আগেই আঘাত করিনি বলে আমাদের বড় মূল্য দিতে হলো
২১
মার্চ রোববার। সকালে হঠাৎ খবর এল, সেনাপ্রধান জেনারেল আবদুল হামিদ খান
ইবিআরসি ভিজিটে আসছেন। আরও জানানো হয়, তিনি দুপুরে লাঞ্চ করবেন। তার সঙ্গে
১৪-১৫ জন উধর্বতন সেনা কর্মকর্তা থাকবেন। সেনাপ্রধান জেনারেল হামিদের আসার
খবর পেয়ে আমরা বেশ হতচকিত হই। আমাদের মধ্যে গুঞ্জন শুরু হয় কেন তিনি আসছেন।
প্রয়াত মেজর জেনারেল আমীন আহম্মেদ চৌধুরী ‘ ১৯৭১ ও আমার সামরিক জীবন’ শীর্ষক বইতে এসব কথা লিখেছেন। তিনি আরও লিখেছেন, লাঞ্চে অন্যান্য ইউনিটের মেজর ও তদূধর্ব র্যাংকের সেনা কর্মকর্তাদের দাওয়াত দেওয়া হয়েছিল। লাঞ্চ চলাকালে মেস ওয়েটার জেনারেল হামিদকে তার প্রিয় পানীয় ব্ল্যাক ডগ পরিবেশন করে। মেস সেক্রেটারি হিসেবে আমি তার কাছে দাঁড়িয়েছিলাম। জেনারেল হামিদ গ্লাসে কয়েক চুমুক দেওয়ার পর আমি তার কাছে গিয়ে বিনীতভাবে বললাম, স্যার জনপ্রতিনিধিদের কাছে যেন অনতিবিলম্বে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হয়। এ কথায় তিনি বাঁকা দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে থাকেন। কয়েক সেকেন্ড একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকার পর তিনি আমাকে বললেন, হোয়াই ইউ আর সো এক্সাইটেড?। অর্থাৎ তুমি এতো উত্তেজিত কেন? আমি তাকে বললাম, স্যার যদি, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি চরম আকার ধারণ করে, তাহলে তো আমাদের আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুবান্ধবরা সেনাবাহিনীর গুলিতে পাখির মতো মারা যাবে। আমার মতো অন্য যারা কর্মরত থাকবে, তারা কি তখন নীরবে দাঁড়িয়ে এ মৃত্যু যন্ত্রনা দেখতে থাকবে? আমি তার মুখের ওপর বলেছিলাম, ডু ইউ থিঙ্ক দ্যাট ইউ উইল রিমেইন অন লুকারস? আমি এ জন্যই বলেছিলাম, যাতে তারা এ মেসেজটা গ্রহণ করেন যে এটা আনচ্যালেঞ্জড যাবে না।
আমার এ কথায় জেনারেল হামিদ বোধ হয় হকচকিয়ে গিয়েছিলেন। কয়েক সেকেন্ড আমার দিতে তাকিয়ে থেকে আমার পিঠ চাপড়ে বলেছিলেন, ডোন্ট ওরি, শেখ মুজিব ইজ বিকামিং প্রাইম মিনিস্টার অব পাকিস্তান। অর্থাৎ ভেবো না, শেখ মুজিব পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন।
এসবই ছিল পাকিস্তানিদের অতি চালাকি কথাবার্তা এবং ভেতরে ছিল সব ফাঁকা। তলে তলে তারা মিলিটারি অ্যাকশনের প্রস্তুতি নিয়েছে, কিন্তু সমস্যার ডাইমেনশন ও গভীরতা কিছুমাত্র উপলব্ধি করতে পারেনি। ক্যালকুলেশন করে দেখলে দেখা যাবে, পূর্ব পাকিস্তানে তাদের মোট সৈন্যসংখ্যা ছিল ১২ হাজার। এর মধ্যে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টসহ বাঙালি সৈন্যসংখ্যা ছিল প্রায় ছয় হাজার। আর ইপিআরকে যদি ধরা হয়, তবে ইপিআরে ছিল ১৪ হাজার সেনা। এরমধ্যে হাজার দুয়েক অবাঙালি বাদ দিলে ১১ থেকে ১২ হাজার ইপিআর ছিল আমাদের সঙ্গে। পূর্ব পাকিস্তানে ২০ হাজার বাঙালি ট্রুপস ছিল পুলিশ বাদেই। আমরা যদি ভালোভাবে প্ল্যান করে তাদের আগেই আঘাত করতে পারতাম তাহলে কিন্তু তারা অত্যন্ত বেকায়দায় পড়ে যেতো। আমরা সেই জায়গায় যাইনি বলেই কিন্তু আমাদের বড় মূল্য দিতে হলো এবং এটা দেওয়া ছাড়া কোন উপায়ও ছিল না।
