এশিয়া সফরে কী বার্তা দিলেন ট্রাম্প?
মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিজের প্রথম এশিয়া সফরে বিপরীতধর্মী দুই আহ্বান জানালেন ডনাল্ড ট্রাম্প। একবার বললেন, উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক হুমকি মোকাবিলায় বিশ্বের উচিত যুক্তরাষ্ট্রকে সমর্থন দেওয়া। আবার বললেন, বাণিজ্যের প্রশ্নে কারোই উচিত হবে না যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন প্রত্যাশা করা।
বুধবার দক্ষিণ কোরিয়ায় গিয়ে শক্তিশালী রাষ্ট্রনেতার বেশ ধারণ করলেন তিনি। সেই দেশের আইনপ্রণেতাদের উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে বললেন, উত্তর কোরিয়ার হুমকি মোকাবিলা করাটা আমাদের দায়িত্ব। কারণ, যত বেশি আমরা অপেক্ষা করবো, বিপদ ততই বাড়বে। বিকল্প ততই কমবে।
দুই দিন বাদে ভিয়েতনামের মনোরম শহর ডানাঙে গিয়ে পুরোনো সংরক্ষণবাদী রূপে ফিরে গেলেন ট্রাম্প। বললেন, গৃহের মতো আপন কোনো স্থান নেই। সতর্ক করে দিয়ে জানিয়ে দিলেন, অঞ্চলভিত্তিক আর কোনো বাণিজ্য চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্র কখনও সই করবে না।
ট্রাম্পের এই পরস্পরবিরোধী বার্তায় প্রতীয়মান হয় যে, ট্রাম্প খুচরো লেনদেনের নীতিতে বিশ্বাসী। এই নীতিতে পৃথক পৃথকভাবে জয় অর্জন করা যায় বটে। কিন্তু বিশ্বে আমেরিকার সামগ্রিক অবস্থানের জন্য এই নীতি সুবিধাজনক নয়।
টোকিও থেকে বেইজিং, যেখানেই তিনি গেছেন, বিদেশী নেতাদের কাছে নিজেকে তিনি মধ্যস্থতাকারী হিসেবে তুলে ধরেছেন। তার প্রশাসন যেখানে অর্থনৈতিক ইস্যুতে কঠোর অবস্থান নিয়েছে, তিনি সেখানে বিদেশী নেতাদের সঙ্গে ব্যক্তিগত সখ্যতা গড়ে তোলার ওপর নজর দিয়েছেন।
কিন্তু তার এই চারিত্রিক বিপরীতধর্মীতা তার প্রশাসনের এশিয়া নীতির মৌলিক বিশৃঙ্খলাই প্রকাশ করে। ট্রাম্পের কূটনীতিকরা ভূ-রাজনৈতিকভাবে বাস্তববাদী, কিন্তু তার রাজনৈতিক উপদেষ্টারা অর্থনৈতিক জাতীয়তাবাদী। এ দুয়ের মাঝে আটকা পড়েছেন তিনি। এ কারণে আমেরিকার উদ্দেশ্য নিয়ে দেশটির মিত্র ও প্রতিপক্ষ উভয়েই বেশ দ্বিধার মধ্যে পড়ে গেছে। একাধিক বিশেষজ্ঞ বলছেন, আরও ক’টা দিন গেলে ভারসাম্য রক্ষা করাটা অসম্ভব হয়ে পড়বে।
যেমন, চীনে গিয়েই ট্রাম্প ঝামেলায় পড়েছেন। প্রতিবেশী ও মিত্র উত্তর কোরিয়াকে আরও চাপ দিতে চীনা প্রেসিডেন্টকে বোঝানোর চেষ্টা করেছেন তিনি। আর তা করতে গিয়ে, ট্রাম্পকে নিজের বাণিজ্য এজেন্ডা নিয়ে নরম আচরণ করতে হয়েছে। বাণিজ্য নিয়ে চীনের প্রতি নিজের ক্ষোভ কখনই গোপন রাখেননি ট্রাম্প। কিন্তু প্রেসিডেন্ট হয়ে চীন সফরে গিয়ে তাকে নরম হতেই হয়েছে। কারণ, উত্তর কোরিয়াকে নমনীয় করতে চীনের সাহায্য প্রয়োজন তার।
দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার ছোট দেশগুলোর বেলায় অবশ্য ট্রাম্প আপোষ করার অত তাগিদ বোধ করেননি। চীন ও জাপানে যেমন তার বক্তব্যে এক ধরণের আকুতি ছিল, মিনতি ছিল, ভিয়েতনামে তেমনটা ছিল না। ভিয়েতনামে গিয়ে তিনি নিজের পপুলিস্ট বা জনতোষণবাদী বাগাড়ম্বর ঠিকই উগড়ে দিলেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও, বানিজ্যের প্রশ্নে তার ‘একলা চলো’র আহ্বানের ফলে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার এই দেশগুলো চীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা জোরদারে উৎসাহিত হতে পারে।
