এশিয়াকে নিয়ন্ত্রণে রাখবে জি-সেভেন
বিশ্বের শিল্পোন্নত দেশগুলোর দুই দিনব্যাপী আয়োজিত জি-সেভেন সম্মেলন শেষ হয়ে গেল শুক্রবার। এবারের মূল বিষয় ছিল অর্থনীতির বিকাশ এবং বাণিজ্যের বিস্তৃতি। এ ক্ষেত্রে ধনীদের দুর্নীতি ও কর ফাঁকির বিষয়ে জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণা করেছেন জি-সেভেনের শীর্ষ নেতারা। এ ছাড়া মধ্যবিত্তদের জীবনযাত্রার মান বাড়ানোর বিষয়ে মনোযোগ দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। এবারের সম্মেলনে বিশ্ব অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি চলমান রাখার বিষয়টি আলোচনার টেবিলে থাকলেও মূলত সবার দৃষ্টি ছিল এশীয় রাজনীতিতে। চীনকে মোকাবেলা করতে নানাবিধ সুযোগ-সুবিধাসহ ঠিকাদারি দেয়া হয়েছে জাপানকে। জাপান-ইইউ মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি : ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২৮টি রাষ্ট্রের সঙ্গে অবাধ মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি করার পথে এগিয়ে গেল জাপান। সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন বলেন, ‘জাপান-ইইউ মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি বাস্তবায়িত হলে বৈশ্বিক অর্থনীতি দ্রুতই চাঙ্গা হয়ে উঠবে।
কারণ তখন আরও ন্যূনতম ৩৪০ বিলিয়ন ডলারের ব্যবসা সম্প্রসারিত হবে অর্থবাজারে।’ বর্তমানে ইইউ-জাপান দ্বিপাক্ষিক ব্যবসার পরিমাণ বছরে ৮৯ বিলিয়ন ডলার বলে জানিয়েছে এক্সপ্রেস নিউজ। এ ছাড়া ইসলামি মৌলবাদ দমন, চীনের একচেটিয়া বাজার দখল রোধ এবং ইউরেশিয়াতে রাশিয়ার রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের বিষয়গুলোতে একসঙ্গে কাজ করার প্রতিশ্র“তি দিয়েছে জাপান-ইইউ। এ ব্যাপারে জি-সেভেন নেতারা বলেন, ভারসাম্যপূর্ণ বৈশ্বিক অর্থনীতি ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে জাপান-ইইউ অবাধ বাণিজ্য দ্রুতই বাস্তবায়ন করা হবে। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকট রোধে ভোক্তা কর না বাড়ানোর সিদ্ধান্ত জাপানের : বৈশ্বিক অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করতে জাতীয় অর্থনৈতিক নীতিতেও পরিবর্তন আনছে জাপান। পূর্ব প্রস্তাব অনুসারে জাপানের ভোক্তা কর ৮ থেকে ১০ শতাংশ বৃদ্ধি করার কথা ছিল। তবে শুক্রবার দেশটির প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে বলেন, ‘বর্তমান বিশ্বের অর্থনৈতিক মন্থরতার কথা বিবেচনা করে জাপান ভোক্তা কর বাড়ানোর সিদ্ধান্ত স্থগিত করছে।’ তবে জাপানি অর্থনীতিবিদ মাসাকি কুয়াহারা জাপান টাইমসকে বলেন, ‘সিনেটের আসন্ন উচ্চকক্ষের নির্বাচনকে সামনে রেখেই প্রধানমন্ত্রী এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তিনি জি-সেভেন সম্মেলনকে সফলভাবে ব্যবহার করলেন। তবে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনায় এ সিদ্ধান্ত ক্ষতির কারণ হতে পারে।’
ব্রেক্সিটের বিপক্ষে সরব জি-সেভেন : ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে ব্রিটেনের বের হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাকে বিশ্বের অর্থনীতির জন্য হুমকি হিসেবে চিহ্নিত করেছেন জি-সেভেন নেতারা। তারা বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে যুক্তরাজ্য বেরিয়ে গেলে বৈশ্বিক বাণিজ্য এবং কর্মসংস্থানের পথে তা অপূরণীয় ক্ষতির কারণ হবে। এ ছাড়া বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির পথেও তা বড় ধরনের হুমকি হয়ে দেখা দেবে। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন বলেন, ‘ইইউতে থাকার মধ্যেই ব্রিটেনের সার্বিক মঙ্গল নিহিত আছে। এর ব্যতিক্রম কিছু ঘটলে বিনিয়োগ এবং ব্যবসা মুখ থুবড়ে পড়বে।’ জি-সেভেন সম্মেলনে অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্যামেরনকে বলেন, ‘ইউরোপীয় ইউনিয়নে থাকাটাই আপনার দেশের জনগণকে উপকৃত করবে।’ এ বছরের ২৩ জুন ইইউতে থাকা না-থাকার বিষয়ে চূড়ান্ত গণভোটের আয়োজন করা হয়েছে ব্রিটেনে। উদ্বাস্তু ইস–্যকে বৈশ্বিক সমস্যা হিসেবে চিহ্নিতকরণ : অভিবাসী এবং উদ্বাস্তু সমস্যাকে বৈশ্বিক সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন জি-সেভেন নেতারা। তারা বলেন, উদ্বাস্তু সমস্যা একটি বৈশ্বিক সমস্যা। এ সমস্যা নিরসনে বিশ্বের সব রাষ্ট্রেরই ভূমিকা রাখা উচিত। গত বছর সিরিয়া এবং ইরাক থেকে ১৩ লাখ মানুষ ইউরোপে আশ্রয় নিয়েছে। এদের এক-তৃতীয়াংশই আছে জার্মানিতে। এ ব্যাপারে জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মার্কেল বলেন, ‘সামনের দিনগুলোতে অভিবাসী এবং উদ্বাস্তু সমস্যা নিরসনে সতর্ক নজর রাখবে জি-সেভেন। বিশেষ করে ইরাকের প্রতি আলাদা ব্যবস্থা নেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। কারণ ইরাক থেকেই স্রোতের মতো মানুষ বের হয়ে গেছে।’ প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়নের ঘোষণা : বৈশ্বিক জলবায়ু সমস্যা নিরসনে ঐতিহাসিক প্যারিস চুক্তি দ্রুত বাস্তবায়নের উদ্যোগের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে জি-সেভেন। বৈশ্বিক তাপমাত্রা ন্যূনতম ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমিয়ে আনার ব্যাপারে তারা সর্বোচ্চ সহযোগিতার ঘোষণা দিয়েছে।
No comments