ভারতের গ্রামাঞ্চলে সমকামীদের জীবন যেমন
ভারতে
সমকামিতাকে বৈধতা দিয়ে সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্তকে মনে করা হচ্ছে
ঐতিহাসিক। সেখানকার লেসবিয়ান ও সমকামী সংগঠনগুলো এই রায়ের পর উল্লাসে
মেতে ওঠে। তারা একে মনে করছেন, "নতুন অধ্যায়ের সূচনা" হিসেবে।
কিন্তু গ্রামীণ এলাকার এলজিবিটি সম্প্রদায়ের বাস্তবতা সম্পূর্ণ ভিন্ন। তাদের সম্পর্কে মানুষের ধারণা বদলাতে এখনো অনেক সময় বাকী বলে মনে করেন তারা।
এখানে ভারতের গ্রামীণ এলাকার তিনজন সমকামী মানুষ তাদের জীবনের কথা তুলে ধরেছেন:
অরুণ কুমার(বয়স ২৮ বছর) উত্তর প্রদেশ থেকে-
আমি আদালতের সিদ্ধান্তে সত্যিই ভীষণ আনন্দিত। এটা শহর এলাকার মানুষদের আইনের কোনও ভয় ছাড়াই নিজেদের প্রকাশের ক্ষেত্রে সাহায্য করবে।
কিন্তু দু:খজনকভাবে যারা আমার মত গ্রামে বাস করে তাদরে জন্য বিষয়টি ভিন্ন। এখানে আমরা যে বিষয়টিকে ভয় পাই সেটি আইন নয়, সেটি হল মানুষের ধারণা- যা আমাদের বিপদে ফেলে। আমি আশা করি, এই রায় সম্পর্কে মিডিয়ার প্রচার মানুষকে এটা বোঝাতে সাহায্য করবে যে, সমকামিতা স্বাভাবিক একটি ব্যাপার।
কিন্তু এলজিবিটি সম্প্রদায়কে এই আতঙ্ক থেকে বেরিয়ে আসার জন্য দীর্ঘ সময় লড়াই চালিয়ে যেতে হয়েছে। আমি আমার পুরো জীবনটাই আতঙ্ক-ভয় নিয়ে পার করছি এবং সম্ভবত অদূর ভবিষ্যতে এ অবস্থার কোন হেরফের হচ্ছে না।
আমার বয়স তখন ১৪ বছর। সেসময় আমি বুঝতে পারলাম যে ছেলেদের প্রতি আমি আকর্ষণ অনুভব করছি। প্রাথমিকভাবে আমি কনফিউজড ছিলাম। আমি চেষ্টা করতাম এসব না ভাবতে। কিন্তু এই অনুভূতি আমাকে তাড়া করতো, তখন এক বন্ধুর সাথে বিষয়টি আলাপ করার সিদ্ধান্ত নিলাম।
কিন্তু তার প্রতিক্রিয়া আমাকে স্তব্ধ করে দিল। সে বললো, সমকামিতা নিয়ে ভাবাও ন্যক্কারজনক। সে আমাকে এড়িয়ে চলতে শুরু করলো এবং এরপর থেকে আমাদের কথা-বার্তাও বন্ধ হয়ে গেলো। এরপর অনেক বছর আমি আমার যৌনতা নিয়ে কারো সাথে কথা বলিনি।
যখন আমার খারাপ লাগতো আমি মাঠে চলে যেতাম এবং গাছপালার সাথে কথা বলতাম। তারা আমার বন্ধু হয়ে গেল। আমি এখনো তাদের সাথে কথা বলি।
আমার বয়স যখন ১৮ তখন কাছের এক শহরে চলে যাই লেখাপড়ার স্বার্থে। কিন্তু কোনকিছুর পরিবর্তন হল না। আমি হতাশ হয়ে পড়ি এবং এমন হল যে পৃথিবী তখন আমার কাছে কোন অর্থ বহন করছিল না।
সবসময় আমার মধ্যে অপরাধ-বোধ কাজ করতো কিন্তু কেন- তা জানা ছিল না। আমি খারাপ কোনকিছু করিনি। একজন শিক্ষক যাকে অনেকটা বন্ধু-ভাবাপন্ন বলে মনে হতো অনেক সাহস করে তাকে বিষয়টি জানালাম। ভেবেছিলাম তিনি বিষয়টি বুঝবেন, কিন্তু সেটা ছিল ভুল।