দক্ষিণ কোরিয়ার ইওনসেই বিশ্ববিদ্যালয়ে চাইনিজ স্টাডিজ-এর সহযোগী অধ্যাপক জন ডেলুরি বলেন, ‘দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া আসলে এই অঞ্চলে আমেরিকার শক্ত অবস্থান দেখতে চায়। শুধু নিরাপত্তার ক্ষেত্রেই নয়, বাণিজ্যের ক্ষেত্রেও। কিন্তু ট্রাম্পের ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতি অনেকটা এই দেশগুলোকে বিপদের মুখে ফেলে সটকে যাওয়ার শামিল।’
বারাক ওবামা প্রেসিডেন্ট থাকাকালে তার চীন উপদেষ্টা ছিলেন জেফরি এ. বেডার। তিনি বলেন, ট্রাম্পের কথাবার্তা শুনে এশিয়ান নেতাদের মনে হবে যে, এই অঞ্চলে আমেরিকা এখন অত আগের মতো গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর নয়। তিনি আরও বলেন, ‘তারা সবসময় চীনের মতো উৎপীড়ক রাষ্ট্রের বিপক্ষে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে কারও ছায়া চায়। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র সেই ছায়া হতে পারছে না।’
এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অর্থনৈতিক সহযোগীতা (এপিইসি) ফোরামের বৈঠকে ট্রাম্পই ছিলেন একমাত্র ব্যতিক্রমী নেতা। অপর ২০ রাষ্ট্রনেতার সবাই উদারনৈতিক বাণিজ্য কাঠামোর পক্ষে কথা বলেছেন। তারা সংরক্ষনবাদীতার নিন্দা করেছেন। শনিবার প্রকাশিত এক যৌথ বিবৃতিতে তারা লিখেছেন, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যকে বিধিবদ্ধ, মুক্ত, উন্মুক্ত, ন্যায়সঙ্গত, স্বচ্ছ, অনুমানযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক রাখার ক্ষেত্রে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) অবদানকে আমরা স্বীকৃতি দিই।
শুক্রবার, ট্রাম্প ডব্লিউটিও’র বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন। আর শনিবার ওই বিবৃতি দেয় এপিইসি। ট্রাম্প অভিযোগ করে বলেছিলেন, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি অন্যায় আচরণ করছে। তিনি বলেন, মুক্ত বাণিজ্য নীতি সমুন্নত রাখা নয়, এই সংস্থা আমেরিকানদের শোষণ করতে অবদান রেখেছে। এ কারণে আমেরিকা থেকে হারিয়ে গেছে চাকরি, কারখানা ও বহু শিল্প।
ট্রাম্প অঙ্গিকার করেছেন কোনো আঞ্চলিক বাণিজ্য চুক্তিতে তিনি আর সই করবেন না। এমনকি আন্তঃপ্রশান্ত মহাসাগরীয় আংশীদারিত্ব চুক্তি থেকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে নেন ক্ষমতা পাওয়ার পরপর। শনিবার ওই চুক্তির অবশিষ্ট ১১টি সদস্য যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়াই চুক্তিটিতে স্বাক্ষর করে।
উত্তরপূর্ব এশিয়ায় ট্রাম্পের সফর যদি হয় উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে জোট গঠনের চেষ্টা। তাহলে এটিও বলতে হবে যে, তিনি বেশ হিসাব কষেই মনে করিয়ে দিয়েছেন যে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী যুগে বৈশ্বিক নেতা হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান তা নিয়ে তিনি অত আগ্রহী নন।
ভিয়েতনামে তার বক্তৃতা এমন ছিল যেন তিনি পেনসিলভানিয়া বা উইসকনসিনে বক্তব্য দিচ্ছেন। তার প্রশাসনের কর্মকর্তারা এই বক্তৃতাকে ‘মুক্ত ও উন্মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিক’ নীতি এগিয়ে নেওয়ার সুযোগ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। দৃশ্যত, এটি ওবামা আমলের ‘এশিয়া পাইভট নীতি’র পাল্টা নীতি। কিন্তু ট্রাম্প বৈশ্বিক অধিকার বা অভিন্ন স্বার্থের বদলে জোর দিয়েছেন রাষ্ট্রগুলোর স্বাধীনতা বা স্বার্বভৌমত্বের ওপর।
মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া বিভাগের পরিচালক জন সিফটন বলেন, মানবাধিকার মূলত আন্তর্জাতিক চুক্তি। যখন প্রেসিডেন্ট এ ধরণের কথা বলেন, তখন এটি মনে হয় যে, তিনি আসলে বহুমুখী আইনি কাঠামোকে খুব মর্যাদার সঙ্গে দেখেন না। আর তার এই অবস্থান ভীতিঅর।
সিফটন বলছেন, মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো ট্রাম্প প্রশাসনের চেয়ে এখন জাপান বা কানাডাতে বেশি যোগাযোগ বাড়াচ্ছে। চীনা নেতারাও মানবাধিকার নিয়ে কথা বলতে আগ্রহী নন। কিন্তু শি জিনপিং ভিয়েতনামে গিয়েছিলেন আমেরিকান প্রেসিডেন্টের ফেলে যাওয়া জায়গার কিছুটা দখলে নিতে। যেমন, ট্রাম্পের বক্তব্যের পর বক্তৃতা দিতে গিয়ে শি জিনপিং বলেন, ‘উন্মুক্ত করার মাধ্যমেই সমৃদ্ধি আসে। আর যারা দরজা বন্ধ করে, তারা অবধারিতভাবে পেছনে পড়ে যাবে।’ এই বক্তব্যের চেয়ে ভালো কোনো প্রস্তাব যুক্তরাষ্ট্র উপস্থাপন করতে পারেনি। তাই বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চীন নিশ্চিতভাবেই নিজের অবস্থান জোরালো করতে সক্ষম হবে।
সিংগাপুরের আইএসইএএস-ইউসোফ ইসহাক ইন্সটিটিউটের এশিয়ান স্টাডিজের প্রধান তাং সিয়ে মুন বলেন, ‘দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় চীন অনেকদূর এগিয়েছে। এই অঞ্চলের দেশগুলোর জন্য এটি অত খারাপ কিছু নয়। কিন্তু চীনের সাফল্য যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ধ্বংসাত্মক। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রের ফেলে যাওয়া স্থানই দখল করছে চীন।’
এই চীন বিশেষজ্ঞের ভাষ্য, ‘দিনের শেষে, ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতি হয়তো বোঝাবে ঘরে বসে থাকা একাকী আমেরিকা।’
বুধবার দক্ষিণ কোরিয়ায় গিয়ে শক্তিশালী রাষ্ট্রনেতার বেশ ধারণ করলেন তিনি। সেই দেশের আইনপ্রণেতাদের উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে বললেন, উত্তর কোরিয়ার হুমকি মোকাবিলা করাটা আমাদের দায়িত্ব। কারণ, যত বেশি আমরা অপেক্ষা করবো, বিপদ ততই বাড়বে। বিকল্প ততই কমবে।
দুই দিন বাদে ভিয়েতনামের মনোরম শহর ডানাঙে গিয়ে পুরোনো সংরক্ষণবাদী রূপে ফিরে গেলেন ট্রাম্প। বললেন, গৃহের মতো আপন কোনো স্থান নেই। সতর্ক করে দিয়ে জানিয়ে দিলেন, অঞ্চলভিত্তিক আর কোনো বাণিজ্য চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্র কখনও সই করবে না।
ট্রাম্পের এই পরস্পরবিরোধী বার্তায় প্রতীয়মান হয় যে, ট্রাম্প খুচরো লেনদেনের নীতিতে বিশ্বাসী। এই নীতিতে পৃথক পৃথকভাবে জয় অর্জন করা যায় বটে। কিন্তু বিশ্বে আমেরিকার সামগ্রিক অবস্থানের জন্য এই নীতি সুবিধাজনক নয়।
টোকিও থেকে বেইজিং, যেখানেই তিনি গেছেন, বিদেশী নেতাদের কাছে নিজেকে তিনি মধ্যস্থতাকারী হিসেবে তুলে ধরেছেন। তার প্রশাসন যেখানে অর্থনৈতিক ইস্যুতে কঠোর অবস্থান নিয়েছে, তিনি সেখানে বিদেশী নেতাদের সঙ্গে ব্যক্তিগত সখ্যতা গড়ে তোলার ওপর নজর দিয়েছেন।
