এবার সিন্ডিকেট সৌদি আরবে by রোকনুজ্জামান পিয়াস
মালয়েশিয়ার
পর এবার জনশক্তি প্রেরণে নতুন সিন্ডিকেট গড়ে উঠছে বাংলাদেশের অন্যতম
শ্রমবাজার সৌদি আরবে। হাতেগোনা কয়েকটি রিক্রুটিং এজেন্সির সমন্বয়ে গড়ে তোলা
হচ্ছে ‘ড্রপ বক্স’ নামের এই সিন্ডিকেট। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নতুন এই পদ্ধতি
কার্যকর হলে দেশটিতে কর্মী প্রেরণে জিম্মি হয়ে পড়বে প্রায় সহস্রাধিক
রিক্রুটিং এজেন্সি। বাড়বে জটিলতা। ইতিপূর্বে মালয়েশিয়ার সিন্ডিকেট নিয়ে
এজেন্সি ও সংশ্লিষ্টদের মধ্যে অস্বস্তি ছিল।
গত ৩১শে আগস্ট সেই সিন্ডিকেট ভেঙে দিয়েছে মালয়েশিয়ার নতুন সরকার। কিন্তু সপ্তাহ না পেরোতেই সৌদি আরবের এই নতুন সিন্ডিকেটের গুঞ্জন আবারো অস্বস্তিতে ফেলেছে সংশ্লিষ্টদের। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ইতিমধ্যে সিন্ডিকেট চূড়ান্ত হয়ে গেছে। তবে কার্যক্রম এখনো শুরু হয়নি। জানা গেছে, ২০-২৫টি রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে এই ‘ড্রপ বক্স’ সিন্ডিকেট গড়ে উঠছে। অভিযোগ রয়েছে, মোটা অঙ্কের বিনিময়ে সিন্ডিকেটে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে নির্দিষ্ট কিছু এজেন্সি। তবে ড্রপ বক্সের কর্ণধার বলছেন, এটি সৌদি দূতাবাসের সিদ্ধান্ত। তারা তাদের সুবিধার্থে নতুন এই পদ্ধতি চালু করতে চাচ্ছে।
সূত্র জানায় লাইসেন্সধারী প্রায় ১২০০ রিক্রুটিং এজেন্সির প্রায় প্রতেকেই সৌদি আরবে কর্মী পাঠাতে পারে। এক্ষেত্রে সৌদি দূতাবাসের সত্যায়িত চাহিদাপত্রের বিপরীতে বাংলাদেশের প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে কর্মী প্রেরণের নিয়োগানুমতি সংগ্রহ করে। কর্মীর ভিসা সংগ্রহের জন্য ঢাকার সৌদি দূতাবাসে প্রত্যেক রিক্রুটিং এজেন্সি প্রয়োজনীয় কাগজ পত্রসহ পাসপোর্ট স্ব-স্ব উদ্যোগে জমা দেয়।
বর্তমানে প্রচলিত নিয়মানুযায়ী সৌদি দূতাবাসের দেয়া গোপন ইন্টারনেট পাসওয়ার্ডের মাধ্যমে প্রত্যেক কর্মীর জন্য ভিসা সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় ভিসা ফি যেমন, ইনজাজ নেট ফি ও ওয়েবসাইটে মেডিকেল স্ট্যাটাস আপডেট ফি ইত্যাদি অনলাইনে পরিশোধ করা হয়। অতঃপর অনলাইনে ওই কর্মীর একটি বারকোড পাওয়া যায়। বারকোডটি কর্মী প্রেরণকারী এজেন্সি, সৌদি আরবের নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান, সেদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস ও সৌদি মন্ত্রণালয়ের বাইরে কেউ জানে না।
