন, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও সরকারি পরিবহন পুলের কর্মকর্তারা। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রথমেই বঙ্গভবনে প্রধানমন্ত্রীকে শপথবাক্য পাঠ করাবেন প্রেসিডেন্ট।
এরপর প্রেসিডেন্ট পর্যায়ক্রমে শপথ পড়াবেন মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপ-মন্ত্রীদের। শপথের পর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে দপ্তর বণ্টন করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে। আর নতুন মন্ত্রীদের শপথ পড়ানোর জন্য বঙ্গভবনে আনতে তাদের বাসায় পাঠানো হবে নতুন গাড়ি। বিষয়টি নিয়ে পরিবহন পুল ব্যস্ত রয়েছে। সরকারি পরিবহন পুলে নতুন করে আরও ২০-২৫টি গাড়ি তৈরি করা হচ্ছে। প্রয়োজন হোক আর না হোক পরিবহন পুল এসব গাড়ি ধুয়ে-মুছে প্রস্তুত রাখার কথা ভাবছে। এসব গাড়ির চালকদেরও নির্বাচিত করা হচ্ছে।
এদিকে আগামী সোমবার নতুন মন্ত্রিসভা শপথ নেবে।
এমপিদের শপথের আগে প্রথম দফায় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী সংবিধান ও কার্যপ্রণালী বিধি অনুযায়ী এমপি হিসেবে নিজে শপথগ্রহণ করেন এবং শপথ বইয়ে স্বাক্ষর করেন। এবারের নির্বাচনেও রংপুর-৬ আসন থেকে নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। দ্বিতীয় ধাপে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্যদের (২৫৫ জন) শপথ বাক্য পাঠ করান। তৃতীয় ধাপে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি (৩ জন), জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) (২ জন), বিকল্পধারা বাংলাদেশ (২ জন), তরীকত ফেডারেশন (১ জন), জাতীয় পার্টি (মঞ্জু) (১ জন) এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ৩ জন নির্বাচিত এমপি শপথগ্রহণ করেন।
চতুর্থ ধাপে জাতীয় পার্টির ২১ জন এমপি শপথ গ্রহণ করেন। শপথগ্রহণ শেষে সকলে শপথ বইয়ে স্বাক্ষর করেন। জাতীয় সংসদের সিনিয়র সচিব ড. জাফর আহমেদ খান শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানটি সঞ্চালন করেন। পবিত্র কোরআন থেকে তিলাওয়াতের মাধ্যমে শপথ শুরু হয়। বেলা ১১টা ৩ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শপথ কক্ষে প্রবেশ করেন। শেখ হাসিনাসহ একাদশ সংসদের এমপিরা নিজ নিজ নাম উচ্চরণ করে স্পিকারের সঙ্গে সঙ্গে পড়তে থাকেন- সশ্রদ্ধচিত্তে শপথ (বা দৃঢ়ভাবে ঘোষণা) করিতেছি যে, আমি যে কর্তব্যভার গ্রহণ করিতে যাইতেছি, তাহা আইন-অনুযায়ী ও বিশ্বস্ততার সহিত পালন করিব, আমি বাংলাদেশের প্রতি অকৃত্রিম বিশ্বাস ও আনুগত্য পোষণ করিব এবং সংসদ-সদস্যরূপে আমার কর্তব্য পালনকে ব্যক্তিগত স্বার্থের দ্বারা প্রভাবিত হইতে দেবো না। এরপর সবাই শপথপত্রে নিজেদের আসনের নাম লিখে সই করেন।
শপথ শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে শুভেচ্ছার ফুল তুলে দেন স্পিকার। শপথে এমপিদের প্রথম সারিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ডানপাশে ছিলেন আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, মতিয়া চৌধুরী, আবুল হাসান মাহমুদ আলী ও খন্দকার মোশাররফ হোসেন। আর বাঁ পাশে ছিলেন সাজেদা চৌধুরী, শেখ সেলিম, ওবায়দুল কাদের, মোহাম্মদ নাসিম, আবদুর রাজ্জাক। নাজমুল হাসান পাপনের পাশে ছিলেন নতুন দুই সংসদ সদস্য মাশরাফি বিন মুর্তজা ও শেখ তন্ময়। প্রথম দফাতেই ২৫০ জনের বেশি নবনির্বাচিত এমপি শপথ পাঠ করেন, যাদের মধ্যে বিকল্পধারা বাংলাদেশের মাহি বি. চৌধুরী ও জাসদের (আম্বিয়া) মাঈনুদ্দিন খান বাদলও ছিলেন। আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর নেতৃত্বে প্রথম দফা শপথের পর দ্বিতীয় দফায় শপথ নেন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট, স্বতন্ত্র ও মহাজোটের কয়েকজন এমপি।
