এখন হাজার হাজার কোটি টাকা কারা পাচার করছে? by তামান্না মোমিন খান
বাংলাদেশে
বিকল্প রাজনীতির উদ্ভব হবে বলে মন্তব্য করেছেন সংবিধানের অন্যতম প্রণেতা ও
গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন। তিনি বলেন, সারা বিশ্বেই রাজনীতি হয়ে
গেছে টাকার খেলা। রাজনীতিকে টাকার খেলা থেকে মুক্ত করাই বড় চ্যালেঞ্জ।
স্বাধীনতার আগে আমাদের সম্পদ নিয়ে যেতো পশ্চিম পাকিস্তানিরা। কিন্তু মজার
ব্যাপার হলো স্বাধীনতার ৪৫ বছর পরও আজও একই অবস্থা। এই যে হাজার হাজার কোটি
টাকা পাচার হচ্ছে। এগুলো কার টাকা? আয় করছে কে? অর্জন করছে কে? আর পাচার
করছে কে? পশ্চিমাদের কাছ থেকে আমরা মুক্ত হয়েছি, যখন মানুষ বুঝতে পেরেছে
যে, এই ব্যাটারা আমাদের অর্থ নিয়ে আমাদেরকেই শোষণ করছে। এখন যারা হাজার
হাজার কোটি টাকা পাচার করছে, তাদের নামগুলো বের করতে হবে। এসব পাচারকারী
রাজনীতিতে কী প্রভাব রাখছে। কারা সমর্থন করছে। কাদের সমর্থন নিয়ে তারা
লাফালাফি করছে যে, দেখ আমরা কত শক্তিশালী। মানবজমিনকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে
ড. কামাল হোসেন এসব কথা বলেন। বাংলাদেশে কেমন গণতন্ত্র চলছে এমন প্রশ্নের
জবাবে ড. কামাল বলেন, বাঙালি ঠেকে শিখেছে। গণতন্ত্র যে আমরা বুঝি, সেটা দেশ
স্বাধীন করে সারা বিশ্বকে দেখিয়ে দিয়েছি। গণতান্ত্রিক অধিকার আদায় করার
জন্য সর্বোচ্চ মূল্য দিয়েছি। অতএব কেউ যদি মনে করেন আমরা গণতন্ত্র বুঝি না,
ভোটের মূল্য বুঝি না, আমাদের গণতন্ত্র শিশু গণতন্ত্র- এটা আমাদের জন্য
প্রযোজ্য নয়। স্বাধীনতার এত বছর পরও আমাদের গণতন্ত্র শিশু গণতন্ত্র হতে
পারে না। সত্যিকার অর্থে আমি বিশ্বাস করি, এই দেশ সবার। এই দেশ কোনো
ব্যক্তির কোনো দলের বা কোনো গোষ্ঠীর না। গণতন্ত্রের বিষয়ে সবাইকে ঐক্যমত
হয়ে কথা বলতে হবে। আমি জনগণের একজন হয়ে বলতে চাই জনগণকে দেশের মালিক হিসেবে
অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। জনগণের ওপর নির্ভর করে আমাদের সব অন্ধকার দূর
করতে হবে। আজকে যে বিষয়গুলো নিয়ে দেশের মানুষ উদ্বিগ্ন। ছাত্ররা নীরব কেন?
ছাত্ররা শিক্ষাখাত থেকে ভ্যাট প্রত্যাহারের বিষয়ে সক্রিয় হয়েছিল তাৎক্ষণিক
ফলাফল পাওয়া গেছে। তরুণ সমাজকে এরশাদ ধ্বংস করেছিল। তারপরও তো এরশাদকে
ক্ষমতা থেকে বের হতে হয়েছে। এখনও তরুণ সমাজকে ধ্বংস করার প্রচেষ্টা চালানো
হচ্ছে। আমাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে। তবে এজন্য তরুণ সমাজের
বিবেককে জাগ্রত করতে হবে। যারা বলছে, উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গড়ব আমরা। জনগণকে
বঞ্চিত করে উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গড়ার পদক্ষেপ হতে পারে না। এগুলো থেকে মুক্ত
হতে হবে। এজন্য সংবাদিকদের এগিয়ে আসতে হবে। কারণ, তাদের কলমের জোর আছে।
বর্তমান গণমাধ্যম প্রসঙ্গে ড. কামাল হোসেন বলেন, এই পরিস্থিতিতেও গণমাধ্যম
সাহসের পরিচয় দিয়ে যাচ্ছে। ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে যে কোনো গণতান্ত্রিক
আন্দোলনে বাঙালি মাথা নত করেনি। অন্যায়কারীরা মনে করে বলপ্রয়োগ করে অর্থ
অস্ত্র দিয়ে ক্ষমতায় থাকবে। কিন্তু বাঙালিদের উল্টো পথে কেউ কোনো দিন নিতে
পারেনি। এ কারণে আমি একশ’ ভাগ আশাবাদী, কেউ যদি চেষ্টা করেও বেশি দিন
অগণতান্ত্রিক পন্থায় ক্ষমতায় থাকতে পারবে না। এর আগে বিএনপি করে দেখেনি?
‘৯৬ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারিতে যে নির্বাচন হয়েছিল সেটা তো প্রত্যাখ্যান
করেছিল। এর পরে মনে তো হয়েছিল, ২০০৭ সালের ২২শে জানুয়ারি নির্বাচন হলে
তারেক জিয়া প্রধান মন্ত্রী হয়ে যাবে। কিন্তু কই হলো? ২০০৮ সালে নির্বাচনে
মানুষ আওয়ামী লীগকে ৫ বছরের জন্য জনগণ ম্যান্ডেট দিল। তারপর এখন কী হচ্ছে?
৫ই জানুয়ারির নির্বাচনের পর থেকে শুরু করে উপজেলা পৌরসভা, ঢাকার দুই সিটি
করপোরেশনের নির্বাচনসহ প্রতিটি নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা সম্পর্কে
কামাল হোসেন বলেন, নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা বিতর্কিত- এটা আমরা বলছি।
কিন্তু যারা ক্ষমতায় আছে, তারা তো বলছে, সব ভালো ভালো। এই যে একটা অবস্থা
সৃষ্টি হয়েছে দেশে- ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রথম ধাপে ৬২ জন বিনা
প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়া নজিরবিহীন ঘটনা। তিনি বলেন,
১৯৯৩ সালে আমি আওয়ামী লীগ থেকে বের হয়ে এসেছি। কারণ, আমার আশঙ্কা ছিল। আমি
দেখলাম ছাত্রদের হাতে অস্ত্র। অবসরে রায় লেখা নিয়ে যে বিতর্ক চলছে এ বিষয়ে
তিনি বলেন, আমার একটাই আবেদন ঐক্যমতের ভিত্তিতে এটি সমাধান করতে হবে। আমি এ
বিতর্কে কোনো বাতাস দিতে চাই না।
No comments