চিকুনগুনিয়া কল সেন্টারে মিলছে না চিকিৎসা
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) চিকুনগুনিয়া কল সেন্টারে ফোন করে সেবা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেছেন অনেক ভুক্তভোগী। বলেছেন, গণমাধ্যমে প্রকাশিত ডিএসসিসির কল সেন্টারের নম্বরে ফোন করে সমস্যার কথা জানালেও তারা বাসায় কোনো সেবা পাননি। বেশির ভাগ সময় কল সেন্টারের নম্বরগুলো ব্যস্ত পেয়েছেন। কখনও কখনও কল ঢুকলেও রিসিভ হয়নি। কল সেন্টারে ফোন করলে সেবা পৌঁছে দেয়ার আশ্বাস দিলেও পরে আর কেউ যোগাযোগ করেনি। এ কারণে সংক্ষুব্ধরা বলছেন, সস্তা জনপ্রিয়তা অর্জনের জন্য ডিএসসিসি চিকুনগুনিয়া কল সেন্টার চালু করেছে। বাস্তবতা হচ্ছে, বাড়ি বাড়ি গিয়ে সেবা দেয়ার ইচ্ছা ও সক্ষমতা নেই ডিএসসিসির। ২০ জুলাই ডিএসসিসি চিকুনগুনিয়া রোগীদের বাসা-বাড়িতে গিয়ে চিকিৎসাসেবা ও ওষুধ পৌঁছানোর লক্ষ্যে ২৪ ঘণ্টা কল সেন্টার সেবা চালু করে। এটি ব্যাপকভাবে প্রচারও করছে ডিএসসিসি। কল সেন্টারের মাধ্যমে সেবা প্রত্যাশীকে চিকুনগুনিয়ার ব্যাপারে পরামর্শ, চিকিৎসা ও বিনামূল্যে ওষুধ সরবরাহ করার ঘোষণা দেয়া হয়। ডিএসসিসির ঘোষণা অনুযায়ী নগরবাসী ডিএসসিসির কল সেন্টারে ফোন করলেও আশাহত হয়েছেন অনেকেই। চিকুনগুনিয়া কল সেন্টারে ফোন করে সেবা না পাওয়ার বিষয়ে যুগান্তর অফিসে ফোন করে অভিযোগ করেছেন অন্তত অর্ধশত নগরবাসী। আজিমপুরের বাসিন্দা আউয়াল হোসেন বলেছেন, ডিএসসিসির কল সেন্টার (০৯৬১১০০০৯৯) ফোন করে সমস্যার কথা জানালেও কোনো সেবা পাননি। যাত্রাবাড়ীর ইকবাল হোসেন বলেছেন, শনিবার সকালে ডিএসসিসির কল সেন্টারে ১৫-২০ বার চেষ্টা করেও সংযোগ পাওয়া যায়নি। দুপুরের পর কল ঢুকলেও কেউ সাড়া দেননি। খিলগাঁওয়ের ইমদাম হোসেন বলেন, আমার মেয়ে চিকুনগুনিয়া আক্রান্ত। ডাক্তারের পরামর্শ মেনে বাসায় চিকিৎসা চলছে। ডিএসসিসির চিকুনগুনিয়া কল সেন্টারের ঘোষণা শুনে, কল সেন্টারের নম্বরে ফোন করি। তারা আমার নম্বর ও বাসার ঠিকানা নিয়ে বাসায় ডাক্তার পাঠানোর কথা বললেও পাঠায়নি। তার মতে, ডিএসসিসি সেবার নামে প্রকারান্তরে নগরবাসীর সঙ্গে প্রতারণা করছেন। প্রসঙ্গত, এবারের বর্ষার মৌসুমের শুরু থেকেই ঢাকা শহরে মশার উপদ্রব অতিমাত্রায় বেড়ে যায়। প্রথমদিকে এ ব্যাপারে নীরব ছিলেন ঢাকার দুই মেয়র। ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় গণমাধ্যম বরাবরের মতো সোচ্চার হয়ে ওঠে। একই সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও দুই মেয়রের নির্বিকার অবস্থান নিয়ে কঠোর সমালোচনা শুরু হয়। এরপর দুই মেয়র মশক নিয়ন্ত্রণে রাজপথে নামেন। ডিএসসিসির তথ্যমতে, চিকুনগুনিয়া কল সেন্টার চালুর পর গত ২০, ২১ ও ২২ জুলাই কল সেন্টারে ফোন কল এসেছে প্রায় ৮০ হাজার। ডিএসসিসি এলাকার বাইরে থেকেও কিছু ফোন কল পাওয়া যায়। তবে এর মধ্যে চিকিৎসাসেবা নেয়ার জন্য ৮৪০ জন ফোন করেছেন। এদের মধ্যে ৪০৬ জন রোগীকে বাসায় গিয়ে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। আর ৩৩৩ জনকে ফিরতি কল করে চিকিৎসা পরামর্শ দেয়া হয়েছে। পরে ফিরতি কল করে ১০১ জনকে পায়নি ডিএসসিসি।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ডিএসসিসির ৫৭টি ওয়ার্ডে চিকুনগুনিয়া চিকিৎসাসেবা দিতে অর্ধশত ডাক্তার ও প্যারামেডিকস কাজ করছে। প্রতিটি ওয়ার্ডে একজন করে ডাক্তার বা প্যারামেডিকস দেয়ার ইচ্ছা থাকলেও জনবল সংকটের কারণে ডিএসসিসি সেটা করতে পারেনি। দায়িত্বের অতিরিক্ত কাজ করার এসব ডাক্তার ও প্যারামেডিকসদের দৈনিক ৫০০ টাকা করে সম্মানী দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন ডিএসসিসি মেয়র। ডিএসসিসির কল সেন্টার কার্যক্রম তদারকির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও সংস্থার সিস্টেম অ্যানালিস্ট আবু তৈয়ব রোকন যুগান্তরকে বলেন, সিনেসিস আইটিকে কল সেন্টারের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এই আইটি প্রতিষ্ঠান সরকারি ও বেসরকারি বড় বড় প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। এ কারণে কল সেন্টার সার্ভিসে কোনো ধরনের সমস্যা হওয়ার কথা নয়। তবে কতদিন মেয়াদে এবং কত টাকার বিনিময়ে কল সেন্টার কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এসব এখনও ঠিক হয়নি। জরুরি প্রয়োজনে তাদের দিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। পরবর্তীকালে এটা নির্ধারণ করা হবে। এ প্রসঙ্গে ডিএসসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. শেখ সালাউদ্দিন যুগান্তরকে বলেন, চিকুনগুনিয়া ভাইরাস নিয়ন্ত্রণ ও রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিতে আমরা নিরলসভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করছি। সার্বক্ষণিক অর্ধশত ডাক্তার ও প্যারামেডিকস বাড়ি বাড়ি গিয়ে রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন। যতদিন চিকুনগুনিয়া থাকবে, ততদিন এই সেবা কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে বলে জানান এই কর্মকর্তা। সার্বিক বিষয়ে ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খান মোহাম্মদ বিলাল যুগান্তরকে বলেন, চিকুনগুনিয়া ভাইরাস নিয়ন্ত্রণ ও আক্রান্তদের সহযোগিতার জন্য নিরলসভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করছি আমরা। ইতিমধ্যে এর সুফলও পেতে শুরু করেছেন নগরবাসী। রোববার পর্যন্ত কেউ ভোগান্তির শিকার হয়েছেন এমন কোনো খবর পাননি বলে দাবি ওই কর্মকর্তার।
No comments