কর্মীর নাম, পাসপোর্ট নাম্বার, কর্মীর বারকোড, ভিসা নাম্বার, মালিকের নাম, মালিকের ঠিকানা, মালিকের ফোন নাম্বার ও কর্মীর কর্মস্থল, কর্মীর পেশা ইত্যাদি প্রয়োজনীয় ডাটা সম্বলিত ভিসা আবেদন ফরম সৌদি দূতাবাসে জমা প্রদান করা হয়। যা একটি রিক্রুটিং এজেন্সির জন্য অত্যন্ত গোপনীয় তথ্য। ভিসা আবেদন পত্রের সঙ্গে এনজাজ ডকুমেন্ট, এমপ্লয়মেন্ট এগ্রিমেন্ট, কর্মীর পুলিশ ক্লিয়ারেন্স ছাড়পত্রসহ দূতাবাসের চাহিদা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংযুক্ত করতে হয়। এরপর ভিসা আবেদনপত্র জমা করার পর সকল তথ্যাদি যাচাই করে সঠিক বলে প্রমাণিত হলে পাসপোর্টে ভিসা প্রদান করে। ভিসাসহ ওই পাসপোর্ট সংশ্লিষ্ট রিক্রুটিং এজেন্সি সংগ্রহ করে। এই প্রক্রিয়া সবক’টি এজেন্সি স্বাধীনভাবে কর্মী নিতে পারে। কিন্তু নতুন গড়ে ওঠা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে প্রায় ১২০০ এজেন্সিকে সিন্ডিকেটের অন্তর্ভুক্ত গুটিকয় এজেন্সির ওপর নির্ভরশীল হতে হবে।
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, সৌদি দূতাবাসের সঙ্গে যোগসাজশে গ্রিন ল্যান্ড ওভারসিজ মালিক মো. আবদুল হাই এর নেতৃত্বে ২০-২৫টি রিক্রুটিং এজেন্সির সমন্বয়ে এই সিন্ডিকেট গড়ে উঠছে। তাদের মাধ্যমে সৌদির ভিসা সংগ্রহের এই পদ্ধতিকে তারা ‘ড্রপ বক্স’ বলছে।
সূত্র আরো জানিয়েছে, ড্রপ বক্স পদ্ধতি চালু করার জন্য ইতিমধ্যে সৌদি অ্যাম্বাসির সঙ্গে তাদের কয়েকদফা বৈঠক হয়েছে। আবদুল হাইয়ের অফিসেও বিভিন্ন সময়ে এই বিষয়ে বৈঠক হয়েছে। গঠন করা হয়েছে একটি কমিটি। বৈঠকে ড্রপ বক্সের সভাপতি মনোনীত করা হয়েছে আবদুল হাই নিজেই। ড্রপ বক্সের মাধ্যমে নির্দিষ্ট ওই ২০-২৫টি রিক্রুটিং এজেন্সি সৌদি অ্যাম্বাসিতে ভিসা জমা দেয়ার চূড়ান্ত তালিকাভুক্তির লক্ষ্যে ইতিমধ্যে সৌদি দূতাবাসের কর্মকর্তারা বিভিন্ন অফিস পরিদর্শন করেছেন। অভিযোগ রয়েছে, বিষয়টি পররাষ্ট্র বা প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় জানে না। তবে মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, মন্ত্রণালয় থেকেই বিষয়টি চূড়ান্ত করা হচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ড্রপ বক্সের নামে নতুন এই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে সৌদি আরবে কর্মী প্রেরণ করা হলে নানাবিধ সমস্যা তৈরি হবে। তারা বলছেন, যেসকল এজেন্সি ড্রপ বক্সের তালিকাভুক্ত থাকবে সৌদি নিয়োগকর্তা শুধু তাদেরকেই চিনবে। নিয়োগকর্তা মনে করবে, বাংলাদেশ থেকে এরাই শুধু কর্মী পাঠাবে।