সেই শিক্ষক আমার বাবা-মাকে খবর দিলেন এবং তারা আমাকে বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে গেলেন। আমার বাবা প্রচণ্ড ক্রুদ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন। তিনি ভেবেছিলেন এটা একধরনের রোগ যা হয়তো সেরে যেতে পারে।
তিনি আমাকে হাতুড়ে ডাক্তার ও ওঝাদের কাছে নিয়ে গেলেন। তারা আমার ওপর সব ধরনের টোটকা ঝাড়ফুঁক চালালো। একজন বললেন সাতদিন আমাকে তালাবন্ধ ঘরের ভেতর রাখতে হবে। আমার বাবা সেটাই করলেন।
এখনো আমি এই গ্রামেই আছি। তবে বড় শহরে একটি চাকরির প্রস্তাব পেয়েছি আমি। আশা করি সবকিছু বদলাবে একদিন। আমি একজন সঙ্গী চাই। আমি ভালবাসতে চাই এবং কারও ভালবাসার মানুষ হতে চাই।
কিরণ যাদব(বয়স ৩০ বছর) বিহারের উত্তরাঞ্চলীয় প্রদেশ থেকে---
বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ৩৭৭ ধারা সম্পর্কে আমি কিছুই জানতাম না। এমনকি আমি সমকামিতা যে অপরাধ তাও জানতাম না। আমি কেবল জানতাম বিহারের প্রত্যন্ত গ্রামে লেসবিয়ান নারী হিসেবে আমার কোনও স্থান হবে না।
আদালতের রুলিং নিয়ে আমি খুব খুশি কিন্তু সেটা আমাকে কোন সাহায্য করছেনা। আমি আশা করি একটা আলাপ-আলোচনা শুরু হয়েছে যা প্রত্যন্ত এলাকায় পৌঁছাবে।
যখন আমার বয়স ১৫ তখন বুঝতে পারলাম যে আমি লেসবিয়ান। এর আগ পর্যন্ত ছোট্ট একটি মেয়ে ছিলাম, কখনো মেয়েদের মত পোশাক আমি পছন্দ করতাম না। গ্রামের ছেলেদের মত আমি ট্রাউজার এবং শার্ট পরতে পছন্দ করতাম।
আমার বাবা-মা বিষয়টি নিয়ে কখনো বাধা দেয়নি। আমার ভাই ছিলনা তাই তারা আমাকে তাদের ছেলের মতই দেখেছেন এবং ছেলেদের মত পোশাক পরায় তারা কিছুই মনে করেননি। কিন্তু তারা আমার সেক্সুয়াল অরিয়েন্টেশন সম্পর্কে কিছুই জানতেন না।
সত্যি বলতে আমিও বেশিকিছু জানতাম না। আমি কেবল বুঝতাম যে মেয়েদের প্রতি আমি আকর্ষণ অনুভব করি এবং এটাও বুঝতাম যে বিষয়টি সঠিক নয়।
সুতরাং কখনো আমি বাবা-মাকে জানাই নি। তারা এখনো কিছু জানে না। আমার ঘনিষ্ঠ কেউই জানেনা। বিয়ে-শাদীর অনুষ্ঠানের সময় আমি অনেক সুন্দরী মেয়েদের দেখি কিন্তু কখনো সাহস করে তাদের সাথে কথা বলতে পারি নি।
আমার বয়স যখন ২০ বছর, আমি নিজেকে প্রকাশ করার একটা সুযোগ পেলাম। গ্রামের কারও সাথে বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে পারছিলাম না। কিন্তু মোবাইল ফোন এসে আমাকে বাঁচিয়ে দিল। আমি বিভিন্ন ফোন নম্বরে র্যানডম কল করতাম এবং অচেনা লোকজনকে আমার গল্প বলতে থাকতাম। একবার একটি মেয়ে বললো যে, আমার কণ্ঠস্বর তার খুব ভাল লেগেছে। এটা আমাকে গর্বিত করলো। এটাই ছিল প্রথম কোন মেয়ের কাছ থেকে পাওয়া প্রশংসা।