ওয়ার্কার্স পার্টির রাশেদ খান মেনন, ফজলে হোসেন বাদশা, জাসদের হাসানুল হক ইনু, শিরিন আক্তার, জেপি’র আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, তরীকত ফেডারেশনের নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী, বিকল্পধারার আবদুল মান্নান এবং স্বতন্ত্র নিক্সন চৌধুরীও ছিলেন তাদের মধ্যে। এরপর দশম সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদকে সঙ্গে নিয়ে শপথ নেন জাতীয় পার্টির নবনির্বাচিত ২১ জন এমপি। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচএম এরশাদ এ সময় উপস্থিত ছিলেন না। সংসদের ভিআইপি ক্যাফেটেরিয়ায় নতুন এমপিদের জন্য ছিল চা-চক্রের আয়োজন।
শপথ নিতে সময় চেয়েছেন সৈয়দ আশরাফ
এদিকে এমপি হিসেবে শপথ নেয়ার জন্য সময় চেয়ে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীকে চিঠি দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। এ প্রসঙ্গে স্পিকার জানান, উনার চিঠি পেয়েছি। উনি দেশে ফিরে আসার পর শপথ নিতে চান। আর এমনিতেই ৯০ দিন সময় উনি পাবেন। ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত ৬৮ বছর বয়সী সৈয়দ আশরাফ এখন থাইল্যান্ডের বামররুনগ্রাদ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। অসুস্থতার কারণে গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর সংসদ থেকে ছুটি নেন তিনি। দেশে না থেকেও সৈয়দ আশরাফ কিশোরগঞ্জ সদর ও হোসেনপুর উপজেলা নিয়ে গঠিত কিশোরগঞ্জ-১ আসনে নৌকা প্রতীকে জয়ী হন।
শপথের পর এমপিদের প্রতিক্রিয়া
একাদশ জাতীয় সংসদ একটি শক্তিশালী সংসদ হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক, কুষ্টিয়া-৩ থেকে নির্বাচিত এমপি মাহবুব-উল আলম হানিফ। তিনি বলেন, এ সংসদ আরো বেশি কার্যকর ও গঠনমূলক হবে। শপথগ্রহণ শেষে মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, আমাদের এখানে দ্বিতীয় বৃহত্তম দল হিসেবে জাতীয় পার্টি রয়েছে। তাদের সিদ্ধান্তের ওপর অনেক কিছু নির্ভর করছে। তিনি বলেন, জাতীয় পার্টি যদি বিরোধী দলে আসে। দশম জাতীয় সংসদে তারা যেভাবে গঠনমূলক ভূমিকা রেখেছে, এবারও সেরকম ভূমিকা রাখবে। এবং কার্যকরী ও গঠনমূলক ভূমিকা রাখবে।
গত সংসদের মতো এবারও জাতীয় পার্টি সরকারে থাকতে চাইলে সেক্ষেত্রে কী হবে-প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আশা করি জাতীয় পার্টি বিরোধী দল হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে। এতে তাদের রাজনৈতিক ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে। তিনি বলেন, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গঠিত সংসদও সফল ও কার্যকরী ছিল। আপনারা খেয়াল করেছেন দশম জাতীয় সংসদে কোনো অশালীন বক্তব্য ছিল না, খিস্তিখেউড় ছিল না। এবারের সংসদও কোনো অশালীন বক্তব্য থাকবে না। এই সংসদও গতিশীল ও কার্যকর হবে। সংসদে শক্তিশালী বিরোধী দল থাকা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের এ নেতা বলেন, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিশেষ করে বাজেট অধিবেশনের সময় দুর্বল দিকগুলো আমরাই কিন্তু তুলে ধরেছি। আমরা চেষ্টা করেছি সেগুলোকে সংশোধন করে আরো জনকল্যাণমূলক হয় সেভাবে বলেছিলাম। সুতরাং সংসদে বিরোধী দল থাকলেই শুধু গঠনমূলক আলোচনা হবে তেমনটি নয়। ঐক্যফ্রন্ট থেকে নির্বাচিতরা তাদের ভোটারদের প্রতি সম্মান রেখে শপথ নেবেন বলে আশা প্রকাশ করেন মাহবুব-উল আলম হানিফ। তিনি বলেন, তাদের ভোটার তো তাদের সংসদে আসার জন্যই ভোট দিয়েছে, সংসদে না আশার জন্য ভোট দেয়নি। আশা করি তারা তাদের ভোটারদের সম্মান রক্ষা করবেন।
