খালাসের রায়ের ১৩ বছর পর কারামুক্ত হলেন জবেদ আলী
জবেদ আলী বিশ্বাস |
উচ্চ
আদালতে নির্দোষ প্রমাণিত হওয়ার পর গতকাল বুধবার কারাগার থেকে মুক্ত
হয়েছেন সাতক্ষীরার জবেদ আলী বিশ্বাস (৫৯)। তবে এর মধ্যে পেরিয়ে গেছে এক
যুগেরও বেশি সময়। খালাসের আদেশ আদালত থেকে কারাগারে পৌঁছাতে ১৩ বছর সময়
লেগেছে।
বিনা দোষে জবেদ আলীর ১৩ বছর কারাবন্দী থাকার ঘটনাকে ‘অত্যন্ত গর্হিত অপরাধ ও দুঃখজনক’ বলে উল্লেখ করেছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। গতকাল তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এ ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের খুঁজে বের করতে তদন্ত করা হবে।
মামলার নথি থেকে জানা যায়, সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার কয়লা গ্রামের মৃত আমজেল বিশ্বাসের ছেলে জবেদ আলী বিশ্বাস। স্ত্রী ফরিদা খাতুন মারা যাওয়ার পর তাঁর দুই মেয়ে লিলি (৮) ও রেক্সোনা (৫) জেলার তালা উপজেলার মানিকহার গ্রামে মামা আবুল কাসেমের বাড়িতে থাকত। ১৯৯৪ সালের ৫ সেপ্টেম্বর জবেদ আলী শ্যালকের বাড়িতে বেড়াতে আসেন। ওই দিন লিলি মারা যায়। এ ঘটনায় শ্যালক আবুল কাসেম বিষ খাইয়ে লিলিকে হত্যার অভিযোগ এনে জবেদ আলীর বিরুদ্ধে তালা থানায় হত্যা মামলা করেন। পরদিন পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে। এরপর ওই মামলায় জবেদ আলীর বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ।
সাতক্ষীরা জেলা আদালতের আইনজীবী জিল্লুর রহমান বলেন, সাতক্ষীরার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক সিরাজুল ইসলাম ২০০১ সালের ১ মার্চ জবেদ আলীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও দুই বছরের কারাদণ্ড দেন। ওই রায়ের বিরুদ্ধে জবেদ আলী হাইকোর্টে জেল আপিল করেন। ওই বছরের ১১ মে জবেদ আলীকে সাতক্ষীরা কারাগার থেকে যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
নথি থেকে আরও জানা যায়, ২০০৩ সালের ১৯ মার্চ হাইকোর্ট জবেদ আলীকে নির্দোষ ঘোষণা করে বেকসুর খালাস দেন। ২৬ মার্চ হাইকোর্ট থেকে খালাসের আদেশ সাতক্ষীরা অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালত-২-এ পৌঁছায়। সাতক্ষীরার তৎকালীন অতিরিক্ত দায়রা জজ হাইকোর্টের আদেশ কারাগারে না পাঠিয়ে তা আদালতের রের্কডরুমে সংরক্ষণের নির্দেশ দেন।
জবেদ আলী বিশ্বাস প্রথম আলোকে বলেন, ২০০৫ সালে তিনি হাইকোর্ট থেকে খালাস পাওয়ার খবর পেয়ে কারা কর্তৃপক্ষকে জানান। জেল আপিলের অবস্থা জানতে চেয়ে তিনি ২০০৫ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত কারা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সাতক্ষীরা অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালতে আটটি চিঠি পাঠান। কিন্তু একটি চিঠিরও জবাব মেলেনি।