এগুলোই ছিল আনন্দের ক্ষণস্থায়ী কিছু মুহূর্ত। এছাড়া আমি যেন আবার বেদনার গভীর খাদে বাস করতাম।
যখন আমার বয়স ২৪, তখন আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলাম। বাবা-মা ভেবেছিল বিয়ে না হওয়ায় আমি হতাশ হয়ে পড়েছি। কয়েক সপ্তাহ পরে তারা আমাকে বিয়ে দিয়ে দিল। কিন্তু এক বছরের মধ্যে আমার বিয়ে ভেঙে গেল।
সময়ের সাথে সাথে বেঁচে থাকার ইচ্ছা হারিয়ে গেল আমার। প্রতিটি দিন ছিল কঠিন। আমার জীবনের ৩০টি বছর কেটে গেছে কোন একজন সঙ্গী ছাড়া। এখন আমি কেবল একটি কাজ চাই বেঁচে থাকার জন্য। একজন সঙ্গীর দেখা পাবো সে আশা ছেড়েই দিয়েছি কারণ আমি যে লেসবিয়ান সে কথা খোলাখুলি কাউকে বলতে পর্যন্ত পারিনি কখনোই।
রাহুল সিং(৩২ বছর) বিহার থেকে-
আদালতের রায়কে স্বাগত জানাই। কিন্তু ৩৭৭ ধারা কখনোই আমার জন্য কোন সমস্যা ছিলনা। আমার গ্রামে এই কারণে কাউকে কোনদিন পুলিশ হেনস্থা করেনি। যেটা এখানে সমস্যার কারণ সেটি হল - সমাজ।
যখন ১৬ বছরে পদার্পণ করি তখনই বুঝতে পারি যে আমি সমকামী। দুইবছর পরে আমি বিয়ে করি। বাবা-মা কিংবা স্ত্রী কারো কাছেই বলতে পারিনি। কেবল নিজেকে স্বাভাবিক হিসেবে দেখানোর ভান করেছি। এখন আমার দুই ছেলে।
কিন্তু বিষয়টি নিজের স্ত্রীকে বলতে না পারায় আমি গভীরভাবে অনুতপ্ত। সে এখন জানে যে আমি সমকামী কিন্তু বাচ্চাদের কথা ভেবে সে এখনো আমার সাথে আছে।
সঙ্গী খুঁজে পাওয়া খুব কঠিন। বড় শহর ছাড়া এসব এলাকায় সমকামী সংগঠন বা ক্লাব নেই। অল্প কিছু সংখ্যক সমকামী লোকজনকে চিনি কিন্তু তারা সবাই সমকামিতার বিষয়টি প্রকাশ্যে এলে সমাজ থেকে একঘরে হওয়ার ভয়ে আতঙ্কের মধ্যে বাস করছে ।
লোকজনের বিশ্বাস সমকামীদের সম্মান বা ভালবাসা কোনটাই পাওয়ার অধিকার নেই।
এটা এক কঠিন জীবন। আমি কতটা ভাল বা কতটা সহযোগিতাপূর্ণ সেটা কোন ব্যাপার নয়। যখন তারা জানবে আমি সমকামী তারা আমাকে ত্যাগ করবে।
কেউ কেউ হয়তো সহানুভূতিশীল কিন্তু তারা এখনো মনে করে এটা একধরনের রোগ যার চিকিৎসা প্রয়োজন। কেউ বুঝতে চেষ্টা করেনা কেন আমরা এমন।
এভাবে বেঁচে থাকলে বারবার ভেঙে পড়বেন। সবসময় মনে হয় কেউ আমার দিকে এগিয়ে আসবে আমাকে হয়তো মারবে বা খুব খারাপ কিছু করবে কারণ আমি সমকামী।
আমার ভয়, আমাদের বাচ্চারা যখন বড় হবে তাদের নিপীড়িত হতে হবে। একবার আমি পালিয়েছি। মাঝে মাঝে সব ত্যাগ করতে ইচ্ছে হয় কিন্তু বাচ্চাদের কথা ভাবি।
পেছনে ফিরে তাকালে ভাবি যদি বাবা-মাকে বলার সাহস থাকতো...আমি হয়তো বিয়েই করতাম না। যারা কাউন্সিলিং করে তাদের কাছে যাওয়ার সুযোগ যদি হতো...
