সাতক্ষীরার খেলোয়াড় গড়ার কারিগর
ঘরোয়া আসর তো বটে, মালদ্বীপ লীগেও হ্যাটট্রিকের পর হ্যাটট্রিক করেছেন বাংলাদেশ মহিলা ফুটবল দলের ফরোয়ার্ড সাবিনা খাতুন। সাবিনা খাতুন ছাড়াও সুরাইয়া খাতুন ও মিরানার মতো তারকা ফুটবলার তৈরির কারিগর আকবর আলী। সাতক্ষীরার এই ক্রীড়াবিদ তৈরির কারিগরের হাতে দীক্ষা নিয়ে জাতীয় কাবাডি দলে খেলছেন মিতা খাতুন পাখি, মানসুরা খাতুন ও আজমিরা খাতুন দোলারা। দেশের দ্রুততম মানবী শিরিন আক্তারও তার হাতে তৈরি। তার দুই মেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌস রিক্তা ও ফাতেমাতুজ জোহরা মুক্তা জাতীয় ফুটবল ও খোখো দলের সদস্য। আকবর আলী এবার অ্যাথলেট গড়ার দায়িত্ব নিয়েছেন। নিজে ছিলেন অ্যাথলেট। দুই মেয়েও খেলাধুলার সঙ্গে জড়িত। ছেলেটা পড়াশোনায় ব্যস্ত। তাই বলে সাতক্ষীরার আকবর আলী ও তার স্ত্রীর সংসার ছোট নয়। বাড়িতে ১৫ জন। নিজের বাড়িতে ১৩ জন মেয়েকে নিয়ে আকবর আলী গড়ে তুলেছেন জ্যোতি ক্রীড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। আগে ছিল অনাবাসিক। গেল তিন বছরে এ আবাসিক প্রতিষ্ঠান থেকে প্রায় অর্ধশত ক্রীড়াবিদ বিভিন্ন জাতীয় দলে খেলছেন। আকবর আলী এবার পাঁচ তরুণ অ্যাথলেটকে নিয়ে এসেছেন জাতীয় জুনিয়র অ্যাথলেটিক্স প্রতিযোগিতায়। বাংলাদেশ পাটকল কর্পোরেশনের (বিজেএমসি) মহিলা ফুটবল দলের কোচ আকবর আলী দীর্ঘদিন ক্রীড়াঙ্গনের সঙ্গে জড়িত।
তার দুই মেয়ে রিক্তা ও মুক্তা পড়ছেন যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্পোর্টস সায়েন্স অ্যান্ড ফিজিক্যাল অ্যাডুকেশনে তৃতীয় বর্ষে। আকবার আলী ও তার দুই মেয়ে নিজেদের অর্জিত সব অর্থ খরচ করেন ক্রীড়াবিদদের উন্নয়নে। সাতক্ষীরার চালতেতলা বাজারে নিজের বাড়িতে ২০০৮ সালে জ্যোতি ক্রীড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন তিনি। বর্তমানে ১৩ জন মহিলা ক্রীড়াবিদ এখানে খেলাধুলা শিখছেন। আকবর আলী বলেন, ‘বিজেএমসিতে আমি কোচ হিসেবে এবং আমার দুই মেয়ে চাকরি করে যে টাকা পাই, তা দিয়েই এ প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম চালাই। এখানে ১৩ জন মেয়ের পড়াশোনা, থাকা-খাওয়া আমাদের অর্থে চলে। অ্যাথলেটিক্স, হ্যান্ডবল, ভলিবল, কাবাড়ি, ফুটবল ও খোখো খেলা শেখানো হয়। নতুন যোগ হয়েছে ক্রিকেট, থ্রোবল ও সেপাক টাকরো। নিঃস্বার্থ এ ক্রীড়াকোচ এবার পাঁচ তরুণ অ্যাথলেট নিয়ে জাতীয় জুনিয়র অ্যাথলেটিক্সে এসেছেন। সবাই দরিদ্র পরিবারের সন্তান। তাদের মধ্যে নয়ন হোসেন অন্যতম। বাবা রমজান আলী ইটভাঙা গাড়ির দিনমজুর। মা গরু খামারি। বর্ষা মৌসুমে বাবার কাজ বন্ধ থাকলে মা সংসার চালান। তাদের নিয়েই আগামী ক্রীড়াঙ্গনের স্বপ্ন দেখছেন আকবর আলী। তার কথায়, ‘আমার স্বপ্ন একদিন জ্যোতি ক্রীড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ক্রীড়াবিদ তৈরির বড় কারখানায় রূপান্তরিত হবে। সেই স্বপ্ন নিয়েই কাজ করছি।’
No comments