বিলাতের সৈকত শহরে একদিন by ইশরাক পারভীন খুশি
কোথাও
ঘুরতে গেলে মনের মত সঙ্গী না পেলে মজা নেই। তেমনি মনের মত খানাপিনা না
থাকলে বারোটা বাজে। বিশেষত ট্রেনে চড়লে এ্যঁই বাদাম। ঝাল মুড়ি নেবে ঝাল
মুড়ি। শুনে যখন কান অভ্যস্ত ঠিক তখন অতি পরিপাটি পরিচ্ছন্ন ট্রেনে উঠে
শুকনো মুখে স্যানডউইচ গেলো হাঁদারাম বাঁচা অবস্থা। স্যান্ডের উইচ কতটা
উপভোগ্য হবে আমার মত পাঁড় বাঙালির তা বুঝতে নিশ্চয়ই আপনাদের খুব একটা
অসুবিধা হওয়ার কথা নয়
তবে লন্ডনে তবু মন খুলে খাবার সুযোগ আছে। সেন্ট্রাল লন্ডনের মত জায়গাতেও হালাল ম্যকডোনাল্ড কেফসি সব আছে। খাব তো মুরগি ভাজা, বিফ, মাটনের মাংসের পেটি তাতে আবার হালাল হারাম কি? এদেশে পা না ফেললে তো আর বুঝতাম না মুরগিও হারাম হয়।
যাহোক মুসলিম নিয়মে জবেহ ছাড়া মাংস হারাম বলে পরিগণিত। আর এদেশে প্রাণী জবাই হয়না সচারচর, কাজেই তা ঠিক হালাল নয়। ইস্ট লন্ডনে মুসলিম বেশি থাকায় সেখানে দেশি এদেশি খাবার দোকান হালাল হবে তা খুব একটা আশ্চর্যের নয়। বরং বড় বড় অক্ষরে ইংরেজি ও আরবিতে হালাল কথাটা লেখা দেখতে পাওয়া যাবে প্রায় প্রতি দোকানেই। নানদুজের ঝাল সসে মাখানো চিকেন উইংস, পিজা হাটের চিকেন মাটন পিজা, অথবা স্টাটফোর্ড ইস্টিশনে ঢুকবার পথে ফ্রাইড চিকেনের ঘ্রাণ নাকে যে সুঁড়সুড়িটা দেয় তাতে পেট গড়গড়িয়ে ডেকে বলে আমি ক্ষুধার্ত। সেন্ট্রাল লন্ডনেও ম্যকডোনাল্ড বা কেএফসিতে হালাল খাবার পাওয়াটা সৌভাগ্যেরই ব্যাপার বটে। কারন মুচমুচে চিকেন ভাজার ঘ্রাণ যখন নাকে আসে অথবা নানা ধরনের সসের সাথে ঐরকম সরেস বার্গার চোখে পড়ে তখন ক্ষুধা চনমনিয়ে উঠলে নিজেকে সামলিয়ে রাখা সত্যিই কঠিন।
শুধু তাই নয় লন্ডনে ইন্ডিয়ান অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে যে বাজার বসে তা দেখলে চক্ষু আনন্দে জ্বলজ্বল করে উঠবে। এমন কিছু বাদ নেই যা খেতে ইচ্ছা করে অথচ বিদেশ ভুঁইয়ে বলে পাওয়া যায় না। বরং আরও বেশি ধরনের সারা বছর ধরে পাওয়া যায়; যা তুমি খেতে চাও। কত রকমের কত গড়নের দেশি বিদেশি সবজি, কত রকমের মাছ, মাংশ। বড় বড় রিটেল সপে ইয়াত্তা নেই এতরকমের খাদ্য বানানোর সামগ্রী। একটা ট্রলি নাও আর ট্রলিতে যা মন চাই তুলতে থাকো পকেট খালি করবার জন্য। চারদিকে যেন পকেট খসাবার ছল। সে ছল থেকে যেন রক্ষা নেই কিছুতেই।
এবার চল সুখাদ্যের গল্প ছেড়ে সমুদ্রের হাওয়া খাওয়ার গল্পে যাওয়া যাক। সমুদ্রের কথা মনে হলেই আমার মৌসুমি ভৌমিকের ঐ গানটা মনে আসে,
আমি শুনেছি সেদিন তুমি সাগরের ঢেউয়ে চেপে
নীলজল দিগন্ত ছুঁয়ে এসেছো
আমি শুনেছি সেদিন তুমি নোনা বালি তীর ধরে বহু দূর বহু দূর হেটে এসেছ
আমি কখনো যাইনি জলে কখনো ভাসিনি নীলে