সূত্রঃ বিবিসি
কিন্তু গ্রামীণ এলাকার এলজিবিটি সম্প্রদায়ের বাস্তবতা সম্পূর্ণ ভিন্ন। তাদের সম্পর্কে মানুষের ধারণা বদলাতে এখনো অনেক সময় বাকী বলে মনে করেন তারা।
এখানে ভারতের গ্রামীণ এলাকার তিনজন সমকামী মানুষ তাদের জীবনের কথা তুলে ধরেছেন:
অরুণ কুমার(বয়স ২৮ বছর) উত্তর প্রদেশ থেকে-
আমি আদালতের সিদ্ধান্তে সত্যিই ভীষণ আনন্দিত। এটা শহর এলাকার মানুষদের আইনের কোনও ভয় ছাড়াই নিজেদের প্রকাশের ক্ষেত্রে সাহায্য করবে।
কিন্তু দু:খজনকভাবে যারা আমার মত গ্রামে বাস করে তাদরে জন্য বিষয়টি ভিন্ন। এখানে আমরা যে বিষয়টিকে ভয় পাই সেটি আইন নয়, সেটি হল মানুষের ধারণা- যা আমাদের বিপদে ফেলে। আমি আশা করি, এই রায় সম্পর্কে মিডিয়ার প্রচার মানুষকে এটা বোঝাতে সাহায্য করবে যে, সমকামিতা স্বাভাবিক একটি ব্যাপার।
কিন্তু এলজিবিটি সম্প্রদায়কে এই আতঙ্ক থেকে বেরিয়ে আসার জন্য দীর্ঘ সময় লড়াই চালিয়ে যেতে হয়েছে। আমি আমার পুরো জীবনটাই আতঙ্ক-ভয় নিয়ে পার করছি এবং সম্ভবত অদূর ভবিষ্যতে এ অবস্থার কোন হেরফের হচ্ছে না।
আমার বয়স তখন ১৪ বছর। সেসময় আমি বুঝতে পারলাম যে ছেলেদের প্রতি আমি আকর্ষণ অনুভব করছি। প্রাথমিকভাবে আমি কনফিউজড ছিলাম। আমি চেষ্টা করতাম এসব না ভাবতে। কিন্তু এই অনুভূতি আমাকে তাড়া করতো, তখন এক বন্ধুর সাথে বিষয়টি আলাপ করার সিদ্ধান্ত নিলাম।
কিন্তু তার প্রতিক্রিয়া আমাকে স্তব্ধ করে দিল। সে বললো, সমকামিতা নিয়ে ভাবাও ন্যক্কারজনক। সে আমাকে এড়িয়ে চলতে শুরু করলো এবং এরপর থেকে আমাদের কথা-বার্তাও বন্ধ হয়ে গেলো। এরপর অনেক বছর আমি আমার যৌনতা নিয়ে কারো সাথে কথা বলিনি।
যখন আমার খারাপ লাগতো আমি মাঠে চলে যেতাম এবং গাছপালার সাথে কথা বলতাম। তারা আমার বন্ধু হয়ে গেল। আমি এখনো তাদের সাথে কথা বলি।
আমার বয়স যখন ১৮ তখন কাছের এক শহরে চলে যাই লেখাপড়ার স্বার্থে। কিন্তু কোনকিছুর পরিবর্তন হল না। আমি হতাশ হয়ে পড়ি এবং এমন হল যে পৃথিবী তখন আমার কাছে কোন অর্থ বহন করছিল না।
সবসময় আমার মধ্যে অপরাধ-বোধ কাজ করতো কিন্তু কেন- তা জানা ছিল না। আমি খারাপ কোনকিছু করিনি। একজন শিক্ষক যাকে অনেকটা বন্ধু-ভাবাপন্ন বলে মনে হতো অনেক সাহস করে তাকে বিষয়টি জানালাম। ভেবেছিলাম তিনি বিষয়টি বুঝবেন, কিন্তু সেটা ছিল ভুল।
সেই শিক্ষক আমার বাবা-মাকে খবর দিলেন এবং তারা আমাকে বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে গেলেন। আমার বাবা প্রচণ্ড ক্রুদ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন। তিনি ভেবেছিলেন এটা একধরনের রোগ যা হয়তো সেরে যেতে পারে।