কিন্তু তার এই চারিত্রিক বিপরীতধর্মীতা তার প্রশাসনের এশিয়া নীতির মৌলিক বিশৃঙ্খলাই প্রকাশ করে। ট্রাম্পের কূটনীতিকরা ভূ-রাজনৈতিকভাবে বাস্তববাদী, কিন্তু তার রাজনৈতিক উপদেষ্টারা অর্থনৈতিক জাতীয়তাবাদী। এ দুয়ের মাঝে আটকা পড়েছেন তিনি। এ কারণে আমেরিকার উদ্দেশ্য নিয়ে দেশটির মিত্র ও প্রতিপক্ষ উভয়েই বেশ দ্বিধার মধ্যে পড়ে গেছে। একাধিক বিশেষজ্ঞ বলছেন, আরও ক’টা দিন গেলে ভারসাম্য রক্ষা করাটা অসম্ভব হয়ে পড়বে।
যেমন, চীনে গিয়েই ট্রাম্প ঝামেলায় পড়েছেন। প্রতিবেশী ও মিত্র উত্তর কোরিয়াকে আরও চাপ দিতে চীনা প্রেসিডেন্টকে বোঝানোর চেষ্টা করেছেন তিনি। আর তা করতে গিয়ে, ট্রাম্পকে নিজের বাণিজ্য এজেন্ডা নিয়ে নরম আচরণ করতে হয়েছে। বাণিজ্য নিয়ে চীনের প্রতি নিজের ক্ষোভ কখনই গোপন রাখেননি ট্রাম্প। কিন্তু প্রেসিডেন্ট হয়ে চীন সফরে গিয়ে তাকে নরম হতেই হয়েছে। কারণ, উত্তর কোরিয়াকে নমনীয় করতে চীনের সাহায্য প্রয়োজন তার।
দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার ছোট দেশগুলোর বেলায় অবশ্য ট্রাম্প আপোষ করার অত তাগিদ বোধ করেননি। চীন ও জাপানে যেমন তার বক্তব্যে এক ধরণের আকুতি ছিল, মিনতি ছিল, ভিয়েতনামে তেমনটা ছিল না। ভিয়েতনামে গিয়ে তিনি নিজের পপুলিস্ট বা জনতোষণবাদী বাগাড়ম্বর ঠিকই উগড়ে দিলেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও, বানিজ্যের প্রশ্নে তার ‘একলা চলো’র আহ্বানের ফলে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার এই দেশগুলো চীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা জোরদারে উৎসাহিত হতে পারে।
দক্ষিণ কোরিয়ার ইওনসেই বিশ্ববিদ্যালয়ে চাইনিজ স্টাডিজ-এর সহযোগী অধ্যাপক জন ডেলুরি বলেন, ‘দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া আসলে এই অঞ্চলে আমেরিকার শক্ত অবস্থান দেখতে চায়। শুধু নিরাপত্তার ক্ষেত্রেই নয়, বাণিজ্যের ক্ষেত্রেও। কিন্তু ট্রাম্পের ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতি অনেকটা এই দেশগুলোকে বিপদের মুখে ফেলে সটকে যাওয়ার শামিল।’
বারাক ওবামা প্রেসিডেন্ট থাকাকালে তার চীন উপদেষ্টা ছিলেন জেফরি এ. বেডার। তিনি বলেন, ট্রাম্পের কথাবার্তা শুনে এশিয়ান নেতাদের মনে হবে যে, এই অঞ্চলে আমেরিকা এখন অত আগের মতো গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর নয়। তিনি আরও বলেন, ‘তারা সবসময় চীনের মতো উৎপীড়ক রাষ্ট্রের বিপক্ষে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে কারও ছায়া চায়। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র সেই ছায়া হতে পারছে না।’
এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অর্থনৈতিক সহযোগীতা (এপিইসি) ফোরামের বৈঠকে ট্রাম্পই ছিলেন একমাত্র ব্যতিক্রমী নেতা। অপর ২০ রাষ্ট্রনেতার সবাই উদারনৈতিক বাণিজ্য কাঠামোর পক্ষে কথা বলেছেন। তারা সংরক্ষনবাদীতার নিন্দা করেছেন। শনিবার প্রকাশিত এক যৌথ বিবৃতিতে তারা লিখেছেন, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যকে বিধিবদ্ধ, মুক্ত, উন্মুক্ত, ন্যায়সঙ্গত, স্বচ্ছ, অনুমানযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক রাখার ক্ষেত্রে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) অবদানকে আমরা স্বীকৃতি দিই।
শুক্রবার, ট্রাম্প ডব্লিউটিও’র বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন। আর শনিবার ওই বিবৃতি দেয় এপিইসি। ট্রাম্প অভিযোগ করে বলেছিলেন, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি অন্যায় আচরণ করছে। তিনি বলেন, মুক্ত বাণিজ্য নীতি সমুন্নত রাখা নয়, এই সংস্থা আমেরিকানদের শোষণ করতে অবদান রেখেছে। এ কারণে আমেরিকা থেকে হারিয়ে গেছে চাকরি, কারখানা ও বহু শিল্প।
