ট্রাম্প, বর্ণবিদ্বেষের প্রসার এবং বিশ্ববিদ্যালয়
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প খুব খেপেছেন। খেপেছেন মুক্তচিন্তার জন্য সারা দুনিয়ায় নামডাকওয়ালা বিশ্ববিদ্যালয় বার্কলির ওপর। গত বৃহস্পিতবার নিজের সরকারি টুইটে তিনি বলেছেন, বার্কলি বিশ্ববিদ্যালয় যদি মুক্তচিন্তা সহ্য করতে না পারে, অন্য মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি শুনতে না চায়, তবে তিনি এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ফেডারেল ফান্ড বন্ধ করে দেবেন।
কী এমন ঘটল যে ট্রাম্প রাগ ঝাড়ছেন একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর?
ট্রাম্পের এই গোস্বার কারণ, আগের রাতে (বুধবার) বার্কলি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ঘটে যাওয়া এক অভূতপূর্ব বিক্ষোভের ঘটনা। শিক্ষার্থীরা ট্রাম্পের সমর্থক এক বিখ্যাত সাংবাদিক মাইলো ইয়ানোপুলোসকে ক্যাম্পাসে ঢুকতে দেননি। ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে মাইলোর বক্তৃতা দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু শিক্ষার্থীদের প্রতিরোধ-বিক্ষোভ এমন সহিংস হয়ে ওঠে যে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বাধ্য হয়ে মাইলোর কর্মসূচি বাতিল করে। পুরো বিক্ষোভের সময়টা আমি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছিলাম। এমন সহিংস ঘটনা বার্কলির ক্যাম্পাসে ঘটবে, কেউ কল্পনাও করতে পারেনি। মাইলো ইয়ানোপুলোস বিখ্যাত মোটিভেশনাল স্পিকার। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি অভিবাসননীতি থেকে শুরু করে ট্রাম্পের সব নীতির কট্টর সমর্থক। ঘৃণার বিষবাষ্প ছড়িয়ে দেওয়ার ব্যাপারেও তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে। বার্কলি রিপাবলিকান ক্লাবের আমন্ত্রণে মাইলোর ক্যাম্পাসে বক্তৃতা দেওয়ার কথা ছিল রাত আটটায়। প্রগতিশীল ছাত্রছাত্রীদের আখড়া হিসেবে পরিচিত বার্কলির সাধারণ শিক্ষার্থীরা বেঁকে বসেছেন—মাইলোর মতো এমন ঘৃণা ছড়ানো লোককে তাঁরা ক্যাম্পাসে দেখতে চান না। তাঁকে যেভাবেই হোক প্রতিহত করা হবে। শিক্ষার্থীরা ফেসবুকে একটা ইভেন্ট খোলেন, চারদিকে প্রচার-প্রচারণা চালান। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর দুই দিন আগে থেকেই মেইলের পর মেইলে জানিয়ে দিচ্ছিলেন যে বার্কলি ফ্রি স্পিচ মুভমেন্টের জন্মস্থান। এখানে যে কারও কথা বলার অধিকার আছে। বুধবার বিকেল পাঁচটা থেকেই ছাত্রছাত্রীরা ক্যাম্পাসের স্টুডেন্ট ইউনিয়ন বিল্ডিংয়ের সামনে জড়ো হতে থাকেন। কৌতূহল মেটাতে আমিও যাই সেখানে।
কী এমন ঘটল যে ট্রাম্প রাগ ঝাড়ছেন একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর?