জবেদ আলী বলেন, সম্প্রতি একই কারাগারে বন্দী থাকা অবস্থায় তিনি সাতক্ষীরার অতিরিক্ত সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) জিল্লুর রহমানকে একটি চিঠির মাধ্যমে জানান, ২০০৩ সালে মামলা থেকে খালাস পাওয়ার পরও ১৩ বছর ধরে তিনি কারাবন্দী। জিল্লুর রহমান খোঁজখবর নিয়ে এ তথ্যের সত্যতা পান।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি জিল্লুর রহমান ও আরেক অতিরিক্ত পিপি ফাহিমুল হক সাতক্ষীরার দ্বিতীয় অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালতে জবেদ আলীর মুক্তির জন্য আবেদন করেন। ২৮ ফেব্রুয়ারি আবেদনটির ওপর শুনানি হয়। আদালতের নির্দেশে ২৯ ফেব্রুয়ারি জবেদ আলীকে যশোর থেকে সাতক্ষীরা কারাগারে নিয়ে আসা হয়। এরপর গতকাল মাথায় হেলমেট পরিয়ে তাঁকে আদালতে হাজির করা হলে বিচারক মো. আশরাফুল ইসলাম মুক্তির আদেশ দেন।
কারাগার সূত্র জানায়, গতকাল বিকেল সাড়ে চারটার দিকে জবেদ আলীকে মুক্তির আদেশ সাতক্ষীরা কারাগারে পৌঁছায়। বিকেল পাঁচটার দিকে তাঁকে কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়া হয়।
পরে জবেদ আলী সাংবাদিকদের বলেন, গত পাঁচ বছর ক্ষোভে-দুঃখে তিনি কোথাও মুক্তির জন্য আবেদন করেননি। তিনি বলেন, ‘আমাকে ১৩ বছর যাঁরা অন্যায়ভাবে জেল খাটিয়েছেন, তাঁদের বিচারের ভার আল্লাহর ওপর ছেড়ে দিলাম।’ পরে কারাফটকে অপেক্ষায় থাকা জামাতা আবদুল হামিদের সঙ্গে তিনি কলারোয়ার গ্রামের বাড়িতে চলে যান।
সাতক্ষীরা জজ আদালতের পিপি ওসমান গণি দাবি করেছেন, যাঁদের অবহেলায় জবেদ আলীকে ১৩ বছর অন্যায়ভাবে কারাগারে থাকতে হয়েছে, তদন্ত করে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক।
যোগাযোগ করা হলে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি অবশ্যই এ ঘটনার তদন্ত করাব। যদি আদালতের কারও গাফিলতি থাকে তবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কারাগারের বিষয়টি তদন্তের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে বলব।’
বিনা দোষে জবেদ আলীর ১৩ বছর কারাবন্দী থাকার ঘটনাকে ‘অত্যন্ত গর্হিত অপরাধ ও দুঃখজনক’ বলে উল্লেখ করেছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। গতকাল তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এ ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের খুঁজে বের করতে তদন্ত করা হবে।
মামলার নথি থেকে জানা যায়, সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার কয়লা গ্রামের মৃত আমজেল বিশ্বাসের ছেলে জবেদ আলী বিশ্বাস। স্ত্রী ফরিদা খাতুন মারা যাওয়ার পর তাঁর দুই মেয়ে লিলি (৮) ও রেক্সোনা (৫) জেলার তালা উপজেলার মানিকহার গ্রামে মামা আবুল কাসেমের বাড়িতে থাকত। ১৯৯৪ সালের ৫ সেপ্টেম্বর জবেদ আলী শ্যালকের বাড়িতে বেড়াতে আসেন। ওই দিন লিলি মারা যায়। এ ঘটনায় শ্যালক আবুল কাসেম বিষ খাইয়ে লিলিকে হত্যার অভিযোগ এনে জবেদ আলীর বিরুদ্ধে তালা থানায় হত্যা মামলা করেন। পরদিন পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে। এরপর ওই মামলায় জবেদ আলীর বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ।
সাতক্ষীরা জেলা আদালতের আইনজীবী জিল্লুর রহমান বলেন, সাতক্ষীরার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক সিরাজুল ইসলাম ২০০১ সালের ১ মার্চ জবেদ আলীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও দুই বছরের কারাদণ্ড দেন। ওই রায়ের বিরুদ্ধে জবেদ আলী হাইকোর্টে জেল আপিল করেন। ওই বছরের ১১ মে জবেদ আলীকে সাতক্ষীরা কারাগার থেকে যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