কখনো রাখিনি চোখ ডানা মেলা গাংচিলে....।
সমুদ্র আহা সমুদ্র ! নীলজল দীগন্ত, ডানা মেলা গাঙচিল, নোনাবালি তীর কি অসাধারণ বর্ণনা। তবে মজার বিষয় হল যত সমুদ্রসৈকত দেখলাম তার মধ্য বাংলাদেশের মত কোনটাই নয়, না স্নানের জন্য না বালুকাময় সৈকতের জন্য। শুধু পার্থক্য একটাই এরা অতি অল্প একটু দেখবার মত জিনিসকেও অতি যতেœ তুলে ধরে, রক্ষণাবেক্ষণ করে, নিরাপত্তার নিশ্চয়তা রাখে।
লন্ডনের অদুরে কেন্ট শহরের ডোভার সমুদ্রসৈকতে গেলাম আমি, সঙ্গী ছিল আমার প্রাণভোমর আর ছোট ভাই সাগর। লন্ডন থেকে বাসে করেই কেন্ট শহর যাওয়া যায়। একদিকে দূরত্ব যেমন বেশি নয় অন্যদিকে যাতায়াতের জন্য বাস বা ট্রেনের সেবা অতিমাত্রায় ভাল। ডোভার হল সেই জায়গা যেখান থেকে সরাসরি সমুদ্রের ওপারেই ফ্রান্স। এখানেই ইংলিশ চ্যানেল, আটলান্টিক মহসাগরের সবচেয়ে সরু অংশটি এখানে, যারা ইংলিশ চ্যনেল পাড়ি দেন তারা এই অংশটিতেই পাড়ি দেন। সবচেয়ে মজার বিষয় হল এই সৈকতের পাড়ে যে পাহাড়টি আছে তা চক পাহাড় বা সাদা চুনাপাথরের পাহাড়।
তবে লন্ডনে তবু মন খুলে খাবার সুযোগ আছে। সেন্ট্রাল লন্ডনের মত জায়গাতেও হালাল ম্যকডোনাল্ড কেফসি সব আছে। খাব তো মুরগি ভাজা, বিফ, মাটনের মাংসের পেটি তাতে আবার হালাল হারাম কি? এদেশে পা না ফেললে তো আর বুঝতাম না মুরগিও হারাম হয়।
যাহোক মুসলিম নিয়মে জবেহ ছাড়া মাংস হারাম বলে পরিগণিত। আর এদেশে প্রাণী জবাই হয়না সচারচর, কাজেই তা ঠিক হালাল নয়। ইস্ট লন্ডনে মুসলিম বেশি থাকায় সেখানে দেশি এদেশি খাবার দোকান হালাল হবে তা খুব একটা আশ্চর্যের নয়। বরং বড় বড় অক্ষরে ইংরেজি ও আরবিতে হালাল কথাটা লেখা দেখতে পাওয়া যাবে প্রায় প্রতি দোকানেই। নানদুজের ঝাল সসে মাখানো চিকেন উইংস, পিজা হাটের চিকেন মাটন পিজা, অথবা স্টাটফোর্ড ইস্টিশনে ঢুকবার পথে ফ্রাইড চিকেনের ঘ্রাণ নাকে যে সুঁড়সুড়িটা দেয় তাতে পেট গড়গড়িয়ে ডেকে বলে আমি ক্ষুধার্ত। সেন্ট্রাল লন্ডনেও ম্যকডোনাল্ড বা কেএফসিতে হালাল খাবার পাওয়াটা সৌভাগ্যেরই ব্যাপার বটে। কারন মুচমুচে চিকেন ভাজার ঘ্রাণ যখন নাকে আসে অথবা নানা ধরনের সসের সাথে ঐরকম সরেস বার্গার চোখে পড়ে তখন ক্ষুধা চনমনিয়ে উঠলে নিজেকে সামলিয়ে রাখা সত্যিই কঠিন।
শুধু তাই নয় লন্ডনে ইন্ডিয়ান অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে যে বাজার বসে তা দেখলে চক্ষু আনন্দে জ্বলজ্বল করে উঠবে। এমন কিছু বাদ নেই যা খেতে ইচ্ছা করে অথচ বিদেশ ভুঁইয়ে বলে পাওয়া যায় না। বরং আরও বেশি ধরনের সারা বছর ধরে পাওয়া যায়; যা তুমি খেতে চাও। কত রকমের কত গড়নের দেশি বিদেশি সবজি, কত রকমের মাছ, মাংশ। বড় বড় রিটেল সপে ইয়াত্তা নেই এতরকমের খাদ্য বানানোর সামগ্রী। একটা ট্রলি নাও আর ট্রলিতে যা মন চাই তুলতে থাকো পকেট খালি করবার জন্য। চারদিকে যেন পকেট খসাবার ছল। সে ছল থেকে যেন রক্ষা নেই কিছুতেই।