ট্রাম্পের এই গোস্বার কারণ, আগের রাতে (বুধবার) বার্কলি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ঘটে যাওয়া এক অভূতপূর্ব বিক্ষোভের ঘটনা। শিক্ষার্থীরা ট্রাম্পের সমর্থক এক বিখ্যাত সাংবাদিক মাইলো ইয়ানোপুলোসকে ক্যাম্পাসে ঢুকতে দেননি। ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে মাইলোর বক্তৃতা দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু শিক্ষার্থীদের প্রতিরোধ-বিক্ষোভ এমন সহিংস হয়ে ওঠে যে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বাধ্য হয়ে মাইলোর কর্মসূচি বাতিল করে। পুরো বিক্ষোভের সময়টা আমি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছিলাম। এমন সহিংস ঘটনা বার্কলির ক্যাম্পাসে ঘটবে, কেউ কল্পনাও করতে পারেনি। মাইলো ইয়ানোপুলোস বিখ্যাত মোটিভেশনাল স্পিকার। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি অভিবাসননীতি থেকে শুরু করে ট্রাম্পের সব নীতির কট্টর সমর্থক। ঘৃণার বিষবাষ্প ছড়িয়ে দেওয়ার ব্যাপারেও তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে। বার্কলি রিপাবলিকান ক্লাবের আমন্ত্রণে মাইলোর ক্যাম্পাসে বক্তৃতা দেওয়ার কথা ছিল রাত আটটায়। প্রগতিশীল ছাত্রছাত্রীদের আখড়া হিসেবে পরিচিত বার্কলির সাধারণ শিক্ষার্থীরা বেঁকে বসেছেন—মাইলোর মতো এমন ঘৃণা ছড়ানো লোককে তাঁরা ক্যাম্পাসে দেখতে চান না। তাঁকে যেভাবেই হোক প্রতিহত করা হবে। শিক্ষার্থীরা ফেসবুকে একটা ইভেন্ট খোলেন, চারদিকে প্রচার-প্রচারণা চালান। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর দুই দিন আগে থেকেই মেইলের পর মেইলে জানিয়ে দিচ্ছিলেন যে বার্কলি ফ্রি স্পিচ মুভমেন্টের জন্মস্থান। এখানে যে কারও কথা বলার অধিকার আছে। বুধবার বিকেল পাঁচটা থেকেই ছাত্রছাত্রীরা ক্যাম্পাসের স্টুডেন্ট ইউনিয়ন বিল্ডিংয়ের সামনে জড়ো হতে থাকেন। কৌতূহল মেটাতে আমিও যাই সেখানে।
এরপর সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত যা দেখেছি, তা দেখার জন্য প্রস্তুত ছিলাম না। বিকেল থেকেই ক্যাম্পাসের আকাশে একটানা চক্কর দিচ্ছিল চারটা হেলিকপ্টার। ক্যাম্পাস–ভর্তি কালো উর্দি পরা পুলিশ। প্রায় তিন হাজার শিক্ষার্থী ব্যানার-প্ল্যাকার্ড নিয়ে শান্তিপূর্ণভাবেই বিক্ষোভ করছিলেন। এর মধ্যে মাইলোও এসে পড়েন। সেই খবর পেয়েই কিনা ছাত্রছাত্রীদের মাথায় আগুন ধরে যায়। কোথা থেকে ভোজবাজির মতো একদল কালো পোশাকধারী ছাত্রছাত্রী পুলিশের দিকে আগুনের গোলা ছুড়ে মারেন। অ্যালুমিনিয়ামের বেড়া ভেঙে সামনে এগিয়ে যেতে থাকেন তাঁরা। বড় বড় পাথর দিয়ে বিভিন্ন ভবনের কাচ গুঁড়া করতে থাকেন। একপর্যায়ে সামনে থাকা জেনারেটরচালিত একটা ফ্লাডলাইটে তাঁরা আগুন ধরিয়ে দেন। বাংলাদেশে এ রকম পরিস্থিতি হলে আমরা ‘রণক্ষেত্র’ শব্দটা ব্যবহার করি। এখানেও সেটা অনায়াসে ব্যবহার করা যায়। শিক্ষার্থীদের মারমুখী ভাব দেখে হতবুদ্ধি পুলিশ কাঁদানে গ্যাস, ফাঁকা গুলি ছুড়তে থাকে। কিন্তু ছাত্রদের মধ্যে কোনো বিকার নেই। কাঁদানে গ্যাসের বিরুদ্ধে তাঁরা মাস্ক নিয়েই এসেছেন। ক্যাম্পাসের এক পাশে এসব চলছে, আরেক পাশে তখন উচ্চনিনাদী মিউজিকের তালে ‘ফা* ইউ ট্রাম্প’ গান, আর সেই সঙ্গে উদ্দাম নৃত্য। আরেক পাশে গলা কাঁপিয়ে ভাষণ দিচ্ছেন কয়েকজন ‘ছাত্রনেতা’। এসব দেখে সোয়া ছয়টার মধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ঘোষণা: মাইলোর অনুষ্ঠান বাতিল করা হয়েছে। ছাত্রছাত্রীরা যেন ঘরে ফিরে যান। এই খবরে ক্যাম্পাসে উল্লাস, আকাশে ওড়ে অজস্র হাউই বাতি। পুলিশ হ্যান্ডমাইকে বারবার ঘোষণা দিতে থাকে, আগামী ১০ মিনিটের মাঝে ক্যাম্পাস ত্যাগ না করলে পুলিশ তাঁদের গ্রেপ্তার করতে বাধ্য হবে। কিন্তু কে আর ভয় পায় সেটা! চলতেই থাকে প্রতিবাদ। আকাশে বাড়তে থাকে হেলিকপ্টার, কোথা থেকে জানি চলে আসে একটা সেসনা ধরনের হালকা বিমান। সেটা ক্যাম্পাসের আকাশে ঘুরতে ঘুরতে সেখান থেকেই লাউড স্পিকারে ক্যাম্পাস ত্যাগের নির্দেশ দিতে থাকে। কিন্তু তারুণ্যের এই প্রতিবাদ কি সহজে থামে!
থামতে থামতে সেই রাত ১০টা। ক্যাম্পাস তখন গিজগিজ করছে পুলিশে। এই শহরের পুলিশের সঙ্গে এসে যোগ দিয়েছে পাশের শহরের কয়েক শ পুলিশ। আমি কখনো নিরাপদ কখনো অনিরাপদ দূরত্বে দাঁড়িয়ে পুরো ঘটনা দেখলাম, ছবি তুললাম, ভিডিও করলাম, মানুষের ইন্টারভিউ নিলাম। এমন ঘটনা বার্কলির ক্যাম্পাসে দেখব, সেটা আমি কেন, ক্যাম্পাসের কেউই ভাবেনি। মনে মনে একটু মজাও পেলাম। বিদেশে বসে একদম দেশের আবহ। বার্কলির ইতিহাসে এই প্রথম জ্বালাও-পোড়াও আর ভাঙচুরের ঘটনা ঘটল। মজার ব্যাপার হলো, এই ক্যাম্পাসে বিখ্যাত ফ্রি স্পিচ মুভমেন্টের স্মরণে ‘ফ্রি স্পিচ ক্যাফে’ নামে একটা ক্যাফে আছে, যেখানে দাঁড়িয়ে যে কেউ যে কারও বিরুদ্ধে কথা বলতে পারেন। ট্রাম্প এমনই প্রতিবাদের আগুন ধরিয়ে দিয়েছেন যে বার্কলির ক্যাম্পাসে এখন ভিন্নমতাবলম্বী ট্রাম্পের সমর্থকদের স্থান নেই। ছাত্রদের বক্তব্য, জাতিগত বিভেদ ও বিদ্বেষ ছড়ানো হেট স্পিচ কখনো ভিন্নমত হতে পারে না। আর ক্যাম্পাসে এসে মাইলো ইমিগ্র্যান্ট ছাত্রছাত্রীদের এই দেশ থেকে বের করে দেওয়ার ব্যাপারে উসকানিমূলক বক্তব্য দেবেন, সেটা ফ্রি স্পিচ হতে পারে না।
সিমু নাসের: সাংবাদিক।
সিমু নাসের: সাংবাদিক।
No comments