রাজনৈতিক দলকে বিশেষ সুবিধা দেওয়ায় প্রশ্ন
ভারতের নরেন্দ্র মোদি সরকার কালোটাকার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেও রাজনৈতিক দলগুলোকে বিশেষ সুবিধা দিল। পুরোনো ৫০০ ও ১০০০ রুপির নোট সাধারণ মানুষ আর ব্যাংকে জমা দিতে না পারলেও রাজনৈতিক দলগুলো তা পারবে ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত। এবং সে জন্য দলগুলোকে কোনো কর দিতে হবে না।
শুক্রবার রাতে সরকারের দেওয়া এই ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল নানা প্রশ্ন তুলেছে। তৃণমূল কংগ্রেসের নেত্রী পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, এই সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে সরকার ও শাসক দলের দুরভিসন্ধি প্রকাশ হয়ে যাচ্ছে। আম আদমি নেতা ও দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল জানিয়েছেন, রাজনৈতিক দলের তহবিল বৃদ্ধি কীভাবে হয় ও হয়ে আসছে তা খতিয়ে দেখতে একটা কমিটি গঠন করা হবে। এত প্রশ্ন ওঠার কারণ, রাজনৈতিক দলগুলোতে ২০ হাজার রুপি পর্যন্ত কোনো রকম প্রমাণ ছাড়াই চাঁদা দেওয়া যায়। যাঁরা চাঁদা দেবেন তাঁদের কোনো পরিচয় বা প্রমাণপত্রও দাখিল করতে হয় না। রাজনৈতিক দলগুলোকে করও দিতে হয় না। তবে এ ক্ষেত্রে সরকার জানিয়েছে, রাজনৈতিক দলগুলোর জমা দেওয়া অর্থে অস্বাভাবিক কিছু ধরা পড়লে তাদের জবাবদিহি করতে ডাকা হতে পারে। অতএব দলগুলো যেন তাদের কাগজপত্র ও হিসাব ঠিক রাখে। নির্বাচন সংস্কারের জন্য নির্বাচন কমিশন একাধিকবার এ নিয়ে প্রশ্নও তুলেছে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নোটবন্দীর সিদ্ধান্ত নিয়েও রাজনৈতিক দলগুলোকে এই সুযোগ পাইয়ে দিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েছেন। এমনিতেই তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, সিদ্ধান্ত ঘোষণা করার আগেই বিজেপি ও তাদের ঘনিষ্ঠ শিল্পপতিরা বাতিল নোটের উপযুক্ত বন্দোবস্ত করে ফেলেছেন।
এবার রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য এই ব্যবস্থা নতুন বিতর্কের সৃষ্টি করল। যেসব সাধারণ মানুষের কাছে বাতিল নোট এখনো রয়ে গেছে, তাঁরা রাজনৈতিক দলে সেই টাকা জমা দিতে আরও ১৫ দিন সময় পেয়ে যাচ্ছেন। এরই পাশাপাশি একই সঙ্গে সরকার বাড়তি কর দিয়ে কালোটাকা সাদা করার সুযোগও নতুন করে পাইয়ে দিল। কর না দেওয়া অর্থ যাদের রয়েছে তারা আগামী বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত তা জমা দিতে পারবে। তবে সে জন্য প্রায় ৫০ শতাংশ কর দিতে হবে। বাকি ৫০ শতাংশের অর্ধেক চার বছর বিনা সুদে জমা থাকবে প্রধানমন্ত্রীর গরিব কল্যাণ প্রকল্পে। চলতি বছরেই এ ধরনের এক প্রকল্পে সরকারের ৬৫ হাজার কোটি রুপি কর বাবদ আয় হয়েছে। তবে সেই প্রকল্পের থেকে এবারেরটি আলাদা। এবার আগে করের টাকা জমা দিতে হবে, তারপর অনলাইনে ছাড়ের আবেদন জানাতে হবে। একের পর এক এ ধরনের প্রকল্পের মধ্য দিয়ে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ অসাধু ব্যবসায়ীদের পাইয়ে দেওয়া হচ্ছে বলেও সরকারকে সমালোচনা শুনতে হচ্ছে। পাশাপাশি আয়কর বিভাগ ইতিমধ্যে প্রায় তিন হাজার জনকে নোটিশ পাঠিয়েছে যাদের ব্যাংকের খাতায় ৮ নভেম্বরের পর মাত্রাছাড়া টাকা জমা পড়েছে। নোটবন্দীর গত পাঁচ সপ্তাহে আয়কর বিভাগ ইতিমধ্যে প্রায় ৪০০ কোটি রুপি বাজেয়াপ্ত করেছে।
No comments