তিনি আমাকে হাতুড়ে ডাক্তার ও ওঝাদের কাছে নিয়ে গেলেন। তারা আমার ওপর সব ধরনের টোটকা ঝাড়ফুঁক চালালো। একজন বললেন সাতদিন আমাকে তালাবন্ধ ঘরের ভেতর রাখতে হবে। আমার বাবা সেটাই করলেন।
এখনো আমি এই গ্রামেই আছি। তবে বড় শহরে একটি চাকরির প্রস্তাব পেয়েছি আমি। আশা করি সবকিছু বদলাবে একদিন। আমি একজন সঙ্গী চাই। আমি ভালবাসতে চাই এবং কারও ভালবাসার মানুষ হতে চাই।
কিরণ যাদব(বয়স ৩০ বছর) বিহারের উত্তরাঞ্চলীয় প্রদেশ থেকে---
বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ৩৭৭ ধারা সম্পর্কে আমি কিছুই জানতাম না। এমনকি আমি সমকামিতা যে অপরাধ তাও জানতাম না। আমি কেবল জানতাম বিহারের প্রত্যন্ত গ্রামে লেসবিয়ান নারী হিসেবে আমার কোনও স্থান হবে না।
আদালতের রুলিং নিয়ে আমি খুব খুশি কিন্তু সেটা আমাকে কোন সাহায্য করছেনা। আমি আশা করি একটা আলাপ-আলোচনা শুরু হয়েছে যা প্রত্যন্ত এলাকায় পৌঁছাবে।
যখন আমার বয়স ১৫ তখন বুঝতে পারলাম যে আমি লেসবিয়ান। এর আগ পর্যন্ত ছোট্ট একটি মেয়ে ছিলাম, কখনো মেয়েদের মত পোশাক আমি পছন্দ করতাম না। গ্রামের ছেলেদের মত আমি ট্রাউজার এবং শার্ট পরতে পছন্দ করতাম।
আমার বাবা-মা বিষয়টি নিয়ে কখনো বাধা দেয়নি। আমার ভাই ছিলনা তাই তারা আমাকে তাদের ছেলের মতই দেখেছেন এবং ছেলেদের মত পোশাক পরায় তারা কিছুই মনে করেননি। কিন্তু তারা আমার সেক্সুয়াল অরিয়েন্টেশন সম্পর্কে কিছুই জানতেন না।
সত্যি বলতে আমিও বেশিকিছু জানতাম না। আমি কেবল বুঝতাম যে মেয়েদের প্রতি আমি আকর্ষণ অনুভব করি এবং এটাও বুঝতাম যে বিষয়টি সঠিক নয়।
সুতরাং কখনো আমি বাবা-মাকে জানাই নি। তারা এখনো কিছু জানে না। আমার ঘনিষ্ঠ কেউই জানেনা। বিয়ে-শাদীর অনুষ্ঠানের সময় আমি অনেক সুন্দরী মেয়েদের দেখি কিন্তু কখনো সাহস করে তাদের সাথে কথা বলতে পারি নি।
আমার বয়স যখন ২০ বছর, আমি নিজেকে প্রকাশ করার একটা সুযোগ পেলাম। গ্রামের কারও সাথে বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে পারছিলাম না। কিন্তু মোবাইল ফোন এসে আমাকে বাঁচিয়ে দিল। আমি বিভিন্ন ফোন নম্বরে র্যানডম কল করতাম এবং অচেনা লোকজনকে আমার গল্প বলতে থাকতাম। একবার একটি মেয়ে বললো যে, আমার কণ্ঠস্বর তার খুব ভাল লেগেছে। এটা আমাকে গর্বিত করলো। এটাই ছিল প্রথম কোন মেয়ের কাছ থেকে পাওয়া প্রশংসা।
এগুলোই ছিল আনন্দের ক্ষণস্থায়ী কিছু মুহূর্ত। এছাড়া আমি যেন আবার বেদনার গভীর খাদে বাস করতাম।