জনশক্তি ব্যবসায়ীরা বলছেন, এই পদ্ধতির আওতায় নির্ধারিত এজেন্সি তাদের ভিসা সংগ্রহের জন্য পাসপোর্টসহ আবেদনপত্র সৌদি অ্যাম্বাসিতে জমা দিলে ব্যবসায়িক গোপনীয়তা হারাবে। একইসঙ্গে অন্যান্য রিক্রুটিং এজেন্সির নিয়োগকর্তার তথ্যাদিও জানবে তারা। এতে করে ড্রপ বক্সের আওতাধীন এই সিন্ডিকেট একচেটিয়া ব্যবসা করবে। বাকি এজেন্সিগুলো বঞ্চিত হবে। নিজেদের মধ্যে অন্তঃকলহের কারণে ভিসা সংক্রান্ত সকল ধরনের মূল কাগজপত্র জমাদানের পরেও এটা নকল বা জাল বলে সংশ্লিষ্ট এজেন্সিকে ব্লক করে দেয়ার প্ররোচনা তৈরি হবে।
এ ব্যাপারে গ্রিনল্যান্ড ওভারসিজের মালিক আবদুল হাই বলেন, এরকম একটি পদ্ধতির কথা চিন্তা করছে সৌদি আরবের দূতাবাস। বিষয়টি নিয়ে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক এ ব্যাপারে আলোচনা হচ্ছে। তবে এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে, চূড়ান্ত কিছু হয়নি। চূড়ান্ত হতে অনেক সময় লাগবে বলেও জানান তিনি। আবদুল হাই বলেন, ড্রপ বক্স নামের এই পদ্ধতিকে সিন্ডিকেট বলা যাবে না।
এটা মূলত: তাদের সার্ভিস সেন্টার। বলেন, বর্তমানে যে পদ্ধতি চালু রয়েছে তাতে অ্যাম্বাসিতে ভোগান্তি হয়। প্রায় ১২০০ এজেন্সি সেখানে ভিড় করে। এছাড়া কূটনৈতিক জোনে তাদের অ্যাম্বাসি স্থানান্তর হলে ভোগান্তি আরো বাড়বে। এসব বিষয় বিবেচনা করে তারা (সৌদি অ্যাম্বাসি) চাচ্ছে, সার্ভিস সেন্টারের মাধ্যমে ভিসা প্রসেসিং করতে। এক্ষেত্রে ড্রপ বক্সের বাইরে থাকা এজেন্সিগুলো সমস্যায় পড়বে কিনা জানতে চাইলে আবদুল হাই বলেন, তাদের সুবিধার্থেই এই পদ্ধতির কথা ভাবছে সংশ্লিষ্টরা। তিনি এই পদ্ধতির নেতৃত্বে কিনা জানতে চাইলে বলেন, আমাদের বিষয়টি তদারকি করার জন্য প্রস্তাব দেয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে অভিবাসী কর্মী উন্নয়ন প্রোগ্রামের (ওকাপ) চেয়ারম্যান সাকিরুল ইসলাম বলেন, মালয়েশিয়ার সিন্ডিকেট নিয়ে দীর্ঘদিন কথা হয়েছে। অবশেষে সেই সিন্ডিকেটের নানা অনিয়ম ধরা পড়েছে। এখন যদি সৌদিতে একই ধরনের সিন্ডিকেট হয় তাহলে আবারও নানা সমস্যার মুখে পড়বে দেশটির অভিবাসন খাত। সবচেয়ে বড় বিষয় অভিবাসন ব্যয় বাড়বে। সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি হয়েছে পড়বে অনেকে। সেক্ষেত্রে দেশটিতে কর্মী প্রেরণে বড় ধরনের হুমকির সম্মুখীন হবে। এই ধরনের সিন্ডিকেট যেনো গড়ে ওঠতে না পারে সেদিকে সরকারের নজর রাখা উচিত বলে মনে করেন তিনি।