প্রয়াত মেজর জেনারেল আমীন আহম্মেদ চৌধুরী ‘ ১৯৭১ ও আমার সামরিক জীবন’ শীর্ষক বইতে এসব কথা লিখেছেন। তিনি আরও লিখেছেন, লাঞ্চে অন্যান্য ইউনিটের মেজর ও তদূধর্ব র্যাংকের সেনা কর্মকর্তাদের দাওয়াত দেওয়া হয়েছিল। লাঞ্চ চলাকালে মেস ওয়েটার জেনারেল হামিদকে তার প্রিয় পানীয় ব্ল্যাক ডগ পরিবেশন করে। মেস সেক্রেটারি হিসেবে আমি তার কাছে দাঁড়িয়েছিলাম। জেনারেল হামিদ গ্লাসে কয়েক চুমুক দেওয়ার পর আমি তার কাছে গিয়ে বিনীতভাবে বললাম, স্যার জনপ্রতিনিধিদের কাছে যেন অনতিবিলম্বে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হয়। এ কথায় তিনি বাঁকা দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে থাকেন। কয়েক সেকেন্ড একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকার পর তিনি আমাকে বললেন, হোয়াই ইউ আর সো এক্সাইটেড?। অর্থাৎ তুমি এতো উত্তেজিত কেন? আমি তাকে বললাম, স্যার যদি, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি চরম আকার ধারণ করে, তাহলে তো আমাদের আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুবান্ধবরা সেনাবাহিনীর গুলিতে পাখির মতো মারা যাবে। আমার মতো অন্য যারা কর্মরত থাকবে, তারা কি তখন নীরবে দাঁড়িয়ে এ মৃত্যু যন্ত্রনা দেখতে থাকবে? আমি তার মুখের ওপর বলেছিলাম, ডু ইউ থিঙ্ক দ্যাট ইউ উইল রিমেইন অন লুকারস? আমি এ জন্যই বলেছিলাম, যাতে তারা এ মেসেজটা গ্রহণ করেন যে এটা আনচ্যালেঞ্জড যাবে না।
আমার এ কথায় জেনারেল হামিদ বোধ হয় হকচকিয়ে গিয়েছিলেন। কয়েক সেকেন্ড আমার দিতে তাকিয়ে থেকে আমার পিঠ চাপড়ে বলেছিলেন, ডোন্ট ওরি, শেখ মুজিব ইজ বিকামিং প্রাইম মিনিস্টার অব পাকিস্তান। অর্থাৎ ভেবো না, শেখ মুজিব পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন।
এসবই ছিল পাকিস্তানিদের অতি চালাকি কথাবার্তা এবং ভেতরে ছিল সব ফাঁকা। তলে তলে তারা মিলিটারি অ্যাকশনের প্রস্তুতি নিয়েছে, কিন্তু সমস্যার ডাইমেনশন ও গভীরতা কিছুমাত্র উপলব্ধি করতে পারেনি। ক্যালকুলেশন করে দেখলে দেখা যাবে, পূর্ব পাকিস্তানে তাদের মোট সৈন্যসংখ্যা ছিল ১২ হাজার। এর মধ্যে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টসহ বাঙালি সৈন্যসংখ্যা ছিল প্রায় ছয় হাজার। আর ইপিআরকে যদি ধরা হয়, তবে ইপিআরে ছিল ১৪ হাজার সেনা। এরমধ্যে হাজার দুয়েক অবাঙালি বাদ দিলে ১১ থেকে ১২ হাজার ইপিআর ছিল আমাদের সঙ্গে। পূর্ব পাকিস্তানে ২০ হাজার বাঙালি ট্রুপস ছিল পুলিশ বাদেই। আমরা যদি ভালোভাবে প্ল্যান করে তাদের আগেই আঘাত করতে পারতাম তাহলে কিন্তু তারা অত্যন্ত বেকায়দায় পড়ে যেতো। আমরা সেই জায়গায় যাইনি বলেই কিন্তু আমাদের বড় মূল্য দিতে হলো এবং এটা দেওয়া ছাড়া কোন উপায়ও ছিল না।
No comments