যখন আমার বয়স ২৪, তখন আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলাম। বাবা-মা ভেবেছিল বিয়ে না হওয়ায় আমি হতাশ হয়ে পড়েছি। কয়েক সপ্তাহ পরে তারা আমাকে বিয়ে দিয়ে দিল। কিন্তু এক বছরের মধ্যে আমার বিয়ে ভেঙে গেল।
সময়ের সাথে সাথে বেঁচে থাকার ইচ্ছা হারিয়ে গেল আমার। প্রতিটি দিন ছিল কঠিন। আমার জীবনের ৩০টি বছর কেটে গেছে কোন একজন সঙ্গী ছাড়া। এখন আমি কেবল একটি কাজ চাই বেঁচে থাকার জন্য। একজন সঙ্গীর দেখা পাবো সে আশা ছেড়েই দিয়েছি কারণ আমি যে লেসবিয়ান সে কথা খোলাখুলি কাউকে বলতে পর্যন্ত পারিনি কখনোই।
রাহুল সিং(৩২ বছর) বিহার থেকে-
আদালতের রায়কে স্বাগত জানাই। কিন্তু ৩৭৭ ধারা কখনোই আমার জন্য কোন সমস্যা ছিলনা। আমার গ্রামে এই কারণে কাউকে কোনদিন পুলিশ হেনস্থা করেনি। যেটা এখানে সমস্যার কারণ সেটি হল - সমাজ।
যখন ১৬ বছরে পদার্পণ করি তখনই বুঝতে পারি যে আমি সমকামী। দুইবছর পরে আমি বিয়ে করি। বাবা-মা কিংবা স্ত্রী কারো কাছেই বলতে পারিনি। কেবল নিজেকে স্বাভাবিক হিসেবে দেখানোর ভান করেছি। এখন আমার দুই ছেলে।
কিন্তু বিষয়টি নিজের স্ত্রীকে বলতে না পারায় আমি গভীরভাবে অনুতপ্ত। সে এখন জানে যে আমি সমকামী কিন্তু বাচ্চাদের কথা ভেবে সে এখনো আমার সাথে আছে।
সঙ্গী খুঁজে পাওয়া খুব কঠিন। বড় শহর ছাড়া এসব এলাকায় সমকামী সংগঠন বা ক্লাব নেই। অল্প কিছু সংখ্যক সমকামী লোকজনকে চিনি কিন্তু তারা সবাই সমকামিতার বিষয়টি প্রকাশ্যে এলে সমাজ থেকে একঘরে হওয়ার ভয়ে আতঙ্কের মধ্যে বাস করছে ।
লোকজনের বিশ্বাস সমকামীদের সম্মান বা ভালবাসা কোনটাই পাওয়ার অধিকার নেই।
এটা এক কঠিন জীবন। আমি কতটা ভাল বা কতটা সহযোগিতাপূর্ণ সেটা কোন ব্যাপার নয়। যখন তারা জানবে আমি সমকামী তারা আমাকে ত্যাগ করবে।
কেউ কেউ হয়তো সহানুভূতিশীল কিন্তু তারা এখনো মনে করে এটা একধরনের রোগ যার চিকিৎসা প্রয়োজন। কেউ বুঝতে চেষ্টা করেনা কেন আমরা এমন।
এভাবে বেঁচে থাকলে বারবার ভেঙে পড়বেন। সবসময় মনে হয় কেউ আমার দিকে এগিয়ে আসবে আমাকে হয়তো মারবে বা খুব খারাপ কিছু করবে কারণ আমি সমকামী।
আমার ভয়, আমাদের বাচ্চারা যখন বড় হবে তাদের নিপীড়িত হতে হবে। একবার আমি পালিয়েছি। মাঝে মাঝে সব ত্যাগ করতে ইচ্ছে হয় কিন্তু বাচ্চাদের কথা ভাবি।
পেছনে ফিরে তাকালে ভাবি যদি বাবা-মাকে বলার সাহস থাকতো...আমি হয়তো বিয়েই করতাম না। যারা কাউন্সিলিং করে তাদের কাছে যাওয়ার সুযোগ যদি হতো...
সূত্রঃ বিবিসি
No comments