বায়রার সাবেক সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিন স্বপন বলেন, এমন একটি পদ্ধতির কথা আমরা শুনেছি। এই ড্রপ বক্স পদ্ধতিতে ৩০-৩৫টি এজেন্সি থাকবে বলে জানতে পেরেছি। ড্রপ বক্স পদ্ধতি চালু হলে অন্য এজেন্সিগুলো তাদের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়বে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। বিএমইটির মহাপরিচালক সেলিম রেজা বলেন, নতুন এই পদ্ধতির ব্যাপারে তাদের কাছে কোনো তথ্য নেই। কেউ জানায়নি।
গত ৩১শে আগস্ট সেই সিন্ডিকেট ভেঙে দিয়েছে মালয়েশিয়ার নতুন সরকার। কিন্তু সপ্তাহ না পেরোতেই সৌদি আরবের এই নতুন সিন্ডিকেটের গুঞ্জন আবারো অস্বস্তিতে ফেলেছে সংশ্লিষ্টদের। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ইতিমধ্যে সিন্ডিকেট চূড়ান্ত হয়ে গেছে। তবে কার্যক্রম এখনো শুরু হয়নি। জানা গেছে, ২০-২৫টি রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে এই ‘ড্রপ বক্স’ সিন্ডিকেট গড়ে উঠছে। অভিযোগ রয়েছে, মোটা অঙ্কের বিনিময়ে সিন্ডিকেটে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে নির্দিষ্ট কিছু এজেন্সি। তবে ড্রপ বক্সের কর্ণধার বলছেন, এটি সৌদি দূতাবাসের সিদ্ধান্ত। তারা তাদের সুবিধার্থে নতুন এই পদ্ধতি চালু করতে চাচ্ছে।
সূত্র জানায় লাইসেন্সধারী প্রায় ১২০০ রিক্রুটিং এজেন্সির প্রায় প্রতেকেই সৌদি আরবে কর্মী পাঠাতে পারে। এক্ষেত্রে সৌদি দূতাবাসের সত্যায়িত চাহিদাপত্রের বিপরীতে বাংলাদেশের প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে কর্মী প্রেরণের নিয়োগানুমতি সংগ্রহ করে। কর্মীর ভিসা সংগ্রহের জন্য ঢাকার সৌদি দূতাবাসে প্রত্যেক রিক্রুটিং এজেন্সি প্রয়োজনীয় কাগজ পত্রসহ পাসপোর্ট স্ব-স্ব উদ্যোগে জমা দেয়।
বর্তমানে প্রচলিত নিয়মানুযায়ী সৌদি দূতাবাসের দেয়া গোপন ইন্টারনেট পাসওয়ার্ডের মাধ্যমে প্রত্যেক কর্মীর জন্য ভিসা সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় ভিসা ফি যেমন, ইনজাজ নেট ফি ও ওয়েবসাইটে মেডিকেল স্ট্যাটাস আপডেট ফি ইত্যাদি অনলাইনে পরিশোধ করা হয়। অতঃপর অনলাইনে ওই কর্মীর একটি বারকোড পাওয়া যায়। বারকোডটি কর্মী প্রেরণকারী এজেন্সি, সৌদি আরবের নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান, সেদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস ও সৌদি মন্ত্রণালয়ের বাইরে কেউ জানে না।
কর্মীর নাম, পাসপোর্ট নাম্বার, কর্মীর বারকোড, ভিসা নাম্বার, মালিকের নাম, মালিকের ঠিকানা, মালিকের ফোন নাম্বার ও কর্মীর কর্মস্থল, কর্মীর পেশা ইত্যাদি প্রয়োজনীয় ডাটা সম্বলিত ভিসা আবেদন ফরম সৌদি দূতাবাসে জমা প্রদান করা হয়। যা একটি রিক্রুটিং এজেন্সির জন্য অত্যন্ত গোপনীয় তথ্য। ভিসা আবেদন পত্রের সঙ্গে এনজাজ ডকুমেন্ট, এমপ্লয়মেন্ট