এবার চল সুখাদ্যের গল্প ছেড়ে সমুদ্রের হাওয়া খাওয়ার গল্পে যাওয়া যাক। সমুদ্রের কথা মনে হলেই আমার মৌসুমি ভৌমিকের ঐ গানটা মনে আসে,
আমি শুনেছি সেদিন তুমি সাগরের ঢেউয়ে চেপে
নীলজল দিগন্ত ছুঁয়ে এসেছো
আমি শুনেছি সেদিন তুমি নোনা বালি তীর ধরে বহু দূর বহু দূর হেটে এসেছ
আমি কখনো যাইনি জলে কখনো ভাসিনি নীলে
কখনো রাখিনি চোখ ডানা মেলা গাংচিলে....।
সমুদ্র আহা সমুদ্র ! নীলজল দীগন্ত, ডানা মেলা গাঙচিল, নোনাবালি তীর কি অসাধারণ বর্ণনা। তবে মজার বিষয় হল যত সমুদ্রসৈকত দেখলাম তার মধ্য বাংলাদেশের মত কোনটাই নয়, না স্নানের জন্য না বালুকাময় সৈকতের জন্য। শুধু পার্থক্য একটাই এরা অতি অল্প একটু দেখবার মত জিনিসকেও অতি যতেœ তুলে ধরে, রক্ষণাবেক্ষণ করে, নিরাপত্তার নিশ্চয়তা রাখে।
লন্ডনের অদুরে কেন্ট শহরের ডোভার সমুদ্রসৈকতে গেলাম আমি, সঙ্গী ছিল আমার প্রাণভোমর আর ছোট ভাই সাগর। লন্ডন থেকে বাসে করেই কেন্ট শহর যাওয়া যায়। একদিকে দূরত্ব যেমন বেশি নয় অন্যদিকে যাতায়াতের জন্য বাস বা ট্রেনের সেবা অতিমাত্রায় ভাল। ডোভার হল সেই জায়গা যেখান থেকে সরাসরি সমুদ্রের ওপারেই ফ্রান্স। এখানেই ইংলিশ চ্যানেল, আটলান্টিক মহসাগরের সবচেয়ে সরু অংশটি এখানে, যারা ইংলিশ চ্যনেল পাড়ি দেন তারা এই অংশটিতেই পাড়ি দেন। সবচেয়ে মজার বিষয় হল এই সৈকতের পাড়ে যে পাহাড়টি আছে তা চক পাহাড় বা সাদা চুনাপাথরের পাহাড়।
পাশ থেকে বা সামনে থেকে সাদা পাহাড় দেখতে পাওয়া যায় আর উপরিভাগটা গাঢ় সবুজ ঘাসে বিস্তীর্ণ। ৩৫০ ফিট উচুঁ পাহাড়টির উপর দাঁড়ালে আর মেঘহীন পরিস্কার আকাশ থাকলে সাগরের ওপারে ফ্রান্সকে দেখা যায়। সৈকত বালুকাময় নয় পাথুরে আর অসম্ভব ঠান্ডা পানি সমুদ্র স্নান থেকে বিরত রেখে মনকে কিছু টা অতৃপ্ত করে রাখে। এখানে আছে লাইট হাউজ, অসংখ্য জাহাজ চলাচলের বন্দর, পাহাড়ের মাঝে অসমাপ্ত সুড়ঙ্গ, ডোভার ক্যসেল, সেন্ট পলস চার্চ, সেন্ট এডমুন্ড চ্যপেল ইত্যাদি। শহরটিও মনোরম। এইখানেই খেতে গিয়ে তখনও রাস্তা ঘাটে হালাল খাবার খুজেঁ বেড়াই তাই চিকেন বিফের পরিবর্তে এগপ্লান্ট দিয়ে সাবওয়ের এক হাত লম্বা স্যান্ডউইচে কামড় দিয়ে সাগর তো ভীষণ অবাক, বলে ভাইয়া স্যান্ডউইচে এগ কই? হেসে প্রাণ ভোমরের উত্তর দেয় এগপ্লান্টের সঙ্গেই আছে। হা! হা ! এগপ্লাান্ট! আমাদের বেগুন ভাজা।