নথি থেকে আরও জানা যায়, ২০০৩ সালের ১৯ মার্চ হাইকোর্ট জবেদ আলীকে নির্দোষ ঘোষণা করে বেকসুর খালাস দেন। ২৬ মার্চ হাইকোর্ট থেকে খালাসের আদেশ সাতক্ষীরা অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালত-২-এ পৌঁছায়। সাতক্ষীরার তৎকালীন অতিরিক্ত দায়রা জজ হাইকোর্টের আদেশ কারাগারে না পাঠিয়ে তা আদালতের রের্কডরুমে সংরক্ষণের নির্দেশ দেন।
জবেদ আলী বিশ্বাস প্রথম আলোকে বলেন, ২০০৫ সালে তিনি হাইকোর্ট থেকে খালাস পাওয়ার খবর পেয়ে কারা কর্তৃপক্ষকে জানান। জেল আপিলের অবস্থা জানতে চেয়ে তিনি ২০০৫ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত কারা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সাতক্ষীরা অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালতে আটটি চিঠি পাঠান। কিন্তু একটি চিঠিরও জবাব মেলেনি।
জবেদ আলী বলেন, সম্প্রতি একই কারাগারে বন্দী থাকা অবস্থায় তিনি সাতক্ষীরার অতিরিক্ত সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) জিল্লুর রহমানকে একটি চিঠির মাধ্যমে জানান, ২০০৩ সালে মামলা থেকে খালাস পাওয়ার পরও ১৩ বছর ধরে তিনি কারাবন্দী। জিল্লুর রহমান খোঁজখবর নিয়ে এ তথ্যের সত্যতা পান।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি জিল্লুর রহমান ও আরেক অতিরিক্ত পিপি ফাহিমুল হক সাতক্ষীরার দ্বিতীয় অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালতে জবেদ আলীর মুক্তির জন্য আবেদন করেন। ২৮ ফেব্রুয়ারি আবেদনটির ওপর শুনানি হয়। আদালতের নির্দেশে ২৯ ফেব্রুয়ারি জবেদ আলীকে যশোর থেকে সাতক্ষীরা কারাগারে নিয়ে আসা হয়। এরপর গতকাল মাথায় হেলমেট পরিয়ে তাঁকে আদালতে হাজির করা হলে বিচারক মো. আশরাফুল ইসলাম মুক্তির আদেশ দেন।
কারাগার সূত্র জানায়, গতকাল বিকেল সাড়ে চারটার দিকে জবেদ আলীকে মুক্তির আদেশ সাতক্ষীরা কারাগারে পৌঁছায়। বিকেল পাঁচটার দিকে তাঁকে কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়া হয়।
পরে জবেদ আলী সাংবাদিকদের বলেন, গত পাঁচ বছর ক্ষোভে-দুঃখে তিনি কোথাও মুক্তির জন্য আবেদন করেননি। তিনি বলেন, ‘আমাকে ১৩ বছর যাঁরা অন্যায়ভাবে জেল খাটিয়েছেন, তাঁদের বিচারের ভার আল্লাহর ওপর ছেড়ে দিলাম।’ পরে কারাফটকে অপেক্ষায় থাকা জামাতা আবদুল হামিদের সঙ্গে তিনি কলারোয়ার গ্রামের বাড়িতে চলে যান।
সাতক্ষীরা জজ আদালতের পিপি ওসমান গণি দাবি করেছেন, যাঁদের অবহেলায় জবেদ আলীকে ১৩ বছর অন্যায়ভাবে কারাগারে থাকতে হয়েছে, তদন্ত করে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক।
যোগাযোগ করা হলে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি অবশ্যই এ ঘটনার তদন্ত করাব। যদি আদালতের কারও গাফিলতি থাকে তবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কারাগারের বিষয়টি তদন্তের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে বলব।’
No comments