জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জাতীয় ঐক্যের তাগিদ



টঙ্গীতে জঙ্গি নেতা মুফতি হান্ন্নানকে ছিনিয়ে নিতে পুলিশের প্রিজন ভ্যানে বোমা হামলা, চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে জঙ্গি আস্তানায় শাসরুদ্ধকর অভিযান এবং আত্মঘাতী বোমায় ৫ জনের মৃত্যু, আশকোনায় র‌্যাব দপ্তরে আত্মঘাতী বোমা হামলার ১ জন নিহতের ঘটনায় আবারো জঙ্গি ইস্যু সামনে চলে এসেছে। মানবাধিকার নেতৃবৃন্দ ও নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশে জঙ্গিবাদের শেকড় যে উপড়ে ফেলা যায়নি-এসব  ঘটনা তারই প্রমাণ। তবে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর অবস্থান এবং অভিযানে কিছুটা সন্তুষ্টি প্রকাশ করলেও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে আদর্শিক লড়াই এবং জাতীয় ঐক্যের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন তারা। একই সঙ্গে সরকার, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরো সতর্ক ও গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়ানোর তাগিদ দিয়েছেন তারা।    
সাবেক সেনা কর্মকর্তা ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) আবদুর রশিদ  মানবজমিনকে বলেন, জঙ্গিবাদের দুটি ধারা আছে। একটি অভ্যন্তরীণ অন্যটি আন্তর্জাতিক। আন্তর্জাতিকভাবে আইএস এখন সিরিয়াসহ অন্যান্য জায়গায় চাপের মুখে ও ক্ষয়িষ্ণু অবস্থায় আছে। যেহেতু তারা চাপের মুখে সেহেতু তারা প্রমাণ করতে চায় যে এখনো সক্রিয় রয়েছে। আর অভ্যন্তরীণভাবে জঙ্গিবাদের ঘটনাগুলোয় বোঝা যাচ্ছে-এদেশীয় জঙ্গিরা দেশকে আবারও অস্থিতিশীল করতে চায়। দেশে অরাজকতা সৃষ্টি করাই তাদের উদ্দেশ্য। দেশের অভ্যন্তরে তারা চাপের মুখে আছে বলেই তীব্রভাবে আক্রমণের চেষ্টা করছে।  কিন্তু তাদের লক্ষ্য ও আক্রমণ দুটিই ব্যর্থ হয়েছে। তিনি বলেন, জঙ্গিবাদের যে বৈশিষ্ট্য, এই ঘটনাগুলো এর বাইরে নয়। এরা যখন চাপের মুখে থাকে তখনই সংঘবদ্ধ হয়ে আক্রমণের চেষ্টা করে। তাদের অবস্থান জানান দেয়ার চেষ্টা করে। এ ঘটনাগুলোয় মনে হয়েছে জঙ্গিবাদ এখনও আছে। তবে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও তাদের কঠোরভাবে মোকাবিলা করেছে। এক প্রশ্নের জবাবে মেজর জেনারেল (অব.) আবদুর রশিদ বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সতর্কাবস্থায় আছে। কিছু ক্ষেত্রে জনগণও এগিয়ে এসেছে। এক্ষেত্রে জনসচেতনতা ও গোয়েন্দা তৎপরতা আরো বাড়াতে হবে।
আইন ও সালিশ কেন্দ্র’র ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী নূর খান লিটন বলেন, দেশে জঙ্গিবাদের বিষয়ে আমাদের তথ্যগত ঘাটতি রয়েছে। আমরা আসলে মনে করছি তারা সংগঠিত হচ্ছে। আসলে তারা সংগঠিত ছিলই। তবে, কিছু ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান, বন্দুকযুদ্ধ ইত্যাদি মাধ্যমে জঙ্গিবাদ কিছুটা নিয়ন্ত্রণে ছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো প্রমাণ হয়েছে দেশে জঙ্গিবাদ অব্যাহত রয়েছে। তিনি  বলেন, সমাজে যে অস্থিরতা বিরাজ করছে সেটি নির্মূল করতে হবে। আর রাজনীতিতে অস্থিতিশীলতা, দুর্বৃত্তায়ন দূর করে রাজনীতিকে নৈতিক জায়গায় নিয়ে যেতে হবে। রাজনীতিকে দুর্বৃত্তায়িত করলে, গণতন্ত্রকে সংকুচিত করলে জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। নূর খান লিটন বলেন, জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণে আরো উন্নতমানের দীর্ঘমেয়াদি আদর্শিক লড়াই দরকার। এজন্য জাতীয় ঐকমত্য দরকার। জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণে শুধু সশস্ত্র অভিযানই যথেষ্ট নয়। জনগণকে যুক্ত করে এর বিরুদ্ধে আদর্শিক লড়াই করতে হবে। তিনি আরো বলেন, জঙ্গিদের দমনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী হয়তো সফল হচ্ছে। কিন্তু সীতাকুণ্ডে আমরা দেখেছি জনগণের প্রচেষ্টায় জঙ্গিদের বিরুদ্ধে অভিযান সম্ভব হয়েছে। তাই জনগণের ঐক্য বাড়াতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.