সৌদি আরবে মানবেতর জীবন
যখন সৌদি আরবে নতুন করে জনশক্তি পাঠানোর কথা জোরেশোরে উচ্চারিত হচ্ছে, তখন সেই দেশটিতে প্রবাসী বাংলাদেশি শ্রমিকদের মানবেতর জীবনের খবর আমাদের উদ্বিগ্ন না করে পারে না। বৃহস্পতিবার প্রথম আলোয় প্রকাশিত এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, সৌদি ওজার নামের একটি বড় কোম্পানিতে প্রায় আট মাস ধরে ১ হাজার ৬০০ বাংলাদেশি শ্রমিকের বেতন-ভাতা বন্ধ থাকায় তাঁদের অর্ধাহারে-অনাহারে দিন কাটাতে হচ্ছে। এ ছাড়া সাদ নামের আরেকটি প্রতিষ্ঠানের প্রায় ১৪২ বাংলাদেশি শ্রমিক চার থেকে পাঁচ মাস ধরে বেতন পাচ্ছেন না। তেলের দাম কমে যাওয়ায় কয়েক বছর ধরেই সৌদি আরবে অর্থনৈতিক মন্দা চলছে। ফলে অনেক কোম্পানি শ্রমিক ছাঁটাই করছে; অনেক কোম্পানি নিয়মিত বেতন-ভাতা দিতে পারছে না। এই সব প্রবাসী শ্রমিক খুবই কম বেতন পান এবং তাঁদের উপার্জনের ওপর দেশে বসবাসকারী আত্মীয়স্বজনেরা নির্ভরশীল। সে ক্ষেত্রে কেবল প্রবাসী শ্রমিকেরা নন, তাঁদের পরিবারের সদস্যরাও সমস্যায় পড়েছেন।
এ অবস্থায় শ্রমিকেরা বাংলাদেশ সরকার ও দূতাবাসের সহায়তা আশা করেন। কিন্তু পত্রিকার প্রতিবেদন অনুযায়ী ভারত, পাকিস্তান, ফিলিপাইন, শ্রীলঙ্কাসহ বিভিন্ন দেশ তাদের নাগরিকদের বকেয়া বেতন আদায়ে সৌদি কর্তৃপক্ষকে চাপ দিলেও বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে কার্যকর পদক্ষেপ নেই। প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী বলেছেন, সাময়িক অসুবিধা দূর করার জন্য মন্ত্রণালয় থেকে সৌদি আরবে ৫৩ লাখ টাকা পাঠানো হয়েছে। এই আর্থিক সহায়তা যথেষ্ট নয়। যে দেশে শ্রমিকেরা কাজ করছেন, তাঁদের বেতন-ভাতা প্রদানের ব্যাপারে সেই দেশটির দায়িত্ব আছে। আমাদের প্রত্যাশা, আমাদের সরকার সৌদি সরকার ও সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলোর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে শ্রমিকদের বকেয়া বেতন পরিশোধের বিষয়টি নিশ্চিত করবে। কোম্পানিগুলো দেউলিয়া হয়ে পড়লে, কিংবা আমাদের প্রবাসী শ্রমিকেরা সেসব কোম্পানির কাজ হারালে, তাঁদের বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা উচিত। সৌদি আরব যেখানে নতুন করে শ্রমিক নেওয়ার কথা বলছে, সেখানে কর্মরত শ্রমিকেরা মানবেতর জীবনযাপন করবেন, এটি মেনে নেওয়া যায় না।
No comments