তারা সংসদে আসবেন তাদের কথা বলবেন, গঠনমূলক সমালোচনা করে সংসদকে প্রাণবন্ত করবেন। জাসদের একাংশের কার্যকরী সভাপতি মাঈনউদ্দিন খান বাদল বলেন, নির্বাচনের আগের বিএনপি’র যে ‘দ্বিধাবিভক্তি’ ছিল, তা এখনো ‘কাটেনি’। গতবার নির্বাচন বর্জন করা বিএনপি এবার শপথ না নিয়ে ‘আাবার ভুল করছে’। আওয়ামী লীগের মনোনয়নে এমপি নির্বাচিত হওয়া ক্রিকেটার মাশরাফি বিন মুর্তজা শপথ নেয়ার পর বলেন, খেলা ও রাজনীতি দু’টোই একসঙ্গে চালিয়ে যাবো। দু’টোতেই ভালো করার চেষ্টা করবো। স্বতন্ত্র প্রার্থী মুজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সন বলেন, এলাকাকে সন্ত্রাস ও মাদকমুক্ত করতে সবাই মিলে কাজ করবো। এলাকার উন্নয়নের অসমাপ্ত কাজগুলো সম্পন্ন করবো।
মেহেরপুর-১ আসন থেকে নির্বাচিত এমপি ফরহাদ হোসেন মানবজমিনকে বলেন, একাদশ সংসদের সদস্য হিসেবে এলাকার মানুষের ভাগ্যোন্নয়নে কাজ করবো। তারা অনেক প্রত্যাশা নিয়ে আমাকে বিপুল ভোটে বিজয়ী করেছেন। সে প্রত্যাশা রাখার চেষ্টা করবো। বিএনপি’র শপথ না নেয়ার সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে বিকল্পধারা বাংলাদেশ-এর মাহী বি চৌধুরী বলেন, তারা নির্বাচিত হলেও শপথ নিতে আসেননি। জনগণ তাদের ম্যান্ডেট দিয়েছে। সেটা নেয়ার পরেও যারা সংসদে আসেননি তারা জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করছেন। তিনি বলেন, এবার জনগণের ম্যান্ডেটটা অনেক বড়। তাই দায়িত্বটাও অনেক বড়। সেই দায়িত্বটা আমরা দায়িত্বশীলতার সঙ্গে পালন করতে চেষ্টা করবো। যারা আমাকে ভোট দিয়েছেন, আমার ওপর আস্থা রেখেছেন, বিশ্বাস করেছেন তাদের প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই।
মন্ত্রিসভার শপথ সোমবার, মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের পিএস- এপিএস’র তালিকা হচ্ছে:
আগামী ৭ই জানুয়ারি সোমবার আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নতুন মন্ত্রিসভা গঠন হতে যাচ্ছে। এজন্য রোববার শেষবেলায় নতুন মন্ত্রিসভার সদস্যদের তালিকা মন্ত্রিপরিষদ সচিবের কাছে দিতে পারেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সেই অনুযায়ী ফাইল তৈরি করবেন এবং তা বঙ্গভবনে শপথ অনুষ্ঠানের সময় তৈরি রাখবেন। শপথের বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম মানবজমিনকে বলেন, আগামী সোমবার (৭ জানুয়ারি) বিকাল সাড়ে ৩টায় নতুন মন্ত্রিপরিষদের সদস্যরা শপথ নেবেন। প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে দিন তারিখটি ঠিক করা হয়। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী সোমবার বেলা সাড়ে ৩টায় বঙ্গভবনের দরবার হলে নতুন মন্ত্রিপরিষদের সদস্যরা শপথ নেবেন, ইনশাআল্লাহ্। এদিকে একাদশ জাতীয় সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যদের আস্থাভাজন হিসেবে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে সরকার গঠনের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ। গতকাল বিকালে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গভবনে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে গেলে প্রেসিডেন্ট এই আমন্ত্রণ জানান।