এগ্রিমেন্ট, কর্মীর পুলিশ ক্লিয়ারেন্স ছাড়পত্রসহ দূতাবাসের চাহিদা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংযুক্ত করতে হয়। এরপর ভিসা আবেদনপত্র জমা করার পর সকল তথ্যাদি যাচাই করে সঠিক বলে প্রমাণিত হলে পাসপোর্টে ভিসা প্রদান করে। ভিসাসহ ওই পাসপোর্ট সংশ্লিষ্ট রিক্রুটিং এজেন্সি সংগ্রহ করে। এই প্রক্রিয়া সবক’টি এজেন্সি স্বাধীনভাবে কর্মী নিতে পারে। কিন্তু নতুন গড়ে ওঠা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে প্রায় ১২০০ এজেন্সিকে সিন্ডিকেটের অন্তর্ভুক্ত গুটিকয় এজেন্সির ওপর নির্ভরশীল হতে হবে।
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, সৌদি দূতাবাসের সঙ্গে যোগসাজশে গ্রিন ল্যান্ড ওভারসিজ মালিক মো. আবদুল হাই এর নেতৃত্বে ২০-২৫টি রিক্রুটিং এজেন্সির সমন্বয়ে এই সিন্ডিকেট গড়ে উঠছে। তাদের মাধ্যমে সৌদির ভিসা সংগ্রহের এই পদ্ধতিকে তারা ‘ড্রপ বক্স’ বলছে।
সূত্র আরো জানিয়েছে, ড্রপ বক্স পদ্ধতি চালু করার জন্য ইতিমধ্যে সৌদি অ্যাম্বাসির সঙ্গে তাদের কয়েকদফা বৈঠক হয়েছে। আবদুল হাইয়ের অফিসেও বিভিন্ন সময়ে এই বিষয়ে বৈঠক হয়েছে। গঠন করা হয়েছে একটি কমিটি। বৈঠকে ড্রপ বক্সের সভাপতি মনোনীত করা হয়েছে আবদুল হাই নিজেই। ড্রপ বক্সের মাধ্যমে নির্দিষ্ট ওই ২০-২৫টি রিক্রুটিং এজেন্সি সৌদি অ্যাম্বাসিতে ভিসা জমা দেয়ার চূড়ান্ত তালিকাভুক্তির লক্ষ্যে ইতিমধ্যে সৌদি দূতাবাসের কর্মকর্তারা বিভিন্ন অফিস পরিদর্শন করেছেন। অভিযোগ রয়েছে, বিষয়টি পররাষ্ট্র বা প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় জানে না। তবে মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, মন্ত্রণালয় থেকেই বিষয়টি চূড়ান্ত করা হচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ড্রপ বক্সের নামে নতুন এই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে সৌদি আরবে কর্মী প্রেরণ করা হলে নানাবিধ সমস্যা তৈরি হবে। তারা বলছেন, যেসকল এজেন্সি ড্রপ বক্সের তালিকাভুক্ত থাকবে সৌদি নিয়োগকর্তা শুধু তাদেরকেই চিনবে। নিয়োগকর্তা মনে করবে, বাংলাদেশ থেকে এরাই শুধু কর্মী পাঠাবে।
জনশক্তি ব্যবসায়ীরা বলছেন, এই পদ্ধতির আওতায় নির্ধারিত এজেন্সি তাদের ভিসা সংগ্রহের জন্য পাসপোর্টসহ আবেদনপত্র সৌদি অ্যাম্বাসিতে জমা দিলে ব্যবসায়িক গোপনীয়তা হারাবে। একইসঙ্গে অন্যান্য রিক্রুটিং এজেন্সির নিয়োগকর্তার তথ্যাদিও জানবে তারা। এতে করে ড্রপ বক্সের আওতাধীন এই সিন্ডিকেট একচেটিয়া ব্যবসা করবে। বাকি এজেন্সিগুলো বঞ্চিত হবে। নিজেদের মধ্যে অন্তঃকলহের কারণে ভিসা সংক্রান্ত সকল ধরনের মূল কাগজপত্র জমাদানের পরেও এটা নকল বা জাল বলে সংশ্লিষ্ট এজেন্সিকে ব্লক করে দেয়ার প্ররোচনা তৈরি হবে।