শুধু ডোভার নয় লাইলা আপা আর ইসলাম ভাইদের সঙ্গে গিয়েছি সাউথএন্ড সৈকতে। সেখানেও পাথুরে সৈকত। তবে সমুদ্রের পাড় ধরে সেখানে বিনোদনমূলক অনেকগুলো রাইড আছে। এইখানেই ১৯৮৬ শালে প্রথম কনকর্ড প্লেন দিয়ে শুরু হয় ফ্রি এয়ার শো দেখানো। মাছ ধরার সবচেয়ে লম্বা পোর্ট এখানেই। সৈকত নয় আমার সাথের লোকজন আশপাশের স্বল্পবসনা হুরদের দেখে এত চমৎকৃত হলো যে পরে যখন কম্পিউটারে ছবি লোড করতে গেলাম তখন দেখলাম হুরদের ছবিতে ফাইল ভর্তি। ওদের এই ব্যস্ততায় আমি তখন পাথর নুড়ি কুড়াতেই ব্যস্ত ছিলাম।
লন্ডন শহরের কাছে পিঠে আরও অনেক সমুদ্রসৈকত থাকলেও সবগুলোতে যাওয়া না হলেও আইল অফ হোয়াইট ঘুরে এসেছি এক অবসরে। ইশতিয়াক ছিল আমাদের এবারের সঙ্গী। এটি ইংল্যান্ডের সবচেয়ে বড় একটি দ্বীপ। কুইন ভিক্টোরিয়ার বাড়ি আছে এখানে। আছে লাইট হাউজও। চারপাশে শুধু পানি। আমরা ফেরি করে ঘুরে ঘুরে চারপাশে সৌন্দর্য গলাধঃকরণ করছিলাম। খাদ্যরসিক বাঙালিও খাবার কথা ভুলে গাংচিলের এক অন্যরকম ডাক আছে তাতে বিভোর হয়ে রাশি রাশি পাল তোলা সাদা কানুগ দেখেছিলাম। এইখানে সমুদ্র সৈকত কিছুটা বালুকাময় তবু পানিতে ঝাপাঝাপির মত নান্দনিক তাপমাত্রা নয়। পাশ ঘিরে সাদা চক রক বা হোয়াইট ক্লিফও দেখা যাবে। এইখানেই নাকি ডাইনোসরের সবচেয়ে বড় ফসিল গুলো পাওয়া গেছে, এখনও নাকি পাওয়া যায়। বাস্পীয় ইঞ্জিনের একটা রেল আছে যেটাতে করে দ্বীপে যাবার বন্দরে পৌঁছুতে হয়। সেখান থেকে ফেরি। সবটাই যেন মোহময় ঐন্দ্রজালিক হয়ে ওঠে। এইসব বিশেষ জায়গাগুলোকে ঘিরে যে ছোট শহরগুলো এগুলোও যেন রুপকথার নগরী। এর সরু রাস্তা ধরে হাঁটতে থাকলে মনে হবে যেন কোন কল্পনার রাজ্যে ঢুকে পড়েছি। গাংচিলের ক্যা কা ডাক থেকে থেকে শুনতে পাবে আর তাই তোমাকে বলে দিবে সমুদ্র তোমার থেকে বেশি দূরে নয়, ঠান্ডা সমুদ্রের বাতাসও এসে ফিসফিস করে বলবে এস কাছে এসে মহাসাগরের বিশালতা দেখে যাও। ডানামেলা গাংচিলে চোখ রাখলে দেখবে আকাশ আর সমুদ্র একই রং ধারণ করেছে আর স্বেতশুভ্র গাংচিল কেমন ছোঁ মেরে রুপালি মাছগুলো ঠোঁটে নিয়ে ফের ডানা মেলছে।
সৈকত বালুকাময় হোক আর পাথুরে সমুদ্রের একটা শক্তি আছে, ওর বাতাসে শরীর মন ধুয়ে মুছে একেবারে নতুন করে সতেজতা পাবার এক মহাঔষধ আছে। আমি প্রথম বার যখন সমুদ্র দেখতে যাই তখন আমার ভীষণ জ্বর ছিল। সমুদ্রের হাওয়ায় জ্বর আরো বেড়ে যাবে এই ভয় মনে নিয়ে চাদরে নিজেকে মুড়িয়ে সৈকতে গিয়ে দাঁড়িয়েছিলাম। আমার কথা কি বিশ্বাস হবে তোমার? মাত্র দশ মিনিটের মাথায় চাদর ফেলে একেবারে সতেজ হয়ে উঠলাম আমি। হাজার হাজার মাইল দূর থেকে ছুটে আসা ডেউ শোঁ শোঁ শব্দে যে নরম ঠান্ডা বাতাসকে সঙ্গে নিয়ে এসেছিল তা যেন আরোগ্যের কোন অবিশ্বাস্য যাদুমাখা পথ্য। মন শরীর আবেশে ভরে তোলা অলৌকিক সোনার কাঠি রুপার কাঠি।
লেখক: টেক্সাস (যুক্তরাষ্ট্র) প্রবাসী
No comments