ট্রাম্প অঙ্গিকার করেছেন কোনো আঞ্চলিক বাণিজ্য চুক্তিতে তিনি আর সই করবেন না। এমনকি আন্তঃপ্রশান্ত মহাসাগরীয় আংশীদারিত্ব চুক্তি থেকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে নেন ক্ষমতা পাওয়ার পরপর। শনিবার ওই চুক্তির অবশিষ্ট ১১টি সদস্য যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়াই চুক্তিটিতে স্বাক্ষর করে।
উত্তরপূর্ব এশিয়ায় ট্রাম্পের সফর যদি হয় উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে জোট গঠনের চেষ্টা। তাহলে এটিও বলতে হবে যে, তিনি বেশ হিসাব কষেই মনে করিয়ে দিয়েছেন যে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী যুগে বৈশ্বিক নেতা হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান তা নিয়ে তিনি অত আগ্রহী নন।
ভিয়েতনামে তার বক্তৃতা এমন ছিল যেন তিনি পেনসিলভানিয়া বা উইসকনসিনে বক্তব্য দিচ্ছেন। তার প্রশাসনের কর্মকর্তারা এই বক্তৃতাকে ‘মুক্ত ও উন্মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিক’ নীতি এগিয়ে নেওয়ার সুযোগ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। দৃশ্যত, এটি ওবামা আমলের ‘এশিয়া পাইভট নীতি’র পাল্টা নীতি। কিন্তু ট্রাম্প বৈশ্বিক অধিকার বা অভিন্ন স্বার্থের বদলে জোর দিয়েছেন রাষ্ট্রগুলোর স্বাধীনতা বা স্বার্বভৌমত্বের ওপর।
মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া বিভাগের পরিচালক জন সিফটন বলেন, মানবাধিকার মূলত আন্তর্জাতিক চুক্তি। যখন প্রেসিডেন্ট এ ধরণের কথা বলেন, তখন এটি মনে হয় যে, তিনি আসলে বহুমুখী আইনি কাঠামোকে খুব মর্যাদার সঙ্গে দেখেন না। আর তার এই অবস্থান ভীতিঅর।
সিফটন বলছেন, মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো ট্রাম্প প্রশাসনের চেয়ে এখন জাপান বা কানাডাতে বেশি যোগাযোগ বাড়াচ্ছে। চীনা নেতারাও মানবাধিকার নিয়ে কথা বলতে আগ্রহী নন। কিন্তু শি জিনপিং ভিয়েতনামে গিয়েছিলেন আমেরিকান প্রেসিডেন্টের ফেলে যাওয়া জায়গার কিছুটা দখলে নিতে। যেমন, ট্রাম্পের বক্তব্যের পর বক্তৃতা দিতে গিয়ে শি জিনপিং বলেন, ‘উন্মুক্ত করার মাধ্যমেই সমৃদ্ধি আসে। আর যারা দরজা বন্ধ করে, তারা অবধারিতভাবে পেছনে পড়ে যাবে।’ এই বক্তব্যের চেয়ে ভালো কোনো প্রস্তাব যুক্তরাষ্ট্র উপস্থাপন করতে পারেনি। তাই বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চীন নিশ্চিতভাবেই নিজের অবস্থান জোরালো করতে সক্ষম হবে।
সিংগাপুরের আইএসইএএস-ইউসোফ ইসহাক ইন্সটিটিউটের এশিয়ান স্টাডিজের প্রধান তাং সিয়ে মুন বলেন, ‘দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় চীন অনেকদূর এগিয়েছে। এই অঞ্চলের দেশগুলোর জন্য এটি অত খারাপ কিছু নয়। কিন্তু চীনের সাফল্য যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ধ্বংসাত্মক। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রের ফেলে যাওয়া স্থানই দখল করছে চীন।’
এই চীন বিশেষজ্ঞের ভাষ্য, ‘দিনের শেষে, ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতি হয়তো বোঝাবে ঘরে বসে থাকা একাকী আমেরিকা।’
No comments