এ ব্যাপারে গ্রিনল্যান্ড ওভারসিজের মালিক আবদুল হাই বলেন, এরকম একটি পদ্ধতির কথা চিন্তা করছে সৌদি আরবের দূতাবাস। বিষয়টি নিয়ে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক এ ব্যাপারে আলোচনা হচ্ছে। তবে এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে, চূড়ান্ত কিছু হয়নি। চূড়ান্ত হতে অনেক সময় লাগবে বলেও জানান তিনি। আবদুল হাই বলেন, ড্রপ বক্স নামের এই পদ্ধতিকে সিন্ডিকেট বলা যাবে না।
এটা মূলত: তাদের সার্ভিস সেন্টার। বলেন, বর্তমানে যে পদ্ধতি চালু রয়েছে তাতে অ্যাম্বাসিতে ভোগান্তি হয়। প্রায় ১২০০ এজেন্সি সেখানে ভিড় করে। এছাড়া কূটনৈতিক জোনে তাদের অ্যাম্বাসি স্থানান্তর হলে ভোগান্তি আরো বাড়বে। এসব বিষয় বিবেচনা করে তারা (সৌদি অ্যাম্বাসি) চাচ্ছে, সার্ভিস সেন্টারের মাধ্যমে ভিসা প্রসেসিং করতে। এক্ষেত্রে ড্রপ বক্সের বাইরে থাকা এজেন্সিগুলো সমস্যায় পড়বে কিনা জানতে চাইলে আবদুল হাই বলেন, তাদের সুবিধার্থেই এই পদ্ধতির কথা ভাবছে সংশ্লিষ্টরা। তিনি এই পদ্ধতির নেতৃত্বে কিনা জানতে চাইলে বলেন, আমাদের বিষয়টি তদারকি করার জন্য প্রস্তাব দেয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে অভিবাসী কর্মী উন্নয়ন প্রোগ্রামের (ওকাপ) চেয়ারম্যান সাকিরুল ইসলাম বলেন, মালয়েশিয়ার সিন্ডিকেট নিয়ে দীর্ঘদিন কথা হয়েছে। অবশেষে সেই সিন্ডিকেটের নানা অনিয়ম ধরা পড়েছে। এখন যদি সৌদিতে একই ধরনের সিন্ডিকেট হয় তাহলে আবারও নানা সমস্যার মুখে পড়বে দেশটির অভিবাসন খাত। সবচেয়ে বড় বিষয় অভিবাসন ব্যয় বাড়বে। সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি হয়েছে পড়বে অনেকে। সেক্ষেত্রে দেশটিতে কর্মী প্রেরণে বড় ধরনের হুমকির সম্মুখীন হবে। এই ধরনের সিন্ডিকেট যেনো গড়ে ওঠতে না পারে সেদিকে সরকারের নজর রাখা উচিত বলে মনে করেন তিনি।
বায়রার সাবেক সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিন স্বপন বলেন, এমন একটি পদ্ধতির কথা আমরা শুনেছি। এই ড্রপ বক্স পদ্ধতিতে ৩০-৩৫টি এজেন্সি থাকবে বলে জানতে পেরেছি। ড্রপ বক্স পদ্ধতি চালু হলে অন্য এজেন্সিগুলো তাদের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়বে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। বিএমইটির মহাপরিচালক সেলিম রেজা বলেন, নতুন এই পদ্ধতির ব্যাপারে তাদের কাছে কোনো তথ্য নেই। কেউ জানায়নি।
No comments