প্রধানমন্ত্রী বঙ্গভবনে পৌঁছালে প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ তাকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। শেখ হাসিনার সঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এবং উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু ছিলেন। মন্ত্রিসভা গঠনের পাশাপাশি মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের পিএস-এপিএস নিয়োগ নিয়েও নানা আলোচনা চলছে। এবার স্বচ্ছ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী কর্মকর্তা ছাড়া কাউকেই মন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রীদের একান্ত সচিব (পিএস) ও সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) নিয়োগ করা হবে না। এজন্য তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। ওই তালিকায় প্রশাসন ক্যাডারের বিভিন্ন ব্যাচের কর্মকর্তাদের নাম রয়েছে। মন্ত্রিসভার শপথের আগেই এমন তালিকা তৈরির খবরে পিএস/এপিএস হতে আগ্রহী প্রশাসনের কর্মকর্তারা বিভিন্ন মাধ্যমে দৌড়ঝাঁপ করছেন।
নিজের নাম তালিকাভুক্ত করতে চেষ্টা-তদবির করছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত ১০ বছরের অভিজ্ঞতায় সরকার দেখেছে মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী বা উপমন্ত্রীর ব্যক্তিগত অভিপ্রায় থাকায় স্বাধীনতা বিরোধীদের পরিবার থেকে পিএস বা এপিএস পদে অনেকেই নিয়োগ পান। এ চিন্তা মাথায় রেখেই তালিকা তৈরির কাজ চলছে। মন্ত্রিসভা গঠন প্রসঙ্গে সংবিধানের ৫৬ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, মন্ত্রিসভায় একজন প্রধানমন্ত্রী থাকবেন। যে সংসদ সদস্য, সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের আস্থাভাজন বলে প্রেসিডেন্টের কাছে প্রতীয়মান হবেন, প্রেসিডেন্ট তাকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ দেবেন। প্রধানমন্ত্রী যেভাবে নির্ধারণ করবেন, সেভাবে অন্যান্য মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রী থাকবেন। প্রধানমন্ত্রী ও অন্যান্য মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপ-মন্ত্রীকে প্রেসিডেন্ট নিয়োগ দিয়ে থাকেন। এর আগে ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদের নির্বাচনের পর নতুন সরকার গঠিত হয়েছিল একই বছরের ১২ই জানুয়ারি। তখন শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী করে ৪৮ সদস্যের মন্ত্রিসভা গঠন করা হয়।
ওই সরকারে প্রধানমন্ত্রী ছাড়া ২৯ জন মন্ত্রী, ১৭ প্রতিমন্ত্রী এবং দু’জন উপমন্ত্রী ছিলেন। পরে কয়েক দফা মন্ত্রিসভায় রদবদল আনা হলে শেষ পর্যন্ত মন্ত্রিসভার আকার দাঁড়ায় ৫৩ সদস্যের। সংসদের অধিবেশন বসেছিল ২৯শে জানুয়ারি। এই বিষয়গুলো বিবেচনায় রেখে এবারও সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা পূরণ করেই সরকার গঠনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। এদিকে মন্ত্রিসভার শপথকে ঘিরে এখনও ব্যস্ত সময় পার করছে বঙ্গভবন, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও সরকারি পরিবহন পুলের কর্মকর্তারা। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রথমেই বঙ্গভবনে প্রধানমন্ত্রীকে শপথবাক্য পাঠ করাবেন প্রেসিডেন্ট।
এরপর প্রেসিডেন্ট পর্যায়ক্রমে শপথ পড়াবেন মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপ-মন্ত্রীদের। শপথের পর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে দপ্তর বণ্টন করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে। আর নতুন মন্ত্রীদের শপথ পড়ানোর জন্য বঙ্গভবনে আনতে তাদের বাসায় পাঠানো হবে নতুন গাড়ি। বিষয়টি নিয়ে পরিবহন পুল ব্যস্ত রয়েছে। সরকারি পরিবহন পুলে নতুন করে আরও ২০-২৫টি গাড়ি তৈরি করা হচ্ছে। প্রয়োজন হোক আর না হোক পরিবহন পুল এসব গাড়ি ধুয়ে-মুছে প্রস্তুত রাখার কথা ভাবছে। এসব গাড়ির চালকদেরও নির্বাচিত করা হচ